আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

# শীতকালে ‌চায়ের আসর : যে কারণে চা ক্ষতিকর হয়ে ওঠে

মাতৃগর্ভে শিশুর প্রথম পদাঘাত মাতৃত্বের প্রথম স্বাদ
চা উপকারী। শুধুমাত্র রান্নার ক্রটির কারণে চা আমদের জন্য ক্ষতিকর হয়ে ঊঠছে । রেস্টুরেন্ট, স্টল, শহরের মোড়ে মোড়ে বা ফুটপাতে চা পান করছি- নিজের ক্ষতি করছি। কারণ, চা যেভাবে রান্না করা উচিত, এসব স্থানে কখনোই সেভাবে রান্না করতে দেখিনাই। কিভাবে উপকারী চা ক্ষতিকর হয়ে ওঠে- তা জানা দরকার।

# চায়ের রাসায়নিক উপাদান : চায়ের রাসায়নিক উপাদান হলো ২-৫% থেইন (এক ধরনের অ্যাকালয়েড), ১৩-১৮ % ট্যানিন (Tanin)। আরো অন্যান্য যা আছে সেগুলো আমাদের বিবেচ্য নয়। শুধুমাত্র থেইন (Theine ,ক্যাফেইন এর সমতুল্য) নামক রাসায়নিক উপাদানই চা-কে বিশ্বজুড়ে আধুনিক সমাজে এতটা জনপ্রিয় করে তুলেছে। কারণ, এ পদার্থের গুণ হলো এটি উদ্দীপক জাতীয় রাসায়নিক। মানুষ অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়লে এ পদার্থ স্নায়ুতন্ত্রকে সক্রিয় করে তোলে।

তাই চা পান করলে মানুষের কর্ম উদ্দীপনা ফিরে পায়। মানসিক অবস্থা সতেজ হয়। কাজ করতে ভালো লাগে। সমস্যা হলো ট্যানিন। শতকরা হারে লক্ষ্য করলে দেখা যায় এর পরিমাণ থেইনের তুলনায় অনেক বেশি।

এর স্বাদ চলতি ভাষায় বলা যায় কষ্টা ধরনের। এটি অনেকটা বিষাক্ত। এটি পচন রোধক পদার্থ। এজন্য মরা মানুষের লাশ কয়েকদিন রাখার প্রয়োজন হলে সে লাশের কফিনে চা পাতার গুড়া বিছিয়ে দেয়া হয়। আবার, ট্যানারি শিল্পের কারখানায় চামড়া যাতে পঁচে না যায় সেজন্য ট্যানিন ব্যবহার করা হয়।

এর বিষাক্ততা লঘু এবং খুব অল্প মাত্রায় চায়ের সাথে শরীরে প্রবেশ করে বলে তাৎক্ষনিক কোন প্রতিক্রিয়া আমরা অনুভব করি না। কিন্তু, ক্ষতিকর সব সময় ক্ষতিকরই। প্রতিদিন অল্প অল্প করে দেহে জমা হয়ে পরবর্তীতে হয়ত কোন ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু, আমরা বুঝতে পারি না। কোন্ পদার্থের ক্রিয়াশীলতায় আমাদের কিডনি বা অনুরূপ কোন অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হলো, আমরা রোগগ্রস্ত হয়ে পরলাম তার কারণ আমরা জানতে পারি না।

# যেভাবে চা দেহের জন্য ক্ষতিকারক হয়ে উঠে : অল্প তাপে থেইন চা পাতার গুড়ো থেকে বেড় হয়ে আসে। পক্ষান্তরে, তাপ বেশি হলে অর্থাৎ রান্নার সময় পানিতে চা পাতি দেয়ার পর জ্বাল (boil) করলে চা পাতি থেকে ওই বিষাক্ত রাসায়নিক ট্যানিন বেড় হয়ে আসে। তখন চা নামক পানীয় উপকারী না হয়ে দেহের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠে। সুতরাং, চা রান্নার বিজ্ঞানসম্মত নিয়ম হলো, প্রথমে পানি ফুটাতে হবে। ফুটানো শেষ হলে জ্বাল বন্ধ করে তাতে চা পাতি দিতে হবে।

পাতি দেয়ার পর কোন মতেই পানি ফুটানো চলবে না। ফলে শুধু থেইন নির্গত হবে। সেক্ষেত্রে চা সুগন্ধযুক্ত ও সুস্বাদু হবে। দেহে ও মনের জন্য হবে উপকারী। # নিজে নিজে পরীক্ষা করে দেখুন ট্যানিন নির্গত হয়েছে কি'না : দুইটি পাত্রে সমপরিমাণ পানি নিন।

পানি ইচ্ছা মত ফুটান। অত:পর উভয় পাত্রে পরিমাণমত ও সমপরিমাণ চা পাতি দিন। এখন একটি পাত্র চুলা থেকে নামিয়ে একটু নাড়িয়ে উপযুক্ত চিনি মিশিয়ে চা প্রস্তুত করুন। একটি ফ্লাস্কে রেখে দিন যেন ঠান্ডা না হয়। এবার অপর পাত্রটি আরো ফুটাতে থাকুন।

একটু বেশি করে ফুটাবেন বেশিক্ষণ সময় নিয়ে। তবে ফলাফল স্পষ্ট বুঝতে পারবেন। অনেকক্ষণ ফুটানোর পর সেই চা পূর্বের ন্যায় সমান পরিমাণ চিনি দিয়ে প্রস্তুত করুন। এবার প্রস্তুতকৃত উভয় চা আলাদা কাপে নিয়ে একই সাথে পাশাপাশি পান করুন। দুইটির স্বাদ তুলনা করার চেষ্টা করুন।

দুইটি স্বাদ আলাদা হবে। দেখবেন, অধিক ফুটানো চা স্বাদে কষ্টা লাগছে। এটি ট্যানিনের কারণে। # স্টলে যেভাবে চা রান্না হয় : বলতে গেলে প্রায় সকল স্টলেই যখন চা রান্না করে তখন দেখবেন, ছাকুনিতে চা পাতি দিয়ে চা তৈরি করার পর ব্যবহৃত ঐ পাতির কিছু পরিমাণ কেটলিতে ঢেলে দিচ্ছে। তাতে চায়ের রং গাঢ় দেখায়।

যত সমস্যা এখানেই। কেটলিতে পানি ও চা পাতি একই সাথে জ্বাল হচ্ছে। বুঝতেই পারছেন কি হবে ! এ কেটলির ফুটানো পানি যখন কাপে ঢালে তখন কয়েক চামচ নতুন পাতি আবার ছাকুনিতে নেয়। ফলে নতুন পাতি থেকে যে থেইন বেড় হয়ে আসে তাতে চা স্বাদ লাগে। কেটলির পানিতে যে ট্যানিন আছে তার কষ্টা স্বাদ বুঝতে পারি না।

কিন্তু, ক্ষতি যা হবার তা হচ্ছে। # শেষ কথা : বাসার মানুষকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে চা রান্না করা শিখিয়ে দিন। সেই চা খান। নিজেকে রক্ষা করুন। এর জন্য আলাদা কোন খাটুনি লাগে না, বিশেষ কোন জ্ঞানও লাগে না।

বেস্টুরেন্ট বা স্টলে চা খাওয়ার ফ্যাশান থেকে দূরে থাকেলে সম্মানের তেমন ক্ষতি হবে না। অন্তত: এড়িয়ে চলার চেষ্টা করলে নিজের জন্যই ভালো।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।