সৃস্টির সেরা মানুষ তার অতি ক্ষুদ্র জ্ঞানের সীমাবদ্ধতায় এ সুবিশাল মহাবিশ্বের অসীম অজানার কণাতম রহস্যও ভেদ করতে না পারার চরম ব্যর্থতায় স্রস্টাকেই অস্বীকার করার স্পর্ধা দেখায়!!!
২০০৪ সন।
কাছের বন্ধুরা সব একে একে ঢাবি,বুয়েট, কু্যেট, IUT, IBA, MIST তে ভর্তি হয়ে চট্টগ্রাম ছেড়ে গেল আর আমি মন খারাপ করে প্রতিদিন শাটল ট্রেনে চবি'তে Marketing এ ক্লাস করতে যাই। বেশীদিন কষ্ট করতে হলনা! পনেরদিন পরই জাবির BBA তে হয়ে গেল আর আমিও সানন্দে বাবা-মা-বোনের সাথে থাকা আনন্দের জীবন ত্যাগ করে রওনা দিলাম দেশের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির উদ্দ্যেশে ... "হায় আবাসন !!!" গল্পের ভূমিকার সমাপ্তি এখানেই চলুন মূল গল্পে প্রবেশ করা যাক ...
এক.
--- শুরূতে ঢাকায় খালাতোবোন আর দুলাভাইয়ের বাসায় উঠলাম। আম্মু-আপু সঙ্গে এল আমাকে বিদায় দিতে। তিনদিন পর নটরডেম কলেজের সামনে থেকে বাস ছাড়ার সময় আম্মু-আপু দুজনের চোখেই পানি দেখে অদ্ভূত এক অনুভূতি হয়েছিল..
একমাত্র পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় বলে কথা, ভেবেছিলাম ক্লাস শুরুর আগেই হলে উঠে যাব... প্রথম দিন হলে গিয়ে BBA'র বড় ভাইদের দেখলাম বেশ আন্তরিক-রাতে আসলেই seat এর ব্যবস্থা হয়ে যাবে!-আমিতো মহাখুশী কেননা বুঝতেই পারিনি শুধুমাত্র Rag দেবার জন্যই আমার এ সাদর আমনত্রণ!!!যাই হোক রাত তিনটা পর্যন্ত ৫০% মজার,৩০% Creative আর ২০% Adult--- Rag খাবার পরদিন কিছুটা বিরহ মনে ঢাকায় ফিরলাম।
তবে ভাগ্য ভালো সবচেয়ে নতুন হলে seat পড়ায় এক সপ্তাহের বেশী খালাতোবোনের দেবরের সাথে রুম শেয়ার করতে হলনা! যদিও তারা সবাই অনেক বেশী আন্তরিক ছিল কিন্তু একটু লাজুক (!) প্রকৃতির বলে কিছুটা uneasy ফিল করছিলাম..শুরু হলো আমার হল জীবন-
The most interesting part of my life….
দুই.
মাইরী বলছি, যারা জীবনে পাবলিক ভার্সিটির হলে কখনো থাকেননি-কল্পনাও করতে পারবেননা জীবনের কি বিশাল অভিজ্ঞতা থেকে তারা বঞ্চিত! কত অদ্ভূত পোলাপাইন! কত বিচিত্র রকমের মজা! বিশাল বড় আমলার ছেলে থেকে শুরু করে কৃষকের ছেলে-চরম নাস্তিক থেকে পরম তাবলীগ-রাজনীতি থেকে একশ হাত দুরে থাকা সুবোধ বালক থেকে শুরু করে চে গুয়েভারার গু(!) খেতেও রাজী এরকম মতাদর্শের বিপ্লবী-কিক্রেট/ফুটবল/টেবিল টেনিস সব খেলার Allrounder থেকে শুরু করে প্রেমের মাঠে Allrounder এর চেয়েও বেশী কিছু -বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন রকম মানুষের সাথে 24×7 সেইসব আনন্দের দিনরাত্রির সাড়ে চারবছর কখনযে পার করে ফেললাম বুঝতেই পারিনি! কখনো বটতলা,কখনো টংগের ঝুপরিতে বেহেশতী (believe me or not its true!!!) খাওয়া কখনোবা আমজনতার সাথে বিশেষ করে মাসের শেষের দিকে (যখন বাবার পাঠানো ৪০০০/- প্রায় শেষের দিকে) ডাইনিংয়ে ১২টাকার পাতলা ডাল দি্যে ভাত খাওয়া- বছরের ৩৬৫ দিনে জাবির ৭৩০টি সাংস্কৃতিক প্রোগ্রামের অনেকগুলোরই লাইভ দর্শন-নিজের সাইকেলে করে ক্যাম্পাসের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত চষে বেড়ানো(কখনোবা পেছনে Girlfirnd সহ!)- মিডটার্ম exam এর আগের রাতেও দুজনের ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়ানো অথবা মুক্তমন্চে নাট্যপার্বনের "কোর্টমার্শাল" নাটক দেখে ঘরে ফেরা-আমাদের বঙ্গবন্ধু হলে ভাসানী হলের ছেলেরা attack করতে এলে ছাদ থেকে দল বেধেঁ পাথর বৃষ্টি সৃষ্টি করা- common room এ world cup football/cricket অথবা বাংলাদেশের cricket match গুলো stadium এ live দেখার চেয়েও বেশী মজা করে দেখা- কোনটা ফেলে কোনটা বলি!
বাবামা'র অতি আদরের একমাত্র ছেলে হবার কারণে এর আগে কখনো বুঝতেই পারিনি স্বাধীন জীবনের এত আন্ন্দ!!!!!!!!!
"হায় আবাসন !!!" লেখাটি অপূর্ণ থেকে যাবে যদি আমার roommateদের সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে নাদেই! বিভিন্ন কারণে আমাকে তিনটি রুমে থাকতে হয়-সবগুলোই চার seat এর কিন্তু 1st room এ চারজন 2nd room এ তিনজন আর last semester এ seniorityর সুবিধা নিয়ে থাকতাম মাত্র দুইজন! roommateদের মধ্যে ছিল এক মুভি পাগল(যার কাছে আবার পুরো হলের best porn collection ছিল) বড় ভাই (যার মেজর বাবা বিডিআরদের হাতে দুঃখজনকভাবে নিহত হন)-, রেডিও আমারের RJ Iraj, চরম ধান্দাবাজ রাজনীতিবদ ছাত্র ইউনিউনের এক বিপ্লবী কমরেড, এক পরম তাবলীগ, মাদ্রাসা থেকে পাশ করা কিন্তু মসজিদ বিমুখ সাবেক আনন্দমোহন কলেজের ছাত্রফন্টের নেতা এক পরোপকারী (যিনি Computer Course করতে জাবিতে এসে seat না পেলেও আমার রুমে থাকত- but roommate হিসেবে best!)-এবং last semester এ ক্লাসের best Lover Boy!!!
অদ্ভূত নৈসর্গিক পরিবেশ আর অতিথি পাখির কলকাকলি-সব মিলিয়ে চট্টগ্রাম কলেজে HSC’র দুবছর চরম ফাকিঁবাজির এ দুদার্ন্ত পুরস্কার পেয়ে বিধাতার কাছে আমি আজীবন কৃতজ্ঞ!!!
তিন.
আরেক দারুণ অভিজ্ঞতার সাথে পরিচিত হলাম যখন সুযোগ পেলেই Chittagong চলে যেতাম! বেশীরভাগ সময়ই Surprise visit এর কারণে সবার আনন্দের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যেত আর শুরু হয়ে যেত প্রিয় সব খাবারের জোড় করে খাওয়ানোর স্বর্গীয় অত্যাচার!!! তবে আমি সবচেয়ে বেশী উপভোগ করতাম (কি নিস্ঠুর আমি!) ঢাকার বাস ছাড়ার মুহূর্তে আম্মুর বাচ্চাদের মত করে ফুপিঁয়ে কান্নার আর আব্বু-আপুর মন খারাপ করার সময়টি!!!
চার.
২০০৮ সন।
একাডেমিক কোর্স সব শেষ-নভেম্বর ০১ থেকে দেশের অন্যতম প্রধান করপোরেট এ ইর্ন্টানশীপ শুরু! সহপাঠীর সাথে প্রেমের বয়স তখন তিন বছরের বেশী-so একদিকে খুব দ্রূত job পাবার pressure অন্যদিকে "হায় আবাসন !!!"-জাবি থেকে প্রতিদিন ঢাকায় এসে কিভাবে কাজ করব!!! কিন্তু ভাগ্য সুপ্রসন্ন! বড় খালার মোঃপুরের বাসায় দোতলার ভাড়াটিয়া অক্টোবরের শেষেই বাসা ছেড়ে দিলে তিন মাসের জন্য ফ্রি থাকবো বলে উঠে পড়লাম! ঐ তিন মাসে cousin দের সাথে ফুর্তি করে বেশ ভালো সময় কাটতে লাগলো (শুধু রাতে ঘুমাতে গেলেই তিন মাস পর কি করবো "affair-job-আবাসন" নামক ত্রিমুখী দুঃশ্চিন্তা!!!)। আমার calculation ছিল সহজ-তিন মাসের ইর্ন্টানশীপ শেষে job পেলে বন্ধুদের সাথে বাসা ভাড়া নেব নাহয় বেকার জীবনটা বঙ্গবন্ধু হলে গিয়েই উপভোগ করব তাই খালাকে বললাম জানুয়ারী থেকেই to-let নোটিশ দিতে এবং ফেব্রুয়ারী থেকে বড় খালার ঐ ফ্ল্যাট এ থাকার জন্য এক ব্যাটা দুই মাসের Advance
দিয়ে গেল!!! ভদ্রলোককে ব্যাটা বললাম কিছুটা রাগ করে কেননা তার আবির্ভাবের পরপরই "হায় আবাসন !!!" গল্পের কাহিনীতে কিছুটা প্যাঁচ লাগে যদিও সেই প্যাঁচটাই আমার জন্য এপ্রিলে শাপেবর হয়েছিল!!!! সেই শাপেবর হবার কাহিনী শোনাব একটু পরে ...
পাঁচ.
তিন মাসের ইর্ন্টানশীপের সময় ঐ organization এই যেন job হয়ে যায় এ জন্য বেশ ভালোই কষ্ট করেছি আর Boss দেরও positive attitude আমাকে আশাবাদী করে তোলে। জানু্যারীর শেষ দিকে আমাকে বলা হলো মার্চ মাসে কয়েকজন fresh Grdauate (BBA) recruite করা হবে এবং আমাকে interview তে ডাকা হবে-এখন আমি চাইলে একমাস(ফেব্রুয়ারীতে) ইর্ন্টানশীপ extend করতে পারি!"হায় আবাসন !!!" এর কারণে একবার ভেবেছিলাম করবোনা, পরে ভাবলাম ইর্ন্টানশীপ extend না করা যদি interview তে negative impact ফেলে!!! আমার decision নেওয়া খুব সহজ হয়ে যায় বুয়েটের শেরেবাংলা হলের তিন বন্ধু খোরশেদ,আসাদ আর রাশেদের কল্যাণে!!! বিপদে বুয়েট বন্ধুর পরিচয়! so journey from Mohammadpur to Sher-e-Bangla Hall, Buet!!! এক মাসের জন্য illegally room no 406 এ উঠে গেলাম...
ছয়.
একমাস থাকবো বলে উঠলেও আমাকে Feb-March দুই মাস Buet থাকতে হয়েছিল-কারণটা সংক্ষেপে বলি, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে টানা চার মাস জাবিতে না থাকায় আমার হলের seat বেদখল হয়ে যায় যদিও পাশ করা পর্যন্ত ঐ seat আমার নামে registered! So what!- এক পাবলিক ভার্সিটিতে আমার হলের seat বেদখল হয়েছেতো কি হয়েছে-আমি নিজেই তখন আরেক পাবলিক ভার্সিটিতে খোরশেদের seat এ illegally থাকছি (বাসা ঢাকায় হওয়ায় ও খুব বেশী হলে থাকতোনা-ভাগ্যিশ!!!!)। Buet এর দুই মাস ছিল শুধুই দাবা খেলার মাস! আমার আর রাশেদের শত শত Chess match (যার বেশ কিছু আবার Classic match) এর সাক্ষী হয়ে ছিল CSE’র আসাদের বানানো দুর্দান্ত Chess Clock Software টি!!!
সাত.
Job খোঁজার পাশাপাশি নতুন আরেকটা কাজ বাড়লো বিভিন্ন ছাত্র-কর্মজীবি মেসে ঘুরে খোজঁখবর নেওয়া!ঢাকা শহরের মেসগুলোর অবস্থা এতটাই ভয়াবহ যে, affair না থাকলে চাকুরীর গুষ্টি কিলিয়ে পারলে আমি তখনই ঘরের ছেলে ঘরে (Chittagong) ফিরে যাই! একদিকে ঐ organization এ 1st interview'র দিন পাঁচেক পর final interview দেবারও দুসপ্তাহ পার হয়ে গেল অপর দিকে Buet এ নতুন ছাত্রদের জায়গা দিতে ২০০৩ ব্যাচের সবাইকে এপ্রিলের শুরুতেই হল ছাড়ার নোটিশ!!! মন খারাপ করে Chittagong যাবার প্রস্তুতি নিতে শুরু করলাম।
যে ঢাকার Jam-life চরম অসহ্য লাগতো সে ঢাকার জন্যই কেমন যেন খারাপ লাগতে লাগল আর অপ্রাসঙ্গিক বিধায় দুজনের মানসিক অবস্থার কথা নাইবা বললাম। যেদিন Back করার কথা তার আগের দিনে ATM Booth এ Card আটকে গেল! ভেবেছিলাম যাত্রা কদিন পেছাল মাত্র! কিন্তু এভাবে মন খারাপ করে আমার ঢাকা ত্যাগ যে "হায় আবাসন !!!" গল্পের মূল লেখকের (বিধাতার) ইচ্ছার বিরুদ্ধে সেটা তখনো জানতামনা...
আট.
এর পরের ঘটনাগুলো খুব দ্রুত ঘটতে থাকলো-২৩শে মার্চ Job Confirmation call,পরদিন contract sign আর তারপরদিন joining-একদিনেই চার বন্ধু মিলে নিকুন্জতে বাসা নিয়ে নিলাম (দুজন বুয়েটের ফ্রেন্ড আর অপরজন জাবির সেই lover boy roommate)!এরপর নিশ্চিন্ত মনে মাত্র এক দিনের জন্য Chittagong দিলাম ছুট! ৩রা এপ্রিল তিন বন্ধুর A journey by pick-up frm Buet to Nikunja-2 এর মাধ্যমে আমার যাযাবর জীবনের আপাত সমাপ্তি... আমাদের নতুন ঠিকানার নাম দিলাম House of 4A (কারণ দুজনের Aktel, একজনের ACI আর অপরজনের আশ্রয় তখন Asiatic এ)।
নয়.
নতুন অভিজ্ঞতা! Bachelor Job Holder life! Regular বুয়ার রান্না খেতে খেতে বিরক্ত হলে নিজেরাই experiment শুরু করা-Tommy Miah’s Tea Bar আর Fire on Ice এ গিয়ে সুযোগ পেলেই চারজনের খাওয়াদাওয়া করা! এক বছর চরম ফুর্তিতে কাটানোর পর ২০০৯ এর এপ্রিলে Best Friend তাওসিফ ঢাকায় ভালো job নিয়ে চলে আসলে মোঃপুরে দুজনে মিলে একটা বড় বাসা নিয়ে নিলাম (সারা দিনে অনেক নাটকের পর একটা বাসা পেলাম-সে নাটকের গল্প আরেকদিন)!দুই Best Friend চরম সুখে দিন কাটানোর মাঝেই হুট করে মে মাসের একদিন আমার সেই সহপাঠীনির সাথে engagement হয়ে গেল এবং বিবাহের দিন ধার্য হইলো সেপ্টেম্বরে! যেহেতু মোঃপুর থেকে দুজনের অফিসই বেশ দুরে হবে তাই শুরু হলো এবার বউকে নিয়ে উঠার মত বাসা খোজাঁ.."ভালোবাসিবার লাগি মোর ভালো বাসা চাই.."
দশ.
অতঃপর বিবাহের দেড় মাস পূর্বেই আমার নতুন বাসায় উঠে গেলাম। আব্বু-আমমুকে Ctg থেকে উড়িয়ে এনে Project বালতি টু পর্দার সফল বাস্তবায়ন করলাম। আল্লাহ্'র রহমতে সব আয়োজন সফলভাবে হবার সম্পন্ন হবার পর আব্বু-আম্মু-আপু-দুলাভাই সবাই একে একে Ctg চলে গেল।
দুজনের এই তিন মাসের সংসারে ঢাকার অন্যতম বড় residential project এর ভাড়া করা এগারো তলার ফ্ল্যাটের বারান্দা থেকে স্বামী-স্ত্রী যখন view দেখি,মনের অজান্তেই অনেক সময় মনে পড়ে যায় সেই ভয়াবহ মেসগুলোতে ঘুরাঘুরি করার ভয়ংকর দিনগুলোর কথা.. "হায় আবাসন !!!" গল্পের নায়কের কথা...
এখন অপেক্ষা শুধু বাবা-মাসহ এক সাথে থাকার দিন গোনার অবসানের..
আমার সর্বশেষ আবাসন..
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।