আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মনে পড়ে রুবি রায়

অনেক দিন ধরে গল্পের বইটি খুঁজছিলাম। অবশেষে এবারের বইমেলায় পেয়ে গেলাম ‘পাঠসূত্র’-এর স্টলে। মিনার মাহমুদেরে গল্পেগ্রন্থ-‘মনে পড়ে রুবি রায়’। এ রকম আগ্রহ নিয়ে আরেকজন সাংবাদিকের বই কিনেছিলাম পনের-ষোল বছর আগে নাম-মোনাজাত উদ্দিন। মোনাজাত উদ্দিনের বই ‘পথ থেকে পথে’, ‘পায়রা বন্দের শিকড় সংবাদ’।

দু’জন লেখকেরই স্বাভাবিক মুত্যু হয় নি! এত ভাল লাগবে গল্পের বইটি মোটেই ভাবি নি। একেবারেই ভিন্ন লেখার ধাঁচ। গল্পে কাহিনী আছে। অল্প। কবিতার ভাব আছে কিন্তু কাব্যাক্রান্ত গদ্যের মতো বিরক্তিকর নয়।

গল্পগুলো যেন এক ধরণের মনোলগ। একটি গল্প পড়ার পর একটু জিরিয়ে নিতে ইচ্ছে করে হজম করার জন্য। তাঁর লেখার ধরণ? কয়েকটা গল্প থেকে উদ্ধৃতি দিচ্ছি: ১. ‘তাহলে আছিস কেমন করে?’ ‘এই আছি আরকি। কোনোরকম। ছেলেবেলার কিছু মোহন স্মৃতি আছে, কিছু গল্প কিছু ভুল।

আর একট শৈশবের নদী। এই নিয়েই আছি। চলে যাচ্ছে। ’ ‘তার মানে ছেলেবেলার কথা খুব মনে আছে তোর?’ ‘ কি যে বলো, নেই আবার! অত্যন্ত মনে আছে। আমি কিছু ভুলি না।

ভুলব কেন? আমি কি মেয়েমানুষ। ’ কী অবিশ্বাস্য রকম ভালোই না ছিলাম! এখন আর তেমন কিছু ভালো লাগে না। আসল কথা হচ্ছে কোনো টেস্ট পাই না। এই রাজপথ ঢাকা শহর এইসব চালাক মুরগিখেকো নাগরিক। আমি এদের কিছুই বুঝি না।

খুব ভুল বোঝাবুঝি হয়। প্রব্লেম। তো আছি। নীলকন্ঠ বিষ পান করে-তবু আছি। থাকতে হয়।

(মনে পড়ে রুবি রায়) ২. দেশ আকস্মিক স্বাধীন হলে। গাছ থেকে ফল পেড়ে দেবার মতো আচমকা স্বাধীনতা। যেন ন’ মাসের সিজারিয়ান। তবু স্বাধীনতা। ... (এসো) ৩. ডাইনিংয়ে এ সময় ভিড়টা একটু কম।

দেশের সর্বোচ্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্ববৃহৎ হলে পৃথিবীর নিকৃষ্টতম মেনু। কোত্থেকে যেন আমদানি করা চাল, রাবারের মতো বড়ো বড়ো ভাত। ... (ক্যাম্পাসের দিনরাত্রি) মিনার মাহমুদের লেখা এই রকম। স্মৃতিকাতর, কষ্ট, খেদ, হতাশার বিপরীতে জীবনের প্রতি চরম ভালবাস। তারপর মরে গেলেই হল ১. বাবার চিঠি পড়লে আমি সামনের অনিবার্য আগুনের উত্তাপ পেতে থাকি।

সংসার চেপে ধরছে আমাকে, পালাবার কোনো পথ নেই। খুব ভয় লাগে আমার। খুব মনে হয় কোন না কোনোভাবে ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ি। (মনে পড়ে রুবি রায়) ২. সব ঝামেলা মিটে যেতে পারে। সব।

শধু চোখ বুঁজে ছ’তলা থেকে টুপ করে লাফিয়ে পড়লেই হলো। পত্রিকায় ছবি ছাপা হবে, কেউ কেউ অ্যাক্সিডেন্ট বলেও চালিয়ে দেবে। কিন্তু আসল খবর কেউ জানবে না। মধ্যবিত্তের ঘাম আর রক্তের ঋণ শোধ করল একটি ছেলে। তার জীবন দিয়ে, জন্মের সমস্ত ঋণকে অস্বীকার করে।

(ক্যাম্পাসের দিনরাত্রি) ৩. কিন্তু কিছুই করা হয় না। সবকিছু ভেবে কেবল জমা করে রাখি। পরশু হাবিবুর রহমান স্যারের টিউটোরিয়াল। কালকে সফিসটিকেটেডের সঙ্গে প্রোগ্রাম আছে। এগুলোর জন্য আমাকে বেঁচে থাকতে হয়।

আর সব সময় এগুলোতো লেগেই আছে। আমার আত্মহত্যা হয়ে ওঠে না, কিছুই হয় না। তবে এটা ঠিক, একদিন না একদিন করবই। বেঁচে থেকে কী হবে। জীবনের ওপর নির্লজ্জ লোভ নেই আমার।

আর সব মানুষের যেমনি আছে। নইলে এত দিন ঠিক ঠিক মরে যেত সবাই। একঘেয়েমিতে। প্রচন্ড অবসাদে কিংবা জ্যামিতিতে ভুল করে। (ক্যাম্পাসের দিন রাত্রি) মিনার মাহমুদ তাঁর কথা রেখেছিলেন।

প্রেমে পড়েছিলেন নিজেরই এক শিক্ষিকার। মোট চাকরি বদল করেছেন ২৩ বার। তাঁর বক্তব্য ‘এমনকি অপ্রয়োজনে একটা লাইন লিখতেও আলিস্যি লাগে। ’ ‘বিচিন্তা’ সম্পাদনা করে মিনার মাহমুদ পৌঁছে যান খ্যাতির শীর্ষে। স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধাচারী ‘বিচিন্তা’ নেই, মিনার মাহমুদ নেই।

কিন্তু এরশাদ ঠিকঠাক মতোই আছেন। মনে পড়ে রুবি রায় মিনার মাহমুদ প্রথম প্রকাশ ১৯৮৭ পাটসূত্র সংস্করণ ২০০৯ পাঠসূত্র ১৫২/২-কে, গ্রিন রোড, পান্থপথ, ঢাকা। দাম: ৮০ টাকা ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।