অলসদের দিয়ে কী আর হয়। আলসেমি ছাড়া!
একটা সময় ছিল যখন সিলিকন ভ্যালির সব উদ্যোক্তারাই এসেছে কোন না কোন গ্যারেজ থেকে। তাদের সবারই একটা ধারণা ছিল, সে ধারণা তারা পণ্যে বা সেবা্য় রূপান্তর করেছে এবং তাদের প্রাথমিক সাফল্য এত চমৎকার ছিল যে, তাদের পক্ষে ক্যাপিটাল রাইজ করা সম্ভব হয়েছে গোলামকুচির মতো। কিন্তু ডড-কম বাবল বুমের পরের সময় অর্থাৎ গত এক দশকে কিন্তু ব্যাপারটি অত সহজ নাই। এখন অনেকে এমন কি অনেক টাকা রেইজ করেও সাফল্যের সঙ্গে হেরে যান।
এরিক রাইজ তাদের মধ্যে একজন। চমৎকার কারিগরী জ্ঞানের অধিকারী রাইজ না হলেও গোটা দশেক স্টার্টআপের সঙ্গে কাজ করেছেন। চমৎকার সব পণ্য তৈরি করেছেন যা দোকানের শেলফের শোভা বাড়িয়েছে কিন্তু টাকা কামাতে পারে নি।
২০০৪ সালে গোটা দশেক ব্যর্থ কোম্পানির সাফল্যের পর এরিক এবং আরো কয়েকজন মিলে আইএমভিউ গঠন করে। এরিকের সঙ্গী-সাথীরাও সবাই সাফল্যের সঙ্গে একাধিকবার ফেইল করা।
তারা সবাই মিলে একটা কোন নতুন কিছু করতে চেয়েছে। প্রোডাক্ট বানানোর টিম গঠন করার সময় এরিক একটা নতুন কোন পদ্ধতি খোঁজার চেষ্টা করে। জাপানের টয়োটা কোম্পানির লিন ম্যানুফ্যাকচারিং এর বিষয়ে আগ্রহী হয়ে তিনি সেটাই তার প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্টে প্রয়োগ করলেন। তাদের প্রোডাক্ট হচ্ছে – অবতার, দি ভার্চুয়াল লাইফ। নতুন পদ্ধতিতে এরিকরা প্রথম কাস্টোমারের কাজে শিপ করে একদম আধা খেচড়া একটা জিনিষ।
তারপর থেকে তারা কোন কোনদিন বারোটা রিলিজও ছেড়ছে!!
২০১২ সালে ওদের রেভিনিউ ছির ৫০ মিলিয়ন ডলারের বেশি, শখানেক কর্মী এবং প্রতিদিন ৭ হাজর অবতার!
এরপর অনেকেই তাদের ম্যাজিক জকনতে চাইলে, এরিক তার অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা সবার জন্য বলতে থাকেন। অনেকই ব্যাপারটাকে পাত্তা দেয়নি। তবে, মাত্র বছর দুয়েকের মধ্যে লিন স্টার্টআপ নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য একটি অনুসরণীয় পদ্ধতিতে পরিণত হয়েছে। ও রেইলির মতো থট-লিডারও এরিকের এই পদ্ধতি নিয়ে আলাপ আরোচনা করেছেন, লেখালেখি করেছেন।
দিনে দিনে এরিক এই দারণাকে সংহত করেছেন, লিপিবদ্ধ করেছেন এবং একটি কাঠামো দিয়েছেন।
এরিকের এই বইতে লিস স্টার্টআপের পাচটি মূল নীতি আলোচিত হয়েছে। এগুলো হল-
১. উদ্যোক্তারা সর্বত্র : উদ্যোক্তা হওয়ার হন্য তোমার গ্যারেজ থাকতে হবে এমন কোন কথা নাই। চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে নতুন কোন সেবা বা পণ্য আনার কথা যে ভাবে, সেই উদ্যোক্তা। কাজে লিন স্টার্টআপ পদ্ধতি যে কোন সাইজের প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য।
২. উদ্যোগ হল ব্যবস্থাপনা : স্টার্টআপ কিন্তু প্রতিষ্ঠান, কোন ধারণা বা খালি পণ্য নয়।
কাজে তার একটি ব্যবস্থাপনার বিষয় রয়েছে। বিশেষ করে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে টিকে থাকার জন্য তাকে সারাক্ষণই লড়তে হয়। আমার হিসাবে, উদ্যোক্তাকে বলা যায় যে কি না তার স্টার্টআপকে টিকিয়ে রাখতে নিত্যনতুন উদ্ভাবন করে।
৩. শিক্ষা যাচাই : কেবল কিছু তৈরি, পণ্য ও সেবার সৃস্টি বা টাকা কামাই-এর জন্য স্টার্ট আপ টিকে থাকে না। বরং তারা টিকে গিয়ে শিখে যায় কেন তারা সাসটেইন করেছে।
কাজে তাদের টিকে থাকার জানান বিষয় প্রতিনিয়ত বৈজ্ঞানিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা উচিৎ।
৪. বানাও-মাপো-শেখো: স্টার্টআপের মৌলিক কাজ কী? ধারণাকে একটি পণ্য বা সেবাতে পরিণত করা, কাস্টোমারদের প্রতিক্রিয়া দেখা ও অনুধারণ করা এবং শেখা যে ঐ পণ্য বা সেবা ওখানে থামবে না এগিয়ে যাবে। সকল স্টার্টআপকেই এই ফীডব্যাক প্রসেসকে ভিত্তি করে এগিয়ে যেতে হবে।
৫. উদ্ভাবননের একাউন্টিং – মজার বিষয় হচ্ছে যে কোন এভার এক্সাইটিং উদ্ভাবনকেও মাপতে হয় অথ্যন্ত বোরিং পদ্ধতিতে। কাজে এই সকল বোরিং প্রসেস – যেমন কেমন করে অগ্রগতি মাপা যাবে, কীভাবে মাইলস্টোন ঠিক করবো, কোনটিকে অগ্রাধিকার দেবো – সেই বিষয়গুলোতে যথেষ্ট সময় দিতে হবে।
কাজে, প্রচলিত একাউন্টিং যেখানে খালি টাকা পয়সার হিসাব রাখা হয়, তার বাইরে গিয়ে একাউন্টিং করতে হবে।
এছাড়াও তিনি আলাপ করেছেন কেন স্টার্টআপ ফেইল করে।
আমার নিজের অবশ্য ধারণা হলো সাফল্যের সঙ্গে ফেইলের সংখ্যা সমাজে যত বাড়ে , সফলতার গল্প তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা তত বাড়ে।
এই ঈদে প্রথম আলো ঈদসংখ্যা, যদ্যপি আমার গুরু র অনুসঙ্গের সঙ্গে আরো যে দুইটা বই পড়বো বলে ঠিক করেছি, এরিক রাইজের এই বই তার একটি।
যারা উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখে, যারা ইতিমধ্যে পথে নেমে পড়েছেন এবং যারা অনেকটা দূর পাড়ি দিয়েছেন তাদের সবার জন্যই এই বইটা একটা চমৎকার বই।
শেখার জন্য তো বটে, যা শিখেছন এতদিন সেগুলো ভুলে যাওয়ার জন্য।
সবার সেকেন্ড ডিফারেন্সিয়াল নেগেটিভ হোক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।