আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঈদে শোলাকিয়া মাঠে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা দেশের আলেম উলামা ও কওমী মাদরাসার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া এই আম্লীগ হুজুর এবার কোন মুখে নামাজ পড়াতে যাবেন?


কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া মাঠে এবার ঈদুল ফিতরের নামাজের সময় বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা করছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। এবারও ঈদের নামাজ পড়াবেন মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ। তাঁকে ইমাম হিসেবে নির্ধারণ করে প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে। তবে ফরিদ উদ্দিন মাসউদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও লিফলেট বিতরণ হওয়ায় একটি গোয়েন্দা সংস্থা গত ১ আগস্ট একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। তাতে শোলাকিয়ার ঈদের মাঠে বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে- এমন আশঙ্কা করা হয়েছে।

মন্ত্রণালয় সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে জানিয়ে দিচ্ছে। তবে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সিদ্দিকুর রহমান গতকাল রবিবার টেলিফোনে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আগের ইমামের বংশধররা প্রতিবছরই প্রতিবাদ করে থাকে। তারা দাবি জানায়, এ মাঠের ইমামতির অধিকার তাদের বংশের। এ বছরও তারা প্রতিবাদ করছে। আমরা পুরো বিষয়টাকে মাথায় নিয়েই সেখানে নিরাপত্তার আয়োজন করছি।

' তিনি জানান, তারা লিফলেট বিতরণ করছে। সেখানে মাওলানা মাসউদের বিরুদ্ধে কথাবার্তা লেখা রয়েছে। সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ২৫ জুলাই জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়ে একটি ব্যানার নিয়ে মানববন্ধন করে। এ ছাড়া একটি গোষ্ঠীকে কাজে লাগিয়ে ঈদের নামাজে বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টির পাঁয়তারা করা হচ্ছে। এর পেছনে জামায়াত-শিবির ও হেফাজতের কর্মীদের ইন্ধন থাকার আশঙ্কাও করা হয়েছে।

কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, 'শোলাকিয়া মাঠে চার স্তরের নিরাপত্তার আয়োজন করা হচ্ছে। পুরো এলাকাটি ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার আওতায় থাকবে। আর মাঠে ঢোকার ২২টি গেটে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে মুসল্লিদের দেহ তল্লাশি করে মাঠের ভেতর প্রবেশ করতে দেওয়া হবে। ' পুলিশ সূত্র আরো জানায়, এবার অন্যান্যবারের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বেশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হবে। এর অর্ধেকের বেশি মুসল্লিবেশে মিশে যাবে মুসল্লিদের সঙ্গে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, এ নিয়ে চতুর্থ বছরের মতো মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ শোলাকিয়া মাঠে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার নামাজের ইমামতি করতে যাচ্ছেন। অন্যান্যবারও তাঁর বিরুদ্ধে প্রচারণা থাকলেও এবার সেই প্রচারণার তীব্রতা বেড়েছে। এর পেছনে জামায়াত-শিবির ও হেফাজতে ইসলামের কিছু নেতা-কর্মী ইন্ধন জোগাচ্ছে বলে সূত্র জানায়। এবার ফরিদ উদ্দিন মাসউদের বিরুদ্ধে আলেমদের বিরুদ্ধে কথা বলার অভিযোগ আনা হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের বিরোধিতা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক বলেন, 'কারা এসবের ইন্ধন জোগাচ্ছে সে বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। ' সূত্র জানায়, গতকাল জেলা প্রশাসক মো. সিদ্দিকুর রহমান শোলাকিয়া মাঠের ঈদের জামাত সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে উদ্যাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে বৈঠক করেছেন। সেখান থেকে পুলিশসহ সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সে মতেই কাজ শুরু হচ্ছে। প্রতিবছরের মতো এবারও শোলাকিয়া মাঠের জামাতে অংশ নিতে দূর-দূরান্ত থেকে মুসল্লিরা অংশ নেবেন।

এ কারণে এখন থেকেই যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হচ্ছে বলে জেলা প্রশাসক জানান। জানা যায়, ১৮২৮ সালে শোলাকিয়ায় প্রথম ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সে হিসাবে এবার ১৮৬তম ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে এ মাঠে। মাঠটিতে সাত একর জমি রয়েছে। পুরোটাতেই ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।

জানা যায়, ঈশা খাঁর ষষ্ঠ বংশধর দেওয়ান হয়বত খান বাহাদুর কিশোরগঞ্জের জমিদারি প্রতিষ্ঠার পর ১৮২৮ সালে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্ব দিকে নরসুন্দা নদীর তীরে প্রায় সাত একর জমির ওপর এ ঈদগাহ মাঠ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮২৮ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম জামাতে সোয়া লাখ মুসল্লি অংশ নেওয়ার কারণে মাঠের নাম হয় 'সোয়া লাখি মাঠ'। সেখান থেকে উচ্চারণের বিবর্তনে পরিণত হয়ে এসেছে আজকের 'শোলাকিয়া'। মাঠে ২৬৫ লাইনে দাঁড়িয়ে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করতে পারেন। প্রতি লাইনে পাঁচ শতাধিক মুসল্লি নামাজে অংশ নিতে পারেন।

তবে মাঠের বাইরে আশপাশের এলাকাজুড়ে জামাতে অংশ নেওয়া মুসল্লিরা মিলিয়ে এ সংখ্যা আড়াই থেকে তিন লাখ ছাড়িয়ে যায়।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।