আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নাইন-ইলেভেন: পরিবর্তন এনেছে কি সাংবাদিকতায়?

গল্প লিখতে ভালোবাসি

নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার সংবাদ টিভিতে দেখে হতবাক হয়ে যায় বিশ্ববাসী। কারণ পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত দেশে এমন একটা ঘটনা ঘটবে, তা সাধারণ নাগরিকদের ভাবনাতেও ছিল না। আক্রান্ত হয়েছে আমেরিকা, এই খবরটিই প্রথমে দেয় গণমাধ্যম। হামলার ঘটনার পর সংবাদে প্রাধান্য পেয়েছে সন্ত্রাসবাদ ও সন্ত্রাসী, ওসামা বিন লাদেন ও তার আল-কায়েদা, নিউইয়র্ক সিটির মেয়র, ইসলামি মৌলবাদ, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের স্থাপত্য কাঠামো, বিমানবন্দরের নিরাপত্তা, গোয়েন্দা সংস্থার অবস্থা, প্রেসিডেন্ট বুশের সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ, জাতীয় নিরাপত্তা ও নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার, শোক প্রকাশ ইত্যাদি। এর বাইরে কেমন ছিল সে সময়কার সাংবাদিকতা, তা নিয়েও গবেষণা হয়েছে বিস্তর।

কেননা যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকেরা মনে করেন, সংবাদ, তথ্য ও আইডিয়ার প্রবাহ গণতন্ত্রের বিস্তার করে, যার মাধ্যমে নাগরিকেরা জানাতে পারেন, বিষয়টি কী। জাতীয় মানসিকতা তৈরি করতে সংবাদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, এ কথাও তারা মনে করেন। সেই ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে আমেরিকার সাংবাদিকদের অসুবিধাগুলো ছোট করে দেখার কিছু নেই। কারণ ঘটনাটি তাদের জন্য ছিল একই সঙ্গে অপ্রত্যাশিত ও বেদনার। তার পরও ঘটনার অব্যবহিত পরে আতঙ্ক তৈরি করেনি যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম।

প্রচার করেনি গুজব। যদিও প্রথমেই তাদের জানাতে হয়েছে পৃথিবী নিরাপদ আছে কি না, সে তথ্য। তবে সংবাদ প্রচারে আসে বেশ পরিবর্তন। বেশ কিছু গবেষণার তথ্য থেকে দেখা যায়, বৈদেশিক নীতির বিষয়ে প্রতিবেদন প্রচারের সময় বেড়ে যায় অনেক। বাড়ে যুদ্ধ এবং সন্ত্রাসবাদের সংবাদ প্রচারের সময়সীমা।

একই সময়ে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সংবাদ প্রচার কমে যায়। অপরাধ ও আইন প্রয়োগ বিষয়ে প্রতিবেদন কমে। লক্ষণীয়ভাবে কমে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিষয়ে প্রতিবেদন। সোভিয়েতের পতনের পর এক মেরু বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতি পৃথিবীর অন্যান্য দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই যখন নিজস্ব বৈদেশিক নীতি নিয়ে প্রতিবেদন বেড়ে যায়, তখন তা নিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও মানুষের আগ্রহ বাড়ে।

আর সে আগ্রহের প্রতি সম্মান জানাতে হলে গণমাধ্যমের প্রতিদিনের প্রচারিত সংবাদে পরিবর্তন আনতেই হয়। বিদেশি সংবাদ প্রচারের সময়সীমাও খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই বেড়ে যায়। তাতে অবশ্য অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ দেশটির সেনারা আফগানিস্তান ও ইরাকের রণাঙ্গনে ব্যস্ত তখন। আর যুদ্ধক্ষেত্রের সংবাদে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মানুষেরও আগ্রহ কম ছিল না।

সে ক্ষেত্রে রণাঙ্গনের সংবাদ সংগ্রহ ও পরিবেশনে সাংবাদিকদের যেমনি নতুন নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে, তেমনি তাদের জাতীয় স্বার্থও মাথায় রাখতে হয়েছে। নাইন-ইলেভেনের পরবর্তী এমবেডেড জার্নালিজম, নানা কারণেই গণমাধ্যম সাংবাদিকদের কাছে বেশ আলোচিত বিষয়। তবে আবু গারিব কারাগারের তথ্য দর্শকদের জানানোর কাজটিও সাংবাদিকেরাই করেছেন। যা হোক, ভয়াবহ সেই সন্ত্রাসী হামলার পর নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবাদের প্রেক্ষাপটে এক নতুন বিশ্বের শুরু হয়েছে বলা যায়। সেখানে সংবাদে আলাদাভাবে গুরুত্ব পেতে থাকে সন্ত্রাসবাদের তথ্য।

কোথাও সন্ত্রাসবাদ, আতঙ্কবাদ হিসেবে, কোথাও জঙ্গিবাদ নামে অভিহিত করা হলেও সন্ত্রাসবাদ নির্মূল ও প্রতিরোধে আঞ্চলিক পর্যায়ে সহযোগিতার বন্ধনে জড়াতে অনেক দেশই চুক্তি করে। সাউথ এশিয়া ফ্রি মিডিয়া অ্যাসোসিয়েশন বা সাফমা ২০০৪ সালে পাকিস্তানের লাহোরে একটি সম্মেলন করে এ বিষয়ে। ওয়ান-ইলেভেনের পরবর্তী গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ছিল সে সম্মেলনের দ্বিতীয় সেশনের আলোচ্য বিষয়। সেখানে আইএফজের প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টোফার ওয়ারেন বলেন, নাইন-ইলেভেনের পর গণমাধ্যমে বেশ লক্ষণীয় পরিবর্তন এসেছে। তার মতে, বিশ্ব সাংবাদিকদের জন্য বিপজ্জনক।

জনগণকে প্রকৃত চিত্রটি দিতে গিয়ে সাংবাদিক যেমনি সরকারের চাপে পড়েছে, তেমনি তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠানও সেলফ সেন্সরশিপে নিজেদের বেঁধে ফেলেছে। সেটি হতে পারে ভয়ে কিংবা দেশপ্রেম থেকে। ইরাকে ৬০ জনেরও বেশি সাংবাদিক নিহত হয়েছেন, আঘাত এসেছে তাদের প্রতিষ্ঠানের প্রতিও। ক্রিস্টোফার ওয়ারেন জানাচ্ছেন, সেই সব আঘাত শুধু যে সন্ত্রাসীরা একাই করেছে তা নয়, জেনেভা কনভেনশন উপেক্ষা করে গণতান্ত্রিক সরকারও তা করেছে। যা হোক, সন্ত্রাসবাদ নিয়ে প্রতিবেদন করতে হলে সাংবাদিকদের নিজস্ব তদন্তের পাশাপাশি অনেকের কাছেই তথ্য-সহায়তা নিতে হয়।

বিশেষ করে এসব ক্ষেত্রে নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী বা গোয়েন্দারা তথ্যের অন্যতম উৎস। শুধু বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল বা পাকিস্তান নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিকেরাও সন্ত্রাসবাদ বিষয়ে প্রতিবেদন করতে গোয়েন্দা রিপোর্টের সহায়তা নিয়েছেন। বিশেষ কোনো ঘটনায় গোয়েন্দাদের দেওয়া তথ্য কতটুকু কাজে লাগানো যাবে, তা নিয়ে বিতর্ক করা হলেও গোয়েন্দাদের কাছে তথ্যের জন্য যোগাযোগ অবশ্য কোনো দেশেই কমাননি সাংবাদিকেরা। @আনোয়ার সাদী প্রথম প্রকাশ: মিডিয়া ওয়াচ... Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।