আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

২৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার প্রমাণ পেলো দুদ |



ইউনিপেটুউ’র বিরুদ্ধে কোম্পানি আইনের পরিপন্থি কর্মকাণ্ড ও প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছ থেকে ২৫০ কোটি ১৫ লাখ ৩ হাজার ৪৫৫ টাকা সংগ্রহের প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের অনুসন্ধান অনুযায়ী ২০০৯ সালের ১লা নভেম্বর থেকে ২০১০ সালের ৩০শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোম্পানির ৩টি ব্যাংক একাউন্টে অবৈধ উপায়ে এ টাকা জমা করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৬ কোটি ১২ লাখ ৩ হাজার ২৩৭ টাকা উঠিয়ে ৩২ দশমিক ৫ ভাগ হারে সদস্যদেরকে ৮ কোটি ৪৮ লাখ ৯১ হাজার ৫২ টাকা কমিশন দেয়া হয়েছে। পরে ১৭ কোটি ৬৩ লাখ ১২ হাজার ১৮৪ টাকা ব্যক্তিগত খাতে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই ইউনেপেটুউ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুনতাসির হোসেন এবং চেয়ারম্যান শহীদুজ্জামান শাহীনকে আসামি করে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০০৯-এর ৪(২) ধারা অনুযায়ী একটি মামলার এজাহার তৈরি করেছে দুদক।

গত সোমবার এ মামলাটি রাজধানীর শাহবাগ থানায় দায়ের হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোম্পানির পক্ষ থেকে হাইকোর্টে রিট করায় এর আগের দিন আদালত থেকে একটি স্থগিতাদেশ দেয়। এ কারণে দুদক এখন মামলাটি দায়ের করতে পারেনি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। দুদক ইনজীবী এডভোকেট আনিসুল হককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। স্থগিতাদেশ বাতিলের সঙ্গে সঙ্গেই মামলা করা হবে।

দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোম্পানিটি ২০০৯ সালের ১১ই অক্টোবর রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিতে নিবন্ধিত হয়ে এমএলএম পদ্ধতির কাল্পনিক মেথড প্রয়োগ করে মালয়েশিয়ায় ভ্রমণ প্যাকেজসহ কল্পিত স্বর্ণে নির্দিষ্ট সংখ্যক টাকা বিনিয়োগে অল্প সময়ে অধিক মুনাফা দেয়ার লোভ দেখিয়ে সদস্য সংগ্রহ করে। এর মাধ্যমে সদস্যরা ৪৫৫০ টাকা বিনিয়োগে ১ দিনে ১০,৫০০ টাকা, ৩৬,৪০০ টাকা বিনিয়োগে ১ দিনে ৮৪ হাজার টাকা আয় করতে পারবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। গত ২৩শে জুন থেকে দুদক বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধান শুরু করে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গত ১৩ই অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও দুদককে চিঠি দেয়া হয়। পাশাপাশি কোম্পানির এমডি ও চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত একাউন্ট এবং ইউনেপেটুউ’র ৩টি একাউন্টসহ ৯টি একাউন্টের রেকর্ডপত্র সরবরাহ করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে দুদক দেখতে পায়, ২০১০ সালের ১৩ই মে থেকে ৩০শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে সিটি ব্যাংক নিউ মার্কেট শাখার হিসাব নম্বর ১৪০১১৫০৬৫৯০০১, এনসিসি ব্যাংক নারায়ণগঞ্জ শাখার হিসাব নম্বর ০০৬৯-০২১০০০০৩২৬ এবং ব্র্যাক ব্যাংক এলিফেন্ট রোড শাখার ১৫৩৫২০১৬৯০১৪৮০০১ নম্বর হিসাবে জমা হয় প্রায় ২৫০ কোটি টাকা। প্রাথমিক পর্যায়ে ২০০৯ সালের ১লা নভেম্বর থেকে ২০১০ সালের ১৩ই মে পর্যন্ত সময়ে কোম্পানি, কোম্পানি চেয়ারম্যান ও এমডি এবং স্বার্থসংশ্লিষ্ট ৯টি একাউন্টে ৫৩ কোটি ৩২ লাখ ৯৩ হাজার ২৭৫ টাকা জমা হয়। সদস্য ও এজেন্টদের সাড়ে ৩২ ভাগ হারে কমিশন দিতে হলে ১৭ কোটি ৩৩ লাখ ২০ হাজার ৩১৪ টাকা উত্তোলন হওয়ার কথা। এ ক্ষেত্রে উত্তোলিত টাকার পরিমাণ ১৯ কোটি ২ লাখ ৮৮ হাজার ২২১ দশমিক ৪০ টাকা। গত বছরের ৭ই জুলাই থেকে ৩০শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে ৩টি একাউন্টে জমা হয় ১৯২ কোটি ৮০ লাখ ১০ হাজার ১৮০ টাকা।

এ টাকার ওপর সাড়ে ৩২ ভাগ হারে গ্রাহকদেরকে কমিশন দিতে হলে ৬২ কোটি ৬৬ লাখ ৩ হাজার ৩০৮ টাকা উত্তোলন করার কথা। এ পর্যায়ে উত্তোলন করা হয়েছে ৫ কোটি ৭৪ লাখ ৫ হাজার ৬৬২ টাকা। অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অনুযায়ী মাসিক খরচ ও কমিশন প্রদান বাবদ ৩ কোটি টাকা উত্তোলনের অনুমতি রয়েছে। দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আগ পর্যন্ত (১ই মে ২০১০) গত ৬ মাসে ১৯ কোটি ২ লাখ ৮৮ হাজার ২২১ দশমিক ৪০ টাকার বিপরীতে কমিশন বাবদ উত্তোলিত হলে গাণিতিক হিসেবে উত্তোলন করা যায় ৬ কোটি ১৮ লাখ ৪৩ হাজার ৬৭১ টাকা। এ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ১২ কোটি ৮৪ হাজার ৪৫ হাজার ৫৫০ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, কোম্পানির একাউন্ট থেকে ব্যক্তিগত একাউন্টে টাকা স্থানান্তর বিষয়ে মুনতাসির হোসেন যে বক্তব্য দিয়েছেন তার সঙ্গে দুদকের অনুসন্ধান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের রেকর্ড-পত্রের গরমিল রয়েছে। অন্যদিকে শহীদুজ্জামান শাহীন কোম্পানির একাউন্টের টাকা ব্যক্তিগত একাউন্টে নেয়া এবং ব্যক্তিগত খাতে ব্যবহারের বিষয়ে কোন দালিলিক প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি। এ বিষয়ে ইউনেপেটুউ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুনতাসির হোসেন জানান, আমাদের কোম্পানির একাউন্ট খুবই শার্প। দুদক আমাদের কাছে যে ধরনের সহযোগিতা চেয়েছে আমরা সব ধরনের সহযোগিতাই করেছি। যখন ডাকে তখনই দুদক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি।

যেসব কাগজপত্র চেয়েছে সব কাগজপত্রই দিয়েছি। তারা আমাদের কোম্পানির ৩টি এবং কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত ৬টিসহ সদস্যদের মোট ১১৬টি একাউন্ট ফ্রিজ করেছিল। তার নির্ধারিত ৪৫ দিনের মধ্যে অনুসন্ধানকাজ শেষ করতে না পরায় আমাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনায় অসুবিধা হচ্ছিল। এ কারণে আমরা আদালতের আশ্রয় নিই। আদালতের কাছ থেকে আমরা ১৫ দিন সময় পেয়েছি।

দুদক যদি মামলা করে সেটা হবে হয়রানিমূলক। আদালতে প্রয়োজনীয় রেকর্ডপত্র উপস্থাপন করে আমরা তা মোকাবিলা করবো। ৪৫ দিনের মধ্যে অনুসন্ধানকাজ শেষ না করা প্রসঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান জানান, ৪৫ দিনের মধ্যেই যে অনুসন্ধানকাজ শেষ করতে হবে তা বাধ্যতামূলক নয়।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৩ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।