আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মিগ ২৯ - সোভিয়েত স্টেট ওফ আর্ট ফাইটার

অলস মস্তিস্ক বহু বান্দরামীর উর্বর ভূমি
মিগ ২৯ একটি চতুর্থ জেনারেশনের সুপারসনিক জেট ফাইটার। এর প্রস্তুতকারক সোভিয়েত ইউনিয়ন। এটি সোভিয়েত ইউনিয়নের তৈরি জেট ফাইটার এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত এবং এটিকে সোভিয়েতদের স্টেট ওফ আর্ট হিসাবে বিবেচনা করা হয়। দীর্ঘদিন ইউরোপিয়ান কান্টিগুলোর ফিয়ার ফ্যাক্টর ছিলো এই মিগ ২৯। ভিয়েতনামে ফাইটার এয়ারক্রাফট নিয়ে ভালো ধাক্কা খাবার পরে আমেরিকা ১৯৬৯ সালে নতুন ফাইটার তৈরির জন্য কঠোর গোপনীয়তার "এফএক্স" নামে একটা প্রোগ্রাম হাতে নেয়।

এখান থেকেই হেভিয়েট ফাইটার হিসাবে এফ ১৫ এবং লাইট ওয়েট ফাইটার হিসাবে এফ ১৬ এর ডিজাইন হয়। ১৯৭০ এর দশকের মাঝামাঝি আমেরিকা তার নতুন ডেটাইম ফাইটার "এফ ১৬" কে তাদের ভবিষ্যত সর্ট এরিয়া মাল্টিরোল ফাইটার হিসাবে পরিচয় করিয়ে দেয়। F 16 সোভিয়েতরা ১৯৭০ এর দিকে আমারিকার "এফ এক্স" প্রোগ্রামের ব্যাপারে জানতে পারে। পাল্টা ব্যবস্তা হিসাবে সোভিয়েতরা PFI এবং LPFI নামে ২টা প্রোগ্রাম শুরু করে। এই ২ প্রাগ্রামের মধ্যে LPFI (Advanced Lightweight Tactical Fighter) এর দায়িত্ব দেয়া হয় মিকোয়ান ডিজাইন ব্যুরো কে।

যার মেইন টার্গেট ছিলো আমেরিকান এফ ১৬ কে কাউন্টার করতে সর্ট রেন্জের ডগ ফাইটের জন্য নতুন শক্তিশালী এবং ক্ষিপ্ত একটা ফাইটার তৈরি। ১৯৭৭ সালে মিগ ২৯ এর প্রথম ফ্লাইট আকাশে উড়ে। পুর্বের এক ইন্জিনের মিগ ২৩ এবং মিগ ২১ এর কিছু বাজে দুর্ঘটনার কারনে সোভিয়েতরা মিগ ২৯ এ ২টা ইন্জিন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়। এবং ২টা Klimov RD-33 afterburning turbofans ব্যবহার করে। এর মধ্যে আমেরিকান এফ ১৬ সার্ভিসে আসে, এবং সোভিয়েতরা এর ব্যাপারে বিভিন্ন ইনফরমেশন পায় যার বেশির ভাগই ছিলো প্রপাগন্ডা, কিন্তু সোভিয়েতরা সেগুলো বিশ্বাস করে বসে ।

ফলাফল হিসাবে মিগ ২৯ এর ডেভলপমেন্টের পিছনে জোর আরও বাড়িয়ে দেয়া হয় । ফলাফল মিগ সার্ভিসে আসার পরে আমেরিকা এবং পশ্চিমা দেশ গুলো ভালোই টাসকি খায় এর ফিচার দেখে। ১৯৮৩ সালে মিগ ২৯ সোভিয়েত এয়ার ফোর্সের সার্ভিসে আসে। ন্যাটো এর কমান্ড নেম দেয় "ফুলক্রাম" মিগ-২৯ মাল্টিরোল ফাইটার তৈরির মূল উদ্দেশ্য ছিলো সর্ট এরিয়াল রেন্জে ডগ ফাইট। তাই ডগফাইটে মিগ ২৯ বিশেষ পারদর্শী।

মিগ ২৯ এ ব্যবহৃত ২টা Klimov RD-33 এর আফটার বার্নিং সাপ্লাইড ড্রাই থ্রাস্ট 36600 lbf। যা বর্তমানকালীন অনেক বিমানের থেকেও বেশি। শক্তিশালী এই থ্রাষ্ট মিগ ২৯ কে করে তোলে মারাত্বক ক্ষিপ্ত। মিগ ২৯ এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হল ইউনিক আফটার বার্নিং কন্টোল। যা যে কোন সময় চালু বা বন্ধ করা যায়।

সাধারন বিমানের ক্ষেত্রে আফটার বার্নিং ইউজ করলে তা বেশ কিছু চালু রাখতে হয় এবং একবার ইউজ করার পরে আরেকবার আফটার বার্নিং নেয়ার আগে একটা ইন্টারভালের দরকার পড়ে। মিগ ২৯ আফটার বার্নিং চালু করে তা পরমুহুর্তেই বন্ধ করা যায় এবং আবার আফটার বার্নিং ইউজের আগে কোন ইন্টারভালের দরকার পরে নাহ । ফলে সুপারসনিক স্পিড থেকে ধাম করে সাবসনিক স্পিডে নামার মতো ইউনিক ক্ষমতা এই মিগ ২৯ এর কাছে সাধারন ব্যাপার। মিগ ২৯ এর অন্যতম ইউনিক ফ্যাসিলিটি হল এর কোবরা ম্যানুভারিটি, (অর্থাৎ আকাশে চলমান অবস্থায় হঠাৎ থেমে গিয়ে অন্যদিকে চলা) । যার মাধ্যমে এই ফাইটার ইনকামিং মিসাইলকে ধোকা দিতে পারে।

কোবরা ম্যানুভারিটি মিগ ২৯ এর আরেকটি ইউনিক ফ্যাসিলিটি হল হেলমেট মাউন্টেড ডিসপ্লে যার সাহায্য পাইলট হেলমেটেই সমস্ত কিছু দেখেতে পায় এবং পাইলটের মাথা যেদিকে ঘোরে টার্গেটিং কম্পিউটার সেদিকেই টার্গেট করে। এই ২ প্রযুক্তি কোবরা ম্যানুভারিরটি এবং হেলমেট মাউন্টেড ডিসপ্লে ২০০৩ সালের দিকে এফ ২২ র‌্যাপটরের মধ্যে দিয়ে আমেরিকান এয়ার ফোর্সে সংযুক্ত হয়। মিগ ২৯ সকল প্রকার পরিবেশেই ব্যাবহার উপযোগী। দিন- রাত, তু্ষারাচ্ছন ঝড়ো আবহাওয়া কিংবা ভারী বৃষ্টি সব ধরনের পরিবেশেই এই মিগ ২৯ সমান পারদর্শী। মিগ ২৯ এ ব্যবহৃত হয়েছে - Zhuk-ME Antenna।

যার রেন্জ ১২৫ কি.মি.। মিগ ২১ এর মতো মিগ ২৯ কমপ্লিটলি পাইলটস ফাইটার। দক্ষ একজন পাইলটের হাতে উপোরক্ত সুবিধা সম্পন্ন মিগ ২৯ একটি মারাত্বক ভয়ংকর যুদ্ধাস্ত্র । আবার এভ্যারেজ পাইটের হাতে এটা একটা এভ্যারেজ ফ্লাইং ফাইটার। টোটাল স্পেফিকেশন : পাইলট : ১ জন লেংথ: ৫৭ ফিট উইং স্প্যান : ৩৭ ফিট শক্তির উৎস:2× Klimov RD-33 afterburning turbofans সর্বোচ্চ টেকঅফ ভর : ২৩০০০ কেজি ওয়েল ক্যাপাসিটি : ইন্টারনালী ৪৩৬৫ লিটার পারফরমেন্স - সর্বচ্চো গতি : ক্রুজিং : ম্যাক ১.৫(১৫০০ কি.মি./ঘন্টা ) আফটার বার্নিং : ম্যাক ২.২০ (২৪৫০ কি.মি./ঘন্টা ) রেন্জ : কমব্যাট রেন্জ : ১৪৫০ কি.মি. বা ৮৮০ মাইল ফেরি রেন্জ : * ২১০০ কি.মি. বা ১৮০০ মাইল ( একটা এক্সটারনাল ফুয়েল ট্যাংক শ) *সার্ভিস সিলিং : ৫৯০০০ ফিট আর্মামেন্ট : * ১৫০ রাউন্ড হেভি বুলেট সহ ১টা GSh-30-1 ক্যানন *৭ টা হার্ড পয়েন্ট * ৬ টা বিভিন্ন রেন্জের এয়ার টু এয়ার মিসাইল (AA-8 "Aphid" "AA-10 "Alamo", "AA-11 "Archer", AA-12 "Adder") * ৩০০০ কেজি পর্যন্ত বম্ব মিগ ২৯ এর অন্যতম ঝামেলা হল এর মেইনটেইন্যান্স কস্ট ।

সোভিয়েত স্টেট ওফ আর্ট এই ফাইটারের মেইনটেইন্যান্স কস্ট মারাত্বক হাই। প্রতি ২০০০-৩৫০০ ঘন্টা ফ্লাইং এর পরে এই বিমানের ইন্জিন ওভারহোলিং করতে হয়। মিগ ২৯ এর ইন্জিন রাডার ,টেকনোলজি সহ বিভিন্ন পার্টস খুবই স্পর্শকাতর। নিয়মিত ফ্লাই বা ইউজ না করে ফেলে রাখলে এর বিভিন্ন পার্টস ড্যামেজ হয়ে যায়। প্রতি ফ্লাইং এ একটা মিগ ২৯ তেল খরচ হয় মিনিমাম ৩০০০ লিটার।

মিগ ২৯ এর ফ্যাসিলিটির দিক থেকে এর প্রতিদ্বন্ধী এফ ১৬ থেকে আজও অনেক দিক থেকে এগিয়ে। মিগ ২৯ কে এফ ১৬ দিয়ে পিছনে ফেলতে না পেরে আমেরিকা শেষমেষ ১৯৯৯ সালে মালডোভার থেকে এন্যালাইসিসের জন্য ২১ টা মিগ ২৯ কালেক্ট করে। এবং সেই এন্যালাইসিস তারা এফ ১৮ সুপার হর্নেট আপডেট এবং এফ ২২ র‌্যাপটর তৈরিতে ব্যবহার করে। তবে মিগ ২৯ এর এগিয়ে থাকার পিছনে ছিলো সোভিয়েতদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি আমেরিকানদের ও কিছু অবদান ছিলো। সেই অবদান হল এফ ১৬ নিয়ে কিছু প্রপাগন্ডা ইনফরমেশন বাংলাদেশ সহ বিশ্বের প্রায় ২৩ দেশে বর্তমানে এই ফাইটার ব্যবহৃত হচ্ছে।

সবশেষে বলা যায়, মিগ ২৯ ফাইটার একটা ট্রু সোভিয়েত স্টেট ওফ আর্ট ফাইটার এয়ারক্রাফট এর উপর আগের পোষ্ট গুলো : আমেরিকান স্টেলথ ফাইটার : লকহিড মার্টিন এফ ২২ র‌্যাপটর (Lockheed Martin F-22 Raptor) কিংবদন্তী জেট ফাইটার - মিগ -২১ পোষ্টটা বড় হয়া গেলো পাবলিকে পড়ে কিনা সন্দেহ
 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।