আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাই ফাই থ্রিলারঃ সিমুলেশন, Season 1, Episode 7

কিচ কিচ কুচ কুচ কাচ কাচ কোচ কোচ!!!

১৩ ইন্টারপোল কর্মকর্তা ডেভিড সিমকক্স ভ্রূ কুঁচকে একটা ফাইলের দিকে তাকিয়ে আছেন। ক’দিন আগে পুলিশ ভ্যানে রহস্যজনকভাবে খুন হওয়া বাজিকরের ব্যক্তিগত ফাইল এটি। সেদিন পুলিশ ভ্যানে যারা তারা ছিল বা ময়নাতদন্ত করেছে যে ডাক্তার, তারা কেউই মুখ খুলছে না। পুলিশরা বলেছে মৃত্যুর পিছনে কোন দৃশ্যমান কারণ ছিল না। বাজিকর নাকি হঠাৎ করেই মারা গেছে।

ডাক্তার বারবার বলছে হার্ট অ্যাটার্ক। অথচ ব্যাপারটা ঘচ ঘচ করেই যাচ্ছে তার মাথার মধ্যে। কি যেন ছিল ফেসবুকের স্ট্যাটাসটা? সিমুলেশন নামের একটি কিছু নিয়ে, নয় কি? সিমকক্স ইন্টারনেট খুলে “সিমুলেশন” নামে গুগল সার্চ দিলেন। একটু পরে তিনি আর ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারলেন না। তিনি বুঝতে পারলেন, কে বা কারা তার আইপি অ্যাড্রেস ব্লক করেছে।

১৪ “কাল আপনাকে এত ডাকলাম আপনি এলেন না কেন? ” প্রশ্নটা করল নিশু। আজ তাকে বেশ নিস্তেজ দেখাচ্ছে। রাকিবিল হাসানাত জবাব দিলেন, “একটু বিজি ছিলাম”। “কি নিয়ে বিজি? ” “সিমুলেশন নিয়ে”। “আচ্ছা”, হঠাৎ বলল নিশু, “এই সিমুলেশনে পঞ্চাশ দেশের একশ প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করছে না? ” “করছে”।

“তারমানে বাংলাদেশ থেকে আরও একজন প্রতিযোগী আছে? ” “আছে”। “তাহলে”, অবাক হয়ে বলল নিশু, “তার সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দেন নি কেন? ” “কারণ তুমি চাও নি”, হেসে বললেন রাকিবিল হাসানাত। “কি নাম ওর? কোথায় বাড়ি? বয়স কত? ” ' “বড় কঠিন প্রশ্ন করলে হে”। “কেন? আর সে দেখতেই বা কেমন? গ্র্যান্ড হলে কি সে নিয়মিত আসে? ” “না। ও এমনিতে খুব অসুস্থ।

তাই হাঁটাচলা করে না পারতপক্ষে”। “আর এমন একটা মানুষকেই আপনারা বারবার ব্যবহার করছেন? ” বলল নিশু, “তার শরীর কি এতটা প্রেশার নিতে পারবে? ” “আসলে”, কেশে বললেন রাকিবিল হাসানাত, “সে এখানে এসেছে স্বেচ্ছায়। মূলত সে নিজেও এইসব প্রোগ্রামিঙের সাথে জড়িত”। “তাই? তাহরে তো প্রোগ্রামের কাজগুলো তারই ভালো বোঝার কথা। তাহরে সে ফার্স্ট হল না কেন? ” “আরে, অন্যের প্রোগ্রামের ব্যাপারস্যাপার সে আগে থেকে জানবে কিভাবে? নিজের প্রোগ্রামের কথা না হয় সে আগে থেকেই বুঝতে পারবে”।

নিশু কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, “আমার সঙ্গে তার দেখা করিয়ে দিতে পারবেন? ” রাকিবিল হাসানাত বললেন, “না। আমি দুঃখিত”। ১৫ নিজের চেম্বারে বসে রোগী দেখছেন প্রফেসর আবুল কাশেম। তিনি একজন নিউরোলজিস্ট। একটু পরে তার কাছে ত্রিশ বছরের এক যুবক এল।

যুবকের বৃদ্ধ পিতা অভিযোগ করলেন, “স্যার আমার পোলাডা কেমন জানি সব কিছু ভুইলা যাইতেছে”। প্রফেসর আবুল কাশেম তাকে কয়েকটা টেস্ট দিলেন। তিনদিন পর টেস্টগুলোর রেজাল্ট নিয়ে যুবক তার পিতাকে নিয়ে ফিরে এল। প্রফেসর আবুল কাশেম রোগীর বাবাকে বললেন, “আপনি ভয় পাবেন না। শক্ত হোন।

শুনুন, আপনার ছেলের মগজের কোষগুলো আস্তে আস্তে মারা যাচ্ছে। এ জন্যেই সে আস্তে আস্তে সবকিছু ভুলে যাচ্ছে”। রোগীর বাবা ডাক্তারের হাত ধরে বললেন, “এখন কি হইব ডাক্তার সাব? ” “কিছুই করার নেই। আল্লাহকে ডাকেন”। যুবক তার পিতাকে নিয়ে চলে যাবার ঠিক আগমুহূর্তে তার দিকে অদ্ভুতভাবে তাকাল।

ঠিক তখনই তার মনে পড়ল আজ থেকে দু’বছর আগে ঠিক একই সমস্যা নিয়ে একজন মানুষ তার কাছে এসেছিল। কি যেন নাম যুবকের.....হ্যাঁ, সালেহ তিয়াস। সাথে ছিল তার স্ত্রী, কি যেন নাম মেয়েটার....... ধুর ছাই মনে আসছে না কিছুতেই। সারাদিন আর সালেহ তিয়াসের স্ত্রীর নাম মনে পড়ল না প্রফেসর আবুল কাশেমের। একদম ঘুমানোর আগ মুহূর্তে তার মনে পড়ল, মেয়েটার নাম ছিল নিশু।

১৬ “ভদ্রমহোদয় ও ভদ্রমহোদয়াগণ! একটি বিশেষ ঘোষণা! আমরা অত্যন্ত আনন্দের সাথে ঘোষণা করছি যে, আমাদের নিউরাল স্টেম সেল গবেষণা সফল হয়েছে। আমাদের গবেষকরা সফলভাবে কাজে লাগানোর মত নিউরাল স্টেম সেল উদ্ভাবন করেছেন। এখন শুধু কিছু ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল বাকি। তারপরই আমরা এটাকে পেশাদারভাবে ব্যবহার করতে সক্ষম হব। তখন আমাদের সিমুলেশন হবে আরও বিস্তৃত, আরও রোমাঞ্চকর, আরও মজাদার।

সারা পৃথিবীর মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া হবে সিমুলেশন। পরীক্ষিত হবার পর থেকে স্টেম সেলগুলো আমাদের প্রতিযোগীদের নার্ভাস ডিজেনারেশন বা স্নায়ুকোষ ক্ষয়ে যাওয়া থেকে রিকভার করতে সাহায্য করবে। এমনকি পুরনো খারাপ স্মৃতিকে প্রতিস্থাপন করে নতুন চমৎকার স্মৃতিলাভও এখনকার মত আর কষ্টসাপেক্ষ থাকবে না, সেটা হয়ে যাবে মুহূর্তের ব্যাপার। তার মানে একই প্রতিযোগী কোন সমস্যা ছাড়াই সিমুলেশনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন বছরের পর বছর, কামাই করতে পারবেন কোটি কোটি টাকা। আজকের এই দিনে, সিমুলেশনের পক্ষ থেকে আপনাদের সবাই অভিনন্দন”।

১৭ ইন্টারপোল অফিসার ডেভিড সিমকক্স নেড়েচেড়ে একটা ফাইল দেখছেন। এটা হচ্ছে এই এলাকার গত বছরে যারা ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছে তাদের একটা তালিকা। সিমকক্স তালিকাটা পড়ছেন- অ্যাশলে মেরিল্যান্ড পিটার বার্কস মেলিন রিজ মাথিল্ডা টেট... মাথিল্ডা টেট.... হঠাৎ তার কেমন পরিচিত মনে হল নামটা। কোথায় যেন দেখেছিলেন নামটা....... কোথায় যেন। নামটা লিখে তিনি গুগল সার্চ দিলেন।

তার আইপি আনব্লকড হয়েছে। গুগলে একটা ফেসবুক আইডি এল - মাথিল্ডা টেট। মাথিল্ডার ফেসবুক প্রোফাইলে ঢুকলেন ডেভিড সিমকক্স। দেখলেন, বন্ধু না হলে তার পার্সোনাল ইনফরমেশন দেখা যাবে না। ডেভিড সিমকক্সের বেশ কয়েকটা ফেইক আই ডি আছে।

একটা সুপারহট ছেলে মডেলের ছবি দেয়া আইডি দিয়ে মাথিল্ডা টেটকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠালেন তিনি। টেট অনলাইনেই ছিল। তার রিকুয়েস্ট সাথে সাথে অ্যাক্সেপ্ট করল সে। সিমকক্স তার প্রোফাইল দেখলেন। রিলেশনশিপ স্ট্যাটাসঃ সিঙ্গেল।

লিভস ইন এ দেয়া আছে তারই শহরের নাম। তার মানে এ-ই সে-ই মাথিল্ডা টেট। ইনফোতে আর তেমন কিছু না পেয়ে মেয়েটার স্ট্যাটাস ঘাটতে লাগলেন তিনি। দেখলেন, প্রতিটা স্ট্যাটাসেই অসংখ্য লাইক, আর অনেক পুরুষের কমেন্ট। অবশেষে তিনি যা খুজছিলেন তা পেয়ে গেলেন।

স্ট্যাটাসে লেখা - অবশেষে আমার জীবনের সবচেয়ে দামী উপহারটা আমি পেলাম। Thank you, John Caine. আর ঠিক তখনই ঝামেলাটা ধরতে পারলেন সিমকক্স। জন কেইন হচ্ছে বাজিকরকে ধরে আনার সময় দায়িত্বে থাকা কনস্টেবল। মাথিল্ডা তার স্ত্রী। যদিও রিলেশনশিপ স্ট্যাটাসে মেয়েটা সিঙ্গেল লিখে রেখেছে।

সামান্য কনস্টেবলের স্ত্রী হয়ে ফ্ল্যাট কিনল কিভাবে মাথিল্ডা? তবে কি সম্পত্তির উৎস মাথিল্ডার বাবা? সিমকক্স সিটিজেন ফাইলস ঘেঁটে দেখলেন। মাথিন্ডার বাবা কৃষক। বাড়ির অবস্থা মোটামুটি। বার্ষিক আয় যতই হোক, মেয়েকে ফ্ল্যাট কিনে দেবার পক্ষে বিন্দুমাত্র যথেষ্ট নয়। তারমানে কেইন হঠাৎ করেই অনেক টাকার মালিক হয়ে গেছে।

নিজের উপর সন্দেহ দূর করার জন্য সেই টাকা দিয়ে বউয়ের নামে ফ্ল্যাট কিনেছে। তবে কি সে শেয়ার ব্যবসা করে? নাকি সিমুলেশনের সেই বাজিকরের মত সে-ও একজন বাজিকর? সিমকক্সের সন্দেহ পাকাপোক্ত হল, যখন দু’দিন পরেই কেইন চাকরি ছেড়ে দিল। ১৮ বেশ কদিন পর গ্র্যান্ড হলে একা একা ঘুরতে এল নিশু। রুমে বসে কৃত্রিম বিনোদন তার আর ভালো লাগছিল না। ঘুরতে ঘুরতে সে একটা ফাঁকা টেবিলে বসে পড়ল।

এটু পরেই তার দেখা হল সেদিনের সেই অস্ট্রিয়ান তরুণের সাথে। কমুনিকেটরের মাধ্যমে যুক্ত হল ওরা। নিশু বলল, “হ্যালো”। “হাই”। “কি খবর? ” “ভালো।

আচ্ছা তোমার প্রতিযোগী কোড কত? ” “জেনে কি করবে? ” “না এমনি। জানো আমি না দ্বিতীয় সিমুলেশন একদমই ভালো করতে পারি নি”। “কেন? ” “আরে দেখলে না Contestant no. 35 কিভাবে সবক’টাকে মেরে ফেলল? আমিও তো ওর মধ্যেই ছিলাম”। “ইসস, বেচারা। আমিও”।

“তাই? কোনটা ছিলে তুমি? ” “এই তো, কোন একটা”। “আমার অবশ্য বাকিটুকু ভালোই লেগেছে। তিনজন মিলেই সিমুলেশনটাকে টেনে নিয়ে গেছে শেষ পর্যন্ত। দর্শকরাও মজা পেয়েছে বেশ”। “হ্যাঁ, দেখলাম তো”।

“আচ্ছা, তোমাকে বলেছিলাম না এখানকার কিছু মেমোরি ওখানে চুরি করে নিয়ে যাওয়া যায়? ” “হ্যাঁ। তো? ” “আমি নিয়ে গিয়েছিলাম, জানো? এই কথাটুকু মাথায় ঢুকিয়ে নিয়ে গিয়েছিলাম, “হাই, আমি স্যাম। অস্ট্রিয়ান। আমার উপর বাজি ধরুন”। নিশু হেসে ফেলল, “বলতে পেরেছ? ” “না সুযোগ পেলাম কই? তার আগেই তো 35 এসে কেল্লাফতে করে দিল”।

নিশু বলল, “তোমার বোন কোথায়? ” “ওর একটু সমস্যা হয়েছে”, ইতস্তত করে বলল অস্ট্রিয়ান তরুণ, “ওর নাকি নার্ভাস ডিজেনারেশন ধরা পড়েছে। প্রতিদিন অনেকখানি করে তথ্য ভুলে যাচ্ছে সে”। “এখন কি হবে? ” “কি আর হবে। অন্য সবার যা হয়”। “অন্য সবার কি হয়? ” “কি আর হবে।

আগে তো কম্পিটিশন থেকে বাদ দিয়ে দিত। এখন তো শুনছি স্টেম সেল স্ট্রিটমেন্ট দেয়া হবে। দেখি যদি কিছু হয়”। নিশু অবাক হয়ে তরুণের দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর বলল, “তোমার ভয় লাগে না? তোমারও যদি হয়? ” “হলে হবে”, বলল তরুণ, “এমনিতে আমরা খুব গরিব।

সিমুলেশন আমাদের বেঁচে থাকার শেষ সুযোগ। এটা না থাকলে হয়তো আমি সুইসাইডই করতাম”। নিশুর হঠাৎ মনে হতে লাগল তার খুব কাছের কারো নার্ভাস রিজেনারেশন হচ্ছিল। আস্তে আস্তে অবলুপ্ত হচ্ছিল তার স্মৃতি। কিন্তু কে কেন? কি তার পরিচয়? কেমন তার চেহারা? কিছুই মনে আসছিল না নিশুর।

তার কেবলই মনে হচ্ছিল এই বিষয়ে তার কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতি মুছে ফেলা হয়েছে।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।