নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদক লিডিয়া পলগ্রিন একজনের উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেনÑ ড. ইউনূসকে শেখ হাসিনা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বা চ্যালেঞ্জ মনে করেন। এ বক্তব্য যারই হোক সেটা যে কতটা অসত্য এবং বাস্তবতাবর্জিত তার প্রমাণ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সর্বসাম্প্রতিক সংবাদ সম্মেলনে দেয়া রাজনীতিতে তার অংশগ্রহণবিষয়ক বক্তব্যÑ ‘ন্যাড়া একবারই বেলতলায় যায়’। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তিনি একটি রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ নিলে সেটা সমন্বয় করার জন্য আপন ভাই মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর ছাড়া কোনো ব্যক্তিকে জোগাড় করতে পারেননি এবং তার এ সমর্থক সংকটটা সবশেষে রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা প্রত্যাহার করা পর্যন্ত খুব স্পষ্টতই অনুভব করেছি। সেসময় স্পষ্ট হয়েছে, রাজনৈতিকভাবে তিনি শেখ হাসিনার জন্যে চ্যালেঞ্জ হওয়া তো বহু দূরের কথা, আরো অনেক অনগ্রসর নেতারও ধর্তব্যে আসবেন না।
ড. ইউনূসের উত্থান যদি আমরা পর্যালোচনা করি তাহলে দেখবো সামরিক স্বৈরাচার এরশাদের সময়ই তার বদান্যতায় গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে প্রথমবারের মতো সবার নজরে আসেন এবং ধীরে ধীরে দেশে-বিদেশে নিজের অবস্থান তৈরি করতে সর্বাত্মক ও সযতœ প্রয়াসী হয়ে উঠেছিলেন।
বাংলাদেশে তার দ্বিতীয় পুনরুত্থান প্রচেষ্টা আবারো লক্ষ্য করা যায়, নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর ২০০৭-০৮ সময়কালে তথাকথিত ১/১১-এর সেনা সমর্থিত সরকার জমানায়। এই দুই ঘটনা বিশ্লেষণ করলে ড. ইউনূসের ব্যাপারে এ ধরনের সন্দেহ করা খুবই স্বাভাবিক যে, এদেশে যদি আরেকটি সেনা সংশ্লিষ্ট অগণতান্ত্রিক শাসনের পরিস্থিতি আসে তখন উচ্চাভিলাষী সেনা কর্মকর্তারা ড. ইউনূসকে কাজে লাগাতে চেষ্টা করতে পারেন। এ সন্দেহ বাংলাদেশে সাধারণভাবেই বিরাজমান। সেই অতি সাধারণ সন্দেহের কথাই লিডিয়া পলগ্রিনের প্রতিবেদনে কারো মুখ থেকে এসেছে। এ উক্তিও আর যাই হোক ড. ইউনূসের পক্ষে যায় না।
পুরোটাই যায় তার বিপক্ষে। অথচ আমাদের দৈনিকগুলো এ প্রতিবেদন থেকে কিছু অংশ এমনভাবে তুলে ধরেছে যেন শেখ হাসিনা ড. ইউনূস সম্পর্কে এ সন্দেহ করে অপরাধ করে ফেলেছেন।
ড. ইউনূস ’৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী অভ্যুত্থানের পর বেশ অনেক দিন ভয়ে কুঁকড়ে থাকতেন, নিজেকে মিডিয়ার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখতেন। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারের কাছ থেকে কোনো আঘাত আসে এ আশঙ্কায়।
বিগত ১/১১-এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এদেশের শীর্ষ রাজনীতিকদের ব্যাপারে ড. ইউনূস ঢালাও বক্তব্য বা অভিযোগ করেছেন।
এ কারণেই ড. ইউনূস নিজে কতখানি নিয়মনিষ্ঠ, গণতান্ত্রিক এবং স্বজনপ্রীতিহীন সেটা একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ কিন্তু নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত তদন্তের ভেতর দিয়ে দেখা অত্যন্ত জরুরি। তিনি যেহেতু নীতিহীনতার জন্য রাজনীতিকদের সমালোচনা করেন তাই স্বাভাবিক কৌতূহলে আমরা দেখতে চাইব ড. ইউনূস সেই নীতির কতখানি সম্মান রেখেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ড. ইউনূসের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি খোলামেলা সমালোচনা করেছেন। তার সরকারের সময়ে গঠিত তদন্ত কমিটি যদি আহলাদের কারণে ড. ইউনূসের মৌলিক অনিয়ম ও অপরাধসমূহ উšে§াচনে ব্যর্থ হয় তাহলে দেশে ও বিদেশে শেখ হাসিনার মর্যাদা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের ভেতর ড. ইউনূসের বন্ধু ও সুবিধাভোগী রয়েছে।
তারা তাদের দায়িত্ব পালনের সময় শেখ হাসিনার ভাবমূর্তির এ চ্যালেঞ্জ এবং তারও ওপরে জাতীয় স্বার্থকে স্থান দেবেন, সেটা আমরা আশা করতে চাই। এভাবেই আপনাদের দায়িত্ববোধ শেখ হাসিনার প্রতি কতখানি আর ড. ইউনূসের প্রতি কতটা দরদ তারও পরীক্ষা হয়ে যাবে এ তদন্তকাজের ভেতরেই।
ড. ইউনূস অনেক প্রতিষ্ঠানের জš§ দিয়েছেন। তার কোনো একটি প্রতিষ্ঠানও উচ্চ মানসম্মতভাবে এবং সফলভাবে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যে পরিচালিত হয় তেমন আমরা দেখিনি। তার সব প্রতিষ্ঠানেরই ব্যবস্থাপনা বা পরিচালনার মান অত্যন্ত গড়পড়তা যা তার স্বেচ্ছাচারিতার কারণে বলেই ধারণা করা যায়।
তার নেতৃত্বে পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠানও বাংলাদেশের একটি অনুুসরণীয় প্রতিষ্ঠানের সুনাম অর্জন করেনি। বরং নানাভাবে ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অনেক। কেউ কি বলতে পারবেন যে, ড. ইউনূসের কোনো প্রতিষ্ঠান অসাধারণভাবে পরিচালিত। যেটা অনুকরণীয়। শুধু গ্রামীণফোন ব্যতিক্রম।
কারণ তিনি সেটা পরিচালনা করেন না।
ড. ইউনূস সৃজনশীলই বা কোথায়? তার প্রত্যেকটা কাজই দেখে দেখে করা। তিনি এমন কোনো কাজ করেননি যা একেবারেই নতুন। তবে তিনি পরিশ্রমী সংগঠক, একজন কর্মযোগী মানুষ। অনেকে অতি উৎসাহী হয়ে তাকে ক্ষুদ্র ঋণের জনক বলে থাকেন।
কিন্তু তার জšে§র অনেক আগেই দেশে দেশে ক্ষুদ্র ঋণের প্রচলন ছিল। তিনি নতুন কিছু করেননি। তবে ড. ইউনূস ক্ষুদ্র ঋণের প্রসারে বিরাট ভূমিকা রেখেছেন।
তার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত ডানোন বাংলাদেশে যে ‘শক্তি দই’ তৈরি করে এবং বাজারে বিক্রি করে সেখানে ভেজালের অভিযোগে মামলা হয়েছে ভাবতে অবাক লাগে। ডানোনের মতো বিশ্ববিখ্যাত মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি বাংলাদেশের বাজারে গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে যৌথ ব্যবসা করে এতটা অধঃপতিত হবেÑ এটা ভাবাই দুষ্কর।
ডানোন পৃথিবীর অনেক দেশেই দই বাজারজাত করে। কানাডা থেকে সংগৃহীত দই’য়ের কৌটা আমাদের কাছে আছে। সেখানে প্রতিটি কৌটার গায়ে ওই সাধারণ দইয়ের পুষ্টি উপাদানের বিস্তারিত বিবরণ, পরিমাণ ও অনুপাত ছেপে দেয়া হচ্ছে। কানাডার সাধারণ দইয়ের ক্ষেত্রে যখন এত সতর্কতা পালন করা হয় সেখানে বাংলাদেশে বাজারজাত করা দইটিকে শক্তি দই নামকরণ করা এবং শিশু পুষ্টির সমাধান দাবি করার পরও এর কৌটার গায়ে তারা প্রয়োজনীয় বিস্তারিত তথ্য উপাত্ত ছাপে না। প্রথমদিকে তো কোনো তথ্যই ছাপাত না।
এখন অনেক সাংবাদিকের খোঁজ-খবর নেয়ার ফলে দায়সারা কিছু তথ্য দেয়া হয়, বিস্তারিত কিছু নয়। এ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা চলছে বাংলাদেশে আইন প্রয়োগে শিথিলতার সুযোগ নিয়ে এবং তা করছে বাংলাদেশের একটি নোবেল বিজয়ী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংক এবং সঙ্গে রয়েছে বিশ্ববিখ্যাত অপর অংশীদার ডানোন। আমরা তাহলে গ্রামীণ আর ডানোনের যৌথ উদ্যোগে কী পেলাম? দেশের আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো এবং সঙ্গে সঙ্গে ভোক্তার অধিকারের প্রতি অমার্জনীয় উপেক্ষা?
http://amadershomoy.com/
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।