আমি পৃথিবীর বাসিন্দা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম উপমাটি শুনেছিলাম। আশির দশকে বটতলার একটি ছাত্রসভায়। বক্তা ছিলেন আজকের যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তার তখন বাবরি চুল ছিল। তিনি বাবরি চুল দুলিয়ে দুলিয়ে কাব্যিক ঢংয়ে বলতেন দেশে এলো কলিকাল, ছাগলে চাটে বাঘের গাল।
অমনি ছেলেমেয়েরা বিশেষ করে সুন্দরী মেয়েরা হৈচৈ করে উঠত এবং সজোরে তালি বাজাত। কাদের ভাই আরও উদ্দীপনা নিয়ে কবিতার ঢংয়ে বক্তব্য শুরু করতেন।
আমি কিন্তু উপমাটি নিয়ে বেশ সন্দিহান ছিলাম এবং এখনো আছি। আমার বিশ্বাস কোনো কলিকালেও বাঘের গাল ছাগল চাটতে যাবে না। এমনকি কোনো ছাগল যদি পাগল হয়ে যায় কিংবা ছাগলের দুই চোখ অন্ধ করে দেওয়া হয় তারপরও সেটি বাঘের গাল চাটতে যাবে না।
আমার দৃঢ় বিশ্বাসের মূলে রয়েছে নিজের কিছু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা। শৈশব ও কৈশোরে আমার অনেক ছাগল ছিল। ওদের সঙ্গে আমার খাতিরও ছিল বেশ। চৈত্রের ভরা দুপুরে গ্রামেরদুরন্ত কিশোরদের সঙ্গে আমি দৌড়াতাম। ঘর্মাক্ত শরীরে প্রিয় ছফেদা ফলতলায় গাছের সঙ্গে হেলান দিয়ে বসতাম।
আমার ছাগলগুলো ম্যা ম্যা শব্দ করে দৌড়ে আসত এবং দলবেঁধে আমার পিঠ চাটত। এক অপরূপ অনুভূতি। আমি তাদের কোলে নিতাম। শিংগুলোতে তেলমাখাতাম এবং প্রায়ই চুমা দিতাম।
একবার আমাদের পাশের বাড়ির যুবকরা বড় কসরত করে একটা বাঘডাশা মারল।
আঞ্চলিক ভাষায় আমরা বলতাম খাটাশ। বিলাইয়ের চেয়ে একটু বড়। গ্রামের বাচ্চারা সব দেখতে গেল। আমিও গেলাম। কোলে করে নিয়ে গেলাম অনেক ছাগলের মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় বাচ্চা ছাগলটিকে।
ওমা একি! মরা খাটাশের কাছাকাছি হতেই আমার কোলের ছাগলটি ভয়ে ম্যা ম্যা শুরু করল। আরও একটু কাছে যেতেই ওটি কোল থেকে নেমে দৌড় দেওয়ার চেষ্টা করতে থাকল। আমি বেশ জোর করে ওকে বুকে চেয়ে ধরলাম। বাচ্চা ছাগলটি এবার আমার বুকে কষে কামড় বসিয়ে দিল। ওরে মাগো বলে আমি ছাগলটি ছেড়ে দিলাম।
ও ভোঁ দৌড় মারল। একবারও পেছনের দিকে তাকাল না। শুধু তাই নয়, পরবর্তী কয়েক দিন ছাগলটি অভিমান করে আমার কাছে এলো না।
একটি মরা খাটাশ দেখে যদি বাচ্চা ছাগলের এ অবস্থা হয় তাহলে প্রাপ্ত বয়স্ক ছাগলের কি অবস্থাহবে জ্যান্ত বাঘ দেখলে। এই কথা মনে হতেই আমার হাসি পায়।
ভীষণ হাসি। মাননীয় যোগাযোগমন্ত্রী যদি তার মন্ত্রিত্বও দিয়ে দিতে চান তবুও কোনো ছাগলকে জীবন্ত বাঘের গাল চাটা তো দূরের কথা মরা বাঘের গালও চাটাতে পারবেন না। মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে যখনই আমার দেখা হয় তখনই কথাটি মনে হয়। ফলে আমি খিলখিলিয়ে হেসে উঠি। উনি আমাকে ভীষণ পছন্দ করেন।
কিন্তু তাকে দেখলে আমি কেন যে এত হাসি তা তিনি কল্পনাও করতে পারেন না।
আলোচ্য-উপমাটি একটি হালকা উদাহরণ। কিন্তু সাধারণ সিরিয়াস কিছু বোঝানোর জন্য আমরা উপমাটি ব্যবহার করে থাকি। সরল বাংলায় এটির ভাবার্থ হলো এই যে, অযোগ্য লোক শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে যোগ্য লোকদের শাসন করার চেষ্টা করে। আবার কখনো কখনো নেহায়েতই অযোগ্য লোককে যোগ্য লোক বানানোর অপচেষ্টা করা হয়।
একটি উদাহরণ দিলেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে। ধরুন আমি একজন সংসদ সদস্য কিংবা মন্ত্রী। কিন্তু আমার ছেলেমেয়ে বা আত্দীয়স্বজন কিংবা আস্থাভাজন ব্যক্তিবর্গ খুবই নিম্ন চরিত্রের অযোগ্য লোক। এখন যেহেতু আমার ক্ষমতা আছে সেহেতু আমি সাধারণ মানুষকে বাধ্য করতে পারি আমার ওইসব অযোগ্য-অথর্ব প্রিয়ভাজনের অন্যায় আবদার মেনে নেওয়ার জন্য। ঠিক যেন অনেকটা নিজের ঘোড়ার জন্য একটি ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদানের অনুরোধের মতো।
এ ধরনের ঘটনা যখন যেভাবে এবং যার দ্বারাই ঘটুক না কেন ফল কিন্তু ভালো হয় না। অযোগ্য লোককে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসালে যে মারাত্দক ক্ষতিরসম্মুখীন হতে হয় তা ভূমিকম্প, ঘূর্ণিঝড় কিংবা অন্য কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। বরং ক্ষেত্রবিশেষে বেশি হয়।
আমাদের সমাজে আরও একটি অসঙ্গতি প্রায়ই দেখা যায়। আর তা হলো অযোগ্য লোককে যোগ্য বানানোর ব্যর্থ চেষ্টা।
প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে প্রতিটি মানুষ ভিন্ন ভিন্ন কাজের জন্য বিশেষ ধরনের গুণাবলী নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন। কেউ হন কবি। আবার কেউ অভিনেতা। কেউবা নেতা বা মহানেতা। অনেকে বিজ্ঞানী হন।
অনেকে আমলা। আবার চিত্রশিল্প, সংগীত, যন্ত্রকৌশল বা স্থাপত্য বিদ্যায় কারও কারও একাগ্রতা উৎকর্ষতার স্বর্ণশিখরেনিয়ে গেছে। যে রাষ্ট্রনায়কের সন্তান নাপিত বা লম্পট হতে চায় তাকে দেশের নেতা বানাতে গেলেই শুরু হয় বিপত্তি। ইতিহাসের চাকাউল্টোপথে ঘোরানোর চেষ্টার মতো প্রলয়ঙ্করী ধ্বংসযজ্ঞ আর হতে পারে না। ইসলামের অন্যতম সাহাবি এবং জ্ঞানতাপস হজরত আমির মাবিয়া(রা.) এহেন চেষ্টা করেননি তার কুপুত্রকে সুপুত্র বানানোর জন্য।
কিন্তু তা হয়নি। কিন্তু পুত্র স্নেহে অন্ধ হয়ে তিনি মুসলিম খেলাফত লম্পট ছেলের হাতে দিয়ে যাওয়ার কারণে এখনো মুসলিমবিশ্ব তাকে দায়ী করে। অন্যদিকে হজরত ওমর (রা.)-এর একজন ছেলে ছিল। সে কিনা একবার প্রকাশ্যে মদ্যপানকরার অপরাধে খলিফার ন্যায়বিচারের মুখোমুখি হয়। খলিফা ১০০টি বেত মারার হুকুম দেন।
৯০টি মারার পর ছেলের মৃত্যু হয়। বাকি ১০টি খলিফা মৃত সন্তানের কবরে মারার হুকুম করেন। কেবল ন্যায়বিচারের কারণে কুলাঙ্গার সন্তানের জন্য কোনো মানুষ গত চৌদ্দশত বছরে একবারের জন্য হজরত ওমরকে দায়ী করেননি।
আমাদের ভারতবর্ষেও আপন পরিবার-পরিজনের প্রতি কঠোর ন্যায়বিচার প্রয়োগ করার ভূরি ভূরি উদাহরণ রয়েছে। প্রথমে আসি মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেব প্রসঙ্গে।
তাকে বলা হতো জিন্দাপীর। ইসলামের চার খলিফা এবং হজরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.)-এর পর কোনো মহান শাসক আওরঙ্গজেবের মতো এত ধর্মপরায়ণ, ন্যায়বিচারক, সাহসী, সুপণ্ডিত এবং অনাড়ম্বর জীবনাচরণের অধিকারী ছিলেন না। এত কিছুর পরও তার কয়েকজন সন্তান ছিল মদ্যপ এবং লম্পট প্রকৃতির। তার ৫১ বছরের সুদীর্ঘ শাসনামলে তিনি এসবকুলাঙ্গার সন্তানকে কারারুদ্ধ করে রেখেছিলেন। এদের মধ্যে কয়েকজনের মৃত্যু কারাগারেই হয়।
[[aj bangladesh protidin a prokasito hoyese, valo laglo, tai mobile e likhesi, tai 5000 space er besi dite na paray comnt a dite hoyese, pore pc hote edit kore dibo]]
next cmnt 1 ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।