Right is right, even if everyone is against it; and wrong is wrong, even if everyone is for it
১.
তখন আমার কিশোর বয়স, সালমান শাহের জয়জয়কার। পরিচিত শহরে সিনেমা হলে যাবার কোন সুযোগ নেই। কিন্তু জীবনতো থেমে থাকেনা, চুরি করে বন্ধুর বাসায় ভিসিআর দেখে দেখে আমরা জ্ঞানী হচ্ছিলাম। সালমান শাবনুরের কোন একটা সিনেমার একটা গান আমার সেই সময়কার প্রেমপতনোন্মুখ মস্তিস্কে ঘুরঘুর করতে শুরু করলো। সুযোগ পেলেই বুঝে হোক বা না বুঝে, বিশেষ করে গোসল করার সময়, গুনগুন করতাম, পৃথিবীতে সুখ বলে যদি কিছু থেকে থাকে, তার নাম ভালোবাসা, তার নাম প্রেম।
আজ সকালে একটা খবর পড়ে এবং পরে কিছু পরিচিতজনের সাথে কথা বলে আরো জেনে একটা মৌলিক গানের কলি মাথায় এসে গেলো। অলস মাথা কিছুটা সৃষ্টিশীল হয়, কি যে করি। তাই ব্লগকে গানটা শোনাতে বসলাম, পৃথিবীতে ছোট লোকের জাত বলে যদি কিছু থেকে থাকে তাহলে তা আমরা বাংলাদেশীরা, তাহলে তা আমরা বাংলাদেশীরাই।
২.
আমি কোন অঞ্চল বা বিশেষ জনগোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে একজন মানুষকে সবসময় সাধারণীকরণ করে বিচার করার বিরোধী। উপযুক্ত এবং প্রয়োজনীয় কোন কারণ যখন থাকেনা, এবং সাধারণ প্রাত্যাহিক জীবনে তা করার দরকার হয়না, তবু আমরা অনেকেই এমন করি ।
কেউ যখন বলে নোয়াখালীর মানুষ মানেই ধান্দাবাজ, তখন করুণার হাসি থামাতে পারিনা। কেউ যদি বলে নাইজেরিয়ান মানেই গায়ে বোটকা গন্ধওয়ালা রগচটা মানুষ, তখন তাকে বলি যাও একজন মালয়েশিয়ানকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করো ওরাং বাংলারা কেমন, এবং উত্তর শুনে তোমার কেমন লাগে তা নিয়ে তিনদিন চিন্তা করো (জাকারিয়া স্যার পদ্ধতি)। একেকজন মানুষ একেকরকম, না চিনলে তা বুঝা যায় না। মাঝে মাঝে মনে হয়, বেশিরভাগ মানুষ আমার চেয়ে বেশি অলস। একজনকে চেনার কষ্ট করার চেয়ে একটা ছাঁচে ফেলে দিয়ে ধারণা নিতেই প্রশান্তি পায়।
এ একই কারণে আমি সাধারণত কাউকে বলিনা আমার বাড়ি বাংলাদেশের কোন অঞ্চলে। যদি ঐ এলাকাকে পঁচানোর কোন উপলক্ষ আসে তখন আমার অনেক পরিচিতরা জানতে পারেন আমার বাড়ি কোথায়। বিদেশে যারা থাকেন তাদের বহুলশ্রুত এবং কথিত একটা প্রশ্ন হলো, ভাই বাড়ি কোথায়? আমি বলি বাংলাদেশে। তারপরও কেউ যদি জোরাজুরি করেন তখন বলি বাড়ি কোথায় জানার দরকার টা কি ভাই? আপনি যদি ঐ এলাকার লোকদের পছন্দ করে কোন বিশেষ সুবিধা দিতে চান তাহলে তার দরকার আমার নাই। আর যদি সাবধান থাকতে চান তাহলে এখনই সাবধান হয়ে যান।
আপনি যে এলাকা পছন্দ করেন না ধরে নেন আমি ওখানকার, অসুবিধা নাই।
সেই আমার আজকে বাংলাদেশীদের উপর রাগ হলো, নিজেদেরকে ছোটলোকের জাত বলে মনে হলো এবং সবমিলে শনিবার ছুটির দিনটা খুব একটা ভালো কাটলো না।
৩.
চুরানব্বই সালে তিন বছর বয়সে বাংলাদেশের কৃতি সন্তান সাদ নাবিল তার বাবা মা’র সাথে আমেরিকা পাড়ি জমায়। আমেরিকায় তার বাবার রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থনা প্রত্যাখ্যাত হলে তিনি দেশে ফেরার বদলে টেক্সাসে চলে যান এবং মামলা তদবির চালাতে থাকেন। শেষপর্যন্ত দুইহাজার নয় সালে আমেরিকান ইমিগ্রেশন চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয় এবং তার বাবা তারিক সাহেবকে গ্রেফতার করে গতবছরের ফেব্রুয়ারী মাসে দেশে পাঠিয়ে দেয়।
এর আগে নাবিল তার মা’র সাথে কানাডা চলে যায় এবং শরণার্থী হিসেবে থাকার চেষ্টা করে। তাতেও পেরে না উঠাতে শেষপর্যন্ত তাদেরকে আমেরিকা হয়ে বাংলাদেশে ফিরতে হয়। এর ভেতরে নাবিল মিয়া টেক্সাসের লিবার্টি হাই স্কুল থেকে পাস করে এবং ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস এট আর্লিংটন এ স্কলারশীপ সহ ভর্তি হতে যাচ্ছিলো।
এই ঘটনা বাংলাদেশের বহু মানুষেরই জীবন কাহিনী। এশিয়ার এক কোণায় ‘গডফরসেইকেন’ বা স্রষ্টা কতৃক ভুলে যাওয়া দেশ আমাদের দেশ।
এই উর্বব ব-দ্বীপের অনেক মানুষের মস্তিস্কও প্রচন্ড উর্বর। তারা ভেবে নেন স্রষ্টা আমাদেরকে ভুলে গিয়েছেন তো কি হয়েছে আমরা ভুলতে দিবোনা। তারা বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। সত্যিকার সমস্যায় যারা পড়েন, অথবা একটু স্বচ্ছল জীবনের জন্য কিংবা নিজ মেধা যোগ্যতায় যারা বিভিন্ন দেশে প্রবাসী আছেন তাদের কথা এখানে আসেনা। একজন অশিক্ষিত কিংবা স্বল্পশিক্ষিত হাটুরে বিদেশে গিয়ে কঠোর পরিশ্রম করেন, আর একজন বুদ্ধিজীবি, ছড়াকার কবি, সাংবাদিক কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক অন্যদেশে গিয়ে পলিটিকাল এসাইলামের ধান্দা খুঁজতে শুরু করেন।
৪.
সাদ নাবিল দরিদ্র দেশের পরিশ্রমী সন্তান। সে দেশে গিয়ে বসে থাকেনি। ফেসবুক টুইটার ইউটিউব আর বিভিন্ন ওয়েবসাইটে সে সংগ্রাম আরম্ভ করে। আমেরিকায় ফিরে যাবার সংগ্রাম। এক সাইটে দেখলাম বাংলাদেশে থাকাকালীন তার এক ছবি।
বদ্ধ একটা রুমে মশারী ঝুলিয়ে টাঙ্গানো এক বিছানার কোণায় পা ঝুলিয়ে বসে আছে যেন হতভাগা আদম সন্তান। মশারী সহ ছবির কম্পোজিশনটা মেধাবী। দেখে আমার মতো দরিদ্র একজন ছাত্রেরও মন চাইলো কিছু করতে না পারি তাকে পাঁচটা টাকা দিয়ে মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিতে।
তার জ্ঞানী মা-বাবা তাকে যে কোন উপায়ে ‘বাংলাদেশ থেকে বাইরে রাখার জন্য’ মালয়েশিয়ার এক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করায় দুইহাজার দশের ডিসেম্বর মাসে। নাবিল দরিদ্র দেশের প্রতিবাদী মেধাবী উত্তরাধিকার।
ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়ায় এসে সে আবিস্কার করে এটা হলো আলকায়েদার ‘ব্রিডিং গ্রাউন্ড’। একদা নিজেকে সমকামী ঘোষণা দিয়ে স্বপ্নভূমি কানাডায় থাকার ব্যার্থ আবেদনকারী নাবিল আলকায়েদার এই প্রজননক্ষেত্রে এসে বড় অস্বস্তিতে পড়ে যায়। তার ফেসবুক টুইটার সংগ্রাম জোরদার হয়ে উঠে।
। আলকায়েদার এমন প্রজননক্ষেত্রে তিনি কিভাবে আসলেন? তাহলে কি সিআইএ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই মুল্যবান তথ্য না জেনে ‘বসে বসে দুদু খাচ্ছিলো’? আইআইইউর প্রাক্তণ ছাত্রছাত্রীরা এবং কিছু শিক্ষক এশিয়া আফ্রিকা আরব এবং ইউরোপের বিশটারও বেশি দেশের মন্ত্রী এবং হাই অফিশিয়াল।
মালয়েশিয়ার ভেতরের কথা বলাই বাহুল্য। আমেরিকার মনপছন্দ ধারা মডারেট ও মডার্ণ ইসলামের সবচেয়ে সফল বাস্তবায়ন করছে এ ভার্সিটি, সারা পৃথিবী জুড়ে। নভেম্বর মাসে কুয়ালালামপুরের মার্কিন দুতাবাসের কর্মকর্তাদের ওয়ার্কশপ ছিলো ওখানে। আমার মনে হচ্ছে নাবিল ভাই ভুল জায়গায় গুলি মেরে দিয়েছেন। মঞ্চটা ইন্দোনেশিয়ায় সাজালে ভালো হতো।
যে শহরের দোকানে দোকানে বিয়ার পাওয়া যায় আর রাস্তায় রাস্তায় মাইক্রোমিনি পড়া মেয়ে দেখা যায় সেখানে আলকায়েদার হুজুররা দাড়ি নাড়িয়ে একে ফোর্টি সেভেন চালাচ্ছেন, এটা বিরাট কষ্টকল্পনা হয়ে পড়েছে। আফসুস।
৭.
ফাঁকতালে হলো কি? মাশাআল্লাহ। আমাদের, বাংলাদেশীদের নাম টা আরেকবার মর্যাদার আসনে আসীন হলো। নাজীবের সরকার সম্পূর্ণ আমেরিকার দোস্ত সরকার।
তাদের কিছুই হবে না। কিন্তু মালয়েশিয়ানরা তাদের প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে একজন বাংলাদেশীর দেয়া এ অপবাদ দেখে ভালোভাবে নেবে না। তারা এমনিতেই আগামী কয়েকবছরের ভেতরে এদেশকে বাংলাদেশী শ্রমিকশুণ্য করে ফেলার পরিকল্পনা নিয়েছে। এখন শ্রমিকরা আসছে নেপাল ভিয়েতনাম আর মিয়ানমার থেকে। তারা এই কাজ কোন কারণ ছাড়াই করছে না, নিজেদেরকে বাচানোর জন্যই করছে।
৮.
আড্ডা দেবার সময় এক বন্ধু বললো, দোস্ত, ভার্সিটির ভেতরে লজ্জায় মাথা উঁচু করতে পারছি না। সবাই হাসাহাসি করছে আর বাংলাদেশীদেরকে জিজ্ঞাসা করছে, আলকায়েদার রিক্রুটিং অফিসার কে, কিভাবে যোগ দিতে হয়, মেয়েরা করতে পারবে কি না। ভার্সিটিতে আবার ছাত্রীসংখ্যা বেশি, সত্তর থেকে পচাত্তর শতাংশ। যে সুন্দর সুন্দর মেয়ে আর যেসব কাপড় পরে ক্যাম্পাস গরম করে রাখে সবসময়, আলকায়েদা থাকলে বেশ জমজমাট জিহাদ হয়ে যেতো। কাজী সাহেবের গরুর মতো তাদের একটা ড্রেসকোডও আছে, কিতাবে আছে গোয়ালে নাই।
পুরাই মডারেট ইসলামের এলাহী কারবার।
যাইহোক আমি বললাম, দোস্ত, হাতী বিপদে পড়লে চামচিকাও লাথি মারে। আমরা অনন্য জাতি, আমাদের লজ্জার কিছু নাইরে। যদি সত্যিই কিছু করতে চাস তোরা এক কাজ কর। ভার্সিটিতে কি আংরেজি শিক্ষা হয়েছে তা এখন বুঝা যাবে।
সুন্দর করে একটা চিঠি লিখ, “আমরা বাংলাদেশীরা সংগ্রামী জাতি। আমরা বিদেশে যাবার জন্য বিমানের চাক্কায় পর্যন্ত উঠে যাই, নিজেরে সমকামী বানায়া ফেলি, নিজেরে হিন্দু বানায়া রাজনৈতিক আশ্রয় চাই কারণ দেশে সংখ্যালঘুদেরকে গ্রামকে গ্রাম মেরে ফেলা হচ্ছে। এইসব সংগ্রামের অংশ হিসেবে আমাদের ভাই নাবিল একটা কাজ চালাচ্ছে”। সুতরাং এই ভাইকে আমেরিকায় আশ্রয় প্রদান করার জন্য আইআইইউর বাংলাদেশী ছাত্ররা মিলে চিঠি লিখে ষ্টেট ডিপার্টমেন্ট, আমেরিকার দুতাবাস এবং বিভিন্ন মিডিয়াতে পাঠানো ছাড়া গর্বিত বাংলাদেশী হিসেবে আর কিছু করার নাই। হয়তো শেষপর্যন্ত সে আমেরিকা ফিরে যাবে, বাংলাদেশ কয়টা থাপ্পড় খেলো তাতে কি আসে যায়।
সবশেষে একটা সন্দেশ: অসভ্য বাংলাদেশে সাদ নাবিল ভাই এর সংগ্রামী নিপীড়ন অত্যাচার অভিজ্ঞতা।
ভিডিও আবং সংবাদ দেখতে ক্লিক করুন
মূল লেখকের ব্লগে যেতে এখানে কিলিক করুন
আরো কিছু লিঙ্ক নিচে দেওয়া হল।
View this link
View this link
View this link
Click This Link
Click This Link
View this link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।