তিন ভাই বোনের মধ্যে প্রিয়ন্তী সবার ছোট। প্রিয়ন্তীর একমাত্র ভাই অরুণ চক্রবর্তী লেখাপড়ায় তেমন ভালো ছিল না। তাই বাবা দীপক চক্রবর্তী তাকে ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়ার পর নিজের ব্যবসার কাছে লাগিয়ে দিয়েছে। অরুণ লেখাপড়ায় ভালো না হলেও ব্যবসায় অতি অল্প বয়সে বেশ অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। অরুণের সহযোগিতায় দীপকের ব্যবসায় উত্তরোত্তর উন্নতি হতে শুরু হয়েছে।
দীপকের একান্ত ইচ্ছাছিল ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়ে শিক্ষিত করে তুলবে কিন্তু অঞ্জনার বিয়ে আর অরুণ পড়াশোনায় মনোযোগী না হওয়ায় দু’জনের লেখাপাড়ায় দ্রুত সমাপ্তি ঘটেছে। তাই দীপকের একান্ত ইচ্ছা প্রিয়ন্তীকে লেখাপড়া শিখিয়ে অনেক বড় করে তুলবে।
প্রিয়ন্তীর গায়ের রং ফর্সা যেন দুধে আল্তা, মুখের গড়ন সুন্দর, চুলগুলো কাঁধ পর্যন্ত ঝুলানো, যেন বাতাসে দোল খায়, ভদ্র, কথাবার্তায় কোন জড়তা নেই, সর্বদাই হাস্য মুখ। তার সৌন্দর্য আর গুণাবলী যেন শত মেয়ের মধ্যেও দৃষ্টি কাড়ে, তার এই সৌন্দ্যের্যের জন্য দীপক বাবুকে মাঝে মাঝে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। কলেজ যাওয়া আসার পথে যে কেউ প্রিয়ন্তীকে দেখলেই দীপক বাবুর কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়, কেউ কেউ বলে মেয়ে মানুষ বয়স কম থাকতেই বিয়ে দেয়া ভালো পরে বয়স বেশি হলে সবাই ধাড়ী মেয়ে বলে, বিয়ে দেয়া কঠিন হবে।
দীপক বাবু প্রিয়ন্তীর মুখের দিকে তাকিয়ে তাকে অনেক বড় অফিসার বানাবার স্বপ্নদেখে। দেখতে সুন্দর বলে প্রিয়ন্তীকেও অনেক বিড়ম্বনারশিকার হতে হয়। প্রিয়ন্তী তার মোবাইল নাম্বারখুব সহজে কাউকে দেয় না তারপরও মোবাইল রিচার্জ করার সময় বা যে কোনভাবে কেউ তার নাম্বারপেলে ঘন ঘন মোবাইল করে, কেউ বা প্রেম করার প্রস্তাব দেয় আবার কেউ কেউ সরাসরি বিয়ে করার প্রস্তাব দেয়। প্রিয়ন্তী এসব প্রস্তাব খুব মার্জিতভাবে এড়িয়ে যায়।
অন্য সবার মতো প্রিয়ন্তী সুশান্তর ভালোবাসার প্রস্তাব এড়িয়ে যেতে পারেনি।
প্রথম দেখায় সুশান্ত যেন তার মনের মধ্যে একটা অন্য ধরণের রোমাঞ্চকর অনুভুতি সৃষ্টি করেছিল তখন সে তাকে না করতে পারেনি। তারপর দুজনের মধ্যে অন্তরঙ্গতা গড়ে উঠে, যা শেষ পর্যন্ত বিয়ের পিঁড়ি পর্যন্ত গড়ায়। রাষ্ট্রীয় কিংবা সমাজ ব্যবস্থায় তাদের বিয়ে স্বীকৃত হোক বা না হোক তারা দুজনে পরষ্পরকে স্বামী-স্ত্রীরআসনে স্থান করে দিয়েছে। প্রিয়ন্তীর কোন কিছু খেতে গেলেই সুশান্তর কথা মনে পড়ে কিন্তু এ বাড়িতে তাদের লুকিয়ে বিয়ের কথা বলার সুযোগ নেই। বাবা-মা প্রিয়ন্তীর লেখাপড়া বন্ধ করে দিবে, ঘরে বন্ধ রেখে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের পছন্দ করা ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিবে।
আজ যেন বিকেলটা হচ্ছেই না। দুপুরের সুর্যটা কেমন যেন মাথার ওপর দাঁড়িয়ে আছে।
প্রিয়ন্তী সকালবেলা তার পছন্দের কয়েকটা খাবারের কথা তার মাকে বলেছে। সে নিজেও রান্নার কাজে তার মাকে সহযোগিতা করছে।
তার মা একবার জিজ্ঞেস করল, তোর আবার হঠাৎ করে কী হলো? তুই তো কোনদিন খাবার-দাবারের ব্যাপারে কিছু বলতিস না, এবার পূজায় আবার এতকিছু বলছিস কেন?
প্রিয়ন্তী বলল, মা আমি এখন কলেজে পড়ছি আমার বন্ধু-বান্ধব অনেককেই ইনভাইট করেছি, কেউ কেউ আসতেও তো পারে?
ঠিক আছে মা, তোর যা যা ইচ্ছা তৈরি কর।
প্রিয়ন্তী মনে মনে বলল, আমার বন্ধু-বান্ধব বলতে তো একজনই মা, ঐ একজনকে ভালোভাবে আপ্যায়ন করলে আমার আর কিছু লাগবে না।
সুশান্ত মোটর সাইকেল নিয়ে পূজা মণ্ডপে এলো বিকেল তিনটায়। পূজা মণ্ডপের কাছে স্ট্যান্ড করেই প্রিয়ন্তীকে মোবাইল করল।
প্রিয়ন্তী মোবাইল রিসিভ করল, হ্যালো সুশান্ত তুই কোথায়?
আমি তো তোদের পূজা মণ্ডপের কাছে।
দাঁড়া আমি আসছি।
প্রিয়ন্তী এক রকম দৌড়ে মণ্ডপের কাছে এলো, সুশান্ত।
প্রিয়ন্তী কেমন আছিস্?
ভালো, তুই?
ভালো।
আয় ভিতরে আয়, বলে প্রিয়ন্তী এগিয়ে চলল।
সুশান্ত প্রিয়ন্তীর পিছনে পিছনে বাড়ির ভিতরে গেল।
প্রিয়ন্তী তার মা’র সঙ্গে সুশান্তর পরিচয় করে দিল।
সুশান্ত প্রিয়ন্তীর মাকে প্রণাম করল।
প্রিয়ন্তীর মা সুশান্তর মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করল, দীর্ঘজীবী হও বাবা।
সুশান্ত মাথা নত করে সুবোধ বালকের মতো দাঁড়িয়ে রইল।
প্রিয়ন্তীর মা বলল, দাঁড়িয়ে থাকলে কেন বাবা? বসো।
সুশান্ত চেয়ারে বসল।
প্রিয়ন্তীর মা জিজ্ঞেস করল, তোমার বাড়ি কোথায় বাবা?
সুশান্ত তার গ্রামের নাম বলল।
ঐ গ্রামের শংকর ঠাকুর মশাইকে তুমি চেনো?
হ্যাঁ, আমাদের বাড়ি একই পাড়ায়।
তোমার বাবার নাম কী?
মহেশ দত্ত।
প্রিয়ন্তীর মা হঠাৎ করেই মুখ কালো করল, তোমরা বসো বাবা, আমি জলখাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি, বলে সে চলে গেল।
সুশান্ত কয়েকমুহূর্ত প্রিয়ন্তীর মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।
প্রিয়ন্তী জিজ্ঞেস করল, কী রে কতগুলো মণ্ডপ ঘুরলি?
কই আর ঘুরলাম?
কই ঘুরলাম মানে? তুই কি ঘরে বসে থাকার মতো ছেলে?
হ্যাঁ আমি ঘরে বসে থাকার মতো ছেলে না, গ্রামের বাড়ি এলে দাদার মোটর সাইকেল নিয়ে ঘোরাফেরা করি, তবে এবারে ঘুরিনি।
কেন?
সুশান্ত প্রিয়ন্তী বলে থেমে গেল তার মুখ আড়ষ্ট হয়ে গেল।
প্রিয়ন্তী বলল, কী রে বল, থামলি কেন?
সুশান্ত মৃদু কন্ঠে বলল, প্রিয়ন্তী চল না কাল এক সঙ্গে পূজা দেখি, আমি সেজন্য বউদিকে বলে দাদার কাছ থেকে মোটর সাইকেলটা নিয়েছি।
প্রিয়ন্তী বলল, সুশান্ত তোর মাথা খারাপ হয়েছে, বাবা আমাকে তোর সঙ্গে মোটর সাইকেলে যেতে দিবে?
তুই কি বলে যাবি নাকি?
সরি সুশান্ত বাবার কাছে আমি কিছু লুকাই না।
সুশান্ত আর কিছু বলল না।
কোন কিছু বলতে গিয়ে সে যেন দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ল। সে কয়েকমুহূর্ত চুপ করে রইল।
সুশান্ত তুই বস আমি খাবার নিয়ে আসছি, বলে প্রিয়ন্তী চলে যাচ্ছিল সুশান্ত বলল, প্রিয়ন্তী তুই একটু বস না, তাড়াতাড়ি বিদায় করতে চাচ্ছিস কেন?
না বিদায় করতে চাইব কেন? খেতে খেতে গল্প করব, খাওয়ার পরও গল্প করব।
প্রিয়ন্তীকে আর উঠতে হলো না। কিছুক্ষণ পর প্রিয়ন্তীর মা কাজের মেয়েকে দিয়ে জলখাবার পাঠিয়ে দিল।
খেতে খেতে দু’জনে অনেকক্ষণ গল্প করল। তারপর একবার সুশান্ত একবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল, প্রিয়ন্তী তুই তাহলে কাল কখন আসছিস?
তোকে মোবাইলে জানিয়ে দিব। বাবাকে বলতে হবে তো।
যেতে দিবে তো আবার?
এমনিতেই দিত না, পূজা বলে যেতে দিবে।
আচ্ছা ঠিক আছে, তাহলে উঠি।
চলবে...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।