কেবল একজন নারীকে ভালবাস বধু হিসেবে
আমার মনে হচ্ছে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতীক বিমানবন্দর চালুকরার উদ্দেশ্যেই জিয়া আন্তর্জাতীক বিমানবন্দর এর নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। আড়িয়াল বিলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতীক বিমানবন্দর চালু হলে শাহজালাল আন্তর্জাতীক বিমানবন্দর এর কোন মুল্য ও হয়ত থাকবেনা।
এই অংশটুকু পত্রিকা থেকে নেয়া
বঙ্গবন্ধুর নামে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের তোড়জোড় বেশ কিছুকাল ধরেই চলছে। আওয়ামী লীগ এবার ক্ষমতায় এসে ‘জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর’-এর নাম পাল্টে ‘শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর’ করার পর থেকেই এই উদ্যোগ নিতে দেখা যায়। উল্লেখ্য, ‘বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর’ নির্মাণ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী মেনিফেস্টোয় ছিল না।
প্রথমে জানা গিয়েছিল, এটি ময়মনসিংহের ত্রিশালে হবে। এরপর টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জ জেলার নানা স্থানের নাম উঠে আসে। এখন পত্রিকার প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে, মুন্সিগঞ্জ ও ঢাকা জেলার আড়িয়ল বিলে এই বিমানবন্দরটি নির্মাণ করা হবে (দ্য নিউ নেশন, ২০.১২.২০১০)। প্রধানমন্ত্রী নিজ তত্ত্বাবধানে ৫০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষ বিল্ড-ওউন-অপারেট-ট্রান্সফার (বুট) ভিত্তিতে এ বিমানবন্দরটি নির্মাণের জন্য সম্মতি দিয়েছেন। ছয় হাজার একর জমির ওপর ‘বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর’সহ ‘বঙ্গবন্ধু নগরী’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২৫ হাজার একর জমি সত্বর হুকুমদখল করার জন্য ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পত্রিকার প্রতিবেদনে জানা যায়, প্রকল্পটির ফিজিবিলিটি স্টাডির জন্য কনসালট্যান্ট নিয়োগ করা হচ্ছে। প্রশ্ন হলো, সমীক্ষা না করেই প্রকল্পটির জন্য জমি হুকুমদখলের আদেশ দেওয়া হলো কেন?
উত্তর একটাই হতে পারে, তা হলো আওয়ামী লীগ সরকার আড়িয়ল বিলেই বিমানবন্দরটি নির্মাণ করতে চাইছে এবং ফিজিবিলিটি স্টাডিতে সেটাই কীভাবে করা সম্ভব, তা বলে দেওয়া থাকবে। তবে পত্রিকার প্রতিবেদনে জানা যায়, বিমানবন্দরটির জন্য একটি প্রি-ফিজিবিলিটি করা হয়েছে, যেখানে আগামী চার-পাঁচ বছরের মধ্যে এ রকম একটি বিমানবন্দরের বিশেষ প্রয়োজনীয়তা প্রকাশ পেয়েছে। কীভাবে এই প্রয়োজন প্রকাশ পায়? একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঘণ্টায় গড়ে ৬০টির মতো বিমান ওঠানামা করলে সেটি স্বাভাবিক ক্ষমতাসম্পন্ন বলা যায়, অথচ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বর্তমানে ঘণ্টায় গড়ে ১০টির বেশি বিমান ওঠানামা করে না। বলা হচ্ছে, নতুন বিমানবন্দরটি দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ায় বিমান চলাচলের পথে সিঙ্গাপুর বা দুবাইয়ের মতো ক্ষমতাসম্পন্ন হবে।
কোনো নিশ্চয়তা বা চাহিদা ছাড়াই এ ধরনের চিন্তা আকাশকুসুম কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়। তবে বঙ্গবন্ধুর নাম করে জনগণের ওপর অত্যাচার হবে, তাদের জমি দখল করে নিঃস্ব করে দেওয়া হবে এবং বড় প্রকল্পের হিসাবে অবশ্যই দুর্নীতি হবে পাহাড়প্রমাণ। ওই প্রি-ফিজিবিলিটি স্টাডিতে বিমানবন্দরের স্থান নির্দেশ করা না থাকায় প্রথমে ত্রিশাল, সেখানে বাধা পড়ায় বঙ্গবন্ধুর নিজ জেলা ফরিদপুর বা গোপালগঞ্জ, সেখানে জনগণের আপত্তি থাকায় এখন আড়িয়ল বিলে করার সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে। এখানেও স্থানীয় জনগণ যারপরনাই বাধা দিচ্ছে।
একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জন্য স্থান নির্বাচন যেসব চাহিদা পূরণ সাপেক্ষে হওয়া উচিত, তা হলো ১. স্থানটি বন্যার প্রকোপ থেকে মুক্ত উঁচু ভূমির ওপর হতে হবে, ২. এলাকার ভূগঠন শক্ত মাটির ভিত্তিতে গড়ে উঠতে হবে, ৩. স্থানটি অর্থনৈতিকভাবে কম গুরুত্বপূর্ণ হবে, ৪. প্রকল্পটি সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য হবে, এবং ৫. প্রকল্পটি পরিবেশবিরূপ হবে না।
সরকারের আদেশ অনুযায়ী বিক্রমপুর এলাকার ঐতিহ্যবাহী আড়িয়ল বিলের জলাভূমি অধিগ্রহণ করার জন্য তৎপরতা ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। উল্লেখ্য, বিলটি প্রতিবছর বন্যায় ১৫-২৫ ফুট পানিতে তলিয়ে যায়। তাই এখানে বিমানবন্দর ও বঙ্গবন্ধু নগরী করতে হলে সমগ্র এলাকা ২০-৩০ ফুট বালু দিয়ে ভরাট করতে হবে। তা ছাড়া স্যাটেলাইট ছবিতে এই এলাকার মাটিতে গভীর পিট কয়লার স্তর দেখা যায় বিধায় এখানে বিমানবন্দরসহ নির্মিত সব স্থাপনাই দেবে যাওয়ার সার্বক্ষণিক হুমকিতে থাকবে। ল্যান্ডিং বা টেক অব ওয়েট ৪০০ থেকে ৮০০ মেট্রিক টনসম্পন্ন আন্তর্জাতিক রুটে চলাচলকারী বিমানগুলোর ওঠানামার জন্য পিট কয়লার গভীর স্তরের ওপর বিমানবন্দর নির্মাণ ভাবাই যায় না।
আড়িয়ল বিল পূর্ববঙ্গের সবচেয়ে বড় জলাভূমি, যা বর্ষাকালে আমন ধান ও মাছের অফুরন্ত আধার। শীতে এখানে রবিশস্য ও বাম্পার বোরো ফসল হয়। কৃষির কারণে এলাকাটি অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তাই সামাজিকভাবে প্রকল্পটি গ্রহণযোগ্য হওয়ার কোনো সুযোগই নেই। পরিবেশ-বিরূপতার কথা বলাই বাহুল্য। আড়িয়ল বিল ধ্বংস হলে পুরো পূর্ববঙ্গের পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাবে।
অনেকে বলবেন, হংকং ও জাপান সাগরে বিমানবন্দর নির্মাণ করেছে। সেখানে পাথুরে ভিত্তির ওপর বালু ও মাটি ভরাট করে এবং অত্যন্ত ব্যয়বহুল কলাম দিয়ে পুরো বিমানবন্দরটিকে দাঁড় করানো হয়েছে। আড়িয়ল বিলের নিচে কোনো পাথুরে ভিত্তি নেই, বরং আছে পিট কয়লামিশ্রিত কাদামাটি। ভূগঠনের বিবেচনায় ত্রিশালে বন্যামুক্ত শক্ত মাটি, টাঙ্গাইল বা ফরিদপুরে বন্যামুক্ত বালিমাটি, গোপালগঞ্জ বা মুন্সিগঞ্জের বিলে পিট মাটি পাওয়া যায়। বিমানবন্দরের জন্য সাভারের দক্ষিণ এলাকা অথবা কেরানীগঞ্জের মধ্য এলাকাও বিবেচনা করা যেত।
এ দুটি এলাকা ভূমিদস্যুদের আগ্রাসনে ক্রমশ বালু ভরাট হয়ে দখল হয়ে যাচ্ছে। অথচ ঢাকার উপশহর হিসেবে এ দুটি এলাকার জন্য আধুনিক শহর পরিকল্পনা থাকা দরকার। তবে আমি মনে করি, আমাদের এখনই একটি নতুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের কোনোই প্রয়োজন নেই। বরং তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরকে পুনরুদ্ধার করে অভ্যন্তরীণ রুটে এবং শাহজালাল বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক রুটে ওড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট করে দেওয়া যেতে পারে। এ দুটি বিমানবন্দরে ট্রানজিট যাত্রীদের সহজেই বাসে করে আনা-নেওয়া করানো যাবে, কিন্তু নতুন বিমানবন্দরটি দূরে হলে তা সম্ভব হবে না।
এখন পুরো রাজধানীই ‘বঙ্গবন্ধু নগরী’তে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথাও উঠছে, যা এ মুহূর্তে কারোরই অভিপ্রেত নয়।
প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক: সাবেক মহাপরিচালক, পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়
লিংক:
আড়িয়ল বিলে বিমানবন্দর, সমীক্ষা না করেই
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।