A passionate writer
রোগ-বালাই কখনও বলে-কয়ে আসেনা। তাই যিনি অসুস্থ হন, তিনিই শুধু জানেন সেই অসহায়ত্বের করুণ দশা। আমার অতিপরিচিতি এক সৎ ও নির্ভীক সাংবাদিকের চিঠিটি প্রকাশ করছি এই আশায় যে, কোন সুহৃদ ব্যক্তি তাঁর পাশে এসে দাঁড়াতে পারেন এই চিঠি পড়ার পর। তাঁর চিঠির কিছু অংশ ...........
প্রিয় হাই,
শুভেচ্ছা জানবেন। আশাকরি ভাল আছেন।
আপনার ফেরত মেইল পেয়ে ভাল লাগছে। প্রবাসীরা সাধারণত দেশের মানুষের কথা মনে রাখতে চায় না। তাই ছোট্ট করে লিখে ঝুঁকি নিয়েছিলাম। তো আপনি ভোলেননি দেখে খুবই ভাল লাগল।
মেইলের জবাব অনেক আগেই দিতাম।
আসলে ৯/১১/২০১০ তারিখের পর আমি মেইলে বসতে পারিনি। আপনি হয়তো শুনে থাকবেন, আমি ১৯৯১ সাল থেকে জটিল প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগে ভুগছিলাম। ৯/১১/২০১০ তারিখে তা হঠাৎ বেড়ে যায়। ১০/১১/২০১০ তারিখে আমি নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি হই। ১১/১১/২০১০ তারিখে আমাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
আমার অবস্থার অবনতি হওয়ায় আমাকে ১২/১১/২০১০ তারিখ ভোরে পাঠিয়ে দেয়া হয় ঢাকার বারডেম হাসপাতালে। সেই থেকে আজও ঢাকায় চিকিৎসাধিন রয়েছি।
২/১২/২০১০ তারিখে আমার প্যানক্রিয়াস অপারেশন হয়েছে। আমার পিত্তথলিতেও পাথর আছে। শরীর ফিট হলে পিত্তথলি ফেলে দিতে ফের অপারেশনের টেবিলে শুতে হবে।
জানি না শেষ পর্যন্ত কী হবে। আপনার মনে আছে কিনা জানি না, আমার এক ছেলে এক মেয়ে। ওরা দু'জনই ঢাকায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে অনার্স পড়ে। আমার দু'টো অপারেশনের পর শরীরের অবস্থা কী দাঁড়াবে, তা নিয়ে আশঙ্কার শেষ নেই। ছেলেমেয়েদের পড়াশুনার কী হবে, কেমন করে হবে - এ নিয়ে আমি দারুণ উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছি।
গত ৬ মাস ধরেই আমার শরীরের গতি ভাল যাচ্ছে না। তখন থেকেই আমি ইন্টারনেটে বসে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার জন্য ডোনার খুঁজছি। কিন্তু অনেক সার্চ করেও কোন ডোনার পাইনি।
আপনার ওপর আমার তেমন দাবি নেই। তবে আপনি যে আমাকে ভুলতে পারেননি, সেই সূত্র ধরে বলি- আমার তো খুব বেশি অর্থের প্রয়োজন নেই।
লাখ দশেক টাকা হলেই আমার দু' ছেলেমেয়ে লেখাপড়া শেষ করতে পারবে। গরিব সাংবাদিকের ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার জন্য দশ লাখ টাকা অনুদান দেয়ার মত ডোনার আদৌ পাওয়া যাবে কিনা, আমার জানা নেই। না জেনেই আপনাকে ডোনার খোঁজার জন্য অনুরোধ করছি। আমি তো না জেনে আপনার কাছে দাবি রাখলাম।
আমার বয়স হয়েছে।
শরীরের গতি ভাল না। ছেলেমেয়ের কথা ভেবে আগু-পিছু মনে আসেনি। আমার চাওয়ায় ভুল থাকতেই পারে। আর কী? আপনার মঙ্গল কামনা করি। আর ফেরত মেইলের প্রত্যাশা করছি।
13.12.2010
দ্বিতীয় চিঠির অংশ বিশেষ ......
প্রিয় হাই
আশাকরি ভাল আছেন। আমার শরীরটা ভাল যাচ্ছে না। আর এতেই নানা আশঙ্কায় দিন কাটছে। বিশেষ করে ছেলেমেয়ে দু'টির কথা ভেবে রাতে ভাল ঘুমও হচ্ছে না। আমার অবর্তমানে ওদের লেখাপড়া, ওদের সৎভাবে বেঁচে থাকা, ওরা কি পারবে জটিল-কঠিন পৃথিবীতে নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে? এসব প্রশ্ন আমাকে কুরে কুরে খাচ্ছে।
আমি জানি, এসব কথা আপনাকে বলা সমীচিন নয়। আপনাকে অবশ্য খুব আপন ভেবেই বলছি। কারণ বলার মতো আপনজন আমার তেমন কেউ নেই। সত্যি কথা বলতে কি- বন্ধু-বান্ধবরাই আমার স্বজন। তাদের কাউকে কাউকে কখনও কখনও আমার খুব আপন মনে হয়।
হয়ত আপনাকেও আমার তেমনটি মনে হয়েছে, তাই কষ্টের ঝাঁপিটা খুলে বসেছি। প্রথম চিঠিতে এ কারণেই ওদের জন্য আপনাকে কিছু একটা করার আবেদন করেছিলাম। কারণ আমার জন্য কিছু করার মতো এ দুনিয়ায় কেউ নেই।
ছেলেমেয়েরা এখনও লেখাপড়া শেষ করতে পারেনি। আর এতেই আমি কষ্ট বেশি পাচ্ছি।
আমাকে যদি সত্যি সত্যি এখুনি চলে যেতে হয়, তাহলে ওরা কার কাছে গিয়ে দাঁড়াবে? আপনি দীর্ঘদিন এনজিওতে চাকরি করেছেন। এখন আছেন প্রথম বিশ্বে। যদি কোন সুযোগ থাকে এবং আমার ছেলেমেয়ে দু'টির জন্য কিছু করার ইচ্ছা জাগে। তবে চেষ্টা করে দেখবেন। এ আমার অনুরোধ।
আপনার গুনমুগ্ধ
১৫.০১.২০১১
আগ্রহী ব্যক্তিদের জন্য আমার শ্রদ্ধাভাজন সাংবাদিক ভাইয়ের ই-মেইল ঠিকানা
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।