নোয়াখালী প্রতিনিধি
নোয়াখালীর আট পৌরসভার মধ্যে সোনাইমুড়ি ব্যাতীত আজ (মঙ্গলবার) জেলার নোয়াখালী, চৌমুহনী, সেনবাগ, চাটখিল, কবিরহাট, বসুরহাট ও হাতিয়ায় পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এবারের নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো প্রার্থী মনোনয়ন দেয়ায় এই সাত পৌরসভায়ই মেয়র পদে মহাজোট এবং চারদলীয় জোট প্রার্থীদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে এমনটাই ধারণা ভোটারদের। তবে পিছিয়ে নেই আওয়ামীলীগ ও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীরাও। আবার দুই জোটের বাইরে তিন পৌরসভায় মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা। এদিকে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে বসুরহাট ও কবিরহাটে সেনাবাহিনী এবং হাতিয়ায় নৌবাহিনী ও কোষ্টগার্ডের পাশাপাশি সব পৌরসভায় পর্যাপ্ত পুলিশ ও বিজিবি থাকবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোঃ সিরাজুল ইসলাম।
নোয়াখালী পৌরসভা-
নোয়াখালী পৌরসভায় মেয়র পদে মহজোট প্রার্থী গোলাম মহিউদ্দিন লাতু, চারদলীয় জোট প্রার্থী বর্তমান মেয়র হারুনুর রশিদ আজাদ ও স্বতন্ত্র এ কে এম সাইফ উদ্দিন সোহান প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। তবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে মহাজোট ও চারদলীয় জোট প্রার্থীর মধ্যে। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল মালেক উকিলের ছেলে গোলাম মহিউদ্দিন লাতুকে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন দেয়ার ফলে প্রথম দিকে দলীয় নেতাকর্মীরা বেশিরভাগ নিষ্ক্রিয় থাকলেও স্থানীয় সাংসদ ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী মেয়র পদে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতাদের সাথে নিয়ে গণসংযোগ ও নির্বাচনী প্রচারণা জোরদার করার পর দৃশ্যপট বদলে গেছে। একই অবস্থা চারদলীয় জোট প্রার্থী হারুনুর রশিদ আজাদের ক্ষেত্রেও। কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শাহজাহানসহ অনেক প্রভাবশালী নেতা প্রথম দিকে হারুনের সঙ্গে না নামলেও গত ৩/৪দিনে তারা সক্রিয় প্রচারণায় নেমেছেন।
ফলে দুই প্রার্থীই এখন মুখোমুখি অবস্থানে। শেষ পর্যন্ত ফলাফল কার পক্ষে যায় সেজন্য ৫৫ হাজার ২২৯জন ভোটারকে অপেক্ষা করতে হবে আজ বিকাল পর্যন্ত। এখানে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৫১জন এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৮জন প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। মেয়র নির্বাচনের ধারা কাউন্সিলর নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করবে বলে ভোটারদের ধারনা। এদিকে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী একেএম সাইফ উদ্দিন সোহানের প্রচারণাও শেষ বেলায় জমে উঠেছে।
চৌমুহনী পৌরসভা-
এ পৌরসভায় মেয়র প্রার্থীরা হচ্ছেন মহাজোট থেকে বেগমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও গ্লোব সফডিংকসের পরিচালক মামুনুর রশিদ কিরন, স্থানীয় সাংসদ বরকত উল্যা বুলুর সমর্থনে বিএনপি ও চারদলীয় জোট থেকে জুলফিকার আলী ভুট্টো, বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বরকত উল্যা বুলুর একসময়ের ঘনিষ্ঠ সহযোগী মঞ্জুরুল আজিম সুমন, জাতীয় পার্টি থেকে সাবেক পৌর চেয়ারম্যান এবিএম ইউসুফ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মাসুম রেজা। এখানে সরাসরি প্রতিদ্বন্ধীতা হবে মহাজোট ও চারদলীয় জোটের মধ্যে। পাশাপাশি জাপা প্রার্থী ও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীও ভালো ভোট পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ পৌরসভায় সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ৫২জন এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী ১৫ জন। সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে অন্তত ৫জন বর্তমান কাউন্সিলর পুননির্বাচিত হতে পারেন এমন আভাস সাধারণ ভোটারদের।
সেনবাগ পৌরসভা-
এ পৌরসভার মেয়র পদে ৯ প্রার্থীর মধ্যে লড়াই হবে চতুর্মুখী। এখানে আওয়ামীলীগ প্রার্থী আবু জাফর টিপু, বিএনপির ওমর ফারুক বাবুল, বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী ভিপি মফিজুর রহমান, জাতীয় পার্টির তালেবুজ্জামানের মধ্যে লড়াই হবে সমান তালে।
এখানকার আওয়ামীলীগের সাধারণ নেতাকর্মীরা শংকিত সিনিয়র নেতাদের নিয়ে। কারণ বিগত উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামীলীগের একক প্রার্থীর বিপরীতে বিএনপির তিনজন উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হলেও আওয়ামীলীগ প্রার্থী জিততে পারেনি দলীয় কোন্দলের কারণে। তবে অর্জুনতলা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর টিপুর পক্ষে শেষ পর্যন্ত নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে নতুন নজির সৃষ্টি হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীর সাথে ভোটের ব্যবধান হবে কম। কারণ বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে বিরোধী দলীয় চীফ হুইপ এবং বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে রয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী মফিজুর রহমান। তাছাড়া জাতীয় পার্টির প্রার্থীর রয়েছে ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা। এখানে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৫৫জন এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১১জন প্রতিদ্বন্ধীতা করছেন। ৯ ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির মধ্যে ভাগাভাগি হতে পারে।
চাটখিল পৌরসভা-
চাটখিল পৌরসভায় মেয়র পদে চার প্রার্থীর মধ্যেই চলছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। আওয়ামীলীগের সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বিএনপির গোলাম মোস্তফা, বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী নুরুল ইসলাম ভূঞা এবং জাতীয় পার্টির ফজলুল করিম বাচ্চু অবস্থান করছেন মুখোমুখি। শেষ পর্যন্ত চারদলীয় জোট এবং মহাজোটের বাইরে গিয়ে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী চমক দেখিয়ে দিতে পারেন; এমন খবরও উড়ছে ভোটের আকাশে। এখানে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৩জন এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১১জন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। সাধারণ কাউন্সিলরদের মধ্যে বিএনপি এবং বর্তমান কাউন্সিলরদের বেশী বিজয়ী হতে পারেন বলে জানা গেছে।
হাতিয়া পৌরসভা-
দ্বীপ পৌরসভা হাতিয়ায় এবারই প্রথম পৌর নির্বাচন হচ্ছে। ৬ মেয়র প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামীলীগের এডভোকেট ছাইফ উদ্দিন আহম্মেদ, আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী (বহিস্কৃত) এ কে এম ইউসুফ আলী, বিএনপির এডভোকেট সাজ্জাদ হোসেনের মধ্যে প্রতিদ্বন্ধিতা চলছে। তবে শেষ পর্যন্ত লড়াই হবে আওয়ামীলীগ প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে। অপরদিকে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করতে সিদ্ধহস্ত সাবেক সাংসদ ও জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আলী ও তাঁর স্ত্রী গত সংসদ নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আয়েশা আলী আদাজল খেয়ে নেমেছেন। এনিয়ে মোহাম্মদ আলীকে শোকজ করেছে জেলা আওয়ামীলীগ।
এখানে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৫০জন এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। মেয়র পদে যিনি বিজয়ী হবেন তাঁর অনুসারী কাউন্সিলর বেশি নির্বাচিত হবে বলে সাধারণ ভোটারদের ধারণা।
কবিরহাট পৌরসভা-
এ পৌরসভায় মেয়র পদে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন চারদলীয় জোট প্রার্থী ফখরুল ইসলাম দুলাল ও মহাজোট প্রার্থী জহিরুল হক রায়হান। এখানে মেয়র প্রার্থী এ দুজনই। চারদলীয় জোট প্রার্থীর প্রতি রয়েছে সাবেক পৌরসভা চেয়ারম্যান ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যরিষ্টার মওদুদ আহমদের সমর্থন।
অপরদিকে মহাজোট প্রার্থীর পক্ষে রয়েছেন স্থানীয় সাংসদ ও আওয়ামীলীগের সভাপতি মন্ডলির সদস্য ওবায়দুল কাদের। শেষ পর্যন্ত যিনিই নির্বাচিত হন ভোটের ব্যবধান কম হবে বলে শোনা যাচ্ছে। এখানে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩০জন এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৯জন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। তবে এই পৌরসভায়ও মেয়র পদে বিজয়ের সাথে রয়েছে কাউন্সিলরদের বিজয়ের সম্পর্ক। পাশাপাশি বর্তমান কাউন্সিলররা ভালো করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বসুরহাট পৌরসভা-
বসুরহাট পৌরসভায়ও নির্বাচন হচ্ছে সরাসরি চারদলীয় জোট ও মহাজোটের মধ্যে। মহাজোট প্রার্থী সাবেক পৌর চেয়ারম্যান ও স্থানীয় সাংসদ ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই মীর্জা কাদের এবং চারদলীয় জোট প্রাথী ও বর্তমান মেয়র কামাল উদ্দিন চৌধুরীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। এখানে মেয়র প্রার্থী এদুজনই। নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের শংকা দুর করতে নির্বাচন কমিশন এখানে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয়। তবে শেষ পর্যন্ত অল্প ভোটের ব্যবধানে হারতে হবে দুজনের যে কোন একজনকে।
এখানে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৯জন এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে লড়ছেন ৮জন। সাধারণ কাউন্সিলরদের মধ্যে বর্তমান কাউন্সিলরদের বেশীরভাগই পুননির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।