যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে নাকি একলা চলতে হয়।
আইনস্টাইনের 'ভুল' আসলে ভুল না ।
একই বস্তু একই সঙ্গে দুই জায়গায় থাকতে পারে? আইনস্টাইনের মনে হয়েছিল, ঈশ্বর এ বিশ্বজগৎ নিয়ে আর যাই হোক, এ রকম খামখেয়ালি 'পাশা' খেলবেন না। তাই তিনি বাতিল করে দিয়েছিলেন কোয়ান্টাম বলবিদ্যার ওপর ভর করা তাঁর এই ভাবনা। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই বিজ্ঞানী সম্প্রতি কাকতালীয়ভাবে সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করেছেন।
প্রমাণ করেছেন আইনস্টাইনের 'ভুল' আসলে ভুল ছিল না। সান্টা বারবারায় অ্যান্ড্রু ক্লেল্যান্ড ও জন মার্টিনিস নামের এই দুই গবেষক এমন একটি অতি পুঁচকে ডিভাইস তৈরি করেছেন, যেটিকে বলা যেতে পারে রহস্যময় কোয়ান্টাম শক্তি ব্যবহার করা মানুষের তৈরি প্রথম যন্ত্র।
সাধারণত আমাদের চারপাশের যাবতীয় বস্তু নিউটনীয় পদার্থবিজ্ঞানের প্রথাগত সূত্র মেনে চলে। কিন্তু আমাদের চারপাশের বিশাল জগতের বাইরেও একটি অতিপারমাণবিক স্তরের জগৎ রয়েছে, যে রাজ্যকে এ প্রথাগত নিয়ম শাসন করতে পারে না। এই অতি-আণুবীক্ষণিক জগতের ব্যাখ্যা পেতে গিয়ে আইনস্টাইন প্রথম কোয়ান্টাম বলবিদ্যা তত্ত্বের সদ্ব্যবহার করেন।
কিন্তু পরে তাঁর মনে হয়েছিল, কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানে সবকিছু বড্ড বেশি অনিশ্চয়তায় ভরা। এই সমস্যা আমাদের চিরায়ত নিউটনীয় পদার্থবিজ্ঞানের প্রথাগত সূত্রের ভেতরে নেই। তাই এটি বাতিল করে দিয়ে আইনস্টাইন সে সময় এই বিখ্যাত উক্তি করেছিলেন, 'গড ডাজ নট প্লে ডাইস উইথ দি ইউনিভার্স'।
'সায়েন্স' সাময়িকীর লেখক আড্রিন চো কোয়ান্টাম বলবিদ্যা সম্পর্কে বলেন, 'কোয়ান্টাম তত্ত্ব নির্দেশ করে যে, শুধু অসংলগ্নভাবেই অতিমাত্রায় পাতলা বস্তু শক্তি শুষে নিতে পারে এবং এটি কখনো যথাযথভাবে এক জায়গায় স্থির করতে পারে না। সুতরাং এ ক্ষেত্রে আমরা আক্ষরিকভাবেই বলতে পারি, একটি বস্তু একই সঙ্গে দুটি জায়গায় অবস্থান করতে পারবে।
'
আড্রিন চো বলেন, এই জিনিসই বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো কোয়ান্টাম শক্তি ব্যবহার করে সরলতম মানের একটি ডিভাইস তৈরি করলেন। এর ফলে প্রথাগত পদার্থবিদ্যায় কোয়ান্টাম শক্তির মিশ্রণে নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রে এক নতুন সম্ভাবনার বিশাল দুয়ার খুলে গেল। এমনকি কোনো একদিন এই কোয়ান্টাম বলবিদ্যার মাধ্যমে আমাদের অনুভূতির জগৎকেও প্রভাবিত করার গবেষণা সম্ভব হতে পারে বলে মনে করেন আড্রিন।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই বিজ্ঞানী এ ক্ষেত্রে যে ডিভাইসটি তৈরি করেছেন তা এতই পুঁচকে যে, কোনোভাবে আমরা খালি চোখে সেটাকে দেখতে পারি। আধাপরিবাহী ধাতবকে পরম শূন্য তাপমাত্রার কাছাকাছি অর্থাৎ হিমাঙ্কের নিচে প্রায় ২৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখা হয়, তারপর এর শক্তির বৃদ্ধি ঘটানো হয় 'এক মাত্রার কোয়ান্টাম' শক্তি দিয়ে।
সে সময় এর স্পন্দনের মাত্রা দাঁড়ায় এক সেকেন্ডে ৬০০ কোটিবার, যা শনাক্তের উপযুক্ত বিদ্যুৎ-স্রোত উৎপাদন করে। আর তখনই ডিভাইসটিকে মোটা ও পাতলাভাবে দুটি অবস্থানে দেখায় এবং তাদের শক্তিরও দুটি অবস্থা তৈরি হয়। একটির শক্তি খুবই বেশি, অন্যটির কম। এ অবস্থা একমাত্র কোয়ান্টাম বলবিদ্যার নিয়মেই সম্ভব।
আড্রিন বলেন, একমাত্র এই ডিভাইস ছাড়া পদার্থবিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত একটি বস্তু একই সঙ্গে দুটি জায়গায় অবস্থান করার আর কোনো কিছু আবিষ্কার করতে পারেনি।
যদিও এটি কোয়ান্টাম গতির একটি সরলতম অবস্থা।
কয়েক বছর ধরেই পদার্থবিদ্যায় কিছু প্রভাবের বিন্যাস রেকর্ড করা হয়েছে, যা শুধু কোয়ান্টাম বলবিদ্যায় ব্যাখ্যা করা যায়। এ বছর মার্চে বিজ্ঞানীরা প্রথম একটি ডিভাইস তৈরি করতে পেরেছিলেন, যেটি কোয়ান্টাম বলবিদ্যার নিয়ম মেনে চলে। এই ঘটনা এমন একটি মাইলফলক, যা কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মতো যন্ত্রের ব্যবহারিক বিকাশ ঘটাতে পারবে। এই কোয়ান্টাম কম্পিউটার সাধারণ কম্পিউটার প্রসেসর থেকে অতি মাত্রায় দ্রুতগতিসম্পন্ন হবে।
সুত্রwww.kalerkantho.com
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।