আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কবি আবদুল হাই শিকদার: দগ্ধ ইতিহাসের বিদগ্ধ কবি # ড. মাহফুজ পারভেজ



কথা শুরুর আগে কিছু প্রশ্নের মীমাংসা হওয়া দরকার: ১. বাংলাদেশে বা বৃহত্তর বাঙলা কাব্যধারার আদি থেকে বর্তমান পর্যন্ত কবি আবদুল হাই শিকদার ছাড়া অন্য কোনও কবি-র কবিতা কী ৩০ হাজার কপি ছাপা ও পাঠক সমাজে গৃহীত হয়েছে? ২. কবি আবদুল হাই শিকদারের কবিসত্ত্বা, কীর্তি ও ব্যক্তিত্ব-কাঠামোকে কী একক কোনও বিশেষণ বা অভিধায় কেন্দ্রীভূত ও বিভূষিত করা সম্ভব? ৩. কবি আবদুল হাই শিকদার ছাড়া সমকালীন আর কোনও কবি কী কবিতায় প্রেম, বিরহ, ধর্ম, দর্শন, জাতীয়তাবাদ, আন্তর্জাতিকতা, সংগ্রাম, আন্দোলন, জাতিসত্ত্বায় রাজনীতি-সচেতনভাবে সুনিপূণ পর্যটন করতে পেরেছেন? ৪. কবি আবদুল হাই শিকদার ছাড়া সমকালীন আর কোনও কবি কী সমাজ, রাজনীতি, সংস্কৃতি, আগ্রাসন, জাতিসত্ত্বার অধিকার, মানবিকতা, শোষণ-নিপীড়ন মুক্তি, দ্রোহ ও সংক্ষুব্ধ তারুণ্য আর মানবমণ্ডলীর কাব্যভাষা বিনির্মাণ ও উচ্চারণ করতে পেরেছেন একটি সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক আশাবাদ ও মূল্যবোধকে সামনে রেখে? ৫. কবি আবদুল হাই শিকদার ছাড়া সমকালীন আর কোনও কবি কী কবিতার সমান্তরালে ছড়া, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ভ্রমণসহ সাহিত্যের মননশীল ও সৃজনশীল অঙ্গণে বহুমাত্রিকতায় স্বচ্ছন্দ বিচরণ করতে পেরেছেন? ৬. কবি আবদুল হাই শিকদার ছাড়া সমকালীন আর কোনও কবি কী কবিতা ও সাহিত্যকে সিলেবাস, পাঠ্যপুস্তক, পত্রিকার সাপ্তাহিক সংক্ষিপ্ত পরিসর থেকে অবারিত করে সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে সংস্কৃতির ফলিত-ব্যবহারিক লোকচর্চার বিষয়বস্তুতে পরিণত করতে পেরেছেন? ৭. কবি আবদুল হাই শিকদার ছাড়া তার কালের অন্য কোনও কবি কী দগ্ধ সমাজ-রাজনীতির ছাই-ভস্মের মধ্য থেকে বিদগ্ধ ফিনিক্স পাখির মতো নান্দনিক উড়াল দিতে পেরেছেন? ৮. কবি আবদুল হাই শিকদার ছাড়া সমকালীন আর কোনও কবি কী কাব্য, কাব্য-ঐতিহ্য, কাব্য-স্বাধীনতা নিয়ে এতোটা তীব্রভাবে একটিভিস্টের ভূমিকা রাখতে পেরেছেন? এইসব প্রশ্নের, এবং আরও কিছু প্রশ্ন প্রাসঙ্গিকভাবে যেসব এই প্রবন্ধে আসবে, সেসবের মীমাংসা ছাড়া কবি আবদুল হাই শিকদারের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছা যাবে না-তার কবিতা তো বটেই, সাহিত্য-কীর্তিও যথাযথভাবে অনুধাবণ করা সম্ভব হবে না। ফলে কবি আবদুল হাই শিকদার দীর্ঘ কাব্য ও সাহিত্যজীবনের ধারাবাহিক সৃষ্টিশীলতায় যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত-দ্বৈরথের মধ্য দিয়ে ক্রমাগ্রসর হয়ে আপন আলোর নিজস্ব কাব্য ও সাহিত্য জগত নির্মাণ করেছেন- তার একটি আভাস দেওয়া যেতে পারে। বলা যেতে পারে আমাদের দগ্ধ ইতিহাসের মধ্য বিদগ্ধ চৈতন্যে কবি আবদুল হাই শিকদারের উত্থান আর পথচলার সাহসী অভিযাত্রার কথা। ব্যক্তিগতভাবে আমি এ সংক্ষিপ্ত প্রবন্ধে সকল জিজ্ঞাসার মীমাংসা করতে পারবো না- করা সম্ভবও নয়। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, সত্যনিষ্ঠতার নিরিখে এসব জিজ্ঞাসার মীমাংসা ও ব্যাখ্যা সুস্পষ্টভাবেই হওয়া দরকার।

আর এই কাজটি ব্যক্তি মানুষের পক্ষে করা কতটুকু সম্ভব- সেটাও আমি জানি না। আমি জানি, এ কাজটি করতে পারবে- একমাত্র মহাকাল। কারণ, মহাকালের বিচারেই সত্য উদ্ভাসিত হয়- ব্যক্তি পরিণত হন ব্যক্তিত্বে- কাব্যকর্মীর মহাজন্ম সাধিত হয়। অতএব, এক্ষণেই এইসব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে কবি আবদুল হাই শিকদার কত বড় কবি- সেটা প্রমাণ করবার বিশেষ কোনও প্রয়োজন নেই। মহাকাল যথা সময়ে সে রায় প্রদান করবে।

অবশ্য, যার কবিত্ব পাঠকের আস্থা ও অনুরাগ লাভ করেছে- বড়ত্ব বরং তারই অনুগামী। পাঠকের আস্থা কখনও পাওয়া যায় সমকালে- কখনও কালান্তরে। কবি আবদুল হাই শিকদার সমকালকে ছুঁয়ে কালান্তরের কণ্ঠস্বরের গাম্ভীর্যে মহাকালের দিগন্তে কাব্য ও সাহিত্যকীর্তির যে আলোকোজ্জ্বল রেখাপাত করেছেন, তা কালোত্তীর্ণ এক অভিযাত্রার নামান্তর মাত্র- ভোরের প্রতীকে নিজের এবং জীবনের আত্মপ্রকাশ: ”আলো আলো বলে একদিন মানুষ চিৎকার করে উঠেছিলো। আর অন্ধকারের পর্দা ফাটিয়ে পরদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়ালো মহিমান্বিত ভোর। মানুষ স্বপ্নের কথা ভেবেছিলো।

দিগন্ত রেখার অনেক ওপার দিয়ে পাখির মতো উড়ে বেরিয়েছিলো তার মন। ” দিগন্তপ্রসারী এই কবিকে কী নামে ডাকা যেতে পারে? কোন বিশেষণে সীমাবদ্ধ করা যায়? যিনি মহৎ পেশা ও বৃত্তিকে ’ভাড়া খাটা বেশ্যায় পরিণত করতে’ দিতে পারেন না, যিনি ”লালবাগের দুর্গের বদলে ফোর্ট উইলিয়াম নিতে” পারেন না, ”উত্তরের ভাওয়াইয়ার আকাশকে বদলাতে” পারেন না, ”মায়ের বদলে মাসি কিনতে” পারেন না- তার কী পরিচয় হবে? সাফ কথায় নিজেই জানান নিজের অবস্থান: ”দেশান্তরী যে হতে চায় হোক, আমি তো ভাই বাংলাদেশের লোক। ” কিংবা বলেন: ”একটা জীবন আমি পেয়েছিলাম প্রেমের মতো আন্তরিক একটা জীবন আমি বাতাসের মতো অনায়াসে এভিনিউ স্তব্ধ করা মিছিলের মতো এক জীবন” এই জীবনে তিনি কী প্রত্যাশা করেন: ”আর যদি দেখি মানুষ মানুষকে শোষণ করছে আর যদি শুনি মানুষ অনাহারে মরছে তাহলে পৃথিবীকে ধিক্কার। ” মানবিকতার এত শুদ্ধতম উচ্চারণ আর কী হতে পারে? কিংবা প্রেম ও নিবেদনে তার যে আত্মধ্বনি, সেটাই কী যথেষ্ট নয় একজন কবিকে সনাক্ত করার জন্য: ”জানি একদিন একটা চিঠি পাব আমি খুব ঘন নীল প্রিয়দর্শিনীর লীলায়িত ভঙ্গির মতো পৃথিবীর সামরিক ভ্যানগুলোকে বোকা বানিয়ে আমাদের উদ্ধার করে নিয়ে যাবে আজকের জীবনের সমস্ত গ্লানি অন্ধকার আর টুকরো টুকরো মৃত্যুর অনেক ওপারে সেদিন কোথাও কোনো দুঃখ থাকবে না। ” নিজের জন্য না হলেও মানুষের জন্য, স্বদেশের জন্য, প্রেম ও বিরহের জন্য একজন কবিকে সকল দুঃখের হলাহল পান করতে হয়- হতে হয় নীলকণ্ঠ।

কবি আবদুল হাই শিকদার শুধু নীলকণ্ঠই হন-নি, হয়েছেন রক্তাক্ত-ক্ষত-বিক্ষত। বাংলাদেশে বা বৃহত্তর বাঙলা কাব্যধারার আদি থেকে বর্তমান পর্যন্ত কবি আবদুল হাই শিকদার ছাড়া অন্য কোনও কবি কী প্রকাশ্য রাজপথে ঘাতকের নির্মম ছুরিকাঘাতে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছেন? অথচ ১৯৯৬ সালের ২৫ সেপ্টেম্বরের ঘাতক ও তাদের পার্শ্বচর-সহচররা এতটুকুই মূর্খতা-কুপমণ্ডুকতার অধিকারী ছিল যে, একজন দেশপ্রেমিককে-একজন কবিকে যে আক্রমণ করতে হয় না-এই বোধ ও বিবেকটুকুও তাদের ছিল না। অথচ আক্রান্ত কবি তখন যে গান গেয়েছেন, তা শুনে প্রকৃতি আর মানুষ শিহরিত হয়ে ওঠেছিল-কালাপাহাড়ের মতো হন্তারকদের বুকের ওপর দাঁড়িয়ে খোদ ইতিহাস পর্যন্ত এই বলে কেঁপে ওঠেছিল: ”এই বধ্যভূমি একদিন স্বদেশ ছিল। ” আর কবি রক্তের স্মৃতি ও বেদনায় জারিত হয়ে আক্রমণকারীদের করুণা করতে করতে বলেছিলেন: ”আমার দেশের একটা পাখির সামান্য একটা পালকের জন্যও কী অসীম মায়া আমার ভিতরে-” বাংলাদেশে বা বৃহত্তর বাঙলা কাব্যধারার আদি থেকে বর্তমান পর্যন্ত কবি আবদুল হাই শিকদার ছাড়া অন্য কোনও কবি কী বিনা নোটিশে সাংবাদিকতার পেশা থেকে ক্ষমতাসীনদের আক্রমণে জর্জরিত হয়েছেন এই আধুনিক (!), উদার (!) সময়েও? বাংলাদেশে বা বৃহত্তর বাঙলা কাব্যধারার আদি থেকে বর্তমান পর্যন্ত কবি আবদুল হাই শিকদার ছাড়া অন্য কোনও কবি কী শ্বাশত পরিভ্রমণের ছলে বাংলাদেশের হারানো ইতিহাসের মর্মমূলে প্রবেশ করেছেন-খুঁজে বের করেছেন প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তির সমীকরণ? তিনি ছাড়া অন্য কোনও কবি কী ইতিহাস-ঐতিহ্য-জাতিসত্ত্বার হারানো রাজপথের ভেতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ঠিক পৌঁছে যেতে পেরেছেন জাতির অন্তর্মূলে? কবি আবদুল হাই শিকদারের ভ্রমণ বিষয়ক বইগুলো (সিরাজদৌলা-মুশির্দাবাদ, কবিতীর্থ চুরুলিয়া, নিপ্পন নি সাসাগু, ফিরে ফিরে আসি, অন্তরে বাহিরে তুমি রূপকথা: সোনারগাঁও) বাংলা সাহিত্য এবং ইতিহাস-অন্বেষায় এক জীবন্ত সংযোজন-আত্মানুসন্ধানের এক ক্লান্তিহীন যোজনা। ফলে বাংলাদেশে বা বৃহত্তর বাঙলা কাব্যধারার আদি থেকে বর্তমান পর্যন্ত কবি আবদুল হাই শিকদার ছাড়া অন্য কোনও কবি কী ইতিহাস-ছেঁনে কবিতার শরীর নির্মান করতে পারেন এতোটা স্পষ্টভাবে-বলতে পারেন সাম্রাজ্যবাদী-আধিপত্যবাদী-স¤প্রসারণবাদীদের আগ্রাসনকে ঠিক এইভাবে ’গ্রামে ঢুকে গেছে করপোরেট লিপস্টিক’ কিংবা ’দুবলার চরে অপেক্ষা করে ক্রীতদাসের জিন্দেগী।

’ এই তমসার-ঘোরাক্রান্ত পরিস্থিতিতে তিনি ছাড়া আর কে দৃঢ় কণ্ঠে জানতে চাইতে পারেন: ’কে সিরাজদৌলা-কে মীরজাফর। ’ কবি আবদুল হাই শিকদার ছাড়া অন্য কোনও কবি কী শিশু আর কিশোরদের জন্য কাব্যের সুষমায় ইতিহাস-ঐতিহ্য-রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব-আশাবাদ-সংগ্রাম-ইতিচেতনা মিশিয়ে দিতে পেরেছেন? ইতিহাস ও মহাকাল এসব প্রশ্নের উত্তর ও মীমাংসা নিশ্চয় যথাসময়ে দেবে। বাংলাদেশের শীর্ষবিন্দুর একেলা নদী দুধকুমারের পাড়ের (দক্ষিণ ছাট গোপালপুর গ্রাম, ভূরুঙ্গামারী থানা, কুড়িগ্রাম জেলা) একটি অনিন্দ্য সুন্দর ভূগোল-প্রকৃতি-পরিবেশে এবং অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভূ-রাজনৈতিক-কৌশলগত অবস্থানে কবি আবদুল হাই শিকদারের জন্ম আর রাজনৈতিক সংগ্রামমুখর পারিবারিক পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠার বাস্তবতা তাকে দাড় করিয়েছে গণমানুষের মিছিলের সামনের কাতারে- দ্রোহ ও বিক্ষোভের অগ্নিগর্ভ জ্বালামুখে। আসামের বাঙালির অধিকার রক্ষার আন্দোলনের স্মৃতি তার শৈশব ও কৈশোরকে প্রবলভাবে ছুঁয়ে গেছে। জন্মেই তিনি দেখেছেন উত্তরের বন্য-পাবর্ত্য বাংলা আর দক্ষিণের সমুদ্রগামী বঙ্গীয় জনপদের শোষণ-বঞ্চনার জাতীয় ও আঞ্চলিক চালচিত্র।

ইতিহাসকে দগ্ধ হতে দেখেছেন ঔপনিবেশবাদ ও তাদের এদেশীয় দোসরদের হাতে। নিজেকেও তিনি পুড়িয়ে ফেলেন জাতি-যন্ত্রণার মহাঅগ্নিকুণ্ডে। বার বার উচ্চারণ করতে থাকেন অমোঘ শোষণের সেই কথা: কাল ও কালান্তরের কণ্ঠস্বরে- দেশকাল ছাড়িয়ে- মুক্তিপিয়াসী মানবের কানে কানে- প্রাণে প্রাণে- আশাজাগানিয়া প্রতীতিতে: ”শীতের রাতে যেটাকে কাশ্মীরি শাল বলে বার্তা পেয়েছিল জনপদ, ভোরের আলো ফোটার আগেই দেখা গেল, এ হলো সেই নেকড়ে যে মোষের চামড়া গায়ে জড়াতে জানে। ধার্মিকের ভান করে বেড রুমে ঢুকেছে জল্লাদ। ” কী কাশ্মির, কী আফগানিস্তান, কী বাংলাদেশে- বিশ্বের সকল তাপিত-পীড়িত-বিপন্ন জনপদের দিকে তাকিয়ে তিনি তখন বলে ওঠেন: ”রুমীর হাতে হাত রাখলেই অনুধাবন করি আমার পেছনের সীমা নিদের্শ করছে অতীত আর সামনে ভবিষ্যতের দেয়াল, মাঝখানে আমার অপেক্ষা ও অশ্র“র তাওয়াফ- যা এখন লাল হয়ে উঠেছে আমারই রক্তে।

খোদার কসম, এই রক্তপাতের কারণ সাম্রাজ্যবাদ। এখন প্রত্যয় হয়, প্রেমের পথকে নিরঙ্কুশ করার জন্যই ফুলের মৌসুমেও হাতগুলোতে উঠে আসছে তরবারি। ” বিশ্ববীক্ষা, স্বদেশচিন্তা, গভীর অন্তর্দৃষ্টি ও সংবেদনশীলতা থাকলেই একজন কবি উচ্চারণ করতে পারেন এভাবে: “তোমার ভিতরে আজ ঘুম নেই বাংলাদেশ, কেবল ঘুমের জন্য বোবা হাহাকার মাথা কুটে মরছে সর্বত্র- তুমি অস্থির তুমি ব্যাকুল তুমি উন্মত্ত। শিকড় থেকে ক্রমাগত আলগা হয়ে যাচ্ছে মাটি। টালমাটাল অস্তিত্ব থর থর কেঁপে উঠেছে।

ভয়ঙ্করভাবে বিস্ফোরিত তোমার দু চোখ বেয়ে বেয়ে নামছে অবিরত রক্তের ধারা। ... লজ্জায় তোমার ভোরের দোয়েল দেশ ছেড়ে গেছে। অপমানে মাথানত করে দাঁড়িয়ে আছে তোমার শ্বেত শুভ্র শাপলা। মায়ের জঠর থেকে নেমেই এখন যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাচ্ছে তোমার নবজাতক। আর প্রেমপ্রীতি বাৎসল্য ভ্রাতৃপ্রেম সব সব কিছু অন্তঃসারশূন্য চৈত্রের বাতাসে বাতাসে বিলাপ করে ফিরছে।

” এই বাংলাদেশে, এই পৃথিবীতে, এই নখরাক্রান্ত চারপাশে-মানুষ, প্রকৃতি, নদী ও নৈতিকতার মৃত্যুর উৎসবে-দমবন্ধ ও আক্রান্ত প্রতিবেশে- ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে পুড়িয়ে মারার যজ্ঞের লেলিহান আগুনে: কেউ একজন সব সময়ই থাকেন চিৎকার করে বলবার জন্য, প্রতিবাদের জন্য, জাতিসত্ত্বা ও ইতিহাসকে আঁকড়ে ধরবার জন্য, দ্রোহ ও সংক্ষোভের দাবানল জ্বালানোর জন্য। কবি আবদুল হাই শিকদার ক্রমাগত এ কাজটিই করতে চেষ্টা করছেন। সমস্ত শক্তি ও সাহসের যুথবদ্ধ প্রত্যয়ে বার বার বলছেন: “আসুন ঘৃনা ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আসুন বারুদ ও রক্তপাতের বিরুদ্ধে আসুন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমরা সবাই দাঁড়িয়ে যাই যেভাবে ইউরোপীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন গাজী সালাহউদ্দীন আর আমাদের প্রতিটি কবিতা অর্জন করুক আশ্চর্য দ্যুতি। ” মহাকালভেদী চিরায়ত মানবমুক্তির এই আবাহন সাফল্যের স্বর্ণশিখরে পৌঁছুবেই। মুক্তি ও পুনরুত্থানের স্বপ্ন সফল হবেই।

পীড়নের অমানিশা শেষে আসবেই কাক্সিক্ষত সকাল। বাংলাদেশ এবং অবশ্যই সারা বিশ্ব জেগে ওঠবে শোষণহীন প্রেমময় মনোদার্শনিক জাগরণে। বিশ্বাস, আত্মা ও শরীর স্বাধীন ও পবিত্র সত্ত্বায় মুক্ত বিহঙ্গের মতো সুকল্যাণের গান গাইবেই অরণ্য ও আকাশের সীমাহীন দিগন্তে। এবং একদিন কবি আবদুল হাই শিকদারের প্রত্যাশার সমান্তরালে সমাজের প্রতিটি কথা ও কবিতা অলৌকিক দ্যুতি অর্জন করবেই। তার জন্মদিনে শুভেচ্ছা।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।