হিউমর হীন দের প্রবেশ নিষেধ!
এসব গোল্ডেন ফোল্ডেনের কোন দাম নাই যদি ভালো কোথাও চান্স না পাও , অনেক গোল্ডেন/এ+ধারী ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংল টাইপ সাবজেক্ট পড়তে বাধ্য হয় (কাউকে ছোট করতেছিনা , কিন্তু বাস্তবতা দেখাই দিলাম আর কি ) , আবার এ+ না পাওয়া পোলাপাইন ও পরবর্তীতে গিয়ে সাইন করে!
যাইহোক নিজের গল্প দিয়েই শুরু করি :
আমি আমার সময়ের দেশ সেরা সরকারি কলেজে পড়েছি , জীবনেও পড়াশোনা করতামনা ! পদার্থ,রসায়ন, অংক ,জীববিজ্ঞান , বাংলা , ইংরেজি সব প্রাইভেটে ভর্তি হয়ে থাকলেও প্রথম কয়েকদিন ছাড়া আর যাইনি , প্রাইভেটের জন্য যেই টাকা দিত বাড়ি থেকে সব মেরে খেতাম! একেবারেই উচ্ছন্নে গেছিলাম , জীবনটাকে ব্যপক ভাবে ইনজয় করতাম , ঘুরে বেড়াতাম , বন্ধুদের ভাষায় ব্যপক স্টাইলিশ ছিলাম তাই পোলাপাইন নিয়ে শো অফ করে বেড়াতাম , খেলাধূলা করতাম , এক কথায় পড়াশোনা ছাড়া দুনিয়ার সবকিছুই ভাল্লাগতো ! হাহা যাইহোক কলেজের যেই পরীক্ষা গুলা হতো প্রতিটাতেই কৃতিত্বের সাথে ফেইল করতাম বাংলা/ইংরেজী ছাড়া ( ইংরেজিতে এ+ ,আর বিজ্ঞানের সাবজেক্ট গুলাই পেতাম ১২/১৩/১৪ এরকম ) ! তো যখন এইচএসসি পরীক্ষা আসলো তখন তো চোখে সর্ষের ফুল দেখি , কিচ্ছু পারিনা! তো আমাদের বোর্ডে শর্টকাট সাজেশান পাওয়া যায় , সেটা দেখে এক প্রকার জোর করে মুখস্থ করলাম উত্তর গুলা (আমি আবার মুখস্থ পারিনা , পড়লাম আরেক বিপদে) ! এমনকি ১১ দিন ছুটি ছিলো অংক পরীক্ষার আগে ওই বলবিদ্যা/বিচ্ছিন্ন গনিত না কি যেন আর বালছাল আছে তাও মুখস্থ করতে বাধ্য হলাম! তো মুখস্থ করলে কি হয়রে ভাই? পরীক্ষার হলে গিয়ে সব ভুলে যাই , আর আমার আশেপাশের পোলাপাইনদের কাছ থেকে দেখা লাগে! যাইহোক শেষমেষ একটা ডিসেন্ট রেজাল্ট হলো ( যদিও গোল্ডেন ছিলোনা )! যাইহোক আমি উচ্ছাসে ভেসে যাবার অবকাশ পাইনি , কারণ জানতাম আমার যেই বেসিক জ্ঞান কম আর যেই পরিমাণ ঘাটতি আছে তা দিয়ে কোথাও চান্স হবেনা! তবে একটা ক্ষেত্র খুলে গেলো , সেটা হলো মেডিকেল এ পড়া! আমার বাবা মা আমাকে বরাবরই ডাক্তার হবার জন্য তাগিদ দিয়েছে , আর নিজের ও মাইন্ডসেটটাও অমন ছিলো যে ডাক্তার হবো! সেটাকেও স্বপ্ন মনে হচ্ছিল , হঠাৎ করেই ডিপ্রেস্ট হয়ে গেলাম! কিন্তু তখন মাথায় চিন্তা আসলো "আমার বন্ধুরা ভালো জায়গায় পড়ে আমার সামনে বুক ফুলায়ে ঘুরে বেড়াবে এইটা আমার দ্বারা মেনে নেয়া সম্ভব না" , হঠাৎ করেই জেদী হয়ে গেলাম যে আমাকে কিছু একটা করতেই হবে , আমি কারো কাছে ছোট হতে পারবোনা! কিন্তু হাতে মাত্র ২.৫-৩ মাস , কি আর করা? একেবারে প্রথম থেকে শুরু করলাম , কোপায়ে পড়ালেখা আরম্ভ করলাম! সব প্রিয় কাজ ভুলে খালি পড়াশোনা করতাম , ভেবে দেখলাম আজীবন তো কিছু পড়ি নাই এই ৩টা মাস একটু কষ্ট করি যেটা আমার লাইফ ডিটারমিন করবে! যাইহোক এমন ই কোপ দিলাম যে দেশের শীর্ষস্থানীয় একটা কোচিংয়ের এক ব্রাঞ্চে সেকেন্ড হয়ে গেলাম ( ব্যাচে ফার্স্ট , ওভারঅল সেকেন্ড ) এমনকি আমার যেই বন্ধুরা কলেজে নিয়মিত ফার্স্ট হতো তাদেরকে হারাই দিলাম কোচিংয়ে এসে ! আত্নবিশ্বাস এতটাই তুঙে ছিলো যে ধরেই নিয়েছিলাম আমি ইন শা আল্লাহ ঢাকা মেডিকেলে চান্স পেতে যাচ্ছি , কোচিংয়ের টিচাররাও তা প্রেডিক্ট করতো! সেজন্য মেডিকেল ছাড়া অন্য কোথাও ফর্ম ও তুলি নাই ! যাইহোক আমাদের বেলাতেই নতুন ফরম্যাটের প্রশ্নপত্র হওয়াই এবং বিগত ৬-৭ বছরের থেকে সবচে আলাদা প্লাস কঠিন হওয়াই আমার চাওয়া পূরণ হয় নাই , পরীক্ষার হলে গিয়ে তো হাল ই ছেড়ে দিয়েছিলাম যে এবার আর হলোনা , পরে দাগানো শুরু করলাম , যেহেতু বেসিক ছিলো শুন্যের খাতায় আমার কাদোমাদো অবস্থা হয়ে গেছিলো , চান্স পাবোনা ভেবে রেজাল্ট ও দেখতে যাই নাই , পরে আমার বোন দেখে জানাই আমার চান্স হইসে! ঢাকাতে না পড়লেও দেশের প্রথম সারির একটা মেডিকেল এই পড়ি আল্লাহর রহমতে! ওইবার ই বুঝেছিলাম কঠোর পরিশ্রম আর সত প্রচেষ্টা থাকলে আল্লাহ কাউকে নিরাশ করেন না!
আমার মেডিকেলের আমার ব্যাচের যে ফার্স্ট বয় তার কোনোটাতেই এ+ ছিলোনা , ৪.৬৩/৪.৫০ এমন ছিলো! বাট ও এখন এতই ভালো পারে যে ও যে অনেক ভালো ডাক্তার হবে আর অনেকগুলা ডিগ্রী অর্জন করবে তা নিয়ে কোনই সন্দেহ নাই!
এইটাই বলতে চাচ্ছি যারা রেজাল্ট খারাপ করেছে বা এ+ বা গোল্ডেন পাইনি বা আমার মত বাজে অবস্থা যাদের তারা যদি ভাবে যে তার দ্বারা কিছু হবেনা তবে মারাত্মক ভুল করতে যাচ্ছো!
কাজেই যারা খারাপ রেজাল্ট করেছো বা যারা এ+ বা গোল্ডেন পাও নাই তারা নিজেদের ছোট ভাবা বন্ধ কর ! বরং ধরে নাও তোমার ভেতরে কিছু একটা আছে , তুমি চেষ্টা করলেই হবে , নিজের ভেতরের সুপ্তশক্তিটা জাগিয়ে তোল , আত্নপ্রত্যয়ী আর আত্নবিশ্বাসী হও ! লাক বলতে কিছু নাই ভাই , মনে রাখবা ভাগ্য শুধুমাত্র সাহসীদেরকেই ফেভার করে , কাজেই অনেস্ট চেষ্টাটা দাও , নিজের সর্বোচ্চটা দাও , নিজের লক্ষ্য পূরনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হও , নিজের জেদটা জাগ্রত কর , কারো কথায় পিছপা হবানা আর সৃষ্টিকর্তার উপর বিশ্বাস রাখো! ইন শা আল্লাহ তুমি পারবেই , তুমি পারবেই সবাইকে দেখিয়ে দিতে!
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।