শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড কিন্তু শিক্ষিত লোকই জাতির মেরুদণ্ড নহে
র্যাব যখন গঠন করা হয় তখন এর ক্রসফায়ার নিয়ে দেশে বিদেশে ব্যাপক সমালচনার ঝড় উঠে। কিন্তু একশ্রেণীর আঁতেল বলতে লাগল, এভাবে শর্টকাটে সন্ত্রাস দমন(!) করতে পারলে তো ভালই। দেশের মানুষও আরামে থাকবে। বিএনপি সরকারের অই সময়টা আসলেই যথেষ্ট খারাপ ছিল। প্রকাশ্যে গোলাগুলি, মানুষ খুন করার পর টুকরো করে বস্তাবন্দি করা, কাফনের কাপড়ে চিঠি দিয়ে চাঁদা দাবি করা এসব ছিল একেবারেই সাধারন ব্যাপার।
তারপর মহামান্য সরকার র্যাব গঠন করে জাতিকে উদ্ধার(!) করলেন। র্যাবের প্রথম অপারেশন ছিল কারওয়ান বাজারের ত্রাস পিচ্চি হান্নানকে খতম করা। হুজুগে বাঙালি তো আরও খুশি। কি দরকার শুধু শুধু থানা পুলিশ কোর্ট কাচারি করা। খালি পয়সা খরচ!!!! এরপর কয়েকবছর র্যাবের এই ক্রসফায়ার নাটক চলতে লাগলো।
মাঝখানে দুই একটা ছোটখাটো ভুল এই যেমন খিলগাঁওয়ে সন্ত্রাসি সুমনকে মারতে যেয়ে ভুলঃবশত পলিটেকনিকের ছাত্র সুমন হত্ত্যা, রামপুরায় কায়সার আহমেদ বাপ্পির বদলে কায়সার মাহমুদ বাপ্পি হত্যা। তবু কেউ র্যাব নিয়ে কিছু বলে না শুধু দু একজন চুচিল ছাড়া। আমার পরিচিত কয়েকজনকে বলতে শুনেছি ৫০ জন সন্ত্রাসী মারতে যেয়ে যদি দু একজন সাধারন লোক মরে তাতে এমন ক্ষতি কি? দেশ তো সন্ত্রাস মুক্ত হচ্ছে। এই অবারচীন বলদগুলাকে কে বুঝাবে এভাবে যদি কোন দেশ অপরাধ মুক্ত হয়, তাহলে তো কমিউনিস্ট আমলের রাশিয়া আর এখনকার উত্তর কোরিয়া সবচেয়ে অপরাধ মুক্ত দেশ। তবু র্যাবের ক্রসফায়ার নাটক মেগাসিরিয়ালে রুপ নিতে লাগলো।
এই নাটকে একটু ছেদ পড়ল ঝালকাঠির লিমনের ঘটনার পর। চারিদিকে ব্যাপক সমালচনা আর আন্তর্জাতিক মহলের বিরুপ প্রতিক্রিয়ায় র্যাব এবার তাদের কাহিনি একটু পরিবর্তন করতে বাধ্য হোল। এবার তারা শুরু করল বন্দুকযুদ্ধ এপিসোড। এর পাশাপাশি সাদা পোশাকের বাহিনী দিয়ে গুমের খেলা চলতে লাগলো। আম জনতা তাও খুশি।
দেশ সন্ত্রাস মুক্ত হচ্ছে। আগে যাদেরকে র্যাব হত্যা করেছিলো তারা সন্ত্রাসি, চাঁদাবাজ, ডাকাত হিসেবে নিজেদের এলাকায় কুখ্যাত ছিল। কিন্তু এখন র্যাব আরও বেপরোয়া। যেকোনো মূল্যেই তাদের অপকর্ম জায়েজ করতে হবে। তাই তাদের তথ্য ডানা (মিডিয়া উইং) দিয়ে নিহত ব্যাক্তিকে যেকোনো ভাবে হোক অপরাধি প্রমান করার প্রানান্তকর চেস্টা।
কিন্তু এবারের ঘটনা র্যাবের আগের সকল অপকর্মকে ছাড়িয়ে গেছে। একটা সমাজে নীতি নৈতিকতার কতটুকু অধঃপতন হলে একজন বৃদ্ধা মহিলাকে নিয়ে এরকম বাজে কাহিনী সাজানো হয় ভাবতে অবাক লাগে। খবরে প্রকাশ------
কুষ্টিয়ায় খুন হওয়া ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতা রফিকুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে তাঁর শাশুড়িসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। র্যাবের দাবি, রফিকুল হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন তাঁর শাশুড়ি।
র্যাবের ভাষ্যমতে, রফিকুল ইসলামের শাশুড়ি লিপি আক্তার হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।
লিপির কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে র্যাব দাবি করে, প্রথম স্ত্রী রিনা খাতুনের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পর তাঁর (লিপি) ছোট মেয়ে আয়েশা সিদ্দিকা ওরফে ঝরাকে বিয়ে করেন রফিকুল। এটা বছর পাঁচেক আগের ঘটনা। এরপর রফিকুল শাশুড়ি লিপির দিকে নজর দেন। অস্ত্রের মুখে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। শাশুড়ি বাধা দিলে রফিকুল মেয়েকে মেরে ফেলার হুমকি দেন।
এভাবে রফিকুলের সঙ্গে লিপির পাঁচ বছর সম্পর্ক চলতে থাকে।
র্যাবের ভাষ্যমতে, লিপি আক্তার তাদের বলেছেন, রফিকুল একপর্যায়ে লিপির আরেক মেয়ে স্নিগ্ধার সঙ্গেও জোর করে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এ থেকে তিনি রফিকুলকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। এ জন্য তিনি দুই লাখ টাকা দিয়ে মোহাম্মদ আলী মহব্বত, ফজলুর রহমান, মিজানুর রহমান, খেলাফত, শিমুল, সোহেল রানা, মধু ওরফে মন্টু ও তোতাকে ভাড়া করেন। এ পরিকল্পনারই অংশ হিসেবে গত ৫ জানুয়ারি তাঁকে হত্যা করা হয়।
রফিকুল ঢাকা মহানগর বিএনপির ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সচিব ও বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ী ছিলেন। র্যাব পরিচয়ে একদল ব্যক্তি গত ৫ জানুয়ারি কুষ্টিয়া থেকে তাঁকে অপহরণের পর হত্যা করে।
রফিকুল হত্যায় শাশুড়ি জড়িত: র্যাব
আর কিছুদিন পর হয়ত সরকার বদল হবে। কিন্তু পরবর্তী সরকার এসেও যদি এসব বাহিনীকে নিজেদের পেটয়া বাহিনিতে রুপান্তর করে তাহলে পাবলিকের দুর্ভোগ বাড়বে বৈ কমবে না। এসব বিশেষ বাহিনী গঠন করার মূল উদ্দেশ্য জনগনের নিরাপত্তা দেয়া।
পুলিশ তো বহুত আগেই পচে গেছে। এখন সশস্ত্র বাহিনিকেও এসব খিচুড়ি বাহিনিতে ঢুকিয়ে পচানর প্রক্রিয়া চলছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।