শূন্য
শেষ দৃশ্য ঃ
গল্পের শেষ দৃশ্যটি পরিচিত গল্প। কোন এক ঝড় বৃষ্টির সন্ধায় কাক ভেজা অবস্থায় ছেলেটি আবারও দেখা পায় মেয়েটির। যতটা ভেবেছিল তার চাইতেও অনেক বেশী ভাল লাগছে মেয়েটিকে দেখে। ছেলেটি অপলক চেয়ে থাকে, কত কত দিন পর দেখা। ছোট একটি কথা শুধু বলবে সে মেয়েটিকে।
কিন্তু তার আগেই মেয়েটি তার সামনে এসে হাতটি ধরে ফেলল। চোঁখে চোঁখ রাখল। সেই ভয়ংকর দৃষ্টি। বলল, আমি জানি তোমার অনেক কষ্ট, অনেক দুঃখ পাথর হয়ে জমে আছে তোমার বুকে। সারাটা জীবন দূরে কিংবা খুব কাছে থেকে দিয়ে গেছো সব।
অথচ পাওনি অতটুকুও যতটুকু না পেলে নয়। আজ আমি তোমার সব দুঃখ-কষ্ট দুর করে দিব। তোমার যত না পাওয়া সব আজ তোমার হবে। বিনিময়ে আজ এই সন্ধা থেকে সকাল পর্যন্ত তুমি আমার সঙ্গে থাকবে। ছেলেটা শুধু একটা কথা বলবে মেয়েটিকে।
অথচ কি এক মায়াজালে আটকা পড়ে গেল বুঝলনা। স্বপ্নঘোরে ঘুরতে ঘুরতে কখন যেন মেয়েটির প্রাসাদে চলে এলো এবং খুব অল্প সময়ের মাঝেই মেয়েটি ঝাপিয়ে পড়ল ছেলেটির উপর। সকালে ছেলেটি যখন চোঁখ খুলল, খুব সহজেই বুঝতে পারল মুমুর্স্ব সে। ভালমত চোঁখ মেলে দেখল তার সারা শরীর ক্ষত-বিক্ষত এবং রক্তাক্ত। আর পাশেই হাসিমুখে বসে রক্তের মাঝে আঙ্গুল বুলাচ্ছে মেয়েটি।
ছেলেটি অবাক চোঁখে তাকিয়ে থাকল মেয়েটির দিকে। মেয়েটি বলল, কি আমাকে এখনো চিনতে পারোনি তুমি ? ছেলেটি অনেক চেষ্টা করেও কোন শব্দ বের করতে পারলনা গলা দিয়ে। মেয়েটি আবার বলল, বুঝতেই যখন পারছ আমি ডাইনি, তখন আর দুঃখ-কষ্টকে দূর করার আশায় কিংবা না পাওয়াকে পাবার আশায় এখনো বসে আছো কেন ? ছেলেটি উঠে বসল, মেয়েটি হাতদুটি ধরল। মেয়েটি সত্যিকারের ডাইনির মত হাসছে। ছেলেটির গলা থেকে গোংগানীর মত শব্দ হচ্ছে, কিন্তু কোনভাবেই বলতে পারছে না যা সে বলবে।
ছেলেটির চোঁখ ফেটে জল বেরোচ্ছে। হঠাৎ বের হলো .......
মেয়েটির শুরু ঃ
মেয়েটি ছোট থেকেই যে কথাটি শুনে আসছে তা হলো খুব মায়াবী মুখটি তোমার। চোঁখদুটি বুকের খুব ভিতরে তুফান বইয়ে দেয়। তারপর যখন ক্লাস সেভেন কি এইট তখন থেকেই আশেপাশের ছেলে ছোকরা কিংবা সহপাঠী যারা, সবাই মায়াবী মুখ আর ভয়ংকর জ্বালা ধরা চোঁখের প্রশংসা আর তার চাইতেও অধিক হারে ভাললাগা, ভালবাসার কথা বলতে লাগল। মেয়েটি প্রথমে এড়িয়ে যেতে লাগল।
আর একসময় সরাসরি না বলা শুরু করল। কিন্তু যতই না করুক বারবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে লাগল। ছেলেদের দল ঘুরেফিরে আসতে লাগল। আর সেও যথারীতি না বলতে লাগল। এভাবে একদিন মেয়েটি বড় হয়ে উঠল।
ছেলেগুলো চলে গেল, নতুন ছেলেরা আশেপাশে চলে এলো। মেয়েটির না বলা থামলনা। আসলে মেয়েটি নানা প্রতিকুলতার মাঝে না শব্দটাকে একটা অবলম্বন হিসেবে বেছে নিয়েছিল। আর এই না এর মাঝে কিভাবে যেন বন্দী হয়ে গেল। ঠিক এমনি সময় ছেলেটি মেয়েটির কাছের মানুষ না হলেও পাশের মানুষ হিসেবে চলে আসল।
কিন্তু কিভাবে কি হলো কেউই বুঝলনা। হঠাৎ একদিন মেয়েটি অন্যএকজনের সাথে ভয়ংকর এক প্রেমে জড়িয়ে গেল।
ছেলেটির শুরু ঃ
পরিবারে ঝামেলা থাকায় ছোট হতেই ছেলেটিকে ঘরে বন্দী জীবন কাটাতে হয়। সকালে স্কুল আর স্কুল থেকে ফিরে ঘরে বন্দী। বাইরে খেলতে যেতে পারতনা।
সহপাঠী শুধু না, বাবা-চাচার বয়সীরাও একান্ত পারিবারিক সমস্যাগুলো নিয়ে ঠাট্রা করত। আর সহপাঠীরা এতবেশী লজ্জা দিত যে মাঝেমাঝেই মারামারি হয়ে যেত। ফলে বন্দী জীবনটাই বেছে নিতে হলো এমন একটা সময় যখন মন চাইতো খেলতে,ঘুড়ি উড়াতে কিংবা গায়ে কাদা-ধূলা মাখতে। তারপর একদিন কৈশরের শেষ সময়ে বাড়ী থেকে বের হলো। নতুন জায়গা, নতুন মানুষ।
কেউ সেখানে তাকে চিনেনা। ফলে আর দশ জনের সাথে মানুষ যেমন ব্যবহার করে, তার সাথেও তাই। ছেলেটি আবিষ্কার করে বহুদিনের না পাওয়াকে। যখন কেউ ছেলেটির মাথায় হাত দিয়ে কিংবা পিঠে হাত বুলিয়ে কথা বলত তখন অনেকেই অবাক হয়ে দেখত ছেলেটি মাথা নিচু করে চোঁেখর জল ফেলছে। কিন্তু ছেলেটি কোনদিনই বলতে পারেনি কারণটা।
কিন্তু মানুষের সঙ্গে মেশা কিংবা মানুষের খুব কাছাকাছি থাকাটা তার নেশা হয়ে গেল। মানুষের একটু স্নেহ কিংবা মমতার জন্য সে কাঙ্গাল হয়ে গেল। কোন বাঁধাই তাকে মানুষের মিছিলে যাওয়া আটকাতে পারলনা। এরই মাঝে একদিন সে মেয়েটিকে আবিষ্কার করল অন্যভাবে। এ এক অন্য বাঁধন।
সে বুঝল, হঠাৎ করে যে অনেক পাওয়া তা আসলে এই একটি পাওয়ার কাছে কিছুই নয়। ছেলেটির বুক জ্বলে গেল। মেয়েটার একটা নাম দিল, যা একান্ত নিজের।
ছেলেটি ও মেয়েটির একসাথের গল্প সঙ্গে আরো কেউ ঃ
ছেলেটি অবশেষে মেয়েটিকে বলেই ফেলল ভাললাগা আর ভালবাসার কথা। মেয়েটি স্বভাবসুলভ না বলল।
ছেলেটি মেনে নিল কি নিতে পারলনা সেটা গৌন হয়ে গেল। মেয়েটি অন্যএকজনের সাথে ভয়ংকর এক প্রেমে জড়িয়ে গেল। ভয়ংকর শব্দটার জন্য ভয় পেতে হবে না। কারন ভয়টা শুধু মাত্র মেয়েটার জন্য। নব্য প্রেমিকটির বহুদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল সহপাঠির সাথে।
মেয়েটি তা দেখেছে। কিন্তু দেখেনি যা, তা হলো ছেলেটি মোবাইলে আরো কিছু সম্পর্ক তৈরি করেছিল এবং তার একটা প্রাইভেট ডেটিং কামরা ছিল। যদিও পুরোটাই শোনা কথা। তবে এটা কোন মূখ্য ব্যাপারনা। মূখ্য ব্যাপার হলো মেয়েটি খুব কাছ থেকে দেখল প্রেমিক আর তার সহপাঠির দূরন্ত প্রেম।
তার ভেতর কেমন যেন একটা না পাওয়ার বেদনা জেগে উঠল। ধীরে ধীরে তার ভেতর একটা হিংসা, বিভৎসতা বাসা বাঁধল। মেয়েটা স্বপ্ন দেখতে লাগল, প্রেমিকটি তাকে একদিন মেঘের দেশে বেড়াতে নিয়ে যাবে। মেঘের দেশের ঘাস ফড়িং তার সাথে খেলবে। প্রেমিকটি বকুল ফুলের মালা গেঁথে দেবে তাকে।
প্রেমিকটি অতীব ভাল খেলোয়াড়। বিগত দিনের মেয়েগুলো থেকে এই মেয়েটা একটু ভিন্ন। কাজেই নতুন একটা রহস্য উন্মোচনের সুযোগটা সে হারাতে চাইলনা। কাজেই সে বহুদিনের প্রেমিকাটিকে বলল ” নতুন একটা রহস্য উন্মোচনের সুযোগ পেয়েছি , তাই নতুন কিছু আবিষ্কারের আশায় চলে গেলাম। আমি আবিষ্কার আর রহস্য উন্মোচন এর মাঝেই নিজেকে দেখতে ভালবাসি।
আর এটাই আমি। ভাল লাগলে অপেক্ষায় থেকো, না লাগলে সরে যেও” এই বলে বিদায় জানিয়ে দিল মেয়েটির সামনেই। মেয়েটি খুব উপভোগ করল ঘটনাটা। তারই জন্য এতদিনের একটা সম্পর্ক ভেঙ্গে গেল ! তার মানে .....। প্রেমিকটি কিন্তু মোবাইলটা ঠিক রাখল যথারীতি।
আর তারপর মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলল, সবচাইতে দূরের যে মেঘ সেটা তোমার। চল আমরা সবচাইতে দূরের মেঘের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ি। মেয়েটি সরল বিশ্বাসে সবটুকু প্রেম উজার করে ঢেলে দিল ছেলেটির সুধাপাত্রে। ছেলেটি সেই সুধা পান করে নিয়মিত। আর সবচাইতে দূরের মেঘটির সন্ধান করে।
এরই মধ্যে কেটে গেল কত পূর্ণিমা-অমাবস্যা, চলে গেল কত গ্রীষ্ম-বসন্ত। কিন্তু কাঙ্খিত মেঘের সন্ধান আর পায়নি মেয়েটি। অতঃপর এক তীব্র শীতের সকালে মেয়েটি আবিষ্কার করে চারপাশে খোলা মাঠ। যতদূর চোঁখ যায় শূন্য আর শূন্যতা। প্রেমিকটি ওর জন্য রেখে গেছে ছোট একটি চিঠি।
যেখানে লেখা, ”নতুন একটা রহস্য উন্মোচনের সুযোগ পেয়েছি , তাই নতুন কিছু আবিস্কারের আশায় চলে গেলাম। আমি আবিষ্কার আর রহস্য উন্মোচন এর মাঝেই নিজেকে দেখতে ভালবাসি। আর এটাই আমি। ভাল লাগলে অপেক্ষায় থেকো, না লাগলে সরে যেও”। মেয়েটির মনে পড়ে গেল সব।
আকাশের দিকে চেয়ে কি দেখল কেউই জানলনা কোনদিন। মেঘের দেশে নিয়ে যাবে বলে প্রতারক প্রেমিকটি তাকে ফেলে রেখে গেছে রাস্তায়। এরও বহুদিন পর মেয়েটি জানল, একজন আজো অপেক্ষায় আছে। পথ চেয়ে বসে আছে তারই অপেক্ষায়। যে রাজকুমার হতে পারেনি।
পারেনি কোনদিন পঙ্খিরাজ ঘোড়া নিয়ে সামনে এসে ময়ুর পঙ্খির আসনে বসিয়ে ঘুরতে নিয়ে যেতে। না ছেলেটি রাজকুমার হতে পারেনি। হয়েছে কবি। আকন্ঠ বিষ পান করতে করতে যে মেয়েটিকে নিয়ে লিখে গেছে একের পর এক ভালবাসার পংতি। আজ তাদের দেখা হবে।
আজ সন্ধায়।
শেষ দৃশ্য বাকিটুকু ঃ
ছেলেটির গলা থেকে গোংগানীর মত শব্দ হচ্ছে, কিন্তু কোনভাবেই বলতে পারছে না যা সে বলবে। ছেলেটির চোঁখ ফেটে জল বেরোচ্ছে। হঠাৎ বের হলো ....... মেঘবালিকা তুমি ভাল আছো তো ? মেয়েটি ডাইনির মত হাসতে গিয়েও হঠাৎ থমকে গেল। এই নামটিই তো দিয়েছিল ছেলেটি একদিন।
ছেলেটির চোঁখের দিকে তাকাল খুব ভাল করে। না, প্রতারক কোন ছায়া নেই সেখানে। খুব যেন ঠান্ডা। হঠাৎ মেয়েটির চোঁখ ফেটে এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়ল ছেলেটির হাতে।
সমাপ্তি-১ ঃ
অতঃপর তাহারা সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিলেন।
সমাপ্তি-২ ঃ
ছেলেটি প্রতিরাতেই এমন একটি স্বপ্ন দেখে ঘুম থেকে জেগে উঠে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।