আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

RAB এর নির্যাতনের বিনিময়ে ব্রিটেনের বাঙালি রেস্টুরেন্টে জনবল নেওয়ার দাবি ছিল বাংলাদেশের

ধর্ম যার যার , বাংলাদেশ সবার

সৈয়দ আনাস পাশা, লন্ডন করেসপন্ডেন্ট বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম র‌্যাবের নির্যাতনের বিনিময়ে ব্রিটেনের বাঙালি রেস্টুরেন্টে জনবল নেওয়ার দাবি ছিল বাংলাদেশের লন্ডন : মানবাধিকার লঙ্ঘন করে ব্রিটিশ-বাংলাদেশি সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের সন্দেহভাজনদের নির্যাতনের মাধ্যমে তথ্য আদায় করবে র‌্যাব। বিনিময়ে বাংলাদেশের দাবি ছিল, ব্রিটেনে বাঙালিদের পরিচালিত রেস্তোরাঁগুলোতে বাংলাদেশে থেকে শেফ ও ওয়েটার নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। লোবার সরকারের সময় ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাকি স্মিথের সঙ্গে এমনই এক অযৌক্তিক আর অন্যায় সমেঝোতা হয়েছিল বাংলাদেশের। সম্প্রতি বিশ্বের প্রভাবশালী দৈনিক গার্ডিয়ানের এক রিপোর্টে চাঞ্চল্যকর এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। র‌্যাবের (রাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন) নির্যাতনের বিনিময়ে বাংলাদেশের এই দাবি বিবেচনা করবেন বলে জ্যাকি স্মিথ আশ্বাস দিয়েছিলেন।

কিন্তু র‌্যাব শুধু নির্যাতন চালিয়ে গেছে ব্রিটেন সেই আশ্বাস আর রক্ষা করেনি। মানবাধিকার রায় উচ্চকণ্ঠ ও সভ্য সমাজের নেতা বলে দাবিদার ব্রিটেন নিজেদের প্রয়োজনে তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোকে দিয়ে যে মানবাধিকার লংঘন করায়, দেশটির শীর্ষস্থানীয় জাতীয় দৈনিক গার্ডিয়ানের এই রিপোর্টে সেই সত্য আবারও বেরিয়ে এসেছে। দেশের জন্যে হুমকি বিবেচিত সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের সদস্যদের কাছ থেকে তথ্য আদায়ে নিজ দেশে জিজ্ঞাসাবাদে নিয়ে নির্যাতন করার কোনো সুযোগ নেই। তাই ব্রিটেন তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র বাংলাদেশকে দিয়ে এ কাজটি করানোর চেষ্টা করেছে। এমনই চাঞ্চল্যকর আরও কিছু খবর দিয়েছে গার্ডিয়ানের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআই৫ বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার সাহায্যে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের সঙ্গে জড়িত ব্রিটেনের সন্দেহভাজনদের সম্পর্কে তথ্য উদঘাটনের পরিকল্পনা করে। এজন্য তারা তৎকালীন লেবার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাকি স্মিথের অনুমতি চায়। কিন্তু ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বিষয়টি ছিল উভয় সংকটের মত। কারণ তিনি যদি এ বিষয়ে অনুমতি না দেন, তাহলে ব্রিটেনের জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকিপূর্ণ থেকে যায়। আর অনুমতি দিলে বাংলাদেশে র‌্যাবের হাতে আটক ব্রিটিশ বাঙালিদের জীবনের নিরাপত্তা হয় ঝুঁকিপূর্ণ।

গার্ডিয়ানের অনুসন্ধানী রিপোর্টে এ বিষয়ে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেওয়া পরবর্তী সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বর্ণনা দিতে গিয়ে বলা হয়, জ্যাকি স্মিথ তখন নিজে বাংলাদেশে গিয়ে সন্ত্রাস মোকাবেলা বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার ও গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সরাসরি আলোচনার সিদ্ধান্ত নেন। জ্যাকি স্মিথের ওই সফরের আগেই বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে বিদায় নেয় ১/১১ তে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যখন ঢাকায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় তখন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার। রিপোর্টে বলা হয়, জ্যাকি স্মিথ ঢাকায় পৌঁছেই প্রথম টেলিফোন কথা বলেন তৎকালীন সেনা প্রধান মঈন ইউ আহমেদের সঙ্গে। এই টেলিফোন কলকে পরবর্তী সময়ে ব্যাখ্যা করা হয়েছে ‘সৌজন্য’ কল হিসেবে।

এরপর তিনি যে আলোচনায় অংশ নেন তার প্রধান এজেন্ডা ছিল সন্ত্রাস দমন ও জাতীয় নিরাপত্তা। ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হয়েছিলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন একজন ডিজিএফআই কর্মকর্তা গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘ওই বৈঠকে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে কয়েকজন ব্রিটিশ বাঙালির সম্পৃক্ততা সম্পর্কে ব্রিটেনের সন্দেহের কথা প্রকাশ করেন। তিনি এদের প্রতি ব্রিটিশ জনগণের সন্দেহের কথা ব্যাখা করে এ বিষয়ে তথ্য উদঘাটনে বাংলাদেশের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন। ’ ওই বৈঠকে বাংলাদেশের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে গার্ডিয়ানের রিপোর্টে বলা হয়, বাংলাদেশ এ বিষয়ে ব্রিটেনকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুতই ছিল। বিনিময়ে তাদের শর্ত ছিল একটি সামান্য ও কিছুটা আশ্চর্যজনক ইস্যুতে ব্রিটেনের সহযোগিতা।

ব্রিটিশ হোম অফিস ওই সময় ব্রিটেনের ইমিগ্রেশন নীতিতে অস্ট্র্রেলিয়ান স্টাইল পয়েন্ট সিস্টেমের ভিত্তিতে কিছুটা কড়াকড়ি আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। যে সিদ্ধান্তের ফলে ব্রিটেনে বাংলাদেশিদের পরিচালনাধীন রেস্টুরেন্ট সেক্টরে বাংলাদেশ থেকে শেফ ও ওয়েটার নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বাংলাদেশের দাবি ছিল এ বিষয়ে বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে ব্রিটেনকে আরও উদার হতে হবে। বাংলাদেশি পরিচালনাধীন ব্রিটিশ রেস্টুরেন্টগুলোতে বাংলাদেশ থেকে শেফ ও ওয়েটার নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। কারণ এই খাত দীর্ঘ কয়েক দশক থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করতে ব্যাপক অবদান রাখছে।

জ্যাকি স্মিথ বাংলাদেশের এই দাবি বিবেচনা করবেন বলে তখন আশ্বাস দেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ব্রিটেন সেই আশ্বাস আর রক্ষা করেনি। বাংলাদেশি প্রতিপক্ষের সঙ্গে বৈঠকের পর ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাকি স্মিথ সাংবাদিকদের জানান ব্রিটেন ও বাংলাদেশের সন্ত্রাসীদের মধ্যে একটি লিঙ্ক রয়েছে। এটি মোকাবেলায় দু’দেশের মধ্যে প্রশিক্ষণ সহযোগিতা ও তথ্য বিনিময় প্রয়োজন। সন্ত্রাসবাদ রোধে একটি যৌথ পরিকল্পনা গ্রহণের চিন্তা ভাবনাও করছে ব্রিটেন ও বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের একজন কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে গার্ডিয়ান রিপোর্টে বলা হয়, জ্যাকি স্মিথের বাংলাদেশ সফরে প্রায় ডজনখানেক ব্রিটিশ বাঙালি বাংলাদেশ গোয়েন্দা সংস্থার তদন্ত কর্মকাণ্ডের আওতায় ছিল। যাদের মানবাধিকার প্রশ্নে ব্রিটেনে জিজ্ঞাসাবাদ করা ছিল কঠিন। এদের কাছ থেকে তথ্য আদায়ে ব্রিটেন তাই নিরাপত্তা হেফাজতে নির্যাতনের রেকর্ড সৃষ্টিকারী বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতা চায়। এমন খবর বেরিয়ে আসায় বিব্রতকর অবস্থার পড়েছেন ব্রিটেনের রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা। ব্রিটেনের তারকা রাজনীতিকদের সঙ্গে ওঠাবসা করা বিশিষ্ট রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী পারভেজ আহমদ বাংলানিউজকে তাদের এই বিব্রতকর অবস্থার কথা জানিয়ে বলেন, ‘গার্ডিয়ানের রিপোর্টের সত্যতা সম্পর্কে আমার কিছু জানা নেই।

তবে রেস্টুরেন্ট সেক্টর ঘিরে যে স্পর্শকাতর বিষয়টি বেরিয়ে এসেছে তাতে আমরা বিব্রত হচ্ছি। বিষয়টির তদন্ত হওয়া উচিত। ’ তিনি জানান, এ বিষয়ে তারা অনেক কাস্টমারের প্রশ্নেরও মুখোমুখী হচ্ছেন। ব্রিটেনে বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ ক্যাটারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক পাশা খোন্দকার নির্যাতনের বিনিময়ে এ ধরনের কোনো শর্ত নিয়ে ব্রিটেন-বাংলাদেশের আলোচনাকে দৃঢ়তার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করে বলেন, এ ধরনের কোনো আলোচনা হয়ে থাকলে আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাই। ’ তিনি বলেন, ‘ব্রিটেনের অর্থনীতিতে আমাদের রেস্টুরেন্ট সেক্টর বছরে প্রায় ৩.৭ বিলিয়ন পাউন্ড জোগান দিয়ে থাকে।

আমরা এমন কোনো করুণার পাত্র নই যে, এই সেক্টরের উন্নয়নের জন্যে কারো কাছে ভিক্ষা চাইতে হবে বা মানবাধিকার লঙ্ঘনের মত ঘটনা ঘটিয়ে হলেও তা আদায় করতে হবে। ’ ক্যটারার্স সেক্রেটারি বলেন, ‘আমাদের পূর্ব পুরুষদের রেখে যাওয়া রেস্টুরেন্ট সেক্টর আজ ব্রিটেনের অন্যতম একটি সফল সেক্টরে পরিণত হয়েছে। ব্রিটিশ বাঙালি নতুন প্রজন্ম এই সেক্টরে আসতে উৎসাহী নয় বলে এটি ঠিকিয়ে রাখতে আমাদের দেশ থেকেই কর্মী আনতে হবে। আর এই সুযোগই চাই আমরা ব্রিটিশ সরকারের কাছে। এটা কোনো করুণা প্রার্থনা নয়, দেশের অর্থনীতিতে বছরে বছরে বিলিয়ন বিলিয়ন পাউন্ড দেওয়ার বিনিময় হিসেবেই আমরা এই সুযোগ চাই।

আমাদের এই দাবিকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মত কোনো ব্রিটিশ বা বাংলাদেশি ইচ্ছের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হবে অনৈতিক ও অন্যায়। ’ বাংলাদেশ সময় : ২২০৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১১

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।