আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শেখ মুজিব জেনেশুনে যুদ্ধাপরাধ বিচার পরিহার করেছিলেন : মার্কিন আইনজ্ঞের দেয়া তথ্য, যা আমাদের জানা ছিল না



এই সরকারের দুই বছর পূর্ণ হতে চললো। আর মাত্র ১০ দিন পর শেখ হাসিনার রাজত্বের দুই বছর পূর্ণ হবে। কিন্তু এই দুই বছরে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে যে কন্যা শেখ হাসিনা পিতা শেখ মুজিবের অনেক নীতি থেকে দৃষ্টিকটু ভাবে বিচ্যুত হয়েছেন। বিশেষ করে দালাল আইন এবং যুদ্ধাপরাধের বিচার ইস্যুতে শেখ হাসিনা তার পিতার অনুসৃত নীতি থেকে সম্পূর্ণ ইউ টার্ন করেছেন। অথচ শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগ এবং সরকারের একচ্ছত্র ক্ষমতার মালিক। তার অঙ্গুলি হেলনেই সরকারের এবং আওয়ামী লীগের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়ে থাকে। আওয়ামী লীগে এবং সেই সুবাদে বাংলাদেশ সরকারের কার্যপরিচালনায় দ্বিতীয় কোন ব্যক্তি দাঁত বসাবার ক্ষমতা রাখা তো দূরের কথা, সাহসও পান না। অনুরূপভাবে শেখ মুজিবও ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী। তিনিও তার দল এবং সরকারের একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন।

শেখ মুজিবের আমলে তিনিই অর্থাৎ শেখ মুজিবই ছিলেন আওয়ামী লীগ। শেখ মুজিবই ছিলেন বাংলাদেশ। দল এবং সরকারের ক্ষমতার এলাকায় দ্বিতীয় কোন ব্যক্তির ভাগ বসাবার কোনো সুযোগই ছিল না। সুতরাং একথা বলা যায় যে, যে সব গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে শেখ হাসিনা তার পিতার অনুসৃত নীতি থেকে সরে আসছেন সেগুলো তিনি সজ্ঞানে এবং সচেতনভাবেই করে আসছেন। একটু আগে আমি বলেছি যে শেখ হাসিনা দুইটি ইস্যুতে পিতার পথ থেকে সরে এসেছেন।

কিন্তু একটু আগে আমার হাতে আরেকটি ইংরেজি পত্রিকা এলো। এখন দেখছি, তিনি অন্তত তিনটি ইস্যুতে তার পিতার পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছেন। এসব বিষয়ে ব্যক্তিগতভাবে আমি অথবা ‘দৈনিক সংগ্রাম' নিজস্ব কোন খবর পরিবেশন করছি না। এ ব্যাপারে আমাদের কোন মন্তব্য করার আগে আমরা সংগ্রামের সম্মানিত পাঠক ভাই-বোনদের খেদমতে দুইটি খবর পরিবেশন করছি। খবর দুইটি ছাপা হয়েছে ২৫ ডিসেম্বর প্রকাশিত দৈনিক ‘আমাদের সময়ে' এবং ২৪ ডিসেম্বর প্রকাশিত সাপ্তাহিক ‘হলিডে' পত্রিকায়।

উভয় পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের একটি বিরাট অংশ এখানে উদ্ধৃত করছি। আমি সম্পূর্ণ সচেতন যে উদ্ধৃতিগুলো খুব বড় হয়ে যাবে। তৎসত্ত্বেও নিরপেক্ষতা এবং বস্তুনিষ্ঠতার স্বার্থে সেই উদ্ধৃতি আমাকে দিতেই হচ্ছে। অন্যথায় আমাদের বিরুদ্ধে বিদ্বিষ্টতার অভিযোগে আশঙ্কা থেকে যাবে। দৈনিক 'আমাদের সময়ে' যে সংবাদটি প্রকাশিত হয়েছে সেটির শিরোনাম 'বঙ্গবন্ধু যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমার সময় যুক্তরাষ্ট্রের আইনজীবী নিরেনবার্গের পরামর্শ নিয়েছিলেন? বঙ্গবন্ধুর মুক্তি, স্বাধীনতা ও জাতিসংঘে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিতে আছে তার অবদান।

' পত্রিকাটির একজন সংবাদদাতা কানাডার টরেন্টো থেকে সংবাদটি পাঠিয়েছেন। আইনজীবী নিরেনবার্গ তার নিজস্ব ওয়েবসাইটে একটি নিবন্ধ লিখেছেন। নিবন্ধটির শিরোনাম, Negotiating Bangladesh Independence. ওয়েবসাইটটির শিরোনাম, http://www.negotiation.com দৈনিক 'আমাদের সময়ে' এ সম্পর্কে যে সংবাদটি প্রকাশিত হয়েছে তার এক স্থানে বলা হয়েছে, The war in Bangladesh ended quickly once neighbouring India invaded Pakistan. India had captured a great many Pakistani prisoners of war and turned them over to the new government of Bangladesh. These prisoners included all of the troops whose slaughter of the citizens of Bangladesh had started. Shortly after the fighting ended, the new Bangladeshi president, Sheikh Mujib (who now recognized me as his lawyer), sent me a diplomatic pouch in which he asked for my advice on how to conduct war-crimes trials. In considering the best solution for the new nation of Bangladesh, I recalled an article I had read in the December 1969 issue of Psychology Today. The article had described the effectiveness of unilateral gestures in pushing forward stalled negotiations--specifically, in reference to the way President John F. Kennedy had handled the aftermath of the Cuban Missile Crisis. (ভারত যখন সরাসরি পাকিস্তান আক্রমণ করে তখন অতি দ্রুত বাংলাদেশ যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে। ভারত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পাকিস্তানী যুদ্ধবন্দীকে বাংলাদেশের নতুন সরকারের কাছে হস্তান্তর করে। যুদ্ধের পরিসমাপ্তির পরই বাংলাদেশের নতুন প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিব আমার কাছে কূটনৈতিক চ্যানেলে একটি বার্তা পাঠান।

উল্লেখ্য, ইতিমধ্যে তিনি আমাকে তার আইনজীবীর স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। ঐ বার্তায় তিনি আমার কাছে পরামর্শ চান- কীভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার পরিচালনা করা যায়। নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য সর্বোত্তম সমাধান হিসেবে আমি স্মৃতিচারণ করলাম একটি নিবন্ধের, যা ১৯৬৯ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকাশিত ‘সাইকোলজি টুডে' নামক সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়। এই নিবন্ধে দেখানো হয়েছে, কিভাবে আলাপ-আলোচনায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হলে একতরফা শুভেচ্ছার নিদর্শন শান্তি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যায়। কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সংকটে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির এই ধরনের একতরফা শুভেচ্ছার নিদর্শনমূলক পদক্ষেপ সেই মহাসংকটের সমাধান করেছিল।

) অতঃপর কিভাবে ঐ সংকটের আলোকে যুদ্ধাপরাধ সমস্যার সমাধান করা যায় সে সম্পর্কে মিঃ নিরেনবার্গ বলছেন, Might a similar strategy help improve the relationship between Bangladesh and Pakistan? I sent the incisive article about the value of unilateral gestures to Sheikh Mujib along with a startling suggestion. Now, I knew that these prisoners of war (I think there were 30,000 to 35,000 of them) had murdered hundreds of thousands of people in Bangladesh--and Sheikh Mujib had witnessed these atrocities with his own eyes. Nonetheless, I asked Sheikh Mujib to consider the unthinkable: letting all of these prisoners go free. Nothing like this had ever been done in the aftermath of a civil war--especially in such an eye-for-an-eye, tooth-for-a-tooth culture. Yet I asked him to consider what effect such a gesture would have on the attitude of various countries throughout the world toward Bangladesh. The Sheikh was a consummate politician and he quickly recognized the value of such a dramatic gesture. The small fact that I planted the idea of an alternative to the War Crimes trials can not in any way detract from the courage, foresight, and creativity of Sheikh Mujib, who accepted my proposal, nurtured it, and made it grow. As a result, every nation in the world recognized them, respected them, and did whatever they could to help them. It was a masterful move on the part of the Sheikh. With one gesture, he had changed the climate of a stalled, defensive negotiation and nurtured a new atmosphere of respect and trust. I later heard Mujibur Rahman speak to the Asian Society in New York. Dramatically rubbing his fingers together as though dropping grains of sand to the floor, Sheikh Mujib ironically claimed of the prisoners of war, "I let them slip through my fingers." Maybe so. But by letting them go, he had created a favourable impression that dramatically improved his nation's standing in the world community. (অনুরূপ একটি কৌশল কি বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতে পারে? আমি আলোচ্য অনুসন্ধানী নিবন্ধটি তার কাছে পাঠাই এ জন্য যাতে এই নিবন্ধের অন্তর্নিহিত অর্থ তিনি বুঝতে পারেন এবং একতরফা শুভেচ্ছার নিদর্শন হিসেবে সুনির্দ্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। আমি জানতাম যে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার যুদ্ধবন্দী বাংলাদেশে লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে। তাদের নির্যাতন এবং বর্বরতার কথা শেখ মুজিব জানেন। তৎসত্ত্বেও তার কাছে আমি একটি অবিশ্বাস্য প্রস্তাব পাঠালাম। সেটি হলো, এই সমস্ত যুদ্ধবন্দীকে তিনি মুক্ত করে দিতে পারেন কিনা।

আমি জানতাম যে, যে সবদেশে ‘দাঁতের বদলে দাঁত' এবং ‘চোখের বদলে চোখে'র সংস্কৃতি চালু আছে সেখানে সকলকে ক্ষমা করে দেয়া একটি অবিশ্বাস্য ব্যাপার। তৎসত্ত্বেও তার কাছে আমি এজন্যই এই প্রস্তাবটি দিয়েছিলাম যে যদি তিনি এই কাজটি করতে পারেন তাহলে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হবে। শেখ মুজিব ছিলেন একজন চৌকস রাজনীতিবিদ। এই ধরনের একটি নাটকীয় পদক্ষেপের মূল্য তিনি অনুধাবন করতে সক্ষম হন। যুদ্ধাপরাধের বিচারের যে বিকল্প ব্যবস্থাটি আমি তার কাছে উত্থাপন করি সেটি কিন্তু শেখ মুজিবকে তার সাহস, দূরদৃষ্টি এবং বিচক্ষণতা থেকে বিন্দুমাত্র বিচ্যুত করেনি।

তিনি আমার প্রস্তাব গ্রহণ করেন এবং সেটিকে লালন করেন। তারপর তিনি সেই প্রস্তাবটি কার্যকর করেন। এর পরিণতিতে পৃথিবীর প্রতিটি জাতি তাকে স্বীকৃতি দেয়, তাকে সম্মান করে এবং তাকে সাহায্য ও সহযোগিতা প্রদানের জন্য তাদের যা কিছু করার ছিল তার সবকিছুই তারা করে। শেখ মুজিবের পক্ষে এটি ছিল একটি মাস্টার স্ট্রোক। শুভেচ্ছার একটি মাত্র নিদর্শন দিয়ে, অর্থাৎ যুদ্ধাপরাধীদেরকে ক্ষমা করে দিয়ে, তিনি আটকে যাওয়া আলাপ-আলোচনার অর্গল খুলে দেন এবং সমগ্র পরিবেশকে আস্থা ও সম্মানের পরিবেশে রূপান্তরিত করেন।

পরবর্তীতে শেখ মুজিব নিউইয়র্কে অবস্থিত এশিয়ান সোসাইটিতে যে বক্তৃতা করেন সেটি আমি শুনেছি। বক্তৃতার সময় তিনি নাটকীয়ভাবে তার আঙ্গুলগুলো ঘষছিলেন। মনে হচ্ছিল, আঙ্গুল ঘষে ঘষে তিনি যেন মেঝেতে ধূলিকণা ফেলছেন। এটি করতে করতে তিনি বলেন, ‘‘যুদ্ধবন্দীদেরকে আমি আমার এই আঙ্গুলসমূহের ফাঁক ফোকর দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছি। ’’ হয়তো তাই।

তবে তাদেরকে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিয়ে শেখ মুজিব পৃথিবীর সামনে এমন একটি নজীর সৃষ্টি করলেন যে নজীরটি বিশ্ব সভায় নাটকীয়ভাবে তার দেশের মান মর্যাদা বৃদ্ধি করলো। ) দুই ‘আমাদের সময়ের' আলোচ্য সংবাদে অতঃপর বলা হয়েছে, ‘‘ঐকমত্যের দর্শনে আলোকিত, বিশ্বখ্যাত ‘পাইওনিয়র ইন নেগোশিয়েশন' এবং যুক্তরাষ্ট্রে ‘বেস্ট সেলিং অথার' হিসেবে সমধিক পরিচিত বর্তমানে নিউইয়র্কে বসবাসকারী ৮৬ বছর বয়স্ক এই অসুস্থ আইনজীবী জেরার্ড আই নিরেনবার্গ বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে রেখেছেন এক অমূল্য অবদান। তিনি বঙ্গবন্ধুর মুক্তি, একাত্তরে নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশের বিদ্রোহী কূটনীতিকদের পাকিস্তানে প্রত্যাবর্তন রোধ, যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাকিস্তানে অস্ত্র রফতানি প্রতিহত করা এবং স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাক্টর রফতানি, ও দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের জন্য জাতিসংঘের চালবাহী জাহাজ তদারকিতে তাঁর মেধা, শ্রম ব্যয় করেছেন। এই কথাগুলো ওই নিবন্ধে বিধৃত আছে। তবে যে বিষয়টিতে বঙ্গবন্ধু স্বয়ং তার কাছে কূটনৈতিক চ্যানেলে পরামর্শ চেয়েছিলেন, সেটি ছিল যুদ্ধাপরাধ বিচারের বিষয়।

’’ আজ সেই বিষয়টি বাংলাদেশের রাজনীতির প্রধান ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। তিন শেখ মুজিব কেন তার কথা শুনেছিলেন তারও একটি গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা পাওয়া যায় রিপোর্টটির শুরুতে। শুরুতে সেই সময় শেখ মুজিবের বিদেশী আইন উপদেষ্টা হিসেবে পরিচয় দানকারী মিঃ নিরেনবার্গ বলেছেন, 'In my long career as a litigator and negotiator, few accomplishments have made me more proud than my work on behalf of the emerging nation of Bangladesh in the early 1970s. When Pakistan jailed the leader of the Bangladesh’s independence movement, I applied pressure on the U.S. State Department to free him. When the nation needed peace, I helped stop U.S. shipments of arms into the region. When its people needed food, I helped secure relief from the United Nations. And when the nation needed legitimization, I helped it gain admission into the U.N. (আইনজীবী এবং নেগোসিয়েটর হিসেবে আমার এই সুদীর্ঘ জীবনে আমি যত সাফল্য অর্জন করেছি তার মধ্যে আমি গর্ব অনুভব করি ১৯৭০ সালের প্রথমার্ধে বাংলাদেশের জন্য আমি যে কাজ করেছি তার জন্য। যখন পাকিস্তান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতাকে জেলে নিক্ষেপ করে তখন তার মুক্তির জন্য আমি মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ওপর চাপ সৃষ্টি করি। বাংলাদেশের জন্য যখন প্রয়োজন ছিল শান্তি, তখন আমেরিকা সেদেশে অস্ত্র বোঝাই জাহাজ পাঠাচ্ছিল।

ঐ জাহাজ পাঠানো বন্ধ করায় আমি সাহায্য করি। যখন বাংলাদেশের মানুষের প্রয়োজন ছিল খাদ্যের, তখন আমি জাতিসংঘের মাধ্যমে সেখানে ত্রাণ সামগ্রী পাঠাতে সাহায্য করি। আর যখন বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল বৈধ স্বীকৃতির, তখন আমি দেশটিকে জাতিসংঘে অন্তর্ভুক্ত করায় সাহায্য করি। ) চার সুপ্রিয় পাঠক-পাঠিকা ভাই-বোনেরা, ইতোমধ্যেই লেখাটি বড় হয়ে গেল। তাই দালাল আইনের পুনরুজ্জীবন এবং বাংলাদেশে ভারতীয় গোয়েন্দা তৎপরতা সম্পর্কে আসামের একটি পত্রিকায় যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে সে সম্পর্কে আজ আলোচনা করার স্থান হলো না।

উলফার সর্বাধিনায়ক পরেশ বড়ুয়ার পুত্রের অপহরণ অথবা বাংলাদেশে আরো দুইজন উলফা নেতার অন্তর্ধান সম্পর্কে ভারতীয় পত্রিকায় যে খবর উঠেছে সে সম্পর্কেও আলোচনা করার কোন সুযোগ হলো না। তবে আগামীতে এ সম্পর্কে আলোচনা করার ইচ্ছে রইল। আজকে শুধু এটুকু বলতে চাই যে শেখ মুজিবই দালাল আইনে সকলকে ক্ষমা করে দিয়ে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির পথ খুলে দিয়েছিলেন। তার কন্যা শেখ হাসিনা সেই আইন পুনরুজ্জীবিত করে তার পিতার নীতিকে বাতিল করছেন এবং জাতীয় বিভাজন নীতি অনুসরণ করছেন। উত্তর-পূর্ব ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়।

এ ব্যাপারে শেখ মুজিব কোন হস্তক্ষেপ করেননি। কিন্তু তার কন্যা শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে ভারতীয়দের সপক্ষে হস্তক্ষেপ করছেন এবং উলফা নেতাদেরকে গ্রেফতার করে ভারতের হাতে তুলে দিচ্ছেন। যুদ্ধাপরাধের বিষয়টি আরো পরিষ্কার। ওপরে যে সুদীর্ঘ আলোচনা করা হলো সেখান থেকে দেখা যাচ্ছে যে শেখ মুজিব সুস্থ মস্তিষ্কে, সজ্ঞানে এবং সুচিন্তিতভাবেই যুদ্ধাপরাধের বিচার পরিহার করেছিলেন। যেখানে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীকে শেখ মুজিব জেনে শুনে মুক্ত করে দিয়েছেন সেখানে তার কন্যা শেখ হাসিনা ৩৮ বছর পর জেনে শুনে বাংলাদেশের এমন সব রাজনৈতিক নেতাকে এই অভিযোগে গ্রেফতার করেছেন যারা একাধিকবার জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

শুধু তাই নয়, তারা মন্ত্রীও হয়েছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোন অভিযোগও নেই। এত পরিচ্ছন্ন তাদের রেকর্ড। ৩৮ বছর পর এই ইস্যুতে তিনি তার পিতার নীতিকে বিসর্জন দিয়ে প্রতিহিংসার রাজনীতিতে লিপ্ত হয়েছেন। এসব থেকে প্রতীয়মান হয় যে, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ নিজেরা কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। তাদের নির্দেশ আসে সীমান্তের ওপার থেকে।

অবগুন্ঠন উন্মোচন : আসিফ আরসালান

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।