আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হাফ-ওয়াল,লাল-নীল ফুল ও একজন আইন্সটাইনের উপলব্ধি



অপেক্ষার এই সময়গুলোতে ক্যাফের সাম্নের হাফ-ওয়াল টাকে বড্ড আপন মনে হয় আমার । বাচ্চাকালে দেখা এক্টা বিজ্ঞাপনের কথা মনে পড়ে গেলো । পশ্চিমের শীতবস্ত্রের মোড়কে আচ্ছাদিত এক বঙ্গ ললনা নাচন-কুদন করে আমাদের জানাতেন যে , গ্রীষ্ম-বর্ষা-শীতে ত্বকের যত্ন নিতে, তিব্বত পমেট-ই তার একমাত্র সঙ্গী । কিন্তু সৌভাগ্যবশত (কিম্বা দুর্ভাগ্যবশত),সেই ললনার মেকাপ বিহীন মুখমন্ডল দেখবার পর হতে, তিব্বত পমেট এর সঙ্গ লাভের যৌক্তিকতা খুজে পাইনি আজও । কিন্তু যৌক্তিকতা বোধহয় স্থান,কাল,পাত্রের উপর নির্ভরশীল ।

বুয়েট এর স্থাপন কালে কোন যুক্তিতে, এরকম আপাত-দৃষ্টিতে আধা সম্পূর্ণ একটি দেয়াল বানানো হয়েছিল তা প্রায়ই আমার 'কিছু না করার সময়' গুলোতে চিন্তার খোরাক যোগান দেয় । কোনো দূরদর্শী প্রেমিক প্রকৌশলী হয়ত তখন বুঝে থাকবেন যে, আজ হতে কয়েক যুগ পরে এই হাফ-ওয়ালটাই এ যুগের প্রেম-প্রকৌশল এর ছাত্রদের কাছে তিব্বত পমেটের মত গ্রীষ্ম-বর্ষা-শীতে অপেক্ষার একমাত্র সঙ্গী হয়ে উঠবে । তাকে সালাম । ইটের সুচারু বুননে কি সুন্দর ঠায় দাঁড়িয়ে আছে হাফ-ওয়াল টা । কত ফ্রেশার ব্যাচ আসে, কত র‍্যাগ ব্যাচ যায় ,শুধু এই হাফ-ওয়ালটা থাকে অজস্র নির্ভেজাল আড্ডা, বন্ধু-বন্ধু খেলা, প্লেটনিক প্রেমের আবেগীয় উৎস , রগরগে ফ্রয়েডীয় প্রসঙ্গ-বিশ্লেষন , আর নির্মম উপসংহারের সাক্ষী হয়ে ।

হাফ ওয়াল টা আমার অনেক ঘটনার সাক্ষী, অঘটনের ও বটে । পরম প্রিয় সিনিয়র র‍্যাগার ভাইদের কারণে এর দৈর্ঘ,প্রস্থ উচ্চতাও আমার মুখস্থ । মনে পড়ে সেই সদ্য সিভিল ড্রয়িং শেখার কাল ; হাফ ওয়াল এ বসে ,সবান্ধবে সাইড ভিউ, টপ ভিউ ,হিডেন লাইন খুজতে এই মনে উথাল পাতাল । সেই ক্যাফে ক্রিকেট , শচীনসম স্ট্রেট ড্রাইভ করে এই হাফ ওয়ালে বসা ললনাদের দৃষ্টি আকর্ষণের সেই মরণ-পণ চেষ্টা , আর অবশেষে প্রথম বলেই বোল্ড হয়ে সেই চেষ্টার অপমৃত্যু । দিনবদলের ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেল একটা বিশ্বকাপ ফুটবল,দুইটা হল ভ্যাকান্ট আর তিনটা টার্ম ।

ক্যাফের সামনে আজ জুনিয়ররা শচীন হতে ব্যস্ত , ভিউ আর লাইনের কারবার, সিভিল ড্রয়িং এ পাওয়া 'বি মাইনাসের' সাথেই শেষ । তবুও তোমার কারণেই বিশটা বসন্ত পার করে, আজ আবশ্য আমি বলতে পারি কেউ কথা রেখেছে । তারপরও , এই কথা রাখার যাত্রাপথের কথা ভাব্লে কেমন জানি এক রকমের বিষণ্নতা, এক ধরনের অবিশ্বাস, এক ধরণের জড়তা কাজ করে । বয়স্কালে অনেক লাল-নীল ফুলের সৌন্দর্য্যেই বিমোহিত হয়েছি, কিন্তু ঘ্রাণ নেইনি কোনোটার । কারন, কিছুদিন পরই ঐ লাল-নীল রঙ আমাকে আর টানবে না, উল্টা লাল-নীলের অতি চাকচিক্য বাহুল্য ঠেকবে ।

তাই হতো,কিছুদিন পরই,নতুন মোহ কে স্থান দিতে লাল-নীল ফুলের মোহ মনের পেছন দরজা দিয়ে পালাত । আমার পছন্দ শুভ্র-সাদা । তাইতো, বহু দিন যাচাই-বাছাই এর পর যখন বুঝলাম যে তুমি আসলেই আমার সেই শ্বেত-শুভ্র ফুল, তখন বন্ধুসমাজে অবিশ্বাস আর হাজারো কানাকানির জন্ম দিয়ে,তিলে তিলে গড়ে তোলা নিজের চারপাশের আবেগ-নিরোধক দেয়াল চূর্ণ করে তোমায় বলেছিলাম কখনো না বলা সেই তিনটি শব্দ । তুমিও ফেরাওনি আমায় । অথচ,আজ অবাক চোখে তাকিয়ে দেখি, তুমি আর সেই শ্বেত-শুভ্র নও, ধীরে ধীরে তোমার গায়েও চড়েছে লাল-নীলের বাহার ।

যে তুমি প্রেমের পূর্বশর্ত দিয়েছিলে যে- মুঠোফোনে অপ্রয়োজনীয় আলাপ নিষিদ্ধ,ডেটিং অবশ্য পরিহার্য, আজ সেই তোমার ভালবাসার পারদের সাথে তাল মিলিয়ে চড়তে গিয়ে আমি মাঝে মাঝেই খেই হারিয়ে ফেলি । কিন্তু মজার কথা হল, আজকাল আমারো কেন জানি লাল-নীল ভালো লাগতে শুরু করেছে । মনে হচ্ছে,লাল-নীল না হলে আর ফুল কিসের ! মুঠোফোনের শুন্য ব্যালেন্স আর মাসের ১৫ তারিখে ফাকা মানিব্যাগ সে কথাই জানান দেয় । মনে পড়ছে রুম্মেট এর কথা । বেচারা, অতি আবেগী, আর তাইতো লাল-নীল ফুলের কন্টকে রক্তাক্ত ।

কিন্তু , আমার খুব যৌক্তিক আর নিরাবেগ সিদ্ধান্তের সাদা ফুলেও যে আজ রঙ ধরেছে । তাহলে , এই প্রেম-ভালোবাসা,লাল-নীল-সাদা ফুলের পরিণতি সবই কি ভাগ্য, নিয়তি, সম্ভাব্যতার শর্তাধীন এক যৌক্তিক সিদ্ধান্তের ফলাফল ,নাকি বিধাতার এক আজব খেলা ? এই ভাবতে ভাবতে, কাধে নরম স্পর্শ । ঘুরে দেখি "আমার ও " । খুব গাম্ভীর্যপূর্ণ ভঙ্গিমায় ওকে শুধাই, "আইন্সটাইন বলেছিল- " God does not play dice ", জানো? " ওর ঠাট্টা মিশ্রিত হ্যা বোধক উত্তরে আবার প্রশ্ন করি " কেন করছিল জানো ? " উত্তর দেবার ফুরসৎ না দিয়েই বলি - " Because, God does not fall in love " ডিসক্লেইমার :: উপরে বর্ণিত সকল স্থান-কাল-পাত্র-ঘটনা সত্য । কল্পনার সাথে সাদৃশ্য পাওয়া গেলে তা কাকতাল মাত্র ।

ইহার জন্য লেখক দায়ী নন ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।