আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জয় হোক বাংলাদেশ ক্রিকেট প্রেমী দর্শকদের


তারিখটা মনে নেই। খেলা চলছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ বনাম অস্ট্রেলিয়া দলের মধ্যকার। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিপ এ ভরা একটি দেশ। যা দেখেছি ক্রিকেট খেলা দেখার সময়। চোখ জুড়ানো কালার টেলিভিশনে, লাগছিলো আরও রঙ্গীন সে ওয়েষ্ট ইন্ডিজ দর্শকদের।

খেলা চলছে। ভাষ্যকার টনি গ্রেগ দর্শকদের সারিতে গিয়ে সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন। সে দর্শক ছিলেন, যে স্টেডিয়াম এ খেলা হচ্ছিল তার কাছাকাছি একটি পাহারের উপর। বেশ খানিকটা দূরে স্টেডিয়াম থেকে বোঝাই যাচ্ছিল। ছোট একটি মাথায় চাদরের ছাউনি বানিয়ে।

তার নিচে পানীয় হাতে খেলা উপভোগ করছিলেন। সেই বৈচিত্র্যময় দর্শক গ্যালারিতে দাড়িয়ে প্রিয় ভাষ্যকার টনি গ্রেগ জিজ্ঞেস করছিলেন- তুমি স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখছো না কেন? দর্শক এর উত্তর ছিল-আমি দেখছি খেলা ভালভাবেই এইখান থেকে। আমি দেখছি তো! স্টেডিয়াম আমার কাছ থেকে হয়ত একটু দূরে। তুমি দেখো এখান থেকে মাঠ এবং খেলোয়াড় দের বোঝা যাচ্ছে। সাথে আছে দর্শকদের উল্লাস।

আমি এখান থেকেই খেলা দেখে সাথেই আছি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সমর্থক হয়ে। ওরা যখন উল্লাসে মাতে বুঝতে পারছি। আমরাই ভাল করছি। আমার মতোই না হয় খেলা উপভোগ করি। এই হচ্ছে একজন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটপ্রেমি দর্শকদের একটি গড়পড়তা চিত্র, যা আমার ভাষায়।

কেউ একমত অথবা দ্বিমত পোষণ করতেই পারেন। মনে হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দর্শক গন হবেন পৃথিবীর সেরা বৈচিত্র্যময় এবং ভদ্র দর্শক। যা আমার কাছে মনে হয়েছে। খুব বেশি দিন আর নেই। যারা ক্রিকেট খুব বেশি পছন্দ করেন।

তাদের হাতে গোনা শুরু হয়ে গিয়েছে জানি। কেউই যে এই ব্যাপারটি মাথায় রাখেন নি- ক্রিকেট খেলা দেখবেন। আর যাই হোক বাংলাদেশের খেলা তো অবশ্যই। এ যে আমার দেশের খেলা। মিস করা যায় না অবশ্যই।

এই আমরা যে কম যাই না কোন অংশে তা তো স্বীকার করতেই হয়। আরেকটি ঘটনা বলা যায় অবশ্যই। আইসিসি তে চ্যাম্পিয়ন নির্ধারনী খেলায় যেদিন বাংলাদেশ যুক্ত হল বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সাথে। সেদিন আমরা রেডিও তে ধারাভাষ্য শুনছিলাম একসাথে। কিছুই করার নেই।

খেলা দেখতে পারছিলাম না টিভিতে। এলাকায় মোরে মোরে রেডিওর সামনে ভিড়। আমরা বন্ধুরা সবাই তো প্রায় উন্মাদ হয়ে প্রার্থনা করছি পুরো বাংলাদেশ এর মতো। মনে আছে ধারাভাষ্যকার খোদাবক্স মৃধা আনন্দে কেঁদে ফেলেছিলেন ধারাভাষ্য দিতে গিয়ে। এমনই স্মরণীয় মুহূর্ত।

খেলা শেষ দিকে একজন লোক সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে বসলেন- বাংলাদেশ কয় গোল দিছে? আমরা কেউ বিরক্ত অথবা অবাক হইনি। প্রায় একসাথেই সে লোকের ক্রিকেট না বোঝা মন থেকেও দেশের ক্রিকেট দল এর অবস্থা জানার জন্য আকুতি কে উস্কেই দিয়েছিলাম। এই বলে- আমরা জিততেছি, দোয়া করছি সবাই। খুব একটি ভাল লাগা অভিব্যক্তি নিয়ে লোকটি নিশ্চয়ই চলে গেল হয়ত তার বাস্তব জীবনের কর্ম সারতে। এই না হলে দর্শক।

দেশের জন্য আছেই। পরবর্তী মিছিলের কথা না হয় নাই বললাম। খেলা শেষ আমরা তো রাস্তায় বের হয়ে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিয়েছি। আশে পাশের ছাদ রাস্তায় সব বয়সীর একসাথে উল্লাস। ঘটনা ৯৭।

এখন ২০১১। আমরা তো আরও অনেক অনেক ক্রিকেট বোদ্ধা দর্শক অবশ্যই। উইকেট আর বল আর খেলোয়াড় আর আম্পায়ার। প্রায় সবাই জানেই ক্রিকেট। আগে মেয়েরা বুঝত না একদমই।

এখন তো মেয়েরাও খেলা দেখতে যায়। এমনকি অসম্ভব কষ্টের একটি ব্যাপার। টিকেট কাটতে গিয়ে মেয়েরা লাইনেও দাঁড়াচ্ছে। স্যালুট বাংলাদেশের প্রমীলা দর্শকদের। সেদিন মতিঝিলে রাত ১০ টায় দেখলাম দিনের মতো ব্যাংকের সামনে।

সবাই অপেক্ষা করছে সকালের জন্য। ব্যাংক খুলবে টিকেট নিবে আগে। খেলা দেখার জন্য। তাদের জন্য জানাই ডাবল স্যালুট তিন ডাবল স্যালুট। খেলা দেখবো আবার সারারাত শীত আর রাস্তার মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকবো একটি দুটি টিকেটের জন্য।

হয়ত বাস্তবতা হতে দিবে না তা এখন আমাদের। কিন্তু সে সুযোগ থাকলে তো আমিও যেতাম। থাকতাম উনাদের দলে। সামনে দিয়ে যাচ্ছি আর এই ভালোলাগা আবেশ নিজের মধ্যেও নিয়ে নিলাম। কি দারুণ ক্রিকেট প্রেমী দর্শক।

তখন মনে হয়েছে আসলেই তাদের জন্যই টিকেট যোগ্য। এই ধরনের চমৎকার ভালোবাসায় ভরা দর্শক গন নিশ্চয়ই মাঠে গিয়ে দেশের সমর্থক হিসেবে – বাংলাদেশ ক্রিকেট দল কে অফুরন্ত সাহস আর অনুপ্রেরণা যোগাবে। তা চোখ বন্ধ করে বলা যায়। দেখা যাক আমাদের দেশে অনুষ্ঠিত আসন্ন বিশ্বকাপ এর ম্যাচগুলোতে আমাদের দর্শক গন কি চমক দেখান। বুকে বিশ্বাস আছেই- আমরা হবো সেরা।

শুভ কামনা বাংলাদেশ। শুভ কামনা বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম। এই কথাটি তো বিশ্বকাপ পর্যন্ত বলতেই হবে। জয় হোক বাংলাদেশ ক্রিকেট দর্শকদের। এই দর্শকদের সাথে যেন কোন অনভিপ্রেত ঘটনা না ঘটে, তার জন্য সংশ্লিষ্ট লোকজন মানে ক্রিকেট বোর্ড এর যেন সঠিক দায়িত্ববোধ থাকে।

টিকেট ক্রয় থেকে খেলার দিন পর্যন্ত। এই আশা থাকবেই।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।