আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটি সফল ব্রেক আপ আর ..........................................

বোবার নাকি কোন শত্রু নাই, কিন্তু বোবা তো থাকতে পারি না......

অন্তিমের আজ বড় বেশী খারাপ লাগছে। অনেক কথা মনে পড়ছে, অনেক স্মৃতি অনেক ভাল লাগার মুহূর্তগুলো আজ ওকে অনেক বেশী পীড়া দিচ্ছে। আগামীকাল ওর প্রানপ্রিয় পাখিটাকে না বলতে হবে। সে কেমন করে এই পাশবিক কাজটা করবে? বড্ড বেশী বাচতে ইচ্ছে করছে। কেবলই মনে হচ্ছে মানুষ এত কম সময়ের জন্য বাঁচে কেন? আর কটা দিন বাঁচা যায় না।

ওর অসুস্থতার কথা ওর বাবা মা ছাড়া কেউ জানে না। ও কারো সাথে শেয়ার করে নি। এমনকি নিশিকেও না যাকে সে নিজের আরেক অস্তিত্ব মনে করে। নিশিকে ফোন করল অন্তিম। নিশিঃ হ্যালো জান।

অন্তিমঃ উম। কি করছ? নিশিঃ এইত কাল ক্লাস আছে। নোট গুছাচ্ছি। অন্তিমঃ কাল একটু দেখা কর। আমি আসব।

নিশিঃ হুম এসো। অন্তিমঃ আচ্ছা নিশি, আমি যদি না থাকি তুমি আমাকে মিস করবে? নিশিঃ থাকবা না মানে। কি হইছে তোমার? উলটা পাল্টা কি বলছ? অন্তিমঃ না এমনি। কাল আস। রাখি তাহলে।

আজ কথা বলতে ইচ্ছা করছে না। নিশিঃ রাখো, একটা ঘুম দাও। সব ঠিক হয়ে যাবে। গুড নাইট। নিশির সাথে ২ বছরের সম্পর্ক অন্তিমের।

কাল সে সম্পর্কের ইতি টানবে অন্তিম। সম্পর্কটা হবার আগেই অবশ্য রোগটা ধরা পরে। অন্তিম কোনভাবেই চায় নি সম্পর্কে জড়াতে। কিন্তু নিশির প্রগাড় ভালবাসাকে সে ফেলে দিতে পারে নি। অন্তিম ১টা শর্ত জুড়ে দিয়েছিল, ‘আমি যদি কখনও তোমাকে না বলি, তুমি মন থেকে তা মেনে নিবে আর আমাকে মাফ করে দিবে।

‘ নিশি শর্ত মেনে নিয়েছিল কারন অন্তিমের পাগলামি, উদাসীনতা সম্পর্কে ও জানতো। কাল তাদের সম্পর্কের ২ বছর পূর্তি। আর কালই হবে ওদের ব্রেক আপ। অন্তিম চোখের পানি ধরে রাখতে পারছে না, ‘আমি আমার জানটাকে একা রেখে কিভাবে চলে যাচ্ছি? খোদা, তুমি আমাকে কেন পাঠালে আর কেনই বা নিয়ে যাচ্ছ?’ ১৩ই মার্চ। অন্তিমের জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ দিন।

নিশির সাথে দেখা হবে। আজ ও অনেক চিন্তিত অনেক বিচলিত। ওর হাতে ১টা খাম আর ১টা ডায়েরী। নিশি আসছে। রিকশা থেকে নামল।

ভাড়া মিটিয়ে এইদিকেই অন্তিমের দিকেই আসছে। আজ নিশিকে অনেক বেশী সুন্দর লাগছে। ‘তোমাকে আমার আর পাওয়া হল না, আজ আমি তোমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি। না, এত দুর্বল হলে চলবে না। অন্তিম নিজেকে শক্ত কর, সহজ কর নিজেকে।

‘ অন্তিম প্রস্তুত করল নিজের মনকে। নিশিঃ কি ব্যাপার। তোমাকে খুব চিন্তিত মনে হল কাল। কি হয়েছে, খুলে বল তো। অন্তিমঃ হুম, বলব বলেই আসলাম।

আজ আমাদের সম্পর্কের ২ বছর হচ্ছে। তোমার কি মনে আছে? নিশিঃ হুম, খুব ভালভাবেই মনে আছে। আমি তো ভেবেছি তুমি ভুলেই গেছ। গত বছর তো তোমার মনেই ছিল না। আজ মনে রাখলে কি করে? অন্তিমঃ অন্তিম সময়ে সবাই সব কিছু মনে রাখে।

আমিও এর ব্যতিক্রম নই। নিশিঃ মানে কি? অন্তিম সময়ে? কি বলছ? অন্তিমঃ আজ এই সময়টুকু আমাদের সম্পর্কের অন্তিম মুহূর্ত। আজকের পর থেকে আমি আর তোমার থাকব না। নিশিঃ তোমার হয়েছে কি? আমি কি ভুল করলাম? এমন করছ কেন আমার সাথে? নিশির চোখ বেয়ে অশ্রু ধারা বয়ে যাচ্ছে। অন্তিম তা দেখেও না দেখার ভান করল।

অন্তিমঃ নিশি, তোমার কোন দোষ নেই। আমি তোমাকে মনে প্রানে ভালবেসেছি। বিশ্বাস কর, আমি যা বলছি তা আমি বলতে চাচ্ছি না। কিন্তু আজ না বলেও উপায় নেই। আমাদের সম্পর্কের আগে শর্ত ছিল যে আমি চলে যেতে চাইলে আমাকে না করতে পারবে না।

আমাকে ক্ষমা কর। আমার শর্তটা মান প্লিজ। আমি তোমার কাছে আর কিছু চাই না। নিশিঃ তুমি এসব কি পাগলামি করছ? দোহাই তোমার, তুমি চুপ কর। আমি তোমাকে ছাড়া বাচব কিভাবে? অন্তিমঃ কথা বাড়িয়ো না।

এই ডায়েরী আর খামটা রাখো। সন্ধ্যা ৭ টায় খামটা খুলবে আর ডায়েরীটা আমার পক্ষ থেকে তোমার জন্য শেষ উপহার। ডায়েরীতে তোমার আর আমার কথা লিখা আছে। ডায়েরীর সবগুলো পেজ লিখা হল না। যাই হোক,ভাল থেকো।

বিদায়। অন্তিমের বুক ফেটে যাচ্ছে নিঃশব্দ চাপা আর্তনাদে। শেষ সব শেষ। জীবনের সব লেনাদেনা শেষ। বাসায় ফিরে এল সে।

সন্ধ্যা ৭ টায় খামটা খুলল নিশি। ১টা চিঠি। চিঠিটা এরকম, “ নিশি, এই চিঠি যখন পড়ছ তখন আমি হয়ত অনেক দূরে। আমার উপর অভিমান করো না। আমি বুঝতে পারছি আমার শরীর খারাপের দিকে যাচ্ছে।

যে কোন সময় আমি আর থাকব না। তাই তরিঘড়ি করে সব কিছু করা। তোমাকে পাবার ভাগ্য আমার নেই। আমাকে ভুলে যেও না। আমার জন্য দোয়া কর।

তুমি সুখী হও। “ নিশি ফোন করার জন্য মোবাইলটা হাতে নিল। তার আগেই ফোন বেজে উঠল। অন্তিমের বন্ধুর ফোন। নিশিঃ হ্যালো।

অন্তিমের বন্ধুঃ নিশি, মনটাকে শক্ত কর। ভয় পেয়ে গেল নিশি। নিশিঃ আমার অন্তিমের কি হয়েছে? বলত। অন্তিমের বন্ধুঃ অন্তিম নেই, একটু আগে ও আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গেছে। তুমি ওদের বাসায় চলে আসো।

যদি ওকে শেষ দেখতে চাও। নিশি আর কথাই বলতে পারল না। হাউমাউ করে কেঁদে ফেলল।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।