অতি সাধারণ....প্রধানমন্ত্রী হলে দেশটারে সাজাইতাম
স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশের ৪০ বছরের ইতিহাসে নজিরবিহীন বহু ঘটনার জন্ম দিয়ে আলোচিত একটি বছর ২০১০ বিদায় নিয়েছে। বছরজুড়ে নানা ঘটনা ও বিভিন্ন ব্যক্তি সংবাদ মাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন। এই এক বছর নিয়ে নানা মন্তব্য উঠে এসেছে জাতীয় দৈনিকগুলোতে ও টেলিভিশনের নিয়মিত আলোচনায়। বিশিষ্ট ব্যক্তিদের এসব মতামতে পুরো বছরের একটি চিত্র ফুটে উঠেছে। কেউ বলছেন এই এক বছরে গণতন্ত্রের স্বপ্ন ক্ষতবিক্ষত হয়েছে।
সংবাদমাধ্যম দলন ও স্বাধীন মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে চরমভাবে লঙ্ঘন করা হয়েছে। নানা কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বিচার বিভাগ। ক্রসফায়ারসহ মানবাধিকার বিরোধী কার্যক্রম মাথাচাড়া দিয়েছে। এ কারণে বছরটি ছিল মানবাধিকার লঙ্ঘনের রেকর্ড সৃষ্টিকারী বছর। অবিচার ও বেইনসাফির বছর হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছে ২০১০ সাল।
বিদায়ী বছরে দেশের অন্তত ৮ জন নানা কারণে দীর্ঘ সময়জুড়ে ব্যাপকভাবে আলোচনায় এসেছেন। এর বাইরে আরও অন্তত এক ডজন ইস্যু বছরের বিভিন্ন সময়ে টক অব দ্য কান্ট্রি হয়ে মানুষের মনে দাগ কেটেছে।
বছরের শুরুতেই ভারতের সঙ্গে বিতর্কিত চুক্তি করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেন। জানুয়ারির শেষ দিকেই বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের ফাঁসির রায় কার্যকর করে আবারও তিনি আলোচনার শীর্ষে চলে আসেন। সরকারের প্রতিহিংসার শিকার হয়ে বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া নভেম্বরে তার ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি হারিয়ে আলোচনার শীর্ষে চলে আসেন।
ক্ষুদ্র ঋণের তহবিল অন্য প্রকল্পে সরিয়ে নেয়ার অভিযোগ নতুন করে আসার পর ডিসেম্বরে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস নতুন করে আলোচনায় চলে আসেন। প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ও জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহীর ঘুষ গ্রহণের অভিযোগের খবর প্রকাশের পর জুনের শুরুতে সরকারের রোষানলে পড়ে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সারাদেশে ২৫টি হয়রানিমূলক মানহানি মামলার শিকার হন। তার ওপর তিন দফায় ব্যক্তিগত আক্রমণ চলে। এরই ধারাবাহিকতায় ১ জুন রাতে পত্রিকার অফিস থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ নিয়ে দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে।
কারাগারে আটক অবস্থায়ই ১৯ আগস্ট সত্য লিখেও আদালত অবমাননার অভিযোগে ৬ মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে দেশে-বিদেশে তিনি ব্যাপক আলোচনায় চলে আসেন।
দেশের সুশাসনের বেহাল অবস্থা তুলে ধরতে গিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বিচারপতি মুহম্মদ হাবিবুর রহমান বাজিকরদের হাতে দেশ জিম্মি মন্তব্য করে ব্যাপক আলোচিত হন। নিজের ব্যক্তিগত সাফল্যের পাশাপাশি নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সিরিজ জয়ের নেতৃত্ব দিয়ে বিকল্প অধিনায়ক সাকিব আল হাসান দেশ ও বিশ্ববাসীর দৃষ্টি কাড়েন। বাংলাদেশের প্রথম এভারেস্ট বিজয়ী হিসেবে মুসা ইব্রাহীম দেশের জন্য সম্মান
বয়ে আনার পাশাপাশি দেশবাসীর মনে নিজে স্থান করে নেন।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাবেক কূটনীতিক জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ তার প্রতিষ্ঠিত উইকিলিকসের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট মার্কিন গোপন নথি প্রকাশ করে দিয়ে দেশ ও বিদেশে ব্যাপক পরিচিতি পান।
তাকে লন্ডনে কিছুদিনের জন্য কারাবরণও করতে হয়।
আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ, সুপ্রিমকোর্টের বিতর্কিত ব্যক্তিদের বিচারপতি নিয়োগ, ক্রসফায়ারের নামে বিনাবিচারে হত্যাকাণ্ড অব্যাহত রাখা, দিনে ১৮ ঘণ্টা লোডশেডিং, ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে সারাবছর শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা ও খুন সংঘর্ষ অব্যাহত থাকার ঘটনা ছিল বছরজুড়ে আলোচিত। বছর শেষে টিআইবি কর্তৃক দেশে দুর্নীতির বিস্তার ও বিচার বিভাগকে দুর্নীতির শীর্ষে রেখে খানা রিপোর্ট প্রকাশ সরকারের ভেতর আলোচনার ঝড় তোলে। দেখা দেয় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া।
আলোচনায় শেখ হাসিনা : বছরের শুরুতে ভারতের সঙ্গে বিতর্কিত চুক্তি করে এবং বঙ্গবন্ধুর হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৫ সামরিক কর্মকর্তার ফাঁসির রায় কার্যকর করে আলোচনায় এসেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বছরের শুরুতেই জানুয়ারি মাসে ভারত সফরে গিয়ে নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট দু’টিসহ তিনটি চুক্তি ও ৫০ দফা সমঝোতা স্মারক সই করে ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসেন। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি দেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তি করার অভিযোগ আনে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। সংসদে এসব চুক্তি প্রকাশের দাবি জানান। কিন্তু সংবিধান অনুযায়ী আজও এসব চুক্তি প্রকাশ করা হয়নি। চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের আলোকে ভারতে ট্রানজিট ও করিডোর দেয়ার আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে।
ট্রানজিট দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাপকভাবে লাভবান হওয়ার কথা বলা হলেও শেষ পর্যন্ত নামমাত্র ফি দিয়েই ভারত সড়ক, রেল ও নৌ ট্রানজিট সুবিধা নিশ্চিত করেছে বলে এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা ছিল বছরজুড়েই। এছাড়া ভারত থেকে উচ্চ সুদে ও কঠিন শর্তে এক বিলিয়ন ডলার ঋণ ভারতের ট্রানজিট সুবিধা নিশ্চিত করতেই ব্যয় হবে নিশ্চিত হওয়ার পর সুধীসমাজে এ নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
খালেদা জিয়াকে উচ্ছেদ : বিদায়ী বছরের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা হচ্ছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে তার সেনানিবাসের বৈধ বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা। গত ১৩ নভেম্বর ভোর থেকে জবরদস্তিমূলকভাবে তাকে বের করে দেয়া হয়। বাড়ি থেকে বের হয়ে তাত্ক্ষণিকভাবে গুলশানের অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া জানান, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে অমানবিকভাবে টেনে-হিঁচড়ে এক কাপড়ে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়।
বাড়িছাড়া করার সময় পরিবারের সদস্যদের গায়ে হাত দেয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে বলেও জানান তিনি। ওয়ান-ইলেভেন-পরবর্তী জরুরি সরকারের সময় যেভাবে গ্রেফতার করা হয়েছিল, ঠিক একই কায়দায় মইনুল রোডের বাড়িতে হানা দিয়ে, গেট ও দরজা ভেঙে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় খালেদা জিয়াকে। সাব-কবলার মাধ্যমে চিরস্থায়ীভাবে লিজ দেয়া সুদীর্ঘ ৩৮ বছরের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি দখল করে নেয়া হলো। ১২ নভেম্বর রাত থেকেই বাড়িটি ঘেরাও করে রাখে সরকারি বাহিনী। আটক করে নিয়ে যাওয়া হয় ওই বাড়ির কর্মচারীসহ অন্য বাসিন্দাদের।
আপিল বিভাগে মামলা বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় বেগম জিয়াকে হয়রানি না করার জন্য প্রধান বিচারপতির নির্দেশনাও আমলে নেয়নি সরকার। এ সংক্রান্ত কাগজপত্র নিয়ে আইনজীবীরা মইনুল রোডে যেতে চাইলে তাদের ক্যান্টনমেন্টে ঢুকতে দেয়া হয়নি।
আলোচনায় ড. ইউনূস : গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পের টাকা অন্য ফান্ডে সরিয়ে নেয়ার খবর নরওয়ের একটি টিভি চ্যানেলে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি প্রচারের পর আলোচনায় আসেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানুষের রক্ত চুষে খেলে এরকম পরিণতি হয় বলে মন্তব্য করে নতুন আলোচনার জন্ম দেন। ড. ইউনূসের তহবিল সরানোর অভিযোগ তদন্তেরও উদ্যোগ নেয় সরকার।
নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে গ্রামীণ ব্যাংকের জন্য দেয়া বিদেশি অর্থ অন্য ফান্ডে স্থানান্তরের অভিযোগের সূত্র ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গরিব মানুষের রক্ত চুষে খেলে ধরাও খেতে হয়। মানুষের সঙ্গে ধোঁকাবাজি সমর্থনযোগ্য নয়—মন্তব্য করে তিনি বলেন, ধোঁকাবাজি বেশিদিন চলে না তা আবারও প্রমাণিত হয়েছে। বিদেশ থেকে প্রাপ্ত গ্রামীণ ব্যাংকের অর্থ অন্য ফান্ডে সরানোর বিষয়ে নরওয়ের টেলিভিশনে প্রচারিত প্রামাণ্যচিত্রের খবর দেশের মিডিয়ায় প্রকাশ এবং এ বিষয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্যের সূত্র ধরে সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
সত্য লিখে সরকার ও বিচার বিভাগের রোষানলে মাহমুদুর রহমান : সরকারের দুর্নীতির খবর প্রকাশ বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ও সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর ঘুষ নেয়ার অভিযোগের খবর প্রকাশের পর আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে দেশের ২৬টি জেলায় মানহানি মামলা দিয়ে তাকে হয়রানি করা হয়। এতেও সরকার ক্ষান্ত হয়নি।
গত ১ জুন দিবাগত রাতে পত্রিকা অফিস থেকে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর ৫টি সাজানো মামলা দেয়া হয়। বিভিন্ন মামলায় ১২ দিন রিমান্ডে নিয়ে তাকে বিবস্ত্র করে, নির্যাতন চালিয়ে অজ্ঞান করে ফেলা হয়। তার প্রতি চরম অমানবিক আচরণ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৯ আগস্ট ‘চেম্বার মানে সরকারের পক্ষে স্টে’ শিরোনামে ২১ এপ্রিল প্রকাশিত একটি খবরে আদালত অবমাননা হয়েছে অভিযোগে সুপ্রিমকোর্ট তাকে ৬ মাসের কারাদণ্ড ও ১ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
একই মামলায় প্রতিবেদক অলিউল্লাহ নোমানকে এক মাসের কারাদণ্ড ও ১০ হাজার জরিমানা অনাদায়ে ৭ দিনের কারাদণ্ড দেয়া হয়। আপিল বিভাগের দেয়া নজিরবিহীন এ রায়ে মাহমুদুর রহমান এখনও কারাগারে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠন ও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে তার মুক্তির দাবি জানানো হলেও সরকার তাকে আমলে নিচ্ছে না। উপরন্তু দেশের বিভিন্ন স্থানে মামলায় হাজির করার নামে তার ওপর নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে। মাহমুদুর রহমানের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে দেশে-বিদেশে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লেও সরকার নির্বিকার রয়েছে।
মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার ও আমার দেশ পত্রিকা বন্ধের ঘটনাটি গত জুনের পর থেকে সর্বাধিক আলোচিত বিষয় হিসেবে মিডিয়ায় স্থান করে নিয়েছে।
গ্রেফতারের পর থেকে তার ওপর নানা নির্যাতন চালানো হয়। এখনও বিভিন্ন কৌশলে কারাগারে নির্যাতন অব্যাহত আছে। গ্রেফতার পরবর্তী একের পর এক মামলা দিয়ে তাকে দফায় দফায় ১২ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। রিমান্ডে তার ওপর চালানো হয় অমানবিক নির্যাতন।
হাইকোর্ট বিভাগ এক আদেশে তাকে রিমান্ডে কোনোরকমের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন না করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিল। এছাড়া যে তদন্ত কর্মকর্তা রিমান্ডে নিয়েছেন তার বাইরে অন্য কেউ জিজ্ঞাসাবাদ না করারও নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট বিভাগ। কিন্তু এসব কিছুই তোয়াক্কা করা হয়নি। তেজগাঁও থানার এক তদন্ত কর্মকর্তার অধীনে তাকে রিমান্ডে দেয় ম্যাজিস্ট্রেট। অথচ হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশ উপেক্ষা করে তাকে নেয়া হয় ক্যান্টনমেন্টে।
সেখানে চালানো হয় নির্যাতন।
কারাগারে পাঠানোর পর তাকে সাবেক জ্বালানি উপদেষ্টা ও প্রথম শ্রেণীর জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে ডিভিশন দেয়া হয়নি। সাধারণ বন্দিদের সঙ্গে রাখা হয় একটি সাধারণ সেলে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের এই সাধারণ সেল থেকে গত ১৫ অক্টোবর তাকে পাঠানো হয় গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে। সেখানে তাকে একেবারে নির্জনকক্ষে রাখা হয়েছে।
তার সেলে কাউকে যাতায়াত করতে দেয়া হয় না। তাকেও সেল থেকে কোথায়ও বের হতে দেয় না কারা কর্তৃপক্ষ। এমনকি পবিত্র ঈদুল আজহার দিনেও কোনো বন্দিকে তার সঙ্গে সাক্ষাত্ করার সুযোগ দেয়নি কারা কর্তৃপক্ষ। ঈদের দিনেও তিনি একা নির্জন ছিলেন।
বর্তমানে তিনি আপিল বিভাগের দেয়া দণ্ডে সাজা ভোগ করছেন।
তার এ সাজা শেষ হওয়ার মেয়াদ নিয়েও চলছে নানা বিভ্রান্তি। আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে অন্য কোনো ফোরামে যাওয়ার সুযোগ নেই। একটি মাত্র আইনি সুযোগ রয়েছে রিভিউ করা। রিভিউ করতে হলে রায়ের পূর্ণাঙ্গ বিবরণীর কপি আবশ্যক। কিন্তু গত সাড়ে ৪ মাসেও আপিল বিভাগ রায়ের কপি সরবরাহ করেনি।
আমার দেশ ও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে নিয়ে সরকারের এমন প্রতিহিংসামূলক আচরণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন দেশের খ্যাতিমান সম্পাদক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, চিকিত্সক, প্রকৌশলী, শিক্ষক।
একাধিক কর্মসূচিতে তারা বলেন, বাংলাদেশের সংবাদপত্রের ইতিহাসে ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন যেমন কালোদিবস হিসেবে চিহ্নিত, তেমনি ২০১০ সালের ১ জুনও একইভাবে কালোদিবস হিসেবে আগামী প্রজন্মের কাছে চিহ্নিত হবে। দুটি কালোদিবসই জুন মাসে সংঘটিত হয়েছে এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগই এ ন্যক্কারজনক ঘটনার জন্ম দিয়েছে।
বাজিকরদের হাতে দেশ জিম্মি : তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বিচারপতি মুহম্মদ হাবিবুর রহমান বলেছেন, দেশ এখন বাজিকরদের হাতে। যেখানে নাগরিকদের কোনো পাওনা বা প্রাপ্য রয়েছে সেখানেই বাজিকররা একটা উত্কট ব্যস্ততায় উন্মত্ত।
ভর্তিবাজি, নিয়োগবাজি, টেন্ডারবাজি, দলবাজি, মতলববাজি—এত বিভিন্ন ধরনের বাজির রকমফের দেখে দেশের লোক দিশেহারা। তিনি বলেন, মানুষ নিপীড়নের পরিবর্তে স্বাধীনতা চায়। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া কেবল স্বাধীনতার কথা বলে, কিন্তু স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেয় না। গতকাল রাজধানীর যাত্রী সম্মেলনকক্ষে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স স্টাডিজ (আইজিএস) আয়োজিত ‘দ্য স্টেট অব গভর্নেন্স ইন বাংলাদেশ ২০০৯’ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে তিনি দেশের বর্তমান অবস্থা, মেধাশূন্য প্রশাসন, জাতীয় সংসদের আইন পাস, নির্বাচন কমিশন, গণতন্ত্রের অবস্থা নিয়ে তার অভিমত তুলে ধরেন।
বিচারপতি হাবিবুর রহমান বলেন, সরকার মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে সীমাহীন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। কৃষকের কেরোসিন, বিদ্যুত্ পেতে নানা ভোগান্তি পোহাতে হয়। খাদ্য নিরাপত্তায় সরকারের কার্যাবলি বিভ্রান্তিকর। খাসজমি পুনর্বণ্টনে দুর্নীতি, কৃষিপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে দুর্বল কাঠামোর কারণে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়নি।
মেধাশূন্য প্রশাসনের কথা উল্লেখ করে বিচারপতি হাবিবুর রহমান বলেন, যেখানে একটা চতুর্থ শ্রেণীর চাকরির জন্য তিন লাখ টাকা গুনতে হয় সেখানে মেধাভিত্তিক প্রশাসন কেমন করে আমরা গড়ব? তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় প্রশাসন গণতান্ত্রিক না হয়ে কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠেছে।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই আমাদের প্রশাসনে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মাধ্যমে অধস্তন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের তদারকি দিন দিন কমে গেছে। ক্ষমতাসীন দলের প্রতি আনুগত্য প্রকাশে যারা অতিরিক্ত উত্সাহ দেখিয়েছেন তাদের পক্ষে দলনিরপেক্ষ প্রশাসনে শাসন করা কঠিন হয়ে পড়ে। এর ফলে সরকারি সেবাখাতে সিস্টেম লস ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পায়।
সম্প্রতি সংসদে পাসকৃত বিদ্যুত্ জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন-২০১০-এর সমালোচনা করে বিচারপতি হাবিবুর রহমান বলেন, এই বিধান অনুযায়ী বিদ্যুত্ বা জ্বালানি আমদানি, উত্পাদন, পরিবহন বা বিপণন, সঞ্চালনের ব্যাপারে সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে আদালতে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না। এ সংক্রান্ত কোনো কাজে জড়িত সরকারি কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা বা কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া যাবে না।
এ বিশেষ আইনের ফলে নির্বাহী বিভাগের যেমন ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হলো তেমনি অনিয়মের প্রতিকারের জন্য আদালতের দরজাও বন্ধ করা হলো।
বছরটা তো ক্রিকেটার সাকিবের! : শুরুর সঙ্গে শেষের কত অমিল! শেষ হয়ে যাওয়া ২০১০ সাল প্রসঙ্গে এ কথা বলতেই পারেন সাকিব আল হাসান। মাত্র ১ রান দিয়ে বছর শুরু করা সেই সাকিব আল হাসানই বছর শেষে ক্রিকেটের সবচেয়ে আলোচিত তারকা।
ব্যাট-বলের পারফরমেন্সের সঙ্গে অবশ্য বছরজুড়ে মাঠের বাইরেরও অনেক ‘বিষয়বস্তু’ নিয়ে ক্রিকেটীয় আলোচনার শীর্ষে ছিলেন সাকিব আল হাসান।
ক্রিকেটে ২০১০ সালের বেশিরভাগ সময়টাই সাফল্যের সঙ্গেই পার করেছে বাংলাদেশ।
আর ক্রিকেটের এ সিংহভাগ সাফল্যের সঙ্গেই জড়িয়েছিল একটাই নাম—সাকিব আল হাসান। ব্যাটিং-বোলিং-অধিনায়কত্ব প্রায় বিভাগেই নিজেকে সেরা হিসেবে চিনিয়েছেন তরুণ এ ক্রিকেটার।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করার আনন্দ আগেও পেয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু শক্তি, সামর্থ্যে এবং অভিজ্ঞতায় নিজের চেয়ে সমৃদ্ধ কোন দলের বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশ—সেই উল্লাসে প্রথমবারের মতো মেতেছিল বাংলাদেশ গেল বছর, নিউজিল্যান্ডকে ওয়ানডে সিরিজে ৪-০’তে হারিয়ে। আর সেই সিরিজেও বাংলাদেশের সাফল্যে গাঁথার সঙ্গে সবচেয়ে উজ্জ্বল নামটা সাকিব আল হাসান।
শীর্ষে সবাই উঠতে পারে। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে নিজের সেই শীর্ষস্থান সবাই ধরে রাখতে পারে না। সাকিব রেখেছেন। ওয়ানডে ক্রিকেটে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের খেতাব সাকিব ধরে রেখেছেন বছরজুড়ে। শুধু তাই নয়, গেল বছরে ওয়ানডে ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি ৪৬টি উইকেট শিকার করে তালিকার শীর্ষে সাকিব আল হাসান।
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এখন যে কোনো দল খেলতে নামলেই প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে সবচেয়ে বেশি একটাই নাম উচ্চারণ করে—সাকিব আল হাসান। নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ড্যানিয়েল ভেট্টোরি ঢাকায় ওয়ানডে সিরিজে খেলতে নামার আগে ঘোষণা দেন—‘সাকিব আল হাসানই আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। ’
মোটেও ভুল কিছু বলেননি ড্যানিয়েল ভেট্টোরি। পুরো সিরিজজুড়ে সাকিবের ব্যাটিং-বোলিংয়ের কাছে হাঁটু গাড়ে নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশ ৪-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতে।
সব বিভাগে সেরা পারফরমেন্স দেখিয়ে সাকিব হন সিরিজ সেরা।
নিউজিল্যান্ডের পর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দেশের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজে মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। সেই সিরিজেও জিম্বাবুয়ের সামনে বড় হুমকি সাকিব আল হাসান। সেরা একাদশ গঠন এবং অধিনায়ক প্রসঙ্গ নিয়ে নানা জটিলতায় সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ হেরে যায়। একটি ম্যাচ বৃষ্টিতে বাতিল হয়।
শেষমেশ সেই সিরিজেও দাপটের সঙ্গেই জিতে বাংলাদেশ। চার ম্যাচের এ সিরিজেও সাকিব আল হাসান চমত্কার অলরাউন্ড নৈপুণ্য দেখান।
প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে কাউন্টি ক্রিকেটে খেলতে যান সাকিব গেল বছরে। কাউন্টি ক্রিকেটে দ্বিতীয় স্তরে খেলেন উস্টারশায়ার দলের হয়ে। ১১ ম্যাচে সবচেয়ে বেশি ৪৩টি উইকেট নিয়ে কাউন্টিতে নিজের প্রথম মৌসুম স্মরণীয় করে রাখেন এ বাঁহাতি অলরাউন্ডার।
মাশরাফি বিন মর্তুজা ফের নতুন করে ইনজুরিতে পড়ায় বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অধিনায়কত্ব নিয়ে বিসিবির কাছে আর তেমন বিকল্প নেই। বিশ্বকাপেও সাকিবই অধিনায়ক থাকছেন। গতকাল এ ঘোষণাও হয়ে গেছে।
দেশজুড়ে এভারেস্ট জয়ের গান : প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে এভারেস্ট চূড়ায় ওঠে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন মুসা ইব্রাহীম। ছয় কোটি বছর আগে জন্ম নেয়া পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্ট চূড়ায় বাংলাদেশের পতাকা ওড়ালেন এ সাংবাদিক অভিযাত্রী।
হিমালয়কে হারিয়ে দেয়া এ পর্যন্ত প্রায় ১২শ’ দুঃসাহসী পর্বতারোহীর একজন তিনি। ২৩ মে নেপাল সময় সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এভারেস্ট জয় করায় তার নাম পরিণত হলো ইতিহাসে। বাংলাদেশ আরেক দফা জেগে উঠল নতুন আশায়। কারণ এটা সাধারণ ঘটনা নয়। আশা আর দৃঢ় সংকল্প থাকলে বাংলাদেশীদের পক্ষে অনেক কিছুই যে করা সম্ভব।
আকাশ ছুঁয়ে দেখার অদম্য ইচ্ছেটি দীর্ঘদিন ধরে মনের মধ্যে লালন করছিলেন মুসা। তার উপমাবিহীন সংযম আর সাধনার কাছে সব ধরনের জাগতিকতা হার মেনেছে। শুধু আকাশ নয়, আকাশের কপাল তিনি ছুঁয়ে দিলেন। নেপালিরা এভারেস্টকে বলে ‘সাগরমাথা’। এর অর্থ আকাশের কপাল।
তিব্বতিরা বলে ‘চুমুলংমা’। অর্থাত্ দেবী, বিশ্বমাতা।
বাংলাদেশের মুসা প্রমাণ করলেন, সুস্থির লক্ষ্যের যাত্রী হতে পারলে কোনো প্রতিকূলতা বাংলাদেশীদের দমিয়ে রাখতে পারে না।
উইকিলিকসের তথ্যমুক্তিযুদ্ধ : গত জুলাই মাসে আফগানিস্তানে ন্যাটো জোটের তথাকথিত তালেবানবিরোধী লড়াইয়ের ৭৬ হাজার ৯শ’ দলিল ফাঁস করে দেয় উইকিলিকস। এতে এই গ্রহবাসী হাজার হাজার বেসামরিক আফগানবাসীর ওপর ন্যাটো জোটের অন্যায় আচরণ সম্পর্কে জানার সুযোগ পায়।
এর দু’মাস পর তথ্যমুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক হিসেবে পরিচিত জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের গড়া উইকিলিকস ইরাক যুদ্ধের প্রায় ৪০ হাজার গোপন দলিল প্রকাশ করে দেয়। জুলিয়ানের এ তত্পরতাকে বিশ্বের পরাশক্তি ও তাদের অনুগতরা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করে এবং তারই অংশ হিসেবে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ লন্ডন পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন সাজানো মামলায়। পরে মুক্তিও পান।
জুলিয়ানের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ হলো ‘উইকিলিকস’ জাল বিছিয়ে তিনি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার সব মানবাধিকার লঙ্ঘন ও যুদ্ধাপরাধের তথ্য হিলারি ক্লিনটনের সিলিকন-সিন্দুক থেকে সরিয়ে ফেলেছেন।
দেশটির রাজনীতিবিদ আর হাফ-বয়েলড সুশীলরা চেঁচিয়ে বলছেন, আরে হচ্ছেটা কী? অফিসিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্টের তেজারত তো চাঙ্গে উঠবে দেখছি! অবশ্য এটা শুধু হিলারির একক প্রবলেম নয়, ওয়াশিংটনের ওয়ান ওয়ার্ল্ড অর্ডারের এজেন্টদের সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার যেসব নেতানেত্রীর চিঠি চালাচালি হয়েছে, তাদেরও সমস্যা বটে!
বলিভিয়ার গোপন কারাগারে সিআইএ এজেন্ট গুলি করে মারার আগে চে গুয়েভারা বলেছিলেন, ‘আমাকে মেরে ফেলতে পার, কিন্তু আমার আইডিয়া, সাম্রাজ্যবাদের মুখোশ খুলে দেয়ার আইডিয়াকে কীভাবে হত্যা করবে’? চে গুয়েভারার সুরেই কথা বলছেন গর্বিত হ্যাকার জুলিয়ান।
তাকে কেন এখন ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে তুলনা করে হত্যার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে, তা ভেবে দেখা দরকার। তবে রোবট অর্থনীতির প্রবক্তারা বুঝে ফেলেছেন, পৃথিবীতে কোনো অপকর্মই এখন আনচ্যালেঞ্জড নয়। অবশ্য জুলিয়ান সম্পর্কে ওয়াশিংটনের তুখোড় সাংবাদিকরা বলছেন, যে লোক লিভিং লিজেন্ড হয়ে গেছেন, তার আর ভয় কী? মিডিয়া আছে তার সঙ্গে।
জুলিয়ান বারবার দাবি করেছেন, সত্য উন্মোচন অপরাধ হতে পারে না। তবে এটা বোঝা যাচ্ছে, হিলারি-মুল্লুক এখন কষে হিসাব কষছে, টুইন টাওয়ারে বিমান-হামলার চেয়ে জুলিয়ানের তথ্য-হামলা বেশি ক্ষতি করে ফেলল কিনা।
নাকি যত বেশি তেনা পেঁচাবে তত দ্রুততার সঙ্গে স্ট্যাচু অব লিবার্টি ধসে পড়বে।
সরকারি আর করপোরেট মিডিয়ার শোষণের বিপরীতে উইকিলিকসের এ সাফল্য; ইতিহাসের চাকাটাকে শঠতার ল্যাবিরিন্থ থেকে উদ্ধার করে সত্যের ড্রিম শাটলে বসিয়ে দিয়েছে বলে কেউ কেউ মত দিয়েছেন। তাই জুলিয়ানকে ভার্চুয়াল লাইফ থেকে বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব নাও হতে পারে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ম্যাংগো পাবলিকের মন যে তিনি জয় করে ফেলেছেন!
ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধক্ষেত্রের প্রায় ৯২ হাজার সিক্রেট রিপোর্ট ফাঁস করে দেয়ার পর সম্প্রতি মার্কিন দূতাবাসগুলোর পাঠানো গোপন তথ্যের প্রায় আড়াই লাখ তারবার্তা ফাঁস করে দিয়েছেন জুলিয়ান। এতে ওয়াশিংটন ও তার মিত্র দেশগুলোর শাসকবর্গের গণবিরোধী ষড়যন্ত্রের মুখোশ আলগা হয়ে যাওয়ায় পুরো ব্যবস্থাটিই লেজেগোবরে হয়ে গেছে।
তথাকথিত গণতন্ত্রের ধ্বজাধারীদের গোস্বার সীমা নেই এ কারণেই এবং তারা এখন উইকিলিকস ও তার প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ানের বিরুদ্ধে হামলে পড়েছে।
নয়-এগারোর পর থেকেই বুশ আর ওবামা ক্রমবর্ধমান হারে বলে আসছেন, সাধারণ নাগরিকদের ‘রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা’ জানার প্রয়োজন নেই। অথচ উইকিলিকস কিনা ওটাই ফাঁস করে দিয়েছে। ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উইকিলিকস ও জুলিয়ানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ব্যাপারে চিরশত্রু ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানরা এখন একাট্টা।
সরকারের রোষানলে পড়ে বন্ধ আমার দেশ : গত ১ জুন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা সরকারের রোষানলে পড়ে বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনা দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
আমার দেশ’র মানবাধিকারবিরোধী অবস্থা, দুর্নীতি অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে সুদৃঢ় অবস্থান সরকারের রোষানলে ফেলে অবশেষে আদালতের মাধ্যমে দীর্ঘ প্রায় দেড় মাস পর পত্রিকাটি নতুন করে প্রকাশিত হয়। আমার দেশ পুনঃপ্রকাশের জন্য পত্রিকার সাংবাদিক-কর্মচারীসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের সাংবাদিক-কর্মচারীরা রাজপথে তীব্র আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তোলেন। পত্রিকা পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে এ আন্দোলন-সংগ্রাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে মুক্ত করার জন্য এখনও রাজপথের লড়াই ও আইনি সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন আমার দেশ’র সাংবাদিক-কর্মচারীরা।
আলোচনায় সুপ্রিমকোর্ট : বছরজুড়ে নানা কারণেই আলোচনায় ছিল হাইকোর্ট-সুপ্রিমকোর্ট।
হাইকোর্টে বিতর্কিত ব্যক্তিদের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ, দু’জন সিনিয়র বিচারপতিকে ডিঙিয়ে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ, তৃতীয় শ্রেণীপ্রাপ্তদের হাইকোর্টে বিচারপতি নিয়োগ এবং খুনের মামলার আসামি ও হাইকোর্টে ভাংচুরকারী দু’জনকে বিচারক নিয়োগ দেয়ার ঘটনা নিয়ে আলোচনায় চলে আসে বিচার বিভাগ। সর্বশেষ খানা জরিপ চালিয়ে টিআইবি যে প্রতিবেদন দিয়েছে তাতে দুর্নীতির শীর্ষে রয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। এ ছাড়া সত্য লিখেও আদালত অবমাননার অভিযোগে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে ৬ মাসের কারাদণ্ড ও ১ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১ মাসের কারাদণ্ড প্রদান করেন আলোচনা-সমালোচনার মুখে পড়ে সর্বোচ্চ আদালত। হাইকোর্টে বিচারপতি খায়রুল হকের দেয়া রায় সুপ্রিমকোর্ট বহাল রেখে সংসদকে পাশ কাটিয়েই বাংলাদেশের সংবিধানে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসা হয়েছে। বিচারপতি খায়রুল হক প্রধান বিচারপতি নিয়োগ পেয়েই এ রায়ের আলোকে সরাসরি সংবিধান ছাপানোর মত দিয়ে সরকারকে অনেকটা বাধাহীনভাবে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন।
সরকার আপিল বিভাগের রায়ের আলোকেই সংবিধান পুনর্মুদ্রণের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি : ১০ টাকা চাল খাওয়া ও বিনামূল্যে সার পাওয়ার মতো অনেক আকর্ষণীয় অঙ্গীকারে আস্থা রেখে যে ১৫ কোটি মানুষ দু’বছর আগে মহাজোট সরকারকে মসনদে মেনে নিয়েছিল, বিগত বছরজুড়ে তাদের মোটা চাল খেতে হয়েছে ৩৪ থেকে ৩৮ টাকা কেজিতে। বিনামূল্যের সার তো রয়ে গেছে স্বপ্নবিলাসে। গত এক বছরে প্রতিটি পণ্যের দাম গড়ে ৪০ থেকে ৫০ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। কোনো কোনো নিত্যপণ্যের মূল্য দ্বিগুণও হয়েছে।
সরু চালের কেজি এখন ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। তেলের লিটার ১১০ টাকা। ডালের কেজি ১০৫ থেকে ১১০ টাকা। হলুদের দাম বেড়ে ৪০০ টাকার ওপরে গেছে। চিনি, আটাসহ সব জিনিসের দাম বেড়েছে।
এ ছাড়া আগের বছররের মতো বিগত বছরে ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা প্রকট রূপ নিয়েছে। বিনিয়োগে সৃষ্টি হয়েছে বন্ধ্যত্ব। বিদেশি শ্রমবাজার সঙ্কুচিত হয়ে জনশক্তি রফতানিতে ধস নেমেছে। শিল্প-কারখানায় উত্পাদন কমেছে।
ক্রসফায়ার : ক্রসফায়ারসহ বিচারবহির্ভূত সব ধরনের হত্যাকাণ্ড বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এলেও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত এক বছরে ক্রসফায়ারের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
এ নিয়ে দেশ-বিদেশে মানবাধিকার সংগঠনগুলো সোচ্চার হলেও ক্রসফায়ার বন্ধ হচ্ছে না। সর্বশেষ উইকিলিকসের ফাঁস করা তথ্যেও ক্রসফায়ারে র্যাবের জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করে র্যাবকে ডেথ স্কোয়াড ও মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সম্প্রতি এক সেমিনারে মন্তব্য করা হয়েছে, দেশে গণতন্ত্রের নামে স্বৈরতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদী শাসন চলছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও রিমান্ডের নামে নির্যাতনের ক্ষেত্রে অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি শ্বাসরুদ্ধকর।
বেকারত্ব, অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুত্-গ্যাসের তীব্র সঙ্কটসহ হাজারও সমস্যার সমাধান না করে বিরোধী রাজনৈতিক দল ও মতের লোকদের দমনে মরিয়া সরকার।
ইভটিজিং : নারী, শিশু হত্যা, খুন, শ্লীলতাহানি, যৌতুকের জন্য নির্যাতন, এসিড সন্ত্রাসের পাশাপাশি নতুন উপদ্রব হিসেবে দেখা দেয় ইভটিজিং। গত এক বছরে ইভটিজিং নামক যৌন নিপীড়ন থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য কিশোরী ও তরুণীরা জীবনও দিচ্ছে। সারাদেশে ইভটিজিংবিরোধী সভা-সমাবেশের পরও বন্ধ থাকেনি এ যৌন হয়রানির অপরাধ। এ পর্যন্ত ইভটিজিংয়ের শিকার হয়ে একডজন তরুণী আত্মাহুতি দিয়েছে।
ইভটিজিংয়ে জড়িত থাকার অভিযোগে অনেককে দণ্ড দেয়া হলেও থেমে থাকেনি ইভটিজিং।
ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব : বছরজুড়ে আলোচিত ছিল বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠানে নিজেদের মধ্যে এবং অন্য সংগঠনের সঙ্গে হানাহানিতে জড়িয়ে পড়ে সরকারি ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজিতে ব্যাপকভাবে জড়িয়ে পড়ে এ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বছরের অধিকাংশ সময়েই চাপাতি, কিরিচ, হকিস্টিকসহ বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ছাত্রলীগের এক গ্রুপকে অপর গ্রুপের ওপর হামলা করতে দেখা গেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু। ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরীহ মেধাবী ছাত্র আবু বকরকে প্রাণ দিতে হয়েছে। রাজশাহীতে ছাত্রলীগের হাতে মারা গেছেন ছাত্রমৈত্রীর এক নেতা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ছাত্রলীগকর্মী ফারুক। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সংঘর্ষ নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
এভাবে প্রতিনিয়তই দেশের কোনো না কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও মারামারির ঘটনা ঘটতে থাকায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং ছাত্রলীগের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। দলের একাধিক নেতা প্রকাশ্যেই ছাত্রলীগের সমালোচনা করেছেন। দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ছাত্রলীগের মধ্যে ছাত্রশিবির ঢুকে হানাহানির ঘটনা ঘটাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন।
টিআইবির খানা জরিপ : বিচার বিভাগে সর্বাধিক দুর্নীতি : টিআইবির সাম্প্রতিক এক জরিপে বলা হয়েছে, সেবাখাতের মধ্যে দেশের বিচার বিভাগ সর্বাধিক দুর্নীতিগ্রস্ত। ৮৮ শতাংশ খানা এ খাতের দুর্নীতির শিকার।
শুনানি দ্রুত করানো কিংবা শুনানির তারিখ পেছানো, মামলার রায়কে প্রভাবিত করা, ডকুমেন্ট উত্তোলন বা গায়েব করতে ঘুষ বা বিধিবহির্ভূত অর্থ দিতে হয়েছে তাদের। ২০০৭ সালে বিচার বিভাগের দুর্নীতি ও হয়রানির শিকার ছিল ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশ খানা। সে হিসাবে এ খাতে দুর্নীতির হার বেড়েছে প্রায় ৮৫ শতাংশ। এরপরই রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা ও ভূমি প্রশাসন। গতকাল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) পরিচালিত ‘সেবাখাতের দুর্নীতি : জাতীয় খানা জরিপ-২০১০’এ এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশের ৮৪ দশমিক ২ শতাংশ খানাকে সেবা নিতে গিয়ে কোনো না কোনোভাবে দুর্নীতির শিকার হতে হয়েছে। দুর্নীতির কারণে বছরে প্রায় ৯ হাজার ৫৯১ দশমিক ৬ কোটি টাকা ঘুষ বা নিয়মবহির্ভূতভাবে অর্থ প্রদান করতে হয়েছে। সেবাখাতের মধ্যে ঘুষ আদায়ের শীর্ষে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা। এরপর ভূমি প্রশাসন ও বিচার বিভাগ। ২০০৭ সালের তুলনায় ২০১০ সালে বিচার বিভাগ, ভূমি প্রশাসন ও বিদ্যুত্ খাতে দুর্নীতি ও হয়রানি বৃদ্ধি পেলেও পুলিশ, স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতে কমেছে।
তবে ২০০৭ সালের তুলনায় ২০১০ সালে সার্বিকভাবে দেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা বেড়েছে বলে জরিপে তথ্য প্রকাশ করা হয়।
জরিপ প্রকাশ অনুষ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।