আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আগাচৌ-এর মিথ্যাভাষনের বিপরীতে

থেমে যাবো বলে তো পথ চলা শুরু করিনি।

গেল ৮ জানুয়ারি তারিখে কালের কন্ঠ নামে ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটা দৈনিক পত্রিকায় আমাদের অতি পরিচিত মার্কামারা বুদ্ধিবাজ আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী [পরে এই লেখায় তাকে আগা বা আগাচৌ বলা হয়েছে] তার স্বভাবসিদ্ধ লেখায় পরোক্ষে স্বীকার করে নিয়েছেন যে তার প্রিয় দল এবং সেই দলের নেত্রী প্যাঁকে পড়েছেন। আসুন দেখি তিনি তার লেখাতে – যার শিরোনাম ছিল “মন্ত্রিসভায় রদবদলের খবর এবার কেন সঠিক হওয়া প্রয়োজন” – আসলে কি বলতে চেয়েছেন। মন্ত্রীসভায় রদবদল আসন্ন, এই খবরটি আমাদের দেশের মধ্যবিত্ত আর শহুরে লোকেদের জন্য খুবই আকর্ষণীয়। আমরা সরকারের দেড়-দুই বছর পার হবার পর থেকেই আশা করতে থাকি যে সরকারের কিছু কিছু অকল্যানমূলক কাজের জন্য কিছু কিছু মন্ত্রীকে সরিয়ে দেওয়া উচিৎ।

যেহেতু আমরা যারা ভোটার, তারা তো আর ভোট দিয়ে সেই সব বদ্গুলোকে সরাতে পারি না, তাই আমাদের নির্ভর করতে হয় প্রধানমন্ত্রীর উপরে। কিন্তু তিনি এই সব পরিবর্তন সময় মত করতে পারেন না। এই সুযোগটাই নিয়ে থাকে পত্রিকাওয়ালারা। সেই ধারাবাহিকতায় মন্ত্রিসভার বড় রকমের রদবদল হতে যাচ্ছে বলে একেবারে টাটকা খবর ছেপেছে ডেইলি স্টার পত্রিকা গত রবিবার, ৬ ফেব্রুয়ারি। আগা বলেছেন এইটা নাকি গুজব নয়।

মজার কথা হল, এই ডেইলি স্টার পত্রিকার সম্পাদকীয়তে প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বৃটেন সফরকে ‘আরাম-আয়েশ’ বা ‘ছুটি কাটানোর সফর’ বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। ক্ষুব্ধ আগা তার আগের সপ্তাহের কলামে এই পত্রিকা নিয়ে কালের কন্ঠেই তার উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন। এই বারে একই পত্রিকার খবরকে সত্য বলে ধবে নিয়ে প্যাঁকে পড়া আওয়ামী লীগকে উদ্ধারে নামলেন। এই রকমের নীতিহীন লোকজন আছেন বলেই আমাদের আজ এত ‘উন্নতি’। আগা স্বীকার করেছেন যে বর্তমান মন্ত্রীসভাটি একটি ‘কচিকাঁচার আসর’।

তিনি এও স্বীকার করেছেন যে তার দলের নেত্রী এই মন্ত্রীসভার কারনে “গুড পারফরম্যান্স” দেখাতে পারছেন না। তিনি এও বলতে বাধ্য হয়েছেন যে, মন্ত্রিসভায় অদক্ষ ও অযোগ্য মন্ত্রীদের সংখ্যা বেশি এবং সমস্যা মোকাবিলা করার ব্যাপারে তাঁদের অনেকের নানা ধরনের অসুবিধা, দুর্বলতা ও অক্ষমতাও আছে। কারো কারো এই “দুর্বলতা ও অক্ষমতা কাটিয়ে ওঠার সদিচ্ছা এবং আন্তরিকতা” থাকলেও তারা তা পারেন নাই। সর্বোপরি দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে বিফলতার মূল কারন হিসাবে তিনি দায়ী করেছেন “এই সরকারের কিছু মন্ত্রীর অদক্ষতা ও অকর্মণ্যতা”-কে। এর মানে হচ্ছে এই মন্ত্রীসভার সদস্যগণ তাদের কাজ ঠিক মতন বোঝেন না, কাজ বুঝলেও ঠিক মতন করতে পারেন না, তাঁদের – সোজা বাংলায় বললে – হুকুম করার যোগ্যতাই নেই! কোন যোগ্যতা না থাকলেও তারা সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।

তাদের মুখ-নিঃসৃত-বচন আমাদের অনেক পীড়ার কারন হয়েছে। আগা-র মতে মন্ত্রীদের ভেতরে স্থানীয় সরকার ও সমবায় মন্ত্রক, তথ্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রক, শ্রম ও জনশক্তি মন্ত্রক, খাদ্য ও প্রাকৃতিক দুর্যোগসম্পর্কিত ব্যক্তিগণ ঠিক মতন কাজ করে ফল দেখাতে পারে নাই। সে সাথে স্বরাষ্ট্র, বাণিজ্য, যোগাযোগ, পানি সম্পদ, শিল্প, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রনালয়ের কাজও ভাল হয় নাই। সর্বোপরি অযোগ্য মন্ত্রীদের উপরে যোগ্যতর উপদেষ্টাদের বসিয়ে রিটায়ার্ড সচিবদের যে শাসন আওয়ামী লীগ চালু করেছিল, তা ব্যর্থ হয়েছে। এর মাশুল এই দলকে দিতেই হবে।

আগা ঠিকই বলেছেন, "সরকার বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির সমস্যার কোনই সমাধান করতে পারেন নাই"। সেই সঙ্গে দুর্নীতি দমনে নমনীয় হয়েছেন, সন্ত্রাস দমন করতে ব্যর্থ হয়েছেন, খাদ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করতে পারেন নাই, শেয়ারবাজারে ভয়ংকর ধ্বস তাদের আগের আমলের মতই দর্শক হিসাবে দেখে গেছেন – ইত্যকার বড় বড় অপবাদ মাথায় তুলে নিয়েছেন। আগা এর আগে বহুবার অস্বীকার করলেও এইবারে স্বীকার করেছেন, বা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন, ক্ষমতাসীনদের গোদের ওপর বিষ ফোঁড়ার মতো আছে ছাত্রলীগের এক শ্রেণীর নেতা-কর্মীর অব্যাহত সন্ত্রাস। তাই সব মিলিয়ে তার মতে “দেশ এখন আবার এক সর্বনাশা পরিস্থিতির সম্মুখীন”। এমন এক পরিস্থিতিতে তিনি কানাঘুষায় লন্ডনে শুনেছেন যে প্রধানমন্ত্রী "মন্ত্রিসভায় রদবদলের কথাটি সিরিয়াসলি ভাবছেন"।

হয়তো দেশে ফিরেই এই রদবদলের কাজে হাত দেবেন। ডেইলি স্টার [আগেই বলেছি গত সপ্তাহে অপরাধী ছিল এই পত্রিকাটি আগার কাছে] তো এখন খবরই ছেপে দিয়েছে, এই রদবদল ঘটতে যাচ্ছে। আগার মাথা ব্যাথার কারন হচ্ছে এই মূহুর্তে তার প্রিয় দল এবং ততধিক প্রিয় নেত্রী একটি “যুদ্ধকালীন সময়ের মত বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে” নিপতিত আছে। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে দলের “ভ্যাটার্নদের ডাক” দিয়ে তাদের থেকে “পরামর্শ ও সহযোগিতা” আদায়ের কথা বলেছেন। তার মাথা ব্যাথার আরেকটি কারন হল বিএনপি নেত্রীর ‘সাহস’ দেখে।

কেননা ঐ মহিলা “আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় বসার মাত্র দুই বছর না যেতেই এই সরকারের ক্ষমতা ত্যাগের দাবি জানানোর” মত সাহস দেখাচ্ছেন। আগার মাথা ব্যাথার আরেকটি কারন হল এতো কাল তার প্রিয় দল জনগণের নামে যে সব ভন্ডামী করে এসেছে, সেইগুলা উনার অতি অপছন্দের দলটি শিখে ফেলেছে। এই তো হরতালের আগের দিনের সন্ধ্যায় “বিএনপির দুর্বৃত্তরা” দশ-বারোটি গাড়ি “অগ্নিসংযোগ দ্বারা ধ্বংস করে (যার অধিকাংশই ছিল পাবলিক প্রোপার্টি) দেশে অরাজকতা সৃষ্টির রাজনীতিতে ফিরে যাওয়ার সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে”। এই একই কাজ আগার প্রিয় দলের লোকেরা করলে তা হত গনতন্ত্রের পক্ষের কাজ। এমন নিন্দনীয় কাজের নিন্দা তিনি আগে করতে পারেন নাই, তাই তার কাছে এখন এমন কথা কেউই আশা করে না।

আরেকটি কথা উনি উল্লেখ করেছেন। অনেকদিন পরে তার কোন জীবিত সোর্সের বরাতে কোন কথা জানা গেল। উনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রের রেফারেন্স দিয়েছেন। ঠিক কে এই খবর দিল তা উনি বলেন নাই। এই সূত্র কি টিউলিপ, রেহানা, ববি, নাকি ঘরের চাকর যে পরিবারের বিভিন্ন কথা ‘অভার-হিয়ার’ করে থাকে? যাই হোক উনি জেনে যা জানিয়েছেন, তাতে জানা গেল যে পরিবারের কিছু সদস্যের থেকে প্রধানমন্ত্রী ভয়ানক চাপের ভেতরে আছেন।

আর তাই “সহসা যে মন্ত্রিসভায় রদবদল ঘটাতে পারছেন না”। এই চাপের কারন হচ্ছে, সবাই “গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী পদে রদবদল এবং নিজেরা তাতে স্থলাভিষিক্ত হতে চান”। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে শেখ সেলিম কি অর্থ বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামলাতে পারবেন? আগা নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি-র ক্ষমতা গ্রহনকে “স্বাধীনতার শত্রু এবং একাত্তরের পরাজিত চক্রগুলো আবার ক্ষমতা দখলের সুযোগ” হিসাবে দেখেছেন। এবং মজার ব্যাপার হল, ২০০৭-এর নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়ার মত একই ভাষায় বলেছেন “তা [নির্বাচনে বিএনপি-র কাছে পরাজয়] হবে অতীতের সব বিপর্যয়ের চেয়ে ভয়াবহ বিপর্যয়”। তিনি হিসাব করে দেখেছেন যে সরকারের আর উন্নতি করার উপায় নাই, তাই তিনি সাবধান করে বলেছেন, “বিপর্যয় ঘটানোর সম্মিলিত ষড়যন্ত্র এখন আবার মাথা তুলছে”।

এর একটি উদাহরন হল পৌর নির্বাচনে বিএনপির ভাল করাটা। সব শেষে একটা কথা উল্লেখ করতে চাই। আমাদের দেশে পত্র-পত্রিকায় সরকারের দপ্তরগুলোকে ‘মন্ত্রণালয়’ বলা হয়, ‘মন্ত্রক’ না। মন্ত্রক যে দেশে বলা হয়, সেই দেশের নির্দেশে এই শব্দটি আমাদের বাজারে চালু করার চেষ্টা লেখকের আনুগত্যের কেবলাটিকে উন্মোচিতই শুধু করে না, তার পরাধীন মানসিকতারও প্রকাশ ঘটায়।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।