লোকটির সাথে আমার দেখা প্রায় মাস ২ আগে। জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটিতে। গেস্ট রুমে বসে আছি আমার এক আত্মীয়ার অপেক্ষায়। দুপুর ১টা হবে। ১ বৃদ্ধ লোক ( বয়স ৬৫+), ছাত্রী হোস্টেলের পাশে অনেকক্ষণ ধরে ঘোরাফেরা করছিলেন।
উনি এসেছেন সাতক্ষীরা থেকে নিজের মেয়ের সাথে দেখা করতে। সহজ-সরল মানুষ। ঢাকায় এসে কোন এক রাজনৈতিক দলের বিশাল সমাবেশ দেখে একটু উঁকি মেরে দেখতে গিয়েছিলেন কোন এক বড় নেতাকে। প্রচন্ড ভিড় বলে ঢুকতে না পেরে ফিরে এলেন। এসেই আবিষ্কার করলেন তার পাঞ্জাবির পকেট থেকে কমদামী মোবাইলটা গায়েব।
আর তাই হোস্টেলের সামনে এসে নিজের মেয়েকে ফোন ও করতে পারছেন না। অবশেষে কিছু ছাত্রীর সহায়তায় মেয়ের সাথে দেখা হয়। মেয়ের সাথে আলাপ করছিলেন গেস্ট রুমে বসেই। সেই সুত্রে আমার সাথেও দেখা হয়। মেয়েটি আমার সেই আত্মীয়ারই বান্ধবী।
খুব সহজসরল, নামাজী, মাথায় টুপি, গায়ে পাঞ্জাবী,মুখে পাকা দাঁড়ি। মেয়ের সাথে দেখা করে ঐ দিন ই দেশের বাড়িতে চলে যাবেন। ওনার ১ ছেলে- ১ মেয়ে, দুজনেই একই ভার্সিটিতে পড়ে।
আজ রাতে হঠাত ই খবর পেলাম উনি মারা গেছেন। কিভাবে???
সাইদীর রায় ঘোষণা হওয়ার পর উনি বাহিরে গিয়েছিলেন কোন এক কাজে।
রাস্তায় পড়ে যান পুলিশ আর জামায়াতের কর্মীদের মারামারির মাঝে। এক পর্যায়ে নাকি টুপি,দাঁড়ি,পাঞ্জাবি দেখে পুলিশ জামায়াত-শিবির সন্দেহে গুলি চালায় নিরীহ লোকটির উপর। মারা যান তারপরেই।
প্রচন্ড মন খারাপ, ঘটনাটি শোনার পর থেকে। মেয়েটাকে নিয়ে তার বড় ভাই রওনা দিয়েছে বাড়ির উদ্দেশ্যে।
মেয়েটি এখন জানেনা তার বাবার মৃত্যুর সংবাদ!
জানিনা পুলিশের ভূমিকা এর পেছনে কতটুকু, ভুল করে হোক আর জেনে বুঝেই হোক। এভাবে মৃত্যু কারো প্রত্যাশিত না। পুলিশের মারমুখী আচরন থেকে সাধারণ মানুষও রেহাই পাচ্ছেনা। টিয়ারশেল, জলকামান, পিপার স্প্রে থাকতে এভাবে গুলি চালানো কতটুকু সঠিক তা নিয়ে ভাবা উচিত।
আজ আমার মন খুব খারাপ, চোখের সামনে বারবার লোকটির চেহারা ভেসে উঠছে।
আর মনে হচ্ছে ওনার সাথে ওনার মেয়ের সেদিনের কথোপোকথন.........একজন বাবার সাথে তার আদরের
ছোট্ট মেয়েটির আবেগময়-হাস্যজ্জল কথোপকথন।
আল্লাহ্র কাছে দোয়া করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই এখন...... আপনারা সবাই দোয়া করবেন এই লোকটি, তার ছেলে-মেয়ে আর পরিবারের জন্য। আল্লাহ্ তাকে বেহেস্তে নসীব করুন...... আমীন! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।