কিছুদিন আগে মার্কিন প্রবাসী বাংলাদেশী সালমান খানের শিক্ষাবিষয়ক ওয়েবসাইট খান একাডেমী নিয়ে লিখেছিলাম । মনে হল, এর ফলোআপ হিসেবে আরো কিছু বিষয় মনে হয় আসা উচিৎ ছিল।
প্রথমতঃ পাঠক ও দর্শকদের আলোচনার কমন প্রশ্ন ছিল যে, সালমান খানের এই ভিডিওগুলি বাংলাদেশের ব্যাবহারের উপযোগী কিনা। আমার হিসেবে একই সাথে হ্যাঁ এবং না। না হল দুটো কারণে, প্রথমত, দেশের গড়পড়তা ছাত্রের ইংরেজী ভীতি ও অদক্ষতা, দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের আধমরা ইন্টারনেট কানেকশনের দ্বারা ইউটিউবের শত শত ভিডিও থেকে জ্ঞানলাভ করার চিন্তা করাই রীতিমত দুঃসাহস।
এই পর্যন্ত এসে আমি মোটামুটি সমস্যার শেষ দেখছি। আমার হিসেবে সমস্যার দিকে না তাকিয়ে সমাধানের প্রায়োগিক দিক নিয়ে কাজ করলে অনেকটাই এগিয়ে যাওয়া যায়।
এইটা ধ্রুব সত্য যে বাংলাদেশে ছাত্রদের ইংরেজী শেখা, বোঝা ও বলার মান বেশ খারাপ। তবে এইটাও সত্যি যে, ঢাকা চট্টগ্রাম সহ মহানগরীগুলোতে গত দুই দশকে এক গুচ্ছের ইংরেজী স্কুল তৈরি হয়েছে যেগুলোতে ইংলিশ মিডিয়াম নামের ফার্মের মুরগী চাষ করা হয়। এইসব ছাত্রদের অনেকেরই বাপমায়ের একগুচ্ছের টাকা খরচ হলেও আসল পড়াশোনার অংশে তথৈবচ।
বেশী খোঁজা লাগবে না, আপনার নিজের আত্মীয়-স্বজন চিন-পরিচিতের মধ্যেই এরকম কয়েকটা কেস পেয়ে যাবেন। সেইরকম কেস যদি থাকে তাহলে তাদেরকে এই ভিডিওগুলি মজার বস্তু হিসেবে যদি ধরিয়ে দিতে পারেন তাহলে হয়তো তার বিরাট একটা উপকার করবেন আপনি। একই সাথে বাংলা মিডিয়ামের বহু ছাত্রছাত্রী আছে যারা ক্লাস ফাইভ সিক্স থেকেই ইংরেজী মুভী, গানবাদ্যি আর টিভি প্রোগ্রামের পোকা। এদেরকে জোর করেও বাংলা বা হিন্দী গেলানো যায়না, এইরকম কেসও আমাদের পরিচিতদের মধ্যে একদম কম না। তাদের জন্যও একটা খুব ভাল এডুকেশনাল রিসোর্স হওয়া উচিৎ এই টিউটোরিয়ালগুলো।
একই সাথে পড়াশোনার পাট চুকিয়ে কর্মক্ষেত্রে যারা আছেন বা আরো উচ্চতর পড়াশোনা করছেন কিন্তু প্রাথমিক বা মাধ্যমিকের কোন বিষয়ে দুর্বলতা রয়ে গেছে, তাদের জন্যেও জড়তা কাটিয়ে উঠে নিজের দুর্বলতা সারিয়ে নেবার জন্য চমৎকার রিসোর্স। আরেকটি জিনিষ বিশেষভাবে খেয়াল করার জন্য বলছি তা হল, আমেরিকা ও সারা বিশ্বেই এই ভিডিওগুলি মূলত জনপ্রিয় হয়েছে কিছুটা দুর্বল ছাত্রদের কাছেই। অনেকেই আছে যে কলেজে শিক্ষক ত্রিকোনোমিতির একটি অধ্যায় পড়িয়ে চলে গেলেন কিন্তু ছাত্রের জন্য সেইটুকু সময় বা ব্যাখ্যা যথেষ্ট ছিলোনা, তাই বাড়িতে বসে নিজের সময়ে কয়েকবার দেখে নিলে হয়তো জিনিষটা স্পষ্ট হয়ে যেতে পারতো। তাই এই জ্ঞানসাগরের টার্গেট সুপার জিনিয়াসরা না হয়ে একটু দুবলা পাতলা ধরনের শিক্ষার্থী হলেও কোনো সমস্যা নেই।
দ্বিতীয় যে স্পীড ও ব্যান্ডউইথের সমস্যা সেটির ঠেকায় কাজ চালানোর মত একটি সমাধান আছে।
সেটি হল, ভিডিওগুলো অফলাইনে ছড়িয়ে দেয়া। আমার বাড়িতে একটু দ্রুতগতির কানেকশন থাকায় প্রায় বারো গিগাবাইটের দেড়হাজারের মত ভিডিও আমার কম্পিউটারে ডাউনলোড করা। কেউ আগ্রহী হলে আমার থেকে সংগ্রহ করে নিতে পারেন। আমার পরিকল্পনা হল, এলিফেন্ট রোডের একটি কম্পিউটারের দোকানে আমি এই খান একাডেমীর পুরো ভিডিওর কালেকশন রাখব। কেউ নিতে চাইলে হয় নিজের ল্যাপটপ ইত্যাদি নিয়ে এসে কপি করে নিয়ে যাবেন, অথবা তিনটি ভালো মানের খালি ডিভিডি দিয়ে এক সেট কালেকশন নিয়ে যেতে পারেন।
তাতে জ্ঞানটুকু ফ্রি হলেও একটু নিজের গতর খাটানো লাগবে। আশা করি কিছু হলেও আগ্রহী দর্শক পাঠক এথেকে উপকৃত হবেন। আমি আমার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে আশা করছি, আরো কয়েকজন এই প্রয়াসকে আরো বেগবান করার জন্য এগিয়ে আসবেন। আমার মনে হয় ঢাকার মধ্যে উত্তরা, মিরপুর, পুরান ঢাকা, মালিবাগ, বনানী এইরকম আট দশটা যায়গায় এক বা একাধিক দোকানে বিনামূল্যে, স্বল্পমূল্যে, নামমাত্রমূল্যে এইগুলোকে পাবার ব্যাবস্থা করে দিলেই হুজুগে বাঙ্গালী হয়তো এই থেকে অনেকটুকুই এগিয়ে নিতে পারবে। ঢাকার বাইরে হলে অবশ্য সমস্যা, তবে সেটার জন্য ভাবছি হয়তো মোবাইলে ফ্লেক্সি করে দিলে আমি কুরিয়ারে পাঠিয়ে দিতে পারব।
আরেকটা অপশন মনে হয়, সরকারী ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্রাবাসগুলোতে ছড়িয়ে দেয়া। যেখানে একজনের কম্পিউটারে কোন ইন্টারেস্টিং বস্তু ঢুকলে আটচল্লিশ ঘন্টার ভেতরে সারা হলে বা ডিপার্টমেন্টে ছড়িয়ে পড়ে সেখানে এই জিনিষ চললেও চলতে পারে। তবে সব কথার শেষ কথা হল, আপনি যদি মনে করেন সারা দেশে বিলি করা আমার দায়িত্ব তবে মোটামুটি নিশ্চিত যে আসলে কিছুই হবে না, কিন্তু যদি ঠিক করেন যে আমার মেজো খালার ছোট ছেলে, পাশের বাড়ির বদমাশ পিচ্চি আর মহাখালীর চাচাতো ভাই এই তিনজনকে আমি এই বস্তু খাওয়াবো তাহলে হয়তো প্র্যাক্টিকালি করা সম্ভব। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যস্থির করে সেটি অর্জনের চেষ্টা করাই যথেষ্ট।
আমার আগের লেখায় খান একাডেমীর ভিডিও গুলো অনুবাদ করার পক্ষে বিপক্ষে কথা হচ্ছিল।
তখন অনেকেই বলেছিলেন যে, ভিডিওগুলির জনপ্রিয়তার মূল কারণ কঠিন বিষয়গুলোক সহজভাবে বুঝিয়ে দেবার জন্য সালমানের দক্ষতা। যেটি বাংলায় একই ঢঙ নিয়ে করা মুশকিল। তার বদলে বাংলায় একই বিষয় নিয়ে আলাদাভাবে ভিডিও টিউটোরিয়াল করার বিষয়ে অনেকে মত দিয়েছিলেন। এইখানে আমি আপত্তি তুলব একটু অকারণেই। আমার আপত্তি এই কারণে, যে সালমান খান বাংলাদেশের ছেলে আর তাকে অলরেডী পাকিস্তানী বানানোর জন্য জোর চেষ্টা ইতোমধ্যে হয়েছে এবং এখনো চলছে।
উইকিতে রেফারেন্সের এক্সটার্নাল লিঙ্কে গেলে দেখবেন অর্গানাইজেশন ফর পাকিস্তানি এন্টারপ্রেনুয়ার্সের পৃষ্ঠা থেকে সালমানের জীবনীর রেফারেন্স নেয়া হয়েছে। কদিন পরে হয়তো দেখব যে পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় সম্মান ধরণের কিছু দেয়া হচ্ছে আর সেটি উনি গ্রহণও করে নিয়েছেন। তখন আমাদের নিজেদের পক্ষ থেকে দেখানোর মত কিছুই থাকবে না। আশঙ্কা এই জন্য করছি যে, খান একাডেমীর ক্রেডিটস এর পাতায় গেলে স্বচ্ছাসেবীদের তালিকা পাওয়া যায়। তাতে অনুবাদের কাজের জন্য দুজনের কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা হয়েছে, একজন স্প্যানিশ ভাষায় অনুবাদের জন্য আর দ্বিতীয়জন উর্দু!
ভালো হোক, মন্দ হোক, জঘন্য হোক, বাংলার ছেলের অসামান্য কীর্তির কয়েকশো ভিডিও বাংলায় থাকবেনা এটা কি হতে পারে?
খান একাডেমীর ভিডিওগুলোর জন্য অনেকেই ইমেইলে প্রাপ্তিস্থান জানতে চেয়েছেন।
বর্তমানে (৮৩ ল্যাবরেটরী রোড) / এলিফেন্ট রোডের স্মার্ট কম্পিউটারে তিন ডিভিডির ভেতরে সবগুলো ভিডিও পাওয়া যাচ্ছে। কেউ চাইলে সংগ্রহ করতে পারেন আর যতখুশী কপি পেস্ট করে সবাইরে ফ্রী বিলি করতে পারেন। দোকানে বলেছি তিনটা খালি ডিভিডি নিয়ে কেউ আসলে তারে ফ্রী দিয়ে দিতে আর নাহলে ১০০ টাকা খসায়ে রাখতে। চলে নাকি?
ডিভিডির জন্য যে কভারটা বানিয়েছি সেটি সবার সাথে শেয়ার করলাম
কোন স্বেচ্ছাসেবী যদি ঢাকার অন্য কোথাও দোকান ঠিক করতে পারেন অথবা যারা ডিভিডি বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করেন, তাদের মাধ্যমে ছড়ানোর ব্যাবস্থা করতে পারেন তারাও মন্তব্যের ঘরে যোগ করতে পারেন
ফরিদ
প্রশ্ন থাকলে করুনঃ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।