আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মেহেরজান-পাকমন পেয়ারুদের আরেকটি প্রজেক্ট?

অনন্ত

সদ্য মুক্তি পাওয়া মেহেরজান নামে একটি বাংলা ছবি হলে হলে চলছে। ছবিটি আমি দেখিনি। বিভিন্ন রিভিউ পড়ে যা বুঝেছি তা হল এতে এক বাংগালি মেয়ের সাথে এক পাকি সেনার প্রেমের গল্প ফাঁদা হয়েছে। আমার লেখাটি ছবিটির রিভিউ না। বরং এই ছবিটির হিডেন মেসেজটি বের করা।

সংক্ষেপে ছবির কাহিনি হল, পাকি সেনাটি মেয়েটিকে অন্যান্য সেনার লোলুপতা থেকে বাঁচায়। আর এতে বাংলা সিনেমার চিরায়ত নিয়ম অনুযায়ি মেয়েটি ওই সেনার প্রেমে পড়ে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের কারণে তাদের মধ্যে বিয়ে হয়নি। কারণ মেয়েটির মুক্তিযোদ্ধা খালাতো ভাই যে যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত এবং মেয়েটিকে সে বিয়ে করতে চায়, সে ওই মাসুম পাকি সেনাকে মারতে চায়। ভয়ে বেচারা পাকিটা পালিয়ে যায়।

আর ফিরে আসেনি। এখানেই ছবিটির মুল ট্র্যাজেডি দেখানো হয়। খালাতো ভাইটি ওই মেয়ের উপর জোর খাটাতে চায়। আরো থাকে মেয়েটির বড় বোন যে পাক বাহিনির দ্বারা ধর্ষিত হয়েছে। এই মেয়েটি পাকিদের উপর প্রতিশোধ নিতে চায়।

সে আর বিয়ে করতে চায় না। আবার এই মেয়েটিই এক মুক্তিযোদ্ধার দ্বারা শারিরিক ভাবে মিলিত হয় এবং তাকে বিয়ে করতে চায়। আরো দেখানো হয়, মেয়েগুলার বাবা মুসলিম লীগের নেতা খাজা সাহেব একজন স্থানিয় জমিদার এবং প্রভাবশালি। তাকে মানুষ পীর মনে করে। তিনি রক্তপাত পছন্দ করেননা।

তাই তার এলাকায় তেমন যুদ্ধ হয় নাই। এই ধরনের ঘটনা যে একদম ঘটে নাই, তা না। ঘটেছে। একই সাথে বেশ কিছু মানুষ মুক্তিযুদ্ধের পাশাপাশি এখানে সেখানে চুরি, ডাকাতি এমনকি ধর্ষণের মত অপরাধও করেছে। সেই হিসেবে পরিচালিকা রুবাইয়াত হোসেন (এ নাকি যোগাযোগ মন্ত্রি আবুল হোসেনের মেয়ে) কাউন্টার লজিক দিতে পারেন যে, তার ছবির ফ্যান্টাসি গুলা ফ্যাক্ট দিয়ে তৈরি।

সুতরাং ছবির উপাদান নিয়ে আমার তেমন কোনো মাথাব্যাথা নাই। আমার চিন্তা এর মেসেজটা নিয়ে। আমি একটু ভিন্ন ভাবে দেখার চেষ্টা করেছি। যুদ্ধের সময়ে ঘটা এই ধরনের ঘটনা যা পুরা যুদ্ধের ০.০০১% অংশকে রেপ্রিজেন্ট করে তা নিয়ে আমাদের ভাবিত হওয়ার কি কোনো কারণ আছে? বা আরো স্পষ্ট ভাবে বললে এই সব পরমাণু কাহিনিগুলাকে হঠাৎ করে হাতির আকারে তুলে ধরার কারণ কি? এই ধরনের কাহিনি ছড়ানো ছিটানো ভাবে নানাধরণের মাধ্যমে এসেছে কিন্তু বড় পর্দায় কখনো আসেনি। বড় পর্দা সমাজ পরিবর্তন করতে পারে না ঠিকই কিন্তু এটি যেকোনো মেসেজ ঠিক মত পৌছে দিতে পারে।

আমাদের দেশে এখন একটা প্রভাবশালি ভোগবাদি ভোক্তাশ্রেণি গড়ে উঠেছে বা স্বযত্নে গড়ে তোলা হয়েছে। এরা প্রশ্ন করে না। এদেরকে যা দেয়া হয় তাই খায়। এরা ডিজুসের রসে বেহুশ থাকতে পছন্দ করে। এরা বিনা প্রশ্নে ভারতিয় সামাজিক আগ্রাসন মেনে নিয়েছে।

এদের কাছে এখন আরেকটি মেসেজ গেল বলিয়ুড স্টাইলে যাতে তারা সহজে হজম করতে পারে। মেসেজটা কি? মেসেজটা হল, ১/ মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ পছন্দ করত না। তারা বিয়ে করে শান্তিতে থাকতে চায়। দেশ কোন মা***ফা** চালায় তা নিয়ে তাদের মাথাব্যাথা নাই। ২/ কোনো মেয়ে বিয়ে করতে না চাইলে মুক্তিযোদ্ধারা তাকে নিয়ে জোর করে কিছু একটা করত।

৩/ মুক্তিযোদ্ধারা খারাপ টাইপের মানুষ। ৪/ পাক আর্মির দ্বারা ধর্ষিত মেয়েরা আবার নানাভাবেই মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারাই লাঞ্ছিত হত। ৫/ মুসলিমে লীগের মানুষরা রক্ত পছন্দ করে না। হত্যাতো আরো দূরে। শান্তিই ছিল তাদের মুল লক্ষ।

৬/ ওহ্হ, আসল কথা বলা হয় নাই। পাকি সেনারা মানুষ হিসেবে অসম্ভব ভাল ছিল। নারীর মর্যাদা তারা হাড়ে হাড়ে রক্ষা করত। বরং মুক্তিযোদ্ধারা অযথাই তাদের মারতে চাইত। শী*, এতদিন আমাদেরকে ফা**** ইনফরমেইশন দেয়া হইছে।

ফ্রম নাউ অন, আওয়ার গার্লজ ডু অরগাজম ড্রিমিং দিজ গাইজ... আমাদের কনসুমার ক্যাপিটালিস্টিক ক্লাস এই বলিয়ুডি ভার্সন ভাল মত খাবে। তারা প্রশ্ন করতে জানে না। তারা এইটা বিশ্বাস করবে। এমন না যে, তারা এখনি বিশ্বাস করে ফেলবে। পুরানো ধারণা গুলা সরতে সময় লাগে।

কিন্তু কে আর সময় নষ্ট করে ভাববে যে দে আর ইন দ্যা মিডল অব স্লো পয়জনিং। এই রকম আরো আসবে। তারা বাধ্য হবে বিশ্বাস করতে যে, যুদ্ধ আমাদের করা উচিত হয় নাই। শান্তির উপরে জিনিস নাই। এখন আর বৈরিতা রাইখা লাভ নাই।

সো বিচার-টিচার ক্ষমা-টমা এইগুলা আজাইরা জিনিস বাদ দাও। এর চেয়ে এক লগে হাতে হাত রাইখা হাটি। আমরা ভাই-ভাই। পারলে আমগো মেয়েগুলারে ওই পাঠানগো লগে করবার সুযোগ দেয়া যাইতে পারে। এই রকমই আরো হেনতেন।

আমি ফ্যান্টাসির মত করে বললাম, কিন্তু চোঁখ কান খোলা রাখলে যে কেউ বুঝবে এই গুলা এখন আমাদের সামনে ঘটছে। একটা বিষয় লক্ষ্যণীয় যে, স্বাধীনতার পরে ও আশির দশকে আমাদের দেশে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যতগুলো ভাল মানের ছবি হয়েছে এর পরে আর তেমন দেখা যায় নাই। এই গেল দশকে হাতে গোনা কিছু ছবি এসেছে। ঠিক এমনি বন্ধ্যা সময়ে এই ছবিটি আসলো। যারা মুক্তিযুদ্ধের তথ্য নতুন করে জানছে, সেই কিশোর কিশোরিদের মাঝে এই ছবির মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে একটা নেতিবাচক মানসিকতা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

এমন না যে এটা সবার মাঝেই ঘটবেই কিন্তু একটা উল্লেখযোগ্য অংশও যদি এভাবে বড় হয় তাহলে সে নব্য রাজাকার তৈরির প্রথম ধাপ পার হয়েছে ধরে নেয়া যেতে পারে। এবার আসি আসল কথায়। এই ঘটনায় লাভের গুড় কে খাবে? উত্তর খুবই সহজ। যারা ধরতে পারার, আগেই ধরে ফেলেছেন। জামায়াত।

খুবই সুক্ষ্ণ ভাবে পরিকল্পনা গুলো করা মনে হতে পারে। বা ধরে নেই নিছকই প্রচার পাওয়ার জন্য ছবিটি তৈরি করা। কিন্তু জামাত যে মুল বেনেফিশিয়ারি এতে সন্দেহ নেই। তাদের টার্গেট ২০৩০। এটা যথেষ্ঠ সময় পুরা জাতির ব্রেইন ওয়াশ করে ফেলার জন্য।

আর তাদের এই পরিকল্পনা এখন বাস্তবায়ন করে দিচ্ছে আওয়ামি লীগের ভিতরে থাকা জামায়াত মনোভাবাপন্ন মানুষগুলা। এই মানুষগুলো হয় হিডেন জামাতি অথবা ইতিমধ্যে পয়জন্ড। আর বাকিরা এখন টেন্ডার বাক্স নিয়ে ব্যস্ত। যেকোনো সাম্রাজ্যবাদি গোষ্ঠির প্রথম পছন্দ জামাতের মত দল গুলা যাদের প্রচুর রিসোর্স আছে। ৭১ এ পাকিস্তানের হয়ে কাজ করেছে তারা।

আর এখন ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদি গোষ্ঠির কাছ থেকে তারা যে কিছু পাচ্ছে না তা বলা যায় না। অপ্রাসংগিক হলেও বলছি কদিন আগে সীমান্তে বিসিএফের গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে ব্লগারদের ডাকা মানবন্ধন সফলভাবে ব্যর্থ হয়েছে জামাত-শিবিরের কল্যাণে। যে দালাল সে সবসময়ই দালাল। অতএব সুধি সাবধান।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।