আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নব বিবাহিতা স্ত্রীর সাথে বাইরে কতটুকু আন্তরিক আর রোমান্টিক হবেন?


হানিমুন ট্রিপ বলে একটা ব্যাপার আছে, মানুষ যখন হানিমুনে যায়, তখন কপোত-কপোতীরা একান্ত অন্তরঙভাবে ঘুরে বেড়ায়, কক্সবাজার আর সেন্টমার্টিনে গেলে সহজেই বুঝা যায়, কারা কারা নব বিবাহিত। তাদের বডি ল্যাঙুয়েজে অনেক কিছুই প্রকাশ পায়, স্বামীর মনে হয় স্ত্রীর চোখে, মুখে, চুলে একটু পর পর ধুলা বালি পড়ছে, ঘন ঘন ময়লা পরিষ্কার করে দেয় (...........আরো কত কি.........)। স্ত্রীর প্রতি অতিরিক্ত কেয়ারিং দেখে অন্যরা হয়ত মুখ টিপে টিপে হাসে। তবে যারা দীর্ঘদিন প্রেম করে শেষে বিয়ে করেছে, তাদের মধ্যে আবেগের রসায়ন টা তেমন প্রবলভাবে দেখা যায় না। হয়ত উচ্ছ্বাস থাকে, স্বপ্ন হলো সত্যি, এই ব্যাপারটা থাকে, কিন্তু হানিমুন ট্রিপে গিয়ে পথে ঘাটে গায়ের উপর লুটিয়ে পড়া জিনিসটা কম দেখা যায়।

কিছুদিন আগে এক বিয়ের অনুষ্ঠানে গেলাম, ঢাকারই এক কমিনিউটি সেন্টারে। সেই বিয়েতেই আবার আর একটা নববিবাহিত দম্পতি আসলো, যাদের মাস খানেক আগে বিয়ে হয়েছে। বয়সের ব্যবধানটা অনেক (৩৫+ এবং ২২ কি ২৩)। সবাই বসে আছে, এর মধ্যে দেখা গেলো, ৩৫+ ওয়ালা তার স্ত্রীকে বগলদাবা করে গা ঘেষাঘেষি করে বসেছে। কোনো ভাবেই তার বউয়ের হাত ছাড়ছেন না।

আমি প্রায় ২০ মিনিট ধরে (এইভাবে হাত ধরে বসেছিল বলেই আমার চোখ বার বার ঐ দিকে যাচ্ছিলো -- ) খেয়াল করলাম, হাত ছাড়ার নাম নাই, ধরে আছে তো ধরেই আছে। একই অনুষ্ঠানে ৩৫+ ওয়ালার মামা, চাচা আরো অনেকেই আছে, কিন্তু তার অতো ভ্রুক্ষেপ নাই। অনেক সাধনার পর, অনেক বাছাবাছি করে বিয়ে করেছেন, এই বউকে তো আর হাতছাড়া করা যাবে না। রোমান্টিসিজম ভালো জিনিস, তাই বলে মুরুব্বীদের সামনে এইটা দেখতে বড়ই দৃষ্টিকটু লাগছিল। আর একটা ব্যাপার খেয়াল করেছি, পথে ঘাটে নতুন বউয়ের সামনে অনেক জামাই ওভার স্মার্ট হতে চাই, দেখাতে চায়, সেই একমাত্র বীর পুরুষ, তার মতো বীর পুরুষকে বিয়ে করে বউ কোনো ভুল করে নাই।

একবার ট্রেনে চট্রগ্রাম থেকে ঢাকায় আসার সময় এই রকম একটা মাথা মোটা বরের সাথে আমার রীতিমত ঝগড়া লেগে গিয়েছিল। সেই নতুন বর-কনে হানিমুনে কক্সবাজার গিয়ে ঢাকায় ফিরছিল, তাদের বিদায় দিতে মনে হয় চট্টগ্রাম থেকে শ্বশুর পক্ষের কেউ একজন (শ্বশুরও হতে পারে) স্টেশনে এসেছিল। ট্রেনে যারা নিয়মিত ভ্রমণ করেন, তারা জানেন, সবার লাগেজ রাখার জন্য কোনো ফিক্সড প্লেস নাই। তারপরও সুবিধার জন্য সবাই যার যার মাথার উপরেই রাখে। কিন্তু ট্রেনের বগির সামনে ও পিছনে কয়েকটা সিটের উপরে লাগেজ রাখার জন্য কোনো ফ্রেম থাকে না।

ঐ সিটের যাত্রীরা কাছাকাছি উপরের ফ্রেমে রাখেন। পরের জন তার পাশেই রাখেন, এইভাবে চলে। কিন্তু নতুন জামাইয়ের শ্বশুর ফতোয়া দিলেন ( নতুন মেয়ের জামাইয়ের প্রতি অতিরিক্ত কেয়ারিং হেতু), যার ব্যাগ, তার মাথার উপরেই রাখতে হবে। বলে তো শ্বশুর নেমে চলে গেলেন, ট্রেন ও ছেড়ে দিলো। আমার সিটের উপরে ফ্রেম ছিলো না, আমার ছোট্ট একটা স্কুল ব্যাগ টাইপের ব্যাগ ছিলো, সেটা রাখলাম ফ্রেমের উপরে।

ঐ সময় নতুন জামাই আসলো, সে আমার ব্যাগ সরিয়ে নিচে ফেলে দিলো। কারণ শ্বশুর একটা কথা বলেছেন, সেটা তো ফলাতে হবে। না হলে বীরপুরুষ কেমনে হবে? এতো মাথামোটা হয়ে কেমনে স্মার্টনেস দেখায়, সেটা বোধগম্য হলো না। কখনো ট্রেন জার্নি না করলেও বউয়ের সামনে তো আর আনস্মার্ট হওয়া যাবে না, তাই না?
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।