ঘুনে খাওয়া হৃদয়টাকে নিয়ে চলতে চলতে আজকাল খুব ক্লান্ত লাগে নিজেকে..
আকাশের বিছানায় কয়েকটি প্রজাপতি ঘুমিয়ে আছে। তাদের চোখে-মুখে প্রশান্তির উজ্জ্বল ছায়ায় একটা অন্যরকম সুখ সুখ ভাব ফুঁটে উঠছে। আঁধারের ফুলগুলোও তাদের নিত্যদিনের শেষ কাজগুলো সেরে ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিছুক্ষণ আগে একটা বাদলা ঝড়ের যে আবহ তৈরী হচ্ছিল তাও থেমে গেছে। আস্তে আস্তে চারিদিকে নিশ্চুপ নিরালার সেই চির পরিচিত সুরটি বাঁজতে শুরু করেছে।
আর কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমের দেশে তলিয়ে যাবে সারা পৃথিবী, শুধু আমি ছাড়া।
প্রতিরাতের মতো আজও শুরু হয়ে গেছে বুকের কবরে মাছ চাষের গল্প। দখিনা বাতাসে ফুরফুরে মেজাজে এক দৌড়ে চলে গেলাম নিজস্ব বেলাভূমিতে। সমুদ্র জলে স্নান সেরে যেই না সৈকতে দাড়ালাম, অমনি দেখতে পেলাম হতাশার নৌকাগুলো কি প্রবল বেগে ছুটে চলেছে নিরাশার খোঁজে। কেন জানিনা, এক মূহুর্তের মধ্যে ভেতরের বাতাস উল্টো স্রোতে বইতে শুরু করল।
আমি আস্তে আস্তে কবর হতে বেরিয়ে এলাম।
স্বপ্নে দেখা স্বপ্নগুলো
স্বপ্ন হয়েই থাকে
নিঃস্ব এই বুকে,
নিঃস্ব বুক নিঃস্ব আকাশ
নিঃস্ব মেঘ ঢাকে
নিঃস্ব আমি দুখে।
দুঃখগুলোও আমার বুকে
থাকে যেন মহসুখে,
স্বপ্ন যায় ঝরে,
সুখের তুমিও গেলে চলে
ফুলমালাটা পায়ে দলে
শেষ আমায় করে।
বুকের মাঝে হৃদয় যেথা
স্মৃতির ব্যথায় কাতর সেথা
কান্না জলে ভেসে,
আমি পাগল তবুও খুঁজি
তোমার মাঝেই প্রাণটা বুঝি
শেষ হয়ে যাই হেসে।
ভোরের সূর্যোদয়ের পূর্ব নিঃশ্বাসের শব্দে কয়েকটি পাখির ঘুম ভেঙে গেল।
তারা কিচির মিচির শব্দে সুস্বাগতম জানাচ্ছে মহারাজা সূর্যকে। এরই ফাঁকে দুটি ধবধবে কালো কাক কোথা হতে যেন উড়ে এসে বারান্দার গ্রীলে বসল। কিছুক্ষণ পরপর তাদের কর্কশ হৃদয় হতে ভেসে আসতে লাগলো কা কা ধ্বনির তীক্ষ্ণ উল্লাস।
মাথাটা কেমন যেন ঝিম ঝিম লাগছে। মাঝে মাঝে ভেতর হতে ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাকও শুনতে পেলাম।
কেমন অদ্ভুত লাগে সেই ডাক। মনে হয় তারা যেন কি বলতে চায় আমায়। কিন্তু তাদের সেই ধ্বনির অর্থ বুঝতে পারি না আমি। কি মনে করে গোসল খানায় ঢুকে কয়েক ঝাপটা পানিতে মুখ চোখ ধুয়ে নিলাম।
মনের গহীনে নিজস্ব চাঁদটি কেমন বীভৎস দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
আর আমি আনমনে নদীর উজান ঠেলে ছুটে চলেছি অজানা কোন এক গন্তব্যের খোঁজে......................
ফেনায়িত বাতাসের বুকে ভর করে আসা অভিশাপের বিভৎস কান্নার রোলধ্বনিতে মৃত কুয়াশার বিন্দু বিন্দু মিথ্যে প্লাবনের সুর। কংকালসার অশ্রুপাখি রোমাঞ্চকর স্মৃতির ফাগুনে রক্তডানায় উড়ে যায় পুরাতন যুদ্ধ ব্যথার দেশে।
জগতের দুঃখ-সেতারে ঘুমন্ত সুরেলা পাখিরা কলরব তোলে নতুন জীবনের প্রত্যাশায়। নিঃশ্বেষিত আঁধারে ঝলসে যায় চন্দ্রালোকের শেষ কয়েক ফোটা জলপাথর। জীবন-নৌকার স্নিগ্ধ শরীরে ঘুন পোকার অবিরাম বিচরণে ধ্বংসের নোনা রক্তবৃষ্টির আগমন।
মৃত মনাঞ্চলে যন্ত্রণার লাল-হলুদ আর্তনাদে বিষাদ কান্নার চাষ।
স্বপ্নের ঘুড়িগুলো গুন গুন গান গেয়ে উড়ে যাচ্ছে দূর আকাশের অন্তরালে। চারিদিকে নিশ্চুপ আঁধার লক্ষী ছেলেটির মতন কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে তা বোঝা যায় নি। ঘড়ির কাঁটাটিও ক্লান্ত ভীষণ। কিছুক্ষণ পর পর সেও আনমনে ঢলে পড়ছে ঘুমের নিভৃত কোলে।
সময়ের নদীতে তাই ভাঁটার ছাঁপ স্পষ্ট। জানালা বেয়ে ঝির ঝির বয়ে আসছে দখিনা বাতাসের ঢেউ।
মিথ্যে স্মৃতির বৃষ্টিতে ভিঁজতে ভিঁজতে ধুসর ক্যানভাসের গায়ে নানা বর্ণের রঙের খেলায় কারও ছবি এখন আর আঁকা হয় না আমার। উদাসী মনের সীমাহীন খোলা আকাশটাতে কোন পাখির উড়ে যাওয়ার শব্দ, শেষ শুনেছি কবে মনে নেই। সুরেলা ভেঁপুর অবিরাম আহবান এখন আর টানে না আমায়।
পৃথিবী জয় করবার রঙিন স্বপ্ন এখন আর দেখি না আমি..... সামান্য তোমাকেই জয় করতে পারিনি, আর কোথায় ঐ বিশাল পৃথিবী। এখন আমার সময় কাঁটে শুধুই সময় গুনে গুনে। আমার সমস্ত বিশ্বাসগুলো একে একে মরে গেছে সব। অল্প কয়েকটি স্মৃতির ঘাস আকড়ে বেঁচে আছি। গতকাল হতে সেগুলোও মরতে শুরু করেছে।
তারপরই আমার পালা.........
তবুও স্বপ্নের রথ চলতে থাকে, চলতে চলতে বলতে থাকে.. ভালোবাসার কথা, স্বপ্নের কথা, তোমার কথা.. ঘুমন্ত কোকিলের কুহু কুহু গান তবুও গুন গুন সুরেলা বাতাসে ভাসতে থাকে, হাসতে থাকে খিল খিল মধুময় স্বপ্নগুলোকে, কথাগুলোকে ঘিরে ঘিরে.........
কালো কালো দুঃখগুলো
এখনও আমায় ডাকে,
ভালোবাসার নীল বিষেরা
এখনও হৃদয় ঢাকে।
সুরেলা সেই পুরোনো সুর
এখনও কানে বাঁজে,
ব্যথার ফুলে হৃদয় আমার
এখনও তেমনি সাঁজে।
এখনও মোর বুকের কোনে
বেদনার ফুল ফোঁটে,
এখনও তেমনি কান্নার জল
আমারি চোখেতে জোটে।
সারাদিন পরে এখনও যখন
বাড়িতে আমি ফিরি,
কোমল ক্লান্ত স্মৃতির বাতাসি
আমারে ধরে ঘিরি।
আমি যে তখন আর পারি না
প্লাবনে যাই ভেসে,
অশ্রুমালা গাল বেয়ে পড়ে
করুণ হাসি হেসে।
এখনও আমি তোমার স্মৃতিতে
তেমনিই ডুবে রই,
এমনি একদিন শেষ হয়ে যাবে
জীবনের যত হইচই।
থাকবে বেঁচে স্মৃতির পাখি
থাকবে প্রেমের দুখ,
থাকবে এই বিশ্ব জমিন
থাকবেনা শুধু সুখ।
সুখ যে যাবে তোমার বাড়ি
আমায় সাথে নিয়ে,
সুখ কে মোরা স্বাক্ষী মেনে
করবো সুখের বিয়ে।
সেই বিয়েতে বাঁজবে সানাই
বাঁজবে সুখের সুর,
জীবন কষ্ট ব্যথার গ্লানি
সব যে হবে দূর।
আমার মনের গহীন কোনেতে
বসাবো শান্তি মেলা,
সেই মেলাতে স্বর্গেরও খোঁজে
ভাসাবো মোদের ভেলা।
অবশেষে আমি পাবো যে হেসে
আমারি স্বর্গের খোঁজ,
তোমারি মাঝে পাইলাম তারে
স্বপ্ন স্বর্গ হররোজ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।