আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এই লেখাটি মূলত বিএনপি সমর্থকদের প্রতি .....

একবার আপনারে চিনতে পারলে রে , যাবে অচেনা রে চেনা পরিস্থিতি গভীর উদ্বেগজনক। সারাদেশে ব্যাপক সহিংসতা চলছে। মারা গেছে প্রায় ৫০ জনের মত মানুষ, মতান্তরে ৫৬। মানুষ মারা গেছে। জামাত-শিবির না কি আম পাবলিক , তার চেয়ে বড় কথা হলো মানুষ মারা গেছে।

‘পুলিশ চ্যাং দোলা করে মৃত, রক্তাক্ত গুলিবিদ্ধ মানুষের শরীর টেনে নিয়ে যাচ্ছে’ টিভি স্ক্রীনে এই দৃশ্য সত্যি অসহনীয়। ক্রোধ মানুষকে অন্ধ করে দেয়। অন্ধ না হলে এই দৃশ্য একজন মানুষ হিসেবে যে কাউকেই আহত করবে। এর সমাধান কি? যে মানুষগুলি উন্মত্ত হয়ে উঠেছে তারা কেন এমন উন্মত্ত হয়েছে? তাদের মনে হয়েছে একজন মহান ইসলামী চিন্তাবিদকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। তাদের মনে হয়েছে আল্লামা সাঈদীর মত একজন বিরাট আলেমকে সরকার ষড়যন্ত্র করে ফাঁসি দিয়েছে।

এটা দেশকে আলেম শূন্য করার এক গভীর ষড়যন্ত্র। সুতরাং তারা জীবন দিয়ে হলেও এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে। জীবন দিয়ে হলেও ইসলামের বিরুদ্ধে এতবড় অন্যায় ষড়যন্ত্র তারা প্রতিহত করবে। এতে প্রান যায় যাক। ওরা যেটা ভাবছে সেই ভাবনাটা একদিনে তৈরী হয়নি।

আমাদের সবার চোখের সামনে দিয়ে দিনের পর দিন ওরা বেড়ে উঠেছে। ওরা কোরান হাদীসের দোহাই দিয়ে আমাদের ভাইদের মানুষ খুনের তালিম দিয়েছে। আমরা ওদের থামাইনি। ওদের বিষবৃক্ষ চারা থেকে মহীরূহ হয়েছে আমরা শুধু দেখেছি। আমাদের বয়োজ্যেষ্ঠ পলিটিশিয়ানগণ(যাদের অধিকাংশই আবার আনফরচুনেটলি মুক্তিযোদ্ধা), আপনাদের অসৎ রাজনীতির ফল আজ আমরা ভোগ করছি।

এই ফলটা হলো কিছু ভয়ংকর অসৎ লোকের সুপ্ত অবস্থা থেকে সংহারী রুপে আবির্ভূত হওয়া। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় অনেকটা সুপার এডেড ইনফেকশনের মত বা অপরচুনিস্টিক ইনফেকশনের মত। আমাদের ইমিউনিটির ঘাটতির সুযোগে দেলু’দের আল্লামা হয়ে যাওয়া। অতঃপর মস্তিষ্ক প্রক্ষালন বা মগজ ধোলাই। আচ্ছা ওরা যখন আমাদের এই তরুন ছেলেদের মগজ ধোলাই করেছে আমাদের সুশীলরা তখন কি করেছে? কিছুইনা।

আমাদের সুশীল বুদ্ধিজীবিরা এই সব প্রান্তিক ছেলেদের নিয়ে ভাবেন না। টাইম নাই। আর আমাদের নেতারা কি করেছেন? আমাদের ছেলেদের চাদা তুলতে শিখিয়েছেন, চাপাতির কোপ শিখিয়েছেন। ফলে আমাদের মুরুব্বিরা বলেছেন “তোমাদের থেকে তো ওরাই ভাল। রগ কাটে কিনা জানিনা, ওরা তো অন্তত পাঁচ অক্ত নামাজ পড়ে।

কোরানের কথা বলে। ” এই মূহুর্তের অবস্থা খুবই আশংকাজনক। এটা যে অকল্পনীয় ছিল তা নয়। বরং এরকমটাই যে হবে সেটা জানাই ছিল। এখন কি করনীয়? সমাধান কি? আমি শাহবাগ আন্দোলনের পর থেকেই বিএনপির দিকে স্থিরনেত্র তাকিয়ে ছিলাম।

আমার কয়েকদিনের লেখায়-আলোচনায় ঘুরে ফিরে এসেছে বিএনপি প্রসংগ। আমার এক সহকর্মী কদিন আগে আমার উপর একটু বিরক্ত হয়ে বলেছিলেন“ আপনি বিএনপি নিয়া লাগছেন ক্যান? এরা জীবনেও এখানে আসবেনা। এরা জামাতের চেয়ে বড়….” বিএনপি দলটিকে আমি মন থেকে সম্মান করি (কেন করি পরে আরেকদিন বলব)। আমার সহকর্মীর উচ্চারিত বাক্যটুকু তাই শেষ করলাম না। আমি অস্বস্তি বোধ করি এই বাক্যটিতে।

সহকর্মীকে আমি যে উত্তরটি দিয়েছিলাম সে কথাটাই আমি কয়েকদিন ধরে ঘুরে ফিরে সবখানে বলছি। বিএনপি জামাতের সঙ্গ ত্যাগ করলেই দেখবেন ওদের দম ফুরিয়ে যাবে। বিএনপি ওদের অনেক বড় মনের জোর। ………………………………………………………………………………………………………………………. ২. যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে বিএনপি আওয়ামীলীগের ভেতরে একটা বহু পুরনো বিতর্ক প্রচলিত আছে।  জিয়াউর রহমানই তো রাজাকারদের এই দেশে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

 বঙ্গবন্ধুই কেন দেশ স্বাধীনের পর যুদ্ধাপরাধীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলেন? এরপর চলতে থাকে দুই পক্ষের ধানাই পানাই। কবি গানের ‘চাপান উতোর’এর মত। বুদ্ধি বিকাশের পর থেকেই এই বিতর্ক দেখে আসছি। আওয়ামীলীগ ওয়ালারা ডিফেন্স করেন যে, দালাল আইন বাতিল হয়েছে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর। সায়েম-জিয়ার সরকার এটা করেছে।

বিএনপি ওয়ালার তাদের বিরুদ্ধে রাজাকার তোষন ও পোষনের অভিযোগ ডিফেন্স করেন না। বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামীলীগকে পাল্টা এ্যটাক করে। অফেন্স ইজ দ্যা বেস্ট ডিফেন্স। বরং যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি করতে দেওয়াটাকে তারা বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তন বলে গর্ব বোধ করেন। আসলে দুটি অভিযোগই সত্য।

তারা স্বীকার করুক আর না করুক। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর আদর্শে তো বিএনপি বিশ্বাস করেনা। তাহলে কেন বঙ্গবন্ধুর দোহাই দেওয়া? বঙ্গবন্ধু ক্ষমা করেছেন বলে জিয়া বিবেক শূন্য হযে তাদের প্রধানমন্ত্রী বানাবেন, তাদের সুরে দেশের মূলনীতি তৈরী করবেন সেটা কোন ধরনের ভাল মানুষী? ভাবটা এরকম যেন বঙ্গবন্ধুর খুবই অনুগত ভাবশিষ্য জিয়া। তাই রাজাকারদের প্রধানমন্ত্রী না বানালে বঙ্গবন্ধুর সম্মান রক্ষা হয়না। আর বঙ্গবন্ধু যে একটি ঐতিহাসিক ভুল করেছেন সেটা আওয়ামীলীগওয়ালাদের স্বীকার করতেই বা দোষ কোথায়? হতে পারে এটা তার মানবিক দুর্বলতা।

অথবা তিনি আন্তর্জাতিক চাপ, স্বীকুতি আদায়ের তাগিদ, বন্দী বিনিময় প্রভৃতি নানারকম চাপে সেটা পারেননি। কিন্তু চাপ সামলাতে না পারাটাও তো একটা ব্যর্থতা। বঙ্গবন্ধুর কাছে তো এদেশের মানুষ সেটাই আশা করেছিল যেটা সাধারন কারো পক্ষে সম্ভবনা। যেটা আর কারো পারার কথা না। দেশের এই ক্রুশিয়াল টাইমে বিএনপির সুমতি ছাড়া আমাদের সামনে বড় কোন আশা নাই।

বিএনপি অনেক বড় দল, জনপ্রিয় দল। বিএনপিকে যারা ভালবাসে তারা বিএনপির দ্বারা বায়াসড হবেন সেটাই স্বাভাবিক। সবাই স্বাধীন ভাবে নিজের বিবেক বুদ্ধির প্রয়োগ ঘটাতে পারেনা। টকশো,ফেইসবুক, চায়ের কাপের আড্ডায় আমি দেখেছি চলমান ঘটনাবলীতে বিএনপিপন্থীরা বেশীর ভাগই (অল্প কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া) জামাতীদের মতই কথা বলে। পার্থক্য শুধু ওরা পুলিশের সাথে যুদ্ধ করছেনা।

তারা অনেকেই এখনো সন্দিহান সাইদী আদৌ যুদ্ধাপরাধ করেছে কি না. বিএনপি যদি আজকের প্রেক্ষাপটে কোন ভুল রাজনীতি করে আমরা পুরো জাতি এর জন্য সাফার করবো। দেশের এ সংকট উত্তরনে আওয়ামীলীগ ও বিএনপিকে এক কাতারে আসতে হবে। একজন কে বাঁচাতে যারা বহু মানুষ খুন করে, পুলিশ হত্যা করে, ধর্মকে কলুষিত করে, ট্রেনের বগি উল্টে দেয়, সংখ্যা লঘুদের বাড়িতে আগুন দেয়, বৌদ্ধ মন্দির ভেঙে ফেলে তারা আমাদের কেউ নয়। বিএনপি কেন এর দায় নেবে? প্লিজ বিএনপি ফিরে আসুন। আওয়ামীলীগকে এই কথা আর বলতে দিবেন না “যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধা গ্রস্থ করার জন্য একটি মহল ……”।

এই ইস্যু নিয়ে নষ্ট রাজনীতি বন্ধ হোক, এখনই। আগামী ইলেকশনে এই একটি ইস্যু নিয়ে আওয়ামীলীগকে পার পেতে দেবেন না। আমাদের আরো অনেক ইস্যু আছে,অনেক হিসাব আছে। বিশ্বজিতের রক্ত এখনো আমাদের গা থেকে শুকায়নি। আমি আমার এই ত্রিশোর্ধ জীবনের স্বল্প অভিজ্ঞতা থেকে জানি আওয়ামীলীগ- বিএনপি একসাথে না চাইলে এই দেশে ভাল কিছু অর্জন হয়না।

যারা বিএনপির বিবেকবান তরুনরা আছেন তারা হাই কমান্ডকে বোঝান, বাধ্য করুন। তরুনরা না চাইলে হবেনা। বুড়োরা সব আধমরা। স্বার্থের ঘুনে খাওয়া এক একটা সস্তা কাঠের আসবাব। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।