কলেজ লাইফ এ পা রাখার সাথে সাথে বাবা তার স্বভাব মত একটা বিশাল
লেকচার দিলেন,কলেজ জীবন এ যদি ঠিক মত পড়া লেখা না করি তাইলে নাকি এতদিন যা করছি সব মাটি হয়ে যাবে। এক একটা পরীক্ষা যায় আর বাবার লেকচার শুরু হয় এই মর্মে যে আগে যা দিছিস সব ফাও এখন যে পরীক্ষা দিবো ওইটা ভাল ভাবে দিলে নাকি লাইফ উজ্জ্বল । আমি বাবার ছলনা তখন ধরতে পারি নাই, এইডা হারে হারে টের পাইলাম যখন এইস এস সি পাস করলাম। কষ্টের দিন শেষ এই খুশিতে ঘুমাতে গেলাম, কিন্ত এইডা কি আমার বাবা আমাকে জাগালো আর কইল চল ঢাকা যাই। আমি ভাবলাম পড়ালেখা শেষ তাই হয়ত বাবা আমারে ঘুরতে নিয়া জাইতাসে।
খুব ভাল কথা কিন্ত আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরল যখন বাবা আমাকে আমার বই খাতা গোছাতে বলল। আমি অজ্ঞান হওয়ার আগে বাবা বলল ঢাকায় জাইতাসি তোরে কোচিং এ ভর্তি করতে। হায়রে বাপ এইডা কি কয়? কত্ত প্লান করছি কক্সবাজার যাব,এভারেস্ট এর ওপর মুসার আগে আমিই পারা দিবো। বাবা বলল কক্সবাজার এ কি আছে? শুধু পানি আর পানি ,এই রকম পানি ত আমাগো কমিল্লার ধর্ম সাগর এ ও আছে। আর রাঙ্গামাটি ??? ওই খানে আছে সাপ, বিচ্ছু ,জন্ত জানয়ার।
আমি বাবার ফাঁদে পা দিলাম আর ভাবলাম ওরে বাপ রাঙ্গামাটি দেখি দোযখ এর মত ই খারাপ। বাবা থাকায় বেচে গেছি এই আনন্দে ঢাকা রওনা দিলাম,বাস এ ঘুমাতে ঘুমাতে যাব এই উপায় নাই, বাবা তার স্বভাব মত আমাকে এই যে কোচিং করতে যাচ্ছি তার গুরুত্ব ব্যাখ্যা সহ বিশ্লেষণ করছে। পুরা বোরিং লাইফ , কোচিং এ যাই আর আসি , ভাবতাসি দরকার হলে পরা লেখা ছারমু তবু ঢাকায় থাকব না ,ঠিক তখন ই আমি যে খানে থাকি ওই খানে সিটি কলেজ নাম এ একটা কলেজ আছে দেখিয়া ঢাকার মত আর কোন ভাল জায়গা নাই এইটা ঘোষণা দিলাম। ঢাকায় দিয়া আইসা বাবা যখন নাক ডেকে ঘুমায় আমি তখন সিটি কলেজ আর সামনে সকাল দুপর দুই বেলা ঘুরা ঘুরি করি। নীলক্ষেত এ ৫ টাকা দিয়ে পুরাতন ম্যাগাজিন পাওয়া যেত, এত কম দাম এ এত ভাল জিনস দেখে আমার মনটা ভাল হয়ে গেল।
ভাবলাম এইবার ভোট ধানের শীষ এ দিব,সব কিছুর দাম বাড়লেও এই জিনিস তার দাম যাতে বাড়ে এই মর্মে একটা আবেদন করব,আমি এই সব বই ক্যামন পড়ছি তার ধারণা এখান থেকে পাওয়া যেতে পারে। আমি আর আমার এক বন্ধু গেলাম মিরপুর, বাস এ উঠার পর এক লোক বলল মামা কেমন আছেন? আমি আমার মেমোরি থেকে দেখলাম,আমি যার থেকে ওই সব জ্ঞান ভাণ্ডার এর বই কিনতাম ওই দোকানদার। তিনি আমাকে দেখা মাত্র ই চিনে ফেলছেন। পরে ওনার সাথে আমার একটা মধুর সম্পর্কের সৃষ্টি হয়। আর তাই আমি বিশেষ কমিশন পেতাম।
আমার কাছে উনি ২ টা বই ৫ টাকায় বিক্রি করতেন। যাই হোক পরে কোনমতে কুয়েট এ চান্স পেলাম। এখন এর ওই মামার সাথে সম্পর্ক নাই তাই ওইসব বই ও কিনা হয় না। তবে দুঃখের বিষয় আগে আমি পরীক্ষায় পাস করতাম, এখন আর করি না, হয়তো বই কিনা ছেড়ে দিছি তাই। এই গল্পের থিম হল বই কিনা ছেড়ে দিলে বই তাকে অভিশাপ দেয়, আর বই অভিশাপ দিলে পরীক্ষায় কোন দিন ও পাস হবে না, সেই বই টা যদি চটি ও হয় তবু কিনার অভ্যাস বজায় রাখা জরুরী।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।