আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মিঃ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড

জঞ্জাল যত আটকে থাকুক হৃদয়ের মাঝখানে, কিছু সুর ফেরাতে পারে সম্ভাবনার তানে, তাই সঙ্কুচিত কোরোনা হে অফুরন্ত ডালা, প্রাণে খুশির ঢেউ জাগিয়ে সাজাও নতুন পালা ক্লান্ত শরীর নিয়ে ঘাসের উপর বসে পড়ল ছেলেটি। পাশেই পানি আর তোয়ালে রাখা। হাত বাড়িয়ে তোয়ালেটা তুলতে যাবে তখনি একটা হাত ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে বলল, 'আগে আমি,তুই দূর হ শালা আফ্রিকান সঙ্কর'। বন্ধুর মুখে এই কথা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল ওর। কিন্তু কিছু বললনা।

মা কারো সাথে ঝগড়া করতে নিষেধ করেছেন। মন খারাপ নিয়েই বাসায় ফিরে এলো। হতাশ কণ্ঠে মাকে বলল,'আমি আর ফুটবল খেলতে যাবনা,মা'। মা জিজ্ঞেস করলেন,'কেন কি হয়েছে,আবার'। ছেলেটি জবাব দিলো-'আজ আবার এক ছেলে আমাকে আফ্রিকান বলেছে।

আমি আর ওখানে যাবনা। ' মা হেসে ছেলেকে হাত বাড়িয়ে কাছে টেনে নিলেন,'বোকা ছেলে। বলেছে তো কি হয়েছে,তুই পরিশ্রম করে বড় খেলোয়াড় হ,দেখবি একদিন তোর অটোগ্রাফ নেবার জন্য ওরা মুখিয়ে থাকবে। ' ছেলেটি মাথা নিচু করেই বল্ল,'কিন্তু আমার যে আর ভালো লাগেনা,মা'। মা বললেন,'সব ব্যাপারকে পাত্তা দিতে হয়না,বাবা।

তুই তোর কাজ করে যা,একদিন দেখবি পরিশ্রমের পুরস্কার ঠিকই পাবি। ' ছেলেটির নাম উইলসন। চেহারা দেখে প্রায় বোঝা না গেলেও এটা সত্যি ,উইলসনের দাদা আফ্রিকার সিয়েরা লিওনের অধিবাসী ছিলেন। এদেশে এসে এদেশের মেয়ে বিয়ে করে থিতু হলেন। ছেলেও বিয়ে করল আরেক শ্বেতাঙ্গিনীকে।

গায়ের চামড়া প্রায় সাদা হবার পরও তৃতীয় প্রজন্মে এসেও বেচারাকে বর্ণবাদী গালি হজম করতে হচ্ছে। কিন্তু ছেলেটি হাল ছাড়েনি। মায়ের স্বপ্নকে যে সত্যি করতে হবে! কঠিন পরিশ্রম করে স্কুল টিমে জায়গা করে নিল। স্কুল টিমে একের পর এক নৈপুণ্য স্থানীয় পত্রিকাতে ছাপা হলো। কিন্তু মায়ের ইচ্ছে আরও বড়।

স্কুলের গণ্ডি ছাড়িয়ে আরও বহুদূর যেতে হবে। সেই সুযোগ এলো। গ্রেনাডা স্কুল কাপ ফাইনালে স্যালফোরড বয়েজ দলকে ম্যান অফ দ্য ম্যাচ নৈপুণ্যে শিরোপা এনে দিলো। কদিন বাদেই উইলসনের ১৪তম জন্মদিনের শুভক্ষণ। বন্ধুদের সাথে হৈচৈ করছিল সে।

হঠাৎ দুজন লোক এসে মায়ের সাথে আলাপ করছে। একজনকে কেমন যেন চেনা চেনা লাগছে। মা ডাকতেই এগিয়ে গেল সে। মা বললেন,'উনি ফারগুসন,ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ম্যানেজার। তোকে ওনাদের একাডেমীতে ভর্তি করাতে আগ্রহী।

তুই কি বলিস?' উইলসন যেন স্বপ্ন দেখছে। বিশ্বাস করতে গায়ে চিমতি কেটে দেখল সে। যদিও ততদিনে ম্যান সিটিতে যাওয়া আসা ছিল। তবু ভীষণ উচ্ছসিত হলো সে। ম্যান ইউনাইটেড ঐতিহ্যবাহী ক্লাব।

ওল্ড ট্রাফোর্ডে গিয়ে বেশ কয়েকবার খেলা দেখেছে ও। কিন্তু ক্লাবটির সেই সুদিন আর নেই। অবশ্য নতুন ম্যানেজারটি প্রথম মৌসুমেই ভালো খেল দেখিয়েছেন। সিদ্ধান্ত নিতে না পেরে উইলসন মায়ের উপর ছেড়ে দিলো বিষয়টা। মা ভুল করেননি।

যোগ্য লোকের হাতেই তুলে দিলেন ছেলের দায়িত্ব। বছর তিনেক পর ১৭ তম জন্মদিনে ইউনাইটেড ফার্স্ট টিমের সাথে চুক্তি হল ছেলেটির। এর মাস তিনেক পরেই এভারটনের সাথে অভিষেক হলো ওর। সেই শুরু,তার পর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি ছেলেটিকে। একের পর এক রেকর্ডের সঙ্গী ব্রিটিশ ফুটবলের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল ও অধিক শিরোপাজয়ী খেলোয়াড়ে পরিণত হলো সে।

ওহো ... বলা হয়নি,না?ছেলেটি ততদিনে নিজের নামের শেষ অংশটি পাল্টে ফেলেছে। মাতৃভক্ত অসম্ভব পরিশ্রমী,মেধাবী ছেলেটি উইলসন নামটি বাদ দিয়ে মায়ের নামটি জড়িয়ে নেয় প্রগাঢ় মমত্ববোধে। মায়ের নামেই সাড়া বিশ্ব চেনে তাকে। মায়ের নামটি ছিল গিগস। প্রায় চল্লিশে পা দিয়েও চমৎকার নৈপুণ্য প্রদর্শন করে চলা রায়ান গিগস ক্লাব ও দেশের হয়ে ১০০০ তম ম্যাচ খেলতে যাচ্ছেন।

ওয়ান ক্লাব ম্যান,মিঃ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের এই মাইলস্টোন তার ক্যারিয়ারকে আরও সমৃদ্ধ করবে নিঃসন্দেহে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।