কিচ কিচ কুচ কুচ কাচ কাচ কোচ কোচ!!!
১৯
কৃত্রিম সাগরের দৃশ্যের সামনে সোফায় বসে রয়েছেন রাকিবিল হাসানাত ও নিশু। নিশুর হাতে কফির মগ।
রাকিবিল হাসানাত বললেন, “তুমি বোধ হয় ফার্স্ট হয়েই যাবে”।
নিশু মুখ বাঁকা করল।
“ফার্স্ট হয়ে চলে যাবার পর কি তুমি আমাদের ভুলে যাবে? ”
“কেন ভুলব? ” বলল নিশু, “কখনই ভুলব না”।
“এত টাকা পয়সা নিয়ে কি করবে তুমি? ”
“জানি না”, বলল নিশু, “মনে হয় সাগরের তীরে একটা বাড়ি কিনে থাকব”।
“বিয়ে করবে না? ”
“আপনি তো জানেন যে আমি ...”
“আহা জানি তো। কিন্তু মানুষ তো ছাই থেকেও শুরু করে, তাই না? কি, সংসার করার ইচ্ছা নেই? ”
“আছে”।
“আছে কোন পছন্দের পাত্র? ”
নিশু একটু ভেবে বলল, “আছে”।
“কে সে? ”
“সে দেখতে ঠিক আপনার মত”।
হঠাৎ ঘর ফাটিয়ে হাসতে লাগলেন রাকিবিল হাসানাত। নিশু বলল, “হাসির কি বললাম? ”
“কিছু বল নি? ”
“কই না তো”।
রাকিবিল হাসানাত প্রসঙ্গ পালটিয়ে বললেন, “আর মাত্র তিনদিন পরেই থার্ড অ্যান্ড ফাইনাল সিমুলেশন। তৈরি থেকো”।
“থাকব”।
“গুড বাই”।
“আপনার গল্পটা বলবেন না? ’
“কোন গল্প? ”
“ঐ যে বলেছিলেন এক স্বপ্নালু তরুণ না কি যেন? ”
“ও আচ্ছা ঔটা? আচ্ছা শোন তাহলে। অনেক দিক আগে এক দেশে এক স্বপ্লালু তরুণ বাস করত। স্কুল কলেজের পড়ালেখা তার ভালো লাগত না। তার ভালো লাগত প্রোগ্রামিং।
একদিন তার পরিচয় হল আন্ডারগ্রাউন্ড একটা প্রোগ্রামিং দলের সাথে। তাদের সাথে গোপনে কাজ করতে লাগল সে। এই ফাঁকে যে বিয়ে করল ফুটফুটে এক তরুণীকে।
তারপর...”
“তারপর কি? ”
“এখন বলব না। পরে বলব”।
“তারপর তাদের সংসারেই জন্ম হল আপনার, তাই তো? ”
“বলতে পারো”।
“বলতে পারো মানে? ”
“ঐ তো, বলতে পারো”।
২০
প্রফেসর আবুল কাশেম অবসরে দেশ বিদেশের নানা নিউরোস্পেশালিস্টের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেন। আজ যেমন তিনি মেইল করলেন আমেরিকান প্রফেসর ন্যাশ ডি নিরো-কে। তাকে তাদের দেশের নিউরোসায়েন্সের অগ্রগতি সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলেন তিনি।
ন্যাশ এই মেইলের উত্তর দিলেন তিন দিন পর। তিনি বললেন, “অগ্রগতি তো প্রচুর। বিশেষ করে নিউরাল স্টেম সেল তৈরিতে তো আমাদের ল্যাবোরেটরি সাফল্যের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল”।
আবুল কাশেম জিজ্ঞেস করলেন, “কাছাকাছি মানে? ”
ন্যাশ উত্তর দিলেন, “মানে হচ্ছে আমাদের নিউরাল স্টেম সেল ল্যাবোরেটরি পুরোটাই তো ক’দিন আগে পুড়ে ধ্বংস হয়ে যায়। সব কাগজপত্র পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
অর্থের দিক থেকে এটা হয়তো সামান্য ক্ষতি, কিন্তু বিজ্ঞানের দিক থেকে বিশাল ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় এই অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা। এতে করে স্টেম সেল রিসার্চে আমরা পিছিয়ে পড়লাম প্রায় বিশ বছর”।
আবুল কাশেম জিজ্ঞেস করলেন, “আগুন লাগলো কিভাবে? ”
ন্যাশ বললেন, “জানি না। ও সময় নাকি ল্যাবে বারোজন বিজ্ঞানী কাজ করছিলেন। সবাই পুড়ে কয়লা হয়ে গিয়েছেন, গড ব্লেস দোজ ডিপার্টেড সোলস, শুধু একজনের মৃতদেহ এখনও পাওয়া যায় নি”।
“কে সে? ”
“সুকুমা কাবোদাচো। জাপানী বিজ্ঞানী। বেচারা হয়তো এমন পোড়া পুড়েছে যে ওর ডেডবডি পর্যন্ত পাওয়া যায় নি। গড ব্লেস হিম”।
২১
ইন্টারপোলের অফিস।
অফিসার ডেভিড সিমকক্সের সামনে বসে আছে তিনজন মানুষ।
সিমকক্স বললেন, “আপনাদের একজনেরও আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। আপনাদের শিক্ষাগত যোগ্যতাও তেমন নেই। বাপ শ্বশুরও তেমন বড়লোক নয় যে হঠাৎ করে অর্থপ্রাপ্তি ঘটবে।
অথচ আপনারা তিনজনই গত মাসে শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় মূল্যবান ফ্ল্যাট কিনেছেন।
আপনাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ট্রেস করে দেখা গেছে, আপনাদের কাছে একই অ্যাকাউন্ট থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা পাঠানো হয়েছে।
সেই অ্যাকাউন্ট ট্রেস করে দেখা গেছে, অ্যাকাউন্টটা মৃত একজন ব্যক্তির নামে খোলা। অ্যাকাউন্টটা অ্যাকটিভ ছিল সর্বমোট দুই দিন।
এখন বলুন, এর ব্যাখ্যা কি? ”
তিন ব্যক্তি কোন কথা বলল না। শুধু একজন বলে উঠল, আমরা ইলিগাল কিছু করি নি।
কোন অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা নেয়া অপরাধ নয়”।
সিমকক্স তিনজনকে হাজতে পুরতে আদেশ দেন। তিনজনকে মারতে মারতে রক্তাক্ত করে ফেলেন তিনি।
তবু তারা কোন কথা বলে না।
২২
“আর মাত্র এক দিন”।
“হুম, জানি”, নিশু রাকিবিল হাসানাতের চোখের দিকে তাকাল।
“কি দেখছ? ”
“আপনার চোখ”।
“চোখে কি দেখছ? ”
“আপনার চোখে কি যেন আছে, ঠিক বুঝতে পারছি না”।
সিমুলেশন বিল্ডিং এ প্রতিযোগীদের মধ্যে একটা গুজব দারুণভাবে ছড়িয়ে গেছে। প্রতিযোগীদের অনেকেই নাকি নার্ভাস ডিজেনারেশনের শিকার হচ্ছে।
অনেকেই নাকি দিন দিন স্মৃতি হারাচ্ছে। আর সদ্যআবিষ্কৃত নিউরাল স্টেম সেলের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল নাকি এদের উপরেই দেয়া হচ্ছে।
ব্রেইন যদি স্টেম সেলকে গ্রহণ করে তাহলে নাকি সে অনেক শক্তিশালী হয়ে যাবে। বর্তমান থেকে পরাবাস্তবে অজস্র তথ্য নিয়ে যেতে সক্ষম হবে সে। এখান থেকে নিয়ে আসতে পারবে অনেক অনেক তথ্য।
আর যাদের ব্রেইন স্টেম সেল রিজেক্ট করবে তাদের নাকি নার্ভাস ডিজেনারেশন আগের চেয়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যাবে।
গ্র্যান্ড হলে অস্ট্রিয়ান ছেলেটা নিশুকে বলেছে, “জানো, আমরা শুনেছি একজনের বাদে সবার ব্রেইনই নিউরাল স্টেম সেল রিজেক্ট করেছে। শুধু একজনের স্টেম সেল রিজেক্টেড হয় নি। তারমানে সে-ই হতে যাচ্ছে এবারের সিমুলেশনের হিরো। তার নাম আমরা দিয়েছি দি শ্যাডো”।
রাকিবিল হাসানাত বললেন, “খুব সম্ভবত এটাই তোমার সাথে আমার শেষ দেখা”।
“কেন? ”
“কাল তুমি জিতলেই তোমাকে অঢেল টাকা পয়সা দিয়ে বসবাস করতে পৃথিবীর যে প্রান্তে ইচ্ছা পাঠিয়ে দেয়া হবে। শুধু তোমার এখানকার মেমোরিটুকু থাকবে না। ওটুকু ইরেজ করা হবে”।
“কেন? ”
“কারণ আমরা চাই না সিমুলেশনের কথা বাইরের দুনিয়ায় জানাজানি হোক”।
নিশু বলল, “আপনার গল্পটা তো শেষ হল না”।
“কোন গল্প”?
“ঐ যে বললেন এক প্রোগ্রামার বিয়ে করে এক ফুটফুটে তরুণীকে। তারপর? ”
“তারপর একদিন তরুণের একটা দুরারোগ্য অসুখ ধরা পড়ে। সে আস্তে আস্তে সবকিছু ভুলে যেতে শুরু করে। ডাক্তার তাকে বলেন, এই রোগের কোন চিকিৎসা নেই।
তখন তরুণ তার সবকিছু মনে করিয়ে দেবার জন্য একটা জিনিস তৈরী করে। জিনিসটা একটা প্রোগ্রাম। হলোগ্রাফিক প্রোগ্রাম। মানে যেটা দেখতে একেবারে মানুষের ত্রিমাত্রিক প্রতিবিম্বের মত। প্রোগ্রামটা হচ্ছে---“
কথাটা শেষ করতে পারলেন না রাকিবিল হাসানাত।
তার খুব কাশি হতে লাগল। কাশির ঠেলায় একটা কথাও বলতে পারলেন না তিনি।
২৩
বুড়ো প্যাটারসনের আজ প্রচণ্ড মন খারাপ। আজ তিনি সিমুলেশনের বাজিতে সত্তর হাজার ডলার হেরেছেন।
এক বন্ধুর কথা শুনে শেষ বয়সের সম্বল দিয়ে বাজিতে লাগিয়েছিলেন তিনি, প্রথমে কিছু লাভ হয়েছে, কিন্তু আজ তার প্রতিযোগী শোচনীয়ভাবে একশ জনের মধ্যে একশতম হয়েছে।
পুরো টাকাই গচ্চা গিয়েছে প্যাটারসনের।
ভাইয়ের বারে কিছুক্ষণ বাকিতে মদ দিলে বাড়ি ফিরলেন প্যাটারসন। ফিরেই দেখলেন, তার ড্রয়িংরুমে বসে আছে ইন্টারপোলের দু’জন কর্মকর্তা।
“হ্যালো, মিঃ প্যাটারসন”।
“অ্যাই, এখানে কি? আমি কিন্তু কিছু করি নি, মনে রাখিস, অ্যাঁ! ”
“তুমি কিছু কর নি মানে? ” ব্যঙ্গের স্বরে বললেন সিমকক্স, “সব তো তুমিই করেছ।
নিজের বউকে হত্যা করেছ তুমি। এখন চল থানায় চল”।
***
থানায় নিয়ে সারারাত হাজতে ফেলে রাখা হলো তাকে। সকালে মদ্যপ অবস্থা কাটতেই আবার সিমকক্স পড়লেন তাকে নিয়ে।
“চান্দু, তুমি ধরা পড়েছ।
ভাড়াটে খুনি দিয়ে বউকে খুন করেছ, এখন তোমার ফাঁসি হবে, ফাঁসি! ”
“বিশ্বাস করুন স্যার আমি এসবের কিছুই জানি না”।
“জানো না? তাহলে তোমার একাউন্ট থেকে এত টাকা ঐ একাউন্টে গেল কিভাবে? ”
“জানি না স্যার”।
“যে একাউন্টে টাকা গেছে ওটা তো একটা ভাড়াটে খুনির এ্যাকাউন্ট। সে তো পুলিশের Most wanted লিস্টে আছে, ও তো টাকা পেলে খুন করে। তোমার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকাও গেল, সেই ভাড়াটে খুনি খুন করল তোমারই বউকে, আর তুমি জানো না কিছুই তা কি করে হয়? ”
“স্যার, বিশ্বাস করুন”, ইতস্তত করেন প্যাটারসন, “ঐ টাকাটা আসলে আমি অন্য একটা জায়গায় পাঠিয়েছি”।
“কোন জায়গায়? খুনির শ্বশুরবাড়িতে? ”
“না স্যার”।
“তাহলে কোথায়? ”
“মানে...”
“কোথায় পাঠিয়েছিস টাকা? বল! ”
“স্যার বলছি”, অবশেষে ঢোক গিলে বলে বুড়ো, “সিমুলেশনে! ওরাই আমার একাউন্ট থেকে টাকা কেটে নিয়েছে”।
“সিমুলেশন! ” চাপা উল্লাস সামলে সিমকক্স প্রশ্ন করলেন, “সেটা আবার কি? ”
বৃদ্ধ দীর্ঘশ্বাস ফেলে তার সিমুলেশন অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে লাগল। বর্ণনার শেষে তাকে ছেড়ে দেয়া হল। সে বাড়ি গেল।
দেখল তার বউ বিছানার উপর বসে বসে পান চিবুচ্ছে।
পরদিনই নদীর ধারে পাওয়া গেল বুড়োর লাশ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।