চাতক পাখির মত আজও চেয়ে আছি একজন অকৃত্বিম বন্ধুর অপেক্ষায়...
দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী ঝর্ণা। প্রতিদিনের মত আজও কলেজ থেকে ফিরছিল। বাড়ীর কাছাকাছি এসে হঠাৎ থমকে দাড়ালো ও। এদিক ওদিক দেখে আবার চলতে লাগলো সামনের দিকে। খুব হলে দশ কদম (পা) সামনে এগিয়ে জঙ্গলের মত, ঘন ঘাসেভরা একটা জায়গায় থেমে গেল।
খানিকটা নিচু হয়ে, দশ থেকে পনের সেকেন্ড পর উঠে দাড়ালো। অতঃপর, খুব দ্রুত হেটে বাড়ীর দিকে চলে গেল।
গোধূলী লগ্ন পেরিয়ে যাবে যাবে। এমন সময় ঠিক ঐ জায়গাটায়, যেখানে ঝর্ণা দশ থেকে পনের মিনিট অবস্থান করেছিল। সেই জায়গায় এসে দাড়ালো এক যুবক।
যুবকও সেখানে দশ-পনের সেকেন্ড দাড়িয়ে চলে গেল আপন গন্তব্যের দিকে।
রাত দশটা ত্রিশ মিনিট, দেয়ালে টাঙ্গানো ঘড়িটা জানিয়ে দিল টিক টিক করে। শীতের রাত। বেশ শীতও পড়েছে এবার। এরপর, এমন এক গ্রাম, যেখানে নেই বিদ্যুত, নেই ডিস এন্টিনা, নেই ইন্টারনেট।
অর্থাৎ একেবারে অজপাড়াগাঁ। আশে পাশের সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। ঝর্ণার বা-মাও ঘুমিয়ে পড়েছে কখন। ঘুম নেই কেবল ঝর্ণার দু’চোখে। ও কেমন উতলাভাবে কখনও ঘরের ভিতর পায়চারি করছে।
আবার কখনও ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলছে।
হঠাৎ একটা কুকুরের ডাক শুনতে পেল ও। যা ভেসে আসছিল ওর ঘরের ডান দিক থেকে। ওর ভিতরটা কেমন ধ্বক্ করে উঠল। যদিও ঝর্ণাদের বাড়ী বা তার আশেপাশে কেউ কুকুর পালন করেনা।
দুই-তিনবার শুনার পর কান খাড়া করে, অর্থাৎ সচেতন হয়ে শোনার চেষ্টা করলো, আসলেই কি কুকুর ডাকছে? এবার ও স্পষ্ট বুঝতে পারছে, এটা মূলত কুকুরের আওয়াজ নয়, বরং কেউ কুকুরের আওয়াজ নকল করার চেষ্টা করছে কিন্তু পুরোপুরি করে উঠতে পারছেনা। আওয়াজটা ধীরে ধীরে গভীর হতে লাগল। তার মানে ওর ঘরের দিকেই আসছে মানুষটা। ঝর্ণা খুব সতর্ক পায়ে সামনে এগিয়ে ঘরের দরজা খুলে দেখার চেষ্টা করলো, লোকটা আসলে কে? এসব ভাবতে ভাবতে ভিতরে প্রবশ করলো লোকটা।
দরজা বন্ধ করে দু’জনে বসলো খাটের উপর।
প্রথমে মুখ খুল্লো ঝর্ণা। কি ব্যাপার হাসান? তুমি এত দেরি করলে কেন?
দাড়াও একটু রেস্ট নিয়ে নেই। একটু দম নিয়ে হাসান বলতে লাগলো...আগে আমায় বলো, আমি ওখানে লেখেছিলাম রাত নয়টা। তুমি দশটা লেখলে কেন?
একটু বোঝার চেষ্টা কর। বাবা-মা পাশের ঘরে ঘুমিয়েছে, জেগে যাবে।
সুতরাং আস্তে কথা বল। আর এত অধৈর্য হও কেন? আমাদেরতো প্রতি সপ্তাহে দু’একবার দেখা হচ্ছে। তাইনা?
আচ্ছা শুন, এভাবে লোক সমাজ ফাকি দিয়ে আর কতদিন আমি এভাবে মাটিতে লিখে যাবো একটা, আর তুমি তা মুছে ফেলে লিখে দিবে আরেকটা। আমার বুঝি কষ্ট হয়না? যদি কোনদিন বৃষ্টিতে আমার লেখা মুছে যায়?
আমার জন্য এটুকু কষ্ট করতে পারবেনা? তাহলে কেমন প্রেমিক হলে তুমি?
ওকে মহারাণী! জো হুকুম, এরপর থেকে তুমি যেমন বলবে, তেমনি হবে।
এই আর মাত্র কয়েকটা মাস।
আমার পরীক্ষা শেষ হলে........ঝর্ণার মুখ লজ্জায় লাল হয়ে গেল।
পরীক্ষা শেষ হলে....কি? এহ্ ন্যাকা বোঝেনা। হাসানের নাটে একটা মৃদু টোকা দিয়ে ঝর্ণা বল্লো...আমােদর িবেয়।
ঝর্ণা ও হাসান প্রায় সতের থেকে আঠারো মাস যাবৎ এভাবে দেখা করে আসছিল। আর প্রেম করছিল চুটিয়ে।
খুব সুন্দর আর স্বপ্নের মতই কেটে যাচ্ছিল ওদের সময়গুলো।
কারো ভাল কেউ দেখতে পারেনা। এই প্রবাদটা খুব পরিচিত আমাদের এলাকায়। একদিন ঝর্ণার এক কাজিন যে, মনে মনে ভালবাসতো ওকে। বিষয়টা লক্ষ্য করলো।
ওর নাম হচ্ছে সোহেল। ও অপেক্ষা করতে লাগলো, কিভাবে ওদের হাতে-নাতে ধরা যায়।
পরের সপ্তাহে ঝর্ণা ঐ জায়গাটায় চলে গেল ও দেখতে পেল, বালুকাময় মাটির উপর লেখা আছে রাত দশটা। ঝর্ণা সেটা মুছে ফেলে লিখলো রাত এগারোটা। অতঃপর বাড়ীতে চলে গেল।
এদিক দিয়ে ঝর্ণার কাজিন সোহেল সব বুঝে প্লান করতে লাগলো মনে মনে যে, কিভাবে শুরুটা করবে। সোহেল গোপনে ও বন্ধু-বান্ধব ও কয়েকজন প্রতিবেশীকে ব্যাপারটি জানিয়ে সিদ্ধান্ত নিল রাত এগারোটায় ওদেরকে হাতে-নাতে ধরে অপমান করবে, মারবে ও অবশেষে....
আজ হাসান ফুরফুরা মেজাজে রাত সাড়ে দশটার দিকে রওয়ানা দিল ঝর্ণাদের বাড়ীর উদ্দেশ্যে। যথা সময়ে হাসান গিয়ে পৌছল ঝর্ণার ঘরে। ওরা যখন ভিতরে খোশ গল্পে মশগুল, ঠিক সে সময় সোহেল তার নীল রকশা নিয়ে ব্যস্ত।
সোহেল লোকজন নিয়ে ঝর্ণার ঘরের তিনও দিক ঘেরাও করে দাড়িয়ে রইল।
কেননা, ওর ঘরের দু’পাশে ওর দুই চাচার ঘর, সামনে সরু রাস্তা আর পিছন দিকে একটা বড় পুকুর। ও বের হবে, আর হাতে-নাতে ধরবো। এমন একটা ভাব বিরাজ করছে ওদের মাঝে।
হঠাৎ ঘরের পিছনটায় অর্থাৎ পুকুরে কেউ ঝাপিয়ে পড়ার আওয়াজ হলো। সবাই ভাবলো, বেটা পিছনের দরজা দিয়ে ভেগে অবশ্যই পুকুরে পড়েছে।
সবাই সেদিকে মনোনিবেশ করলো। কেউ কেউ তখনি নেমে গেল পানিতে। আবার কেউ কেউ পাড়ে দাড়িয়ে কমান্ড দিতে লাগলো। এভাবে বেশ কিছুক্ষান চল্লো খোজাখুজি। অতঃপর কাউকে না পেয়ে ওরা ঝর্ণার ঘরের দিকে চলে এলা।
ওরা লক্ষ্য করলো, ঘরের ভিতরে ঝর্ণা ছাড়া আর কেউ নেই। এমনটি কি করে সম্ভব? সবাই থমকে গেল। কারো মুখে কোন শব্দটুকু নেই। অবশেষে সোহেল মাথা নিচু করে সবাইকে নিয়ে প্রস্থান করল।
এই ঘটনার পর ওরা খুব সতর্কতার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে লাগল।
এভাবে কেটে গেল আরো কয়েকটি মাস।
আজ হাসান ও ঝর্ণার বিয়ে। যথা নিয়মে, সামাজিক রীতি-ণীতে শেষ করে ওরা যখন সুসজ্জিত বাসর ঘরে এসে সবেমাত্র বসেছে। এমন সময় সোহেল এসে হাজির।
কি খবর শালা মিয়া?
আচ্ছা দুলা ভাই! বলেনতো, ঐদিন রাতে কি ঘটেছিল?
আসলে সেদিন আমি তোমার বোনের ঘরেই ছিলাম।
আমরা যখন বুঝতে পারলাম যে, তোমরা আমাদেরকে ঘেরাও করেছো, ঠিক তখন তোমার বোন ঘর থেকে পাটা (মশলা পেষার যন্ত্র) বের করে পুকুরে ফেলে দেয়। তোমরা সবাই চলে যাও পুকুরে। এদিক দিয়ে আমি উধাও...
বুঝলা......? একথা বলে প্রচন্ডবেগে হাসতে লাগলো হাসান। ওর হাসি দেখে হাসলো ঝর্ণা, হাসলো সোহেল আর হাসলো পুরা ধরণী...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।