shamseerbd@yahoo.com
একজন একজন করে নানা অজুহাতে কেটে পরল, দিন শেষে আমরা রইলাম পাঁচজন। পাঁচজনে মিলে টাঙ্গুয়ার হাওড়ে ঘুরতে গেলে মজাটা ঠিক পুরো হবে বলে মনে হলনা, শেষমেষ প্ল্যানটা বাদ দিতে হল, আগে থেকে বুকিং দিয়ে রাখা উপজেলা পরিষদের ডাকবাংলোর বুকিং বাতিল করতে হল, হাসান ভাই অবশ্য একটু ক্ষ্যাপলেন শেষ মুহুর্তে এমন কর্মের জন্য। মন খারাপ হলেও সন্ধ্যাটা অসাধারন কাটাতে না যাওয়ার কস্টটা মোটামুটি ভুলেই গেলাম। বিজয় দিবসটাও চমৎকার কেটে গেল ঘোরাঘুরি আর আড্ডায় । তবুও তিনদিনের বন্ধটা এভাবে চলে যাবে এটাত ঠিক মেনে নেয়া যাচ্ছিলনা ।
ক্যাম্পাসের ছোট ভাই ব্লগার কথক পলাশ অনেক আগেই বলে রেখেছিল ভাই বহুত ঘোরাঘুরিত করছ সময় পাইলে আমার এদিকে একবার আস, ঘুরে দেখাব অনেক কিছু। একদিনে ঘুরে দেখার জন্য টাঙ্গাইল বেশ ভাল জায়গা মনে হল। আড্ডায় বসে পলাশকে ফোন দিলাম, কোন দ্বিধা ছাড়াই বলল কাল কখন রওয়ানা দিবা জানাও, আমি তোমাদের রিসিভ করব। ফোন করে একটা গাড়ি ঠিক ও করে ফেললাম। সো সকালে আমরা যাচ্ছি- এই ডিসিশান নিয়ে বিজয় দিবসের আড্ডা শেষ হল।
টাঙ্গাইল বাস স্টেশনে আমাদের জন্য অপেক্ষায় পলাশ। তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে সামনের সিটে বসিয়ে দেয়া হল। শুরুতেই তার বিস্ফোরক ঘোষনা ভাই আমি কিন্তু ঐ জায়গাগুলো ঘুরে দেখেছি ষোল বছর আগে। আমরাত আকাশ থেকে পড়লাম, বলে কি, গাইডের যদি এই দশা হয় না জানি আমাদের ঘুরে বেড়ানোর কি পরিণতি হয়। যাই হউক তাই বলেত খাওয়া দাওয়ার সাথে কোন আপোষ চলেনা।
জনপ্রতি অর্ধেক বোয়াল নিয়ে বসে পড়লাম। এমন টাটকা বোয়াল মাছ ঢাকায় পাওয়া সম্ভবনা। অবশ্য আমাদের মাঝেও যে দু একটা মাম্মী ড্যাডি নাই তা না, ওরা দুনিয়ার যেখানেই যাক ফার্মের মুরগী আর খাসী ছাড়া অন্য কোন কিছু চেখে দেখতে রাজি না, এমন ও হয়েছে সাগর পাড়ে গিয়েও তারা রূপচাঁদা আর কোরালের বদলে মুরগী নিয়ে বসে পড়েছে , আমরা যতই ক্ষ্যাপাইনা কেন তারা নির্বিকার ভঙ্গীতে মুরগীর হাড় চাবাতে ব্যস্ত থাকেন।
রাস্তার দুপাশে হলুদ সবুজের মখমল- দিগন্তজুড়ে ছড়ানো সরিষার ক্ষেত দুপাশে রেখে আমরা আগাতে থাকি, গন্তব্য মাওলানা ভাষানীর স্মৃতি বিজড়িত সন্তোষ জমিদার বাড়ী। পথিমধ্যে আমরা পাশ কাটিয়ে যায় ভাষানী বিঞ্জান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
অনেকটা পথ আগানোর পর পলাশের মনে হল কাউকে জিজ্ঞাসা করা দরকার। যা জানা গেল তাতে বোঝা গেল আমাদের গাইড একজন গাইডেড গাইড- দুপাশের জনতার সাহায্য ছাড়া তিনি অচল, যার পরিণতি আমরা অনেকটা পথ বেশী চলে এসেছি, মুল ঘটনা হচ্ছে সন্তোষ জমিদার বাড়ীকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে ভাষানী বিঞ্জান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ভাষানীর মাজার ক্যাম্পাসের ভিতরেই, দেখা পেলাম তাকে দেয়া মাও সে তুং এর ট্রাকটর। আফসোস রয়ে গেল মুল জমিদার বাড়ীর অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে না পারার জন্য, সেটা এখন ছাত্রী হল !!!!
কিছুটা হতাশা ভর করলেও পরবর্তী গন্তব্য জানতে পারার সাথে সাথে সবাই কেমন নড়েচড়ে বসল। টাঙ্গাইল এর সুনাম যে কারনে চারিদিকে ছড়িয়ে আছে সেই চমচমের উদ্দেশ্য আমাদএর যাত্রা।
সোজা ঘোষের কারখানায় গিয়ে হাজির হলাম পাঁচআনি বাজারে। এখানে দুটা পাঁচআনি আর একটা ছআনি নামে জায়গা আছে। জমিদার সাহেব তার তিন ছেলের মাঝে বড় ছেলেকে ছআনা আর ছোট দুই ছেলেকে পাঁচ আনা করে তার সব সম্পত্তি ভাগ করে দিয়েছিলেন। যাই হউক ছোট দুজনকে ঠকানো হল কিনা এই নিয়ে আলোচনায় দেখলাম কারো তেমন একটা আগ্রহ নেই, সবাই চমচম নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরল।
পরে একটা ছোটখাট জমিদার বাড়ি দেখে (নাম ভুলে গেলাম) আমাদের গন্তব্য মহেড়া জমিদার বাড়ী, যেটা এখন পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
চমৎকার পরিপাটি করে গুছিয়ে রাখা হয়েছে, পাশাপাশি তিনটা ভবন, অনন্য স্হাপত্যশৈলী। একে আমরা ঘুরে দেখলাম সবগুলো, পুলিশ বিভাগকে ধন্যবাদ যে এটাতে জনগনের প্রবেশকে তারা অন্তত সংরক্ষিত করে রাখেননি।
শীতের সূর্যটা আর যাই হউক ঘোরাঘুরি এবং ছবি তোলার জন্য খুব একটা ভালনা, এটা প্রমান করার জন্যই মনে হয় সে টুপ করে কখন যে ডুবে গেল আমরা টেরও পেলামনা। মনোরম জমিদার বাড়ী থেকে বের হয়েই দেখা পেলাম ভাঁপা পিঠার । চমচমের আরেকটি প্যাকেট খোলা হল , সাথে এইবারের শীতে প্রথমবারের মত খেয়ে নিলাম ভাঁপা পিঠা।
ফিরে যাবার ফিরতি পথ ধরতে হল। মাঝ খানে পলাশকে নামিয়ে দিলাম জামরুকি নামকজায়গায়। পলাশ প্রস্তাব দিল ঐখানে যে সন্দেশ পাওয়া যায় সেটা খুবই চমৎকার, কিন্তু টাটকা চমচমের স্বাদ মুখে নিয়ে ওটা চেখে দেখার ব্যাপারে কারো তেমন ইচ্ছা আছে বলে মনে হলনা। এই আফসোসটা বাড়ল যখন দেখলাম ফেসবুকে ব্লগার ক্যামেরাম্যান ভাই বলল ঐ সন্দেশ খেতে যেন না ভুলি !!!! কিন্তু ততক্ষনে যে আমরা ঢাকার পথে অনেকখানি চলে এসেছি !!
চমৎকার একটা দিন কাটিয়ে ফিরে আসলাম নিজের ডেরাই, হালকা আক্ষেপ থেকে গেল ঐ সন্দেশ খেতে না পারার জন্য। ছোট গল্পের স্বার্থকতা নাকি পাঠকের মাঝে একটা আগ্রহ তৈরি করে ধুম করে গল্পটা শেষ করে দেওয়া।
নিজেকে ও অমন ভাবে প্রবোধ দিলাম , ঘাটাইলে ও আরো কিছু জমিদার বাড়ী আর দর্শনীয় জায়গা আছে, ঐগুলো যখন দেখতে যাব তখন ঐ সন্দেশ খেয়ে আসবো !!!!!
মাওলানা ভাষানীর মিটসেফ :
জমিদারী আড্ডায়
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।