স্বর্গের খোঁজে
অবশেষে চার দশক পরে বাংলাদেশ –ভারতের মধ্যে ছিমহল বিনিময়ের জটিলতার অবসান হতে চলেছে। অচিরেই প্রতিবেশী দুই দেশ নিজেদের মধ্যে ছিটমহল বিমিনয়ের অনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের মধ্যে থাকা ভারতের ১১১টি ছিটমহলের জমির স্বত্ব পাবে বাংলাদেশ। আর ভারতের মধ্যে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের মালিক হবে ভারত। মোটামুটি এভাবেই সমঝোতায় পৌঁছে গেছে ঢাকা ও দিল্লি।
দু’দেশের শীর্ষ পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতৃত্ব সুবিধাজনক একটি সময়ে যৌথভাবে এই সমঝোতার কথা ঘোষণা দিয়ে জানান দেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। সে অনুযায়ীই জমির কাগজপত্র ও হস্তান্তর প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হচ্ছে। ঢাকায় স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এতথ্য জানা গেছে।
ছিটমহল বিনিময়ের বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছে দুই দেশের ‘যৌথ সীমান্ত ওয়ার্কিং গ্রুপ’ (জেবিডব্লিউজি)। গত ১০ ও ১১ নভেম্বর নয়াদিল্লিতে গ্রুপের বৈঠক হয়।
২০০০ সালে গঠিত জেবিডব্লিউজির সেটি ছিল চতুর্থ বৈঠক। চলতি বছর ঢাকায় তাদের পরবর্তী বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
ভারতের অভ্যন্তরে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের আয়তন সাত হাজার ৮৩ দশমিক ৫২ একর। অন্যদিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ভারতের ১১১টি ছিটমহলের আয়তন ১৭ হাজার ২৫৮ দশমিক ২৪ একর।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নীতি নির্ধারণী একটি সূত্র নাম না প্রকাশের শর্তে সোমবার বাংলানিউজকে বলেন, ‘নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত জেবিডব্লিউজির বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে দুই দেশই প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
এ প্রক্রিয়া অনেকদূর এগিয়েও গেছে। দুই দেশের শীর্ষ পর্যায় থেকে ঘোষণা দিয়ে জমি বিনিময়ের ঘোষণা দেওয়ার বিষয়টিও ভাবা হচ্ছে। ’
‘এখন শুধু দেশ দু’টির রাজনৈতিক নেতৃত্বের চূড়ান্ত ঘোষণা দেওয়ার মতো করেই সব কিছু প্রস্তুত করা হচ্ছে। দেশ দু’টির নেতৃত্বও বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখছে’ বলে সূত্রটি উল্লেখ করে।
গত বছর নয়াদিল্লিতে হাসিনা-মনমোহন শীর্ষ বৈঠকেও ছিটমহল সমস্যা সমাধানের সিদ্ধান্ত হয়।
ছিটমহল বিনিময় হলে জমির পরিমাপের দিক থেকে তা বাংলাদেশের জন্যই লাভজনক হবে বলেও সূত্রটির দাবি।
নয়াদিল্লির ওই বৈঠকে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেওয়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব কামাল উদ্দিন আহমেদ সোমবার বাংলানিউজকে বলেন, ‘ছিটমহলগুলোর মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্দশা ও সমস্যার কথা চিন্তা করেই এসব ভূখণ্ড বিনিময়ে একমত হয়েছে দুই দেশ। ’
ছিটমহল বিনিময়ের প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ওই এলাকাগুলো যে দেশের ভেতরে অবস্থিত তাদের সেই দেশের নাগরিক করা হবে। ’
তিনি বলেন, ‘তবে ছিটমহলগুলোতে বসবাসকারীরা কোন দেশের নাগরিক হতে চান সে ব্যাপারে তাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। ’
কামাল উদ্দিন আহমেদ জানান, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার ছিটমহলগুলো ১৯৪৭ সালে র্যাডক্লিফ রোয়েদাদ অনুযায়ী সৃষ্টি হয়।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান সীমান্ত সংক্রান্ত যাবতীয় সমস্যা সমাধানের জন্য ১৯৭৪ সালে স্বারিত হয় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত চুক্তি। ১৯৭৪ সালের ১৬ মে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী নিজ দেশের পক্ষে চুক্তিতে স্বার করেন। ওই চুক্তিতেই ছিটমহল বিনিময়ের কথা উল্লেখ করা হয়।
ভারতের ভেতরে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের মধ্যে কুড়িগ্রাম জেলার অধীনে ১৮টি ও লালমনিরহাট জেলার অধীনে ৩৩টি। এগুলো ভারতের কোচবিহার জেলার প্রশাসনিক সীমানার ভেতরে।
বাংলাদেশের ভেতরে থাকা ভারতের ছিটমহলের ১১১টিই পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার। এগুলোর মধ্যে কুড়িগ্রাম জেলায় ১২টি, লালমনিরহাট জেলায় ৫৯টি, পঞ্চগড় জেলায় ৩৬টি এবং নীলফামারীতে অবস্থিত ৪টি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।