আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সার তেলবাহী ২১ বার্জ ও ট্যাঙ্কার যমুনায় আটকা নাব্য সঙ্কট ॥ উত্তরাঞ্চলে বোরো আবাদ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা

বাংলাদেশ

যমুনা নদীর ১০ পয়েন্টে ডুবোচর জেগে ওঠায় উত্তরাঞ্চলের অন্যতম নদীবন্দর বাঘাবাড়ীতে রাসায়নিক সার ও জ্বালানি তেলবাহী ২১টি বার্জ ও ট্যাঙ্কার ভিড়তে পারছে না। বাঘাবাড়ীর ৪৫ কিলোমিটার ভাটিতে দৌলতদিয়ার বিভিন্ন পয়েন্টে ৭০ হাজার বসত্মা রাসায়নিক সার ও ৪২ লাখ লিটার জ্বালানি তেল বোঝাই ২১টি বার্জ ও কার্গো যমুনা নদীতে আটকে আছে। নাব্য সঙ্কটে বার্জ-কার্গো আটকে থাকায় উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার চলতি মৌসুমে সার ও জ্বালানি তেল সঙ্কটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সংশিস্নষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাঘাবাড়ী থেকে দৌলতদিয়া পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার নৌপথের মোহনগঞ্জ পেঁচাকোলা, হরিরামপুর, কল্যাণপুর, চরসাফুল্লা, চরশিবালয়, নাকালিয়া, রাকশাসহ ১০টি পয়েন্টে নাব্য সঙ্কট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। স্বাভাবিকভাবে ট্যাঙ্কার জাহাজ, বার্জ কার্গো চলাচলে ১০ থেকে ১১ ফুট, শ্যালোড্যাফট ট্যাঙ্কার চলাচলে ৭ ফুট পানির গভীরতা প্রয়োজন।

কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন পয়েন্টে পানির গভীরতা রয়েছে ৬ থেকে ৭ ফুট। বিআইডবিস্নউটিএ নৌপথ স্বাভাবিক রাখতে ড্রেজিং অব্যাহত রাখলেও যমুনা নদীর নাব্য সঙ্কট নিরসন হচ্ছে না। নাব্য সঙ্কটে গত ৪ দিন ধরে ৭০ হাজার বস্তা টিএসপি, ডিওপি, ইউরিয়া ও ৪২ লাখ লিটার জ্বালানি তেল বোঝাই এমভি গ্রিন পদ্মা, এমভি মনা তাজ, এমভি আছলাম, এমভি শহিদুল ইসলাম-১, এমভি কুইন অব অগ্রজান, জ্বালানি তেলবাহী এমভিওটি তূর্ণা, এমভিওটি সাইদসহ ২১টি বার্জ-ট্যাঙ্কার দৌলতদিয়ার অদূরে নোঙর করে রয়েছে। প্রতিদিনই আটকা পড়া জাহাজের সংখ্যা বাড়ছে। এসব বার্জ ও কার্গো থেকে ছোট ছোট নৌকায় সার আনলোড করে বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

এভাবে সার আনলোড করে বাঘাবাড়ী বন্দরে নিতে কার্গো প্রতি ২৫/৩০ হাজার টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে। এ অতিরিক্ত টাকা সর্বশেষে কৃষকদেরই গুনতে হচ্ছে বলে সংশিস্নষ্ট সূত্র জানিয়েছে। এদিকে বাঘাবাড়ী থেকে চট্টগ্রামগামী এমভি আগন্তুকের চালক আলাউদ্দিন জানিয়েছেন, বাঘাবাড়ী থেকে দৌলতদিয়া পর্যনত্ম নৌপথে মোহনগঞ্জ, পেঁচাকোলা হরিরামপুর, কল্যাণপুর, চরসাফুলস্না, চরশিবালয়, নাকালিয়া ও রাকশাসহ ১০টি পয়েন্টে পানির গভীরতা ৬ থেকে ৮ ফুট দাঁড়িয়েছে। পেঁচাকোলা পয়েন্টে জ্বালানি তেলবাহী জাহাজ চলাচল সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এ পয়েন্ট এতই সরম্ন হয়ে পড়েছে যে দুটি জাহাজ পাশাপাশি চলাচল করতে পারছে না।

এ পয়েন্টে জেগে ওঠা চরের সংখ্যা ও পরিধি বেড়ে যাওয়ায় দিন দিন চ্যানেলটি সরম্ন হয়ে যাচ্ছে। এ চ্যানেলটি দ্রম্নত ড্রেজিং করা না হলে যেকোন সময় বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে তেলবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে বাঘাবাড়ী রিভারাইন অয়েল ডিপো কতর্ৃপক্ষ। বিআইডবিস্নউটিএ আরিচা অফিসের উপ-পরিচালক জয়নাল আবেদীন জানিয়েছেন, দৌলতদিয়া থেকে বাঘাবাড়ী পর্যনত্ম ৪৫ কি.মি. নদীপথে প্রতিবছরই শুষ্ক মৌসুমে নাব্য সঙ্কট দেখা দেয়। বর্তমানে এ পথে ৭ থেকে ৮ ফুট পানির গভীরতা রয়েছে। নৌ চ্যানেল সচল রাখতে ইতোমধ্যে বেড়া উপজেলার মোহনগঞ্জ ও চরসাফুলস্না এলাকায় ড্রেজিং করা হয়েছে।

চরশিবালয় ও নাকালিয়া এলাকায় ড্রেজিং চলছে। ড্রেজিংয়ের পর যমুনা নদীর স্রোতে পলি জমে ডুবোচরগুলো আগের অবস্থানে ফিরে যাচ্ছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, বাঘাবাড়ী নৌরম্নটে ৬ থেকে সাড়ে ৬ ফুট ড্রাফটের জাহাজ চলাচলের জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু জাহাজগুলো অতিরিক্ত মাল বহন করায় ডুবোচরে আটকে পড়েছে। তবে যমুনায় নাব্য বজায় রাখতে বিআইডবিস্নউটিএ নিয়মিত ড্রেজিং অব্যাহত রাখার কথা জানালেও ড্রেজিং-এ ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগও রয়েছে।

ড্রেজিংয়ের নামে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হলেও কোন কাজে আসছে না। এ ব্যাপারে বিআইডবিস্নউটিএ কতর্ৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, ৪০ বছরের পুরনো ড্রেজিং মেশিন দিয়ে নাব্য স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। এত পুরনো মেশিন দিয়ে এর চেয়ে বেশি কাজ করা সম্ভব নয়। এদিকে বাঘাবাড়ী নৌবন্দর লেবার ক্যারিং এ্যান্ড হ্যান্ডলিং এজেন্টের পরিচালক শফিকুল আলম জানিয়েছেন, যমুনার নাব্য সঙ্কটের কারণে তেল ও সারবাহী কার্গো পৌঁছাতে না পারার কারণে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার চলতি বোরো মৌসুমে আবাদ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।