ব্রজেন্দ্র নাথ ঠাকুর, নামটা বেশ বড় আর উচ্চারণটা আরো কঠিন, তাই সবাই সংক্ষেপে তাকে বজ ঠাকুর বলে ডাকে। বয়স আশি ছুঁই ছুঁই করছে কিন্তু শরীরের গড়ন ভালো হওয়ায় বয়স বোঝা যায় না। শৈশবে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে এটা তার জন্য যেন একটা গর্বের বিষয়। বজ ঠাকুর সব সময় সাধু ভাষায় কথা বলে এটাও যেন তার একটা অহংকার। কথায় কথায় সে নিজে নিজে বলে, আমি হইলাম গিয়া সেই আমলের পঞ্চম শ্রেণী পাস।
আগে শুদ্ধ বাংলা ভাষায় কেউ আমার সহিত কথা বলিতে পারিতো না, ইদানিং কেউ কেউ চলিত ভাষায় কথা বলে তবুও কথা বলার মধ্যে হাজার গণ্ডা ভুল। আরে নিজের মায়ের ভাষাটাই যদি ঠিক মতো বলিতে না পারিলে তবে আর শিখিলে কী? আর গীতা পাঠ? গীতা পাঠ, পূজা অর্চনা পালন করিবার মতো ঠাকুর তো এই অঞ্চলে দ্বিতীয়টি নেই।
বজ ঠাকুর চল্লিশ বছর যাবত পূজা মণ্ডপে পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করে আসছে। আগের দিনে কেউ কোন সুপরামর্শের জন্য বজ ঠাকুরের স্মরণাপন্ন হতো, এখন শিক্ষার হার বেড়েছে, উচ্চ শিক্ষাও বেড়েছে তাই বজ ঠাকুরের কদর কিছুটা কমেছে তবে সনাতন রীতি-নীতির বিষয়ের এখনো বজ ঠাকুরই শ্রেষ্ঠ।
বাসন্তী বয়স যখন পনেরো কিংবা ষোল তখন দীপক চক্রবর্তীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়।
বিয়ের সমস্ত সনাতন আনুষ্ঠানিকতা পালন করে বজ ঠাকুর। সেসূত্রে বজ ঠাকুর শেফালি আর দীপকের সংসারে অযাচিতভাবে হস্তক্ষেপ করে। দীপক সেটা বুঝতে পেরেও মেনে নেয়।
দীপক চক্রবর্তীর দু’মেয়ে। বড় মেয়ে অঞ্জনা চক্রবর্তী পড়াশোনায় ভালো, দেখতেও অপূর্ব সুন্দরী।
নবম শ্রেণীতে লেখাপড়া করার সময় থেকে বিয়ের জন্যসম্বন্ধআসতে থাকে, প্রথম থেকেই দীপক বাবুর ইচ্ছা দু’মেয়েকেই লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ করবে। অঞ্জনার এস.এস.সি পরীক্ষার ফলাফলও ভালো আর সে কারণেই বিয়ের সম্বন্ধআরো বেশি করে আসতে শুরু করল।
একবার সম্বন্ধএলো পার্বতীপুর থেকে। পাত্র এম.এস.সি পাস করে একটা বেসরকারী কলেজে অধ্যাপনা করে। দেখতে শুনতে ভালো, ধনাঢ্য পরিবারের ছেলে।
পাত্রের বাবার প্রায় এক’শ বিঘা আবাদি জমি আছে, যা তার দু’ছেলের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ হলে পাত্রের ভাগে পরবে পঞ্চাশ বিঘা জমি। এমন পাত্র পাওয়া দুষ্কর ব্যাপার তারওপর বর্ণ অনুযায়ী পাত্র পাওয়া তো আরো কঠিন।
সবকিছু শুনে দীপক বাবু কিছুটা নমনীয় হলো। বাসন্তী সামান্য আপত্তি থাকলেও পাত্রের যোগ্যতা, বিষয় সম্পত্তি আর পারিবারিক ঐতিহ্যের কাছে সেও নীরব সমর্থন দিল। অঞ্জনা একবার আপত্তি তুলতেই বজ ঠাকুর রাম, রাম বলে তাকে তিরস্কার করল।
বজ ঠাকুর আরো বলল, কলি যুগ দীপক বুঝিলে, আগের দিনে মেয়েদের বিবাহ হইয়াছে কোনদিন জানিতেও চাহে নাই পাত্র কী করে? কোথায় বাড়ি? পাত্রের গায়ের রং কী রকম? আর আজকাল কী না বিয়েতে মেয়ের সম্মতি লইতে হইবে রাম, রাম, রাম।
দীপক বলল, না ঠাকুর মশাই অঞ্জনা বলছিল ও আরো লেখাপড়া করবে।
লেখাপড়া করিবে তো ভালো কথা, শিক্ষিত পরিবার, জামাই বাবু নিজেও কলেজের অধ্যাপক, অঞ্জনার লেখাপড়ার কোন অসুবিধা হইবে না। জামাই বাবু নিজের আগ্রহে অঞ্জনাকে লেখাপড়া শিখাইবে।
দীপক বাবু অঞ্জনার বিয়ে দিল অনেক টাকা পণ দিয়ে এবং খুব ধুমধাম করে।
দীপক চক্রবর্তীর ছোট মেয়ে প্রিয়ন্তী চক্রবর্তী। রাজশাহী কলেজে লেখাপড়া করে। অঞ্জনার মতো প্রিয়ন্তীও এস.এস.সি পাস করার আগে থেকেই তার বিয়ের সম্বন্ধআসতে থাকে কিন্তু দীপক বাবুর একই কথা, অঞ্জনার বিয়ে দিয়েছি, আশা করেছিলাম বিয়ের পর জামাই তাকে লেখাপড়া শেখাবে কিন্তু তা আর হলো না। আসলে বিয়ের পর মেয়েদের আর লেখাপড়া হয় না।
প্রিয়ন্তীও তার সিদ্ধান্তে অনড়, আগে লেখাপড়া শেষ করবে, নিজের পায়ে দাঁড়াবে, তারপর বিয়ে।
চলবে...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।