মানুষের জীবনে কখন কি যে ঘটবে তা বলা যায় না, এমন কি কেউ আগে থেকে অনুমানও করতে পারে না কোন অযাচিত ঘটনা তার জন্য অপেক্ষা করছে । আজ যে ঘটনাটা শেয়ার করব,জীবনে কল্পনাও করিনি, বিদেশের মাটিতে আমাকে এধরনের পরিস্থিতির সম্মুখিন হতে হবে।
আমি বাইরে এসেছি, তা বেশ কয়েক মাস হয়ে গেল। ধরি দেশটার নাম 'ক'। আমি এসেছি মূলত স্পাউস ভিসাতে।
ইউনিভার্সিটিতে এ্যপ্লায় করেছি,নেক্সট সেমিস্টার শুরু হতে এখনো অনেক দেরি। এ সময়টাতে বাসায় বসে থাকতে থাকতে একদম বোরিং হয়ে গেছি। তাই ভাবলাম চাকরি খোজা শুরু করি। একটা জব সার্চিং ওয়েব সাইডে আমার এ্যকাউন্ট খুলে মেইলে জব এ্যলার্ট দিয়ে রেখেছি। প্রতিদিন ৮-১০ টা করে আ্যড আসে,আমিও এ্যপ্লাই করি।
মাঝে মাঝে দু-একটা ফোন আসে,ওই পর্যন্তই। তেমন আশানুরুপ সাড়া এখনও পাইনি। হঠাৎ একদিন একটা কল আসল,কথোপকথনটা এরকম-
ঃ আপনি কি ঝটিকা?
আমিঃ হ্যা বলছি
ঃ আমি ওয়েস্ট ইউনিয়ন জার্মান শাখা থেকে বলছি। ওয়েস্ট ইউনিয়ন একটা ইন্টার ন্যশনাল অর্গানাইজেশন। আমাদের ইউরোপ - ইতালি, ইউকে, সুইজারল্যান্ড, জারমানিতে, এমন কি আমেরিকাতেও শাখা আছে।
আমরা এখন চাচ্ছি 'ক'তে একটা শাখা খুলতে। সে কারনে আমরা ঐখানে কিছু লোক রিক্রুটমেন্ট করছি। অফিস এ্যডমিনিস্ট্রশনে ট্রানজেকশন, আ্যকাউন্টসে আপনাকে চুজ করেছি। স্যলারি মাসিক $২৫০০,সাথে ৪% বোনাস। প্রথম ২ সপ্তাহ ট্রেনিং হবে।
যদি রাজি থাকেন তাহলে কাল আপনার মেইলে একটা ফর্ম পাঠাব, ফিলাপ করে আমাকে সেন্ড করবেন।
আমিঃ আপনাদের অফিসটা এখানে কোথায়?
ঃ মার্চে অফিসের পজিশন ফাইনালি সেট আপ করা হবে,আপ্নার জব কনফারমেশন ও মার্চ থেকে হবে।
এ পর্যন্ত যা ইনফ্রমেশন পেলাম তাতে সন্তষ্ট ছিলাম। অবশেষে একটা জব পাওয়ার আসায় মনে মনে যারপর নাই খুশিও হলাম। পরদিন ঠিকই একটা ফর্ম সহ মেইল আসল, ফর্মটাতে অনেক তথ্যের সাথে আমার ব্যংক এ্যকাউন্ট নং ও চাইছে।
আমার তখনো পর্যন্ত ব্যংক এ্যকাউন্ট খোলা হয়নি। তাই ভাবলাম নেক্সট দিন এ্যকাউন্ট খুলে নাম্বারটা দিয়ে পাঠিয়ে দিব। ১২টার দিকে আবার ফোন দিল,মেইল পেয়েছি নাকি,বললাম পেয়েছি। সেই সাথে আরো কিছু জানতে চাইলাম,এদিনও সন্তষ্ট জনক জবাব পেলাম। পরদিন এ্যকাউন্ট খুলতে যাওয়ার সময়ও আমার হাসবেন্ড বলল-ব্যপারটা ফেক না তো।
ওই আবার বলল-'ফেক হলেই বা কি,আমাদের কাছে তো আর কোন টাকা চাইনি'। যাই হোক, ঐদিনই ১২-১টার দিকে সব কিছু পুরন করে ফর্মটা পাঠিয়ে দিলাম। দুপুর ঠিক ৩টার দিকে এক মহিলা ফো্নে কি সব বলল, তার ইংলিশটা কেমন জড়ান,কিছুই তেমন বুঝিনি। আরো বলল-"ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন থেকে বলছি,আপ্নার এ্যকাউন্টে $৯৫০০ পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে"। আমি রং নাম্বার মনে করে তেমন গুরুত্ব দিলাম না।
বাইরে ঘুরতে-টুরতে গেলাম,সারাদিন আর মেইল চেক করা হয়নি। রাতে খেয়ে ১১টার দিকে মেইল চেক করে তো আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। সেই লোকটার মেইল, এরকম ছিল মেইলটা-
"আপ্নার এ্যকাউন্টে $৯৫০০ পাঠান হয়েছে। আপনি ৪% রেখে বাকি ৪৫৫০ টাকা করে ইউক্রেনের ২ জনের কাছে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন দিয়ে পাঠিয়ে দেবেন। নিচে ঐ দুই জনের ঠিকানা দেওয়া।
আরো লেখা-এবার সাকসেসফুল হলে,ভবিষ্যতে এমন আরও কাজ দেওয়া হবে"।
আমার হাসবেন্ড সাথে সাথে রিপ্লাই পাঠাল-আপনার সাথে তো চাকরি ছাড়া এমন কোন চুক্তি ছিল না। কিছুক্ষণ পরই এর রিপ্লাই আসল অনেকটা হুমকি স্বরুপ-"আপ্নার সাথে মোবাইলের সমস্ত কল রেকর্ড করা আছে। আপনি যদি এখন পিছিয়ে আসেন তাহলে আমরা আমাদের টাকা ব্যাক করে আনতে পারব,সে ক্ষেত্রে আপনার বিপদ হবে। এবারের মত কাজটা সাকসেসফুলি করেন,ভবিষ্যতে আর না করলেও হবে"।
এতো রাতে কি করব বুঝতে পারছিলাম না, অজানা বিপদের আশংকায় আমাদের অন্তরাত্মা খাচা ছাড়া অবস্থা। এক পরিচিত ব্যংকার ভাইকে ফোন দিলাম, ধরলনা। অনলাইনে আমার ব্যংক এ্যকাউন্ট চেক করলাম,কিছুই দেখাল না। শেষে একগাদা টেনশন নিয়ে ঘুমাতে গেলাম।
পরদিন সকাল সকাল ব্যংকে যেয়েএ্যকাউন্ট চেক করতে বললাম,ওরা জানাল- আপ্নার এ্যকাউন্টটা সন্দেহজনক $৯৫০০ ট্রানজেকশনের কারনে অস্থায়িভাবে ফ্রিজ করা হয়েছে।
আমার তো তখন মাথায় হাত,বিদেশ বিভুয়ে না জানি কোন কেসে জড়িয়ে পড়ি। ব্যংকে সব ঘটনা খুলে বললাম। ওরা তখন আমার এ্যকাউন্টটা আ্যন্টিফ্রড ইনভেস্টিগেশনে পাঠাল,সব মেইল গুলা ওদেরকে ফরোয়াড করতে বলল। আর পুলিশকে সব কিছু ইনফর্ম করতে বলল। আরো পরামর্শ দিল বাসাটাও চেঞ্জ করতে,কারণ কোন ক্রিমিনাল কেস হলে আপ্নারা পারসনালি এ্যটাক হতে পারেন।
মাঝে একবার মেইল চেক করে দেখি ঐ বদ বেটা ২টা মেসেজ দিসে,বার বার তাগাদা দিচ্ছে। আমরা আরো ভয় পেয়ে গেলাম।
এরপর গেলাম পুলিশ ইস্টেশনে। ওরা পুরো ঘটনা বার বার শুনতে চাইলো,এতে আমরা জড়িত কিনা,কিভাবে হল সব শুনল। পরে জিডি করে নিল।
ততক্ষনে বিকাল ৫টা বাজে,দুপুরে কিছুই খাওয়া হয়নি। মাথায় একগাদা দুশ্চিন্তা নিয়ে বাসায় আসতে আসতে সন্ধা। এসেই "আপনার সন্দেহজনক ট্রানজেকশনের কারনে আমার ব্যংক এ্যকাউন্ট অটোমেটিকালি ফ্রিজ হয়ে গেছে, আমার এখন কিছুই করার নাই' এসব লিখে ১টা রিপ্লাই পাঠালাম।
এতো তাড়াতাড়ি বাসা বদলান কোন ভাবেই সম্ভব না। তাই প্রতিদিন সকালে ভার্সিটিতে যাওয়ার আগে আমাকে আমার হাসবেন্ড ওর এক ফ্রেন্ডের বাসায় রেখে আসত,সন্ধায় এক সাথে বাসায় আসতাম।
এভাবে প্রায় ১সপ্তাহ মত চলল। এর মধ্যে আর কোন মেইল আসলনা, আল্লাহর রহমতে কোন অজাচিত ঘটনাও ঘটলনা। কিছুটা নিশ্চিন্ত হলাম।
তারপর অনেক দিন হয়ে গেছে,এখনো আতংকে থাকি,না জানি কখন কি হয়। ঐ সময় যে টেনশন আর ঝড় আমাদের উপর দিয়ে গেছে,তা মনে পড়লে এখনো গায়ে কাটা দিয়ে ওঠে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।