আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কলেজছাত্রীর জিহ্বা কাটার চেষ্টা, বখাটে গ্রেপ্তার



বরগুনার বেতাগী উপজেলায় এক বখাটে ধারালো ছুরি দিয়ে কলেজপড়ুয়া এক গৃহবধূর (১৯) জিহ্বা কাটার চেষ্টা করেছে। বখাটে শাহ জালাল (৩০) মেয়েটির মাথায়ও ছুরি দিয়ে আঘাত করেছেন। গত শনিবার রাতে বেতাগী পৌর শহরের উপকণ্ঠে দক্ষিণ বেতাগী গ্রামে মেয়েটির নিজ বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহতাবস্থায় মেয়েটিকে বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর জিহ্বায় ছয়টি এবং মাথায় সাতটি সেলাই দেওয়া হয়েছে।

এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ শনিবার রাতেই বখাটে শাহ জালালকে আটক করে। মেয়েটির মা গতকাল রোববার বিকেলে শাহ জালাল ও অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে বেতাগী থানায় হত্যাচেষ্টার মামলা করেছেন। আহত মেয়েটির পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মেয়েটি বেতাগী ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। এক বছর আগে তাঁর বিয়ে হয়। তাঁর স্বামী বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর (এসএসএফ) সদস্য হিসেবে কর্মরত।

গতকাল দুপুর ১২টার দিকে বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, মেয়েটি হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন। জিহ্বা ও মাথায় সেলাই পড়ায় কোনো কথা বলতে পারছিলেন না। পাশে বসে কাঁদছিলেন তাঁর মা। হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা ফারিয়া ফারুকী প্রথম আলোকে জানান, ছুরিজাতীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে মেয়েটির জিহ্বা ও মাথায় আঘাত করা হয়েছে। সৌভাগ্যক্রমে জিহ্বা পুরোপুরি কাটা যায়নি।

জিহ্বায় ছয়টি এবং মাথায় সাতটি সেলাই দেওয়া হয়েছে। মেয়ের মা জানান, শনিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে তিনি দুই ছেলেকে নিয়ে বাড়ির নিচতলায় বসে ভাত খাচ্ছিলেন এবং তাঁর মেয়ে দোতলায় নামাজ শেষে পবিত্র কোরআন শরিফ তেলাওয়াত করছিলেন। এ সময় দোতলায় কিছু একটা পড়ে যাওয়ার শব্দ পেয়ে দোতলায় উঠে দেখেন মেয়ে দোতলার পাটাতনের ওপর রক্তাক্ত অবস্থায় অচেতন হয়ে পড়ে আছেন। তিনি দোতলার সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় শাহ জালালকে দ্রুত সেখান থেকে পালিয়ে যেতে দেখেন। শাহ জালাল তাঁদের প্রতিবেশী গণি মিয়ার ছেলে।

মেয়েটির মা আরও জানান, ঘটনার কিছু সময় পর শাহ জালাল ডাকাতি হওয়ার কথা বলে বেতাগী থানার কয়েকজন পুলিশ নিয়ে তাঁদের বাড়িতে আসেন। এ সময় তিনি পুলিশকে ঘটনা খুলে বললে পুলিশ তাৎক্ষণিক শাহ জালালকে আটক করে। দক্ষিণ বেতাগী গ্রামের একাধিক লোক প্রথম আলোকে জানান, মেয়েটি যখন অষ্টম শ্রেণীতে পড়ত তখন থেকেই শাহ জালাল তাকে উত্ত্যক্ত করতেন। এক বছর আগে মেয়েটিকে স্থানীয় রানীপুর গ্রামের এক ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার পর শাহ জালাল আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। তিনি বিভিন্ন সময় মুঠোফোনে ও বেনামে চিঠি দিয়ে মেয়েটিকে তুলে নেওয়ার হুমকি দেন।

এতে ভীতসন্ত্রস্ত্র হয়ে মেয়েটি কয়েক মাস ঢাকায় তাঁর খালার বাড়িতে থাকেন। সম্প্রতি সেখান থেকে বাড়িতে এলে বখাটে শাহ জালাল আবার তাঁকে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন। এরই সূত্র ধরে ২৫ জানুয়ারি বিকেলে মেয়েটি বাড়ির সামনে বের হলে বখাটে শাহ জালাল তাঁর মুখ চেপে তুলে নেওয়ার চেষ্টা চালান। লোকজন টের পেয়ে শাহ জালালকে ধরে ফেলে। ধরা পড়ার পর তিনি এ ধরনের কাজ আর করবেন না বলে মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান।

এই অপমানের প্রতিশোধ নিতেই শাহ জালাল মেয়েটিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেছেন বলে স্থানীয় লোকজনের ধারণা। জানা গেছে, আহত মেয়েটির বাবা বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওই হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী। আর বখাটে শাহ জালালের বাবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। তিনি আর বেঁচে নেই। শাহ জালাল এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার পর এলাকায় মেয়েদের উত্ত্যক্ত করাসহ ছোটখাটো নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।

বর্তমানে তিনি ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলের একজন চালক। গতকাল দুপুরে বখাটে শাহ জালাল বেতাগী থানা হাজতে সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, তিনি এ ঘটনায় জড়িত নন। তাঁকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এ ঘটনায় ফাঁসানো হয়েছে। এদিকে গতকাল সকাল থেকে বিষয়টি আপস-মীমাংসার জন্য স্থানীয় বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা ব্যাপক চেষ্টা চালান এবং মেয়েটির পরিবারকে মামলা না করতে চাপ দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বেতাগী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা উপপরিদর্শক (এসআই) তাপস চন্দ্র গুহ গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, মেয়েটিকে আহত করার ঘটনায় শাহ জালাল যে জড়িত তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

এ ঘটনায় আর কেউ জড়িত ছিল কি না তা শাহ জালালকে জিজ্ঞাসাবাদ করে নিশ্চিত হওয়া যাবে এবং তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। প্রথম আলো

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।