আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গত বৈশাখে প্রতুল আর দেশের বর্তমান কথা বলেছিলাম!

মাহফুজ জুয়েল

‘পহেলা বৈশাখঃ বাজুক বাঙালির মহামিলনের শাঁখ’- এটি একটি না-লেখা লেখার শিরোনাম। বঙ্গাব্দ ১৪১৭ উপলক্ষে এটি লেখা হওয়ার কথা ছিল। এবং বিশ্বাস করুন, সেজন্য আমি মনে মনে এবং জ্ঞানবৃক্ষের বনে বনে পুস্তকারণ্যের পাতায় পাতায় ঘুরে বেড়িয়েছি! ঘুরলেই কী সবাই দেখে? বা, দেখলেও কী সবাই দেখে? অনেক সময় এমন হয় না, মানুষ অপলক তাকিয়ে থাকে, কিন্তু কিছুই দেখে না! আমার ক্ষেত্রেও···। বাংলা, বাঙালি এবং বাংলাদেশ- এই ১৪১৭ বঙ্গাব্দের আগমনী আবহকালে আমার কাছে একইরকমভাবে বিপন্ন। বাংলা এখন বিক্ষত, বিক্ষিপ্ত।

বাঙালি এখনো বিচ্ছিন্ন, এবং নিরবচ্ছিন্ন আত্মঘাতী। আর বাংলাদেশ- ভীষণ বিপর্যস্ত, তার বৃত্তবন্দি স্বার্থান্ধ লুটেরা রাজনীতির রোদেলা আকাশের আড়ালে শেকড়-উপড়ানো ভয়ংকর কালবৈশাখী ঝড়! বাংলা ও বাঙালির বিরুদ্ধে, এবং মুক্তিযুদ্ধের সেই স্বপ্ন-কাঙ্ক্ষার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই বেশ বড়সড়ো কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলি পাঁকিয়ে উঠেছে। এসব সব হয়েছে ক্ষমতা ও অর্থলোভী কিছু সংকীর্ণমনা মানুষের নির্মম নির্বুদ্ধিতার জন্য। রাষ্ট্রকে যদি ঘরের সঙ্গে তুলনা করা হয়, পরিবারের সঙ্গে তুলনা করা হয়, তবে দেখা যাবে আমাদের কখনোই কোনো পোক্তখুঁটির শক্ত ঘর হয়নি। আমাদের সত্যিকারের কোনো বুদ্ধিমান এবং কাজের কাজি অভিভাবক হয়নি, এখনো নেই।

আমরা অভিভাবকহীন নড়বড়ে অপরিচ্ছন্ন অগোছালো নৈরাজ্যনিষ্ঠ সদস্যবহুল লক্ষ্য-উদ্দেশ্য-গন্তব্যহীন এক বিরক্তিকর পরিবারে বেড়ে উঠছি। আমাদের শিক্ষা-দীক্ষা কেন, কোনো কিছুর ক্ষেত্রেই সুচিন্তিত সুপরিকল্পিত সুদূরদর্শী কোনো ভাবনা নেই। আমাদের জাতিগত, জাতীয় এবং ধর্মীয় সব উৎসব অন্তঃসারশূন্য কলরবমাত্র; নেহাত লোকদেখানো আর স্থূল ভোজনবিলাসিতায় আবিল। আমরা আসলে সপরিবারে হাওয়ার তালে নৌকা ভাসিয়ে চলেছি। আমরা কোথায় যাবো কেউ জানি না! তো এমন পরিবারে, এমন পরিবেশে যা-ই হয়, যা-ই হবে, তা-ই যাচ্ছেতাই হবে, যেমন হচ্ছে।

আমরা সবাই আসলে, যে যার মতো করে যা ইচ্ছা তাই করছি। না-লেখা লেখাটার জন্য আমি দুটো উদ্ধৃতি লিখে রেখেছিলাম। নববর্ষ আর উৎসব বিষয়ক। লেখাটি যেহেতু লেখা হয়নি, তাই আমার কথাগুলো আমার কাছেই রয়ে গেলো। কিন্তু কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আর ডক্টর মুহম্মদ এনামুল হকের কথাগুলো বরং বলে দেই।

এতে অনেকটা বৈশাখী ভার এবং দায়মুক্ত হওয়া যাবে বলে মনে হচ্ছে। নববর্ষ সম্বন্ধে ড· হকের কথাটি ছিলঃ ‘‘খ্রিষ্টাব্দ, হিজরী অব্দ, শকাব্দ, বিক্রমাব্দ, বুদ্ধাব্দ অথবা বঙ্গাব্দ প্রভৃতি কোনো নির্দিষ্ট বছরের সাথে নববর্ষের কোনো যোগ নেই। অর্থাৎ কোনো প্রকারের বৎসর গণনার প্রারম্ভ থেকে কোনো দেশের অথবা জাতির ‘নববর্ষ’ শুরু হয়নি। এ হচ্ছে প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে চলে আসা একটা বাৎসরিক উৎসব। কোনো ধর্মের সাথেও নববর্ষের কোনো সম্পর্ক নেই।

বিশিষ্ট বৎসরগুলো যেমন পরে এসে এতে যুক্ত হয়েছে বিশিষ্ট ধর্মও তেমনি উড়ে এসে জুড়ে বসেছে। প্রকৃতপক্ষে বয়সের তুলনায় ‘অব্দই’ বলুন আর ধর্মই বলুন, নববর্ষের উৎসবের কাছে নেহাত সেদিনের খোকা, আধুনিক নববর্ষের উৎসবের মধ্যে আদিম ‘নববর্ষের’ পরিবর্তিত রূপ লুকিয়ে আছে। তাই, তার প্রাচীন অনুষ্ঠানাদিকে আধুনিক অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে থেকে খুঁজে বের করতে হবে। ’ ঠাকুর বলেছেন উৎসবের মাহাত্ম্য নিয়ে চুম্বক কথা। বলেছেন, ‘প্রতিদিন মানুষ ক্ষুদ্র দীন একাকী কিন্তু উৎসবের দিন মানুষ বৃহৎ, সেদিন সে সমস্ত মানুষের সঙ্গে একত্র হইয়া বৃহৎ, সে দিন সে সমস্ত মনুষ্যত্বের শক্তি অনুভব করিয়া মহৎ।

’ ডক্টরের নববর্ষের সারকথা আর ঠাকুরের উৎসব-মাহাত্ম্যকে পুঁজি করেই আমি বাঙালিকে ‘আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার’ বলে মহামিলনের শাঁখ বাজাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তার আগেই বাংলাদেশে এলেন ‘আমি বাংলায় গান গাই’-এর অতুল-মানুষ প্রতুল মুখোপাধ্যায়। সৌভাগ্যক্রমে বেশ কয়েক দিন বিচ্ছিন্নভাবে তাঁর কণ্ঠ ও সঙ্গসুধা উপভোগ করার সুযোগ পেয়েছিলাম। এবং এরই একপর্যায়ে মনে হলো, প্রতুল স্বয়ং পহেলা বৈশাখ! প্রতুল নিজেই আবহমান বাংলা ও বাঙালি। তাঁর ‘আমি বাংলায় গান গাই’ গানটির জন্মও বাংলা ১৪০০ সালের পয়লা বৈশাখে।

এটিতো আসলে গান নয়, ইতিহাস। প্রতুলের মুখে গানটির জন্মবৃত্তান্ত ছিল এরকম, ‘১৪০০ সালের পয়লা বৈশাখের সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে গানটি লিখেছিলাম। সুরটাও একই সঙ্গে করেছিলাম। বিকেলে কফি হাউসে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে গাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কী ভেবে আর গাইনি।

এরপর আমার খুব কাছের কয়েকজনকে গানটা শোনালাম। সবাই উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করলেন। ’ এবং যেখানেই যার কানেই এ গান একবার ঢুকেছে, তাঁর প্রাণ ছুঁয়ে মন ছুঁয়ে মনেই গেঁথে গেছে। এ গানের প্রতি মানুষের যে ভালোলাগা ভালোবাসা, তা অনেকটা ভক্তির পর্যায়ে চলে গেছে। মানুষ যেরকম করে ভক্তিগীতি গায়, ঠিক তেমন করেই এ গানের সঙ্গে সবাই গলা মেলায়।

আর এমনিভাবেই গানটি ভারতবিজয় শেষে বাংলাদেশ, এবং এখন বিশ্ববাঙালির প্রাণের গান। বিবিসি’র জরিপে সর্বকালের সেরা জনপ্রিয় বাংলা গানের তালিকায় ৬ষ্ঠ গান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে গানটি। প্রতুল বাংলাদেশে প্রথম এসেছিলেন ১৯৪২ সালে, বাবার সঙ্গে। তারপর আর আসা হয়নি। এরমধ্যে বেশ কয়েক বছর ধরে বেশ কয়েকবার বেশ কয়েকজন তাঁকে বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ আহ্বান অনুরোধ জানিয়েছিল।

কিন্তু তখন শেষ পর্যন্ত নানা কারণে আর তিনি আসতে পারেননি। এবার ঢাকায় এসেছিলেন গত ২৬ মার্চ শুক্রবার দুপুরে। বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর আমন্ত্রণে। ‘সত্যেন সেন গণসংগীত উ্‌ৗ২৫১০;সব ও জাতীয় গণসংগীত প্রতিযোগিতা’র প্রধান অতিথি ছিলেন তিনি। এতদিন আসতে না পারার বিষয়ে বললেন, ‘কিছুটা অভিমানও ছিল।

সেটা বলব না। যখন জানতে পারলাম, নতুন প্রজন্মের অনেক শ্রোতা আমার গান শোনার জন্য অপেক্ষা করছে, তখন সব অভিমান ভুলে গেছি। ’ এবার বাংলাদেশে আসা নিশ্চিত হওয়ার পর গত ২৫ জানুয়ারি (২০১০) একটি চমৎকার গান লিখেছেন তিনি। একেবারে ষোলো আনা সফল গান। ‘দুইজনায় বাঙালি ছিলাম/ দেখো দেখি কাণ্ডখান/ তুমি এখন বাংলাদেশি/ আমারে কও ইন্ডিয়ান।

’ এই গান যেখানেই গেয়েছেন, সেখানেই মানুষ ব্যাপক সাড়া দিয়েছে। কোথাও কোথাও কেউ কেউ কেঁদে ফেলেছে। প্রতুল গান গান না। প্রতুল গান বলেন। মানুষ কথা যেমন করে বলে, তিনি গানও তেমন করে বলেন।

আর একথাগুলোও তিনি শ্রোতা-দর্শক এবং সঙ্গীতবোদ্ধাদের উদ্দেশে উচ্চারণ করেন। তিনি একা গান না। তিনি তা চান না। চান সবাই গাক, সবাই গলা মিলাক এবং গানের কথাকে প্রাণের কথা হিসেবে বিশ্বাস করুক। এবং বিশ্বাস থেকে উচ্চারণ করুক গান।

ঘন্টার পর ঘন্টা তিনি গান গেয়ে যান খালি গলায়, কোনো বাদ্যযন্ত্রের সাহায্য ছাড়াই । এই গান যারা শুনেছেন তাঁরা তাদের সেই অনুভূতি কখনো ভুলতে পারবেন না । তাঁর গান আন্দোলনের গান, লড়াইয়ের গান, ভালবাসার গান। সর্বোপরি মানুষের গান। কোন মানুষ? মানবধর্মের চিরকাঙ্খিত সেই মানবিক মানুষ।

‘আমি বাংলায় গান গাই’ গানটি বাংলা ভাষার প্রতি ভালবাসা জ্ঞাপন করা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ গান। এই গানটি তাঁকে গানের জগতে অমরত্বের স্থানে বসিয়ে দিয়েছে। প্রায় ৩শ’ গান আছে তাঁর। দেশি-বিদেশি কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, যাত্রাপালা থেকে শুরু করে সম্্‌ভাব্য সব উৎস থেকেই তিনি কথা সংগ্রহ করেন। গুরুগম্্‌ভীর কথাকে সব মানুষের বোঝার উপযোগী করেন, সহজ করেন, মিষ্টি করেন।

আর এমনিভাবেই অনেক অনেক কষ্ট করে তিনি একেকটা গান সৃষ্টি করেন, নির্মাণ করেন। তাঁর এই নির্মাণ প্রক্রিয়াও একেবারে মৌলিক। এর আগে এমনভাবে কেউ গান করেনি। গানের সঙ্গে বিশ্ব বাকশিল্প ও নাট্যাভিনয়ের এমন বৈশ্বিক কারুকাজ, এমন জাদু তাঁর আগে কেউ এমন করে দেখাতে পারেনি। প্রতিটি শব্দকে তিনি শব্দের যথার্থ দ্যোতনা-ব্যঞ্জনায় ব্যঞ্জিত করে, মুক্তিকামী মানুষের মনের রঙে রঞ্জিত করে সুরসুধায় সিঞ্চিত করেন।

যথার্থ গুরুত্ব দিয়ে প্রতিটি শব্দ উচ্চারণের এ ব্যাপারটিকে তিনি হেসে হেসেই বলেন, শব্দসম্মান। এ শব্দসম্মান ব্যাপারটি বুঝতেও কারুই কষ্ট হয় না, শুধু তাঁর গানে কান পাতলেই হয়। এবারের সফরে ছোট-বড় ঘরোয়া-বারোয়া প্রতিষ্ঠান-ব্যক্তি সব মিলিয়ে প্রায় ১৯টি আড্ডা-আয়োজন-অনুষ্ঠানে শরিক হয়েছেন প্রতুল। তাঁর সফরসঙ্গী ছিলেন পশ্চিমবাংলার ভাষা সংস্ড়্গৃতি স্বাধিকার মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক রতন বসু মজুমদার। তিনি শুধু সফরসঙ্গীই নন, তিনি আসলে একাধারে প্রতুলের সফর-ব্যবস্থাপক, পরিবেশনা পরামর্শক এবং সুবন্ধু সুনিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব পালন করেছেন।

পুরো সফর সর্বাঙ্গসুন্দর ও সাফল্যমণ্ডিত হওয়ার পেছনে তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য। প্রতুল প্রাণবন্ত এবং দুর্দান্ত পারফর্ম করেছেন ২৮ মার্চ সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ছাত্র ইউনিয়নের সংগীত আড্ডায়। আড্ডাবাজ তো! এছাড়া সমানতালে মাতিয়েছেন একইদিন সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে; ২৯ মার্চ বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের একক সংগীতানুষ্ঠানে। নারায়ণগঞ্জ শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ, ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবন মিলনায়তন এবং সর্বশেষ যশোরে শহীদ মিনার সংলগ্ন ময়দানে মানুষকে রীতিমতো গানের জাদুতে বশীভূত করেছেন। দর্শক-শ্রোতারা তাঁর জাদুর কাঠি হয়ে গিয়েছিল।

তিনি তাদেরকে গাইয়েছেন, নাচিয়েছেন, হাসিয়েছেন, কাঁদিয়েছেন এবং চেতনার গহীনে মানুষ হওয়ার মন্ত্র ছড়িয়ে দিয়েছেন। প্রতুল বাংলাদেশকে মনে করেন পিতৃভূমি। তাঁর দাদার বাড়ি ছিল বরিশালে। তাঁর জন্ম ১৯৪২ সালে। শৈশব কেটেছে পশ্চিমবঙ্গের চুচুড়ায়।

কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে বিএসসি এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্ট্যাটিসটিক্সে এমএসসি করেছেন। কিছুকাল নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন কলেজে অধ্যাপনা করার পরে চাকরি করেছেন ক্যালকাটা মেট্রোপলিটন প্ল্যানিং অরগানাইজেশনে। এখান থেকে গিয়েছেন ইউনাইটেড ব্যাংক অব ইন্ডিয়ায়, সেখানে চিফ ম্যানেজার, স্ট্যাটিসটি অ্যান্ড লং রেঞ্জ প্ল্যানিং পদে অবসর নিয়েছেন। পুঁজিবাদনির্ভর বাজারি শিল্প ও শিল্পীকে তিনি জীবনাচরণ দিয়েই মোকাবেলা করেছেন। বাজারি-ভাবনা তাঁর কোনোকালেই ছিল না।

তাই ছিল না ক্যাসেট-সিডি। আকস্মিক অসুস্থতা এবং স্বজনদের অনুরোধ-উদ্যোগ-উচ্চাপে তাঁর ঝুলিতে সাম্প্রতিক সময়ে যেসব ক্যাসেট-সিডি যোগ হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছেঃ পাথরে পাথরে নাচে আগুন (১৯৮৮, যৌথ), যেতে হবে (১৯৯৪), ওঠো হে (১৯৯৪), কুট্টুস কাট্টুস (১৯৯৭), স্বপ্নের ফেরিওয়ালা (২০০০, যৌথ), তোমাকে দেখেছিলাম (২০০০), স্বপনপুরে (২০০২), অনেক নতুন বন্ধু হোক (২০০৪, যৌথ), সুকুমার রায়ের হ য ব র ল (২০০৪, শ্রুতিপাঠ), দুই কানুর উপাখ্যান (২০০৫, যৌথ, শ্রুতিপাঠ), আন্ধার নামে (২০০৭)। ইতোমধ্যে তাঁকে নিয়ে তথ্যচিত্রও তৈরি হয়েছে। মানস ভৌমিকের পরিচালনায় অন্বেষণ-এর প্রযোজনায় ‘প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের গান’, সমকালীন চালচিত্র’র প্রযোজনায় ‘ডিঙ্গা ভাসাও’ এবং অভি দাস নিবেদিত ‘ভালোবাসার মানুষ’। বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রেও তাঁর গান ব্যবহার করা হয়েছে।

সুহাশিস চট্টোপাধ্যায়ের অর্ধেক আকাশ, পার্থ রাহার শিশুশ্রমিক, অনুসূয়া মজুমদারের নিঃশব্দের তর্জনী, সুরঞ্জন রায়ের অলোকরঞ্জন, ঋত্বিক ঘটকের জীবনালেখ্য নিয়ে অনুপ সিং-এর একটি নদীর নাম, গোর্কির মা অবলম্বনে শোভিক প্রযোজিত মা চলচ্চিত্রে এবং বাংলাদেশে আনোয়ার কবিরের তথ্যচিত্রে তাঁর গান ব্যবহার করা হয়েছে। আর এবার এপার বাংলায় তাঁকে নিয়ে তথ্যচিত্র নির্মাণ করছেন দেশ টিভির নিভৃতচারী কর্মী এমএ রাশেদ। এ পর্যন্ত দুটি প্রকাশনার কথা জানা গেছে; একটি ‘প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের নির্বাচিত গান’ এবং অপরটি ‘শক্তি রাজনীতি’ (অরুন্ধতি রায়ের নির্বাচিত কলামের অনুবাদ)। এছাড়া বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিবন্ধ, গান, ছড়া, কবিতা ও অনুবাদ লিখছেন। একজন প্রতিবাদী মানুষ হিসেবে প্রতুল বিভিন্ন মিটিং-মিছিল সভা-সেমিনার অংশগ্রহণ, প্রবন্ধ পাঠ ও কবিতা আবৃত্তি করে চলেছেন।

ভালো কথা। এসব তো আরো অনেকেই করে! এই বৈশাখে প্রতুল কেন? প্রতুল এই কারণে যে প্রতুল আসলেই অতুল! প্রতুলই বৈশাখ এবং বাংলা, বাঙালি ও বাংলাদেশের মানুষের কাঙ্খিত মননবিকাশি সুরভিত ফুল! প্রতুলের গানই শাঁখ। এ বৈশাখে আমার বাসনা, বাঙালি প্রতুল শুনুক এবং যে যার মতো খুঁজে নিক, বুঝে নিক বিশ্ববাঙালির বোধি দৌড়। মানুষ মানুষ হোক। বাঙালির কাঙালিপনা দূর হোক।

আপাত লাভ লোভের আত্মবিধ্বংসী প্রবণতা ধ্বংস হোক। বাঙালি ঐক্যবদ্ধ হোক, খুঁজে পাক আপন ঠিকানা। তাদের ব্যর্থতা আর দুঃখগুলো সফলতার সুর হোক। এবং এই অন্ধকার কেটে সত্যি সত্যি ভোর হোক।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।