জীবনের আলাপন
ভাজা-পুরার দোকান। দোকানের নাম লিখা BERLIN BAKERY. অফিস থেকে রুমে ফেরার পথে এখান থেকেই বাসে উঠি। প্রতিদিন এখানে মানুষের ভীড় লেগেই থাকে। সবাই ভাজা-পুরা খায়। কি খায়? আমার মনে অনেক কৌতুল, তেলে ভাজা খাবারের জন্য এত ভীড় কেন? কি আছে এখানে? অফিসে বিকেলে নাস্তা খেয়ে বের হই।
তাই কোন কিছু আর তেমন খেতে ইচ্ছে করেনা। ঠিক করে ফেললাম আমিও একদিন কাস্টোমার হব। একদিন খেয়ে দেখব কি এমন আছে যার জন্য মানুষ এত খায়।
আজ ১৪ ফেব্রুয়ারী। বিশ্ব ভালবাসা দিবস।
সকাল ৬টা এলামে ঘুম ভেঙ্গে উঠতে কস্ট হচ্ছিল। কিন্তু অফিসে দেরি হয়ে যাবে ভেবে উঠে গেলাম। শেভ হলাম, এটা রুটিন শেভ। ৭টা ২০ এ রুম থেকে বের হলাম। রাস্তায় বের হয়েই দেখি কয়েকটা স্কুল ড্রেস পড়া মেয়ের হাতে ফুল।
আহা! সাত সকালেই ভালবাসার এন্তেজাম। যথারীতিবনানী নেমে গ্রামীণ নামক খুদে বাসের জন্য অপেক্ষা। একটা পেয়েও গেলাম। বাসে উঠেই আরেক ধাক্কা খেলাম। বেহেস্তের হুর গ্রামীন বাসে কি করে এটা ভেবে।
যাই হোক ভাল সময় বেশিক্ষন স্থায়ী হল না। সবাই গুলশান-২ এ নামল। আমি নামলাম ওয়ান্ডারল্যান্ডে। সামান্য হেটেই অফিসে পৌছে গেলাম। সময় তখন ৮ টা ২৪।
টং দোকান থেকে একটা কেক খেয়ে নাস্তা শেষ করলাম। অফিসে প্রবেশ করলাম ৮টা ৩০ এ।
অফিসের কম্পিউটার খোলেই আমার প্রথম কাজই হল ফেসবুক দেখা। তারপর বার্নবাডি খেলা, তারপর কাজে মন দেয়া। ভালবাসা দিবসের স্ট্যাটাস আপডেট করে নিলাম।
তারপর লাঞ্ছ, লাঞ্ছের পর পিওন চা দিয়ে যায়। আজ পিওনটা অসুস্থ তাই চা দেয়নি। সামান্য ঘুম ঘুম ধরাতে রান্না ঘরে হানা দিলাম চায়ের জন্য। রান্না ঘরেও গিয়ে দেখি ডেটিং...আহা! অফিসের রান্না ঘরেও ভালবাসা... আমি থতমত থেকে বের হয়ে চলে এলাম।
বিকালের নাস্তা...অতঃপর সাড়ে ছ'টা বাজে অফিস থেকে বেড়িয়ে পরলাম।
কোথা থেকে যেন কন্সার্টের আওয়াজ আসতে লাগল। আস্তে আস্তে সামনে এগুতেই পরিস্কার হল ওয়ান্ডারল্যন্ড থেকে জেমস গাইছে...পাগলা হাওয়ার তরে... । একবার মনে হল ঢু দিয়ে আসি। কাউন্টারের সামনে গিয়ে দেখি আমি একা আর সবাই পার্টনার বা ফ্যামিলি সহকারে। তাই ফিরে এলাম।
একটা কিছু করা দরকার। বাসের জন্য লাইন না ধরে আজকে আমি বার্লিন বেকারির কাস্টমার হলাম। কিছু তো বুঝি না। কোনটার দাম কত তাও জানি না। তাই একটু পিছনে দাঁড়িয়ে দেখতে থাকলাম কে কি করে।
দেখি সবাই অপেক্ষা করছে ফ্রেঞ্ছ ফ্রাই আর মুরগি ভাজার জন্য। আমিও অপেক্ষা করতে থাকলাম। বেশ কিছু সময় পর মুরগি ভাজা ও ফ্রেঞ্ছ ফ্রাই আমার হাতে এসে পৌছালো। আহা! অনেক অপেক্ষার , ভালবাসা দিবসে নিজের জন্য স্পেশাল নাস্তা। আমি মহা আনন্দে খেতে থাকলাম একাই...বার্লিন বেকারীতে...
সারা রাস্তা জুড়ে লাল নীল বাতি।
মনে হচ্ছে রাজধানীও কারো প্রেমে পরে গেছে। মনে মনে একটা গান বাজতেই থাকল...দিল তো বাচ্চা হেজি... বাস থেকে নেমে ফুল খুজলাম। না পেয়ে কয়েকটা চকলেট নিয়ে রুমে ফিরলাম। এইতো ১৪ তারিখ...আমার বার্লিন বেকারীর মুর্গি ভাজা আর ফ্রেঞ্ছ ফ্রাই খাওয়ার প্রথম দিন...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।