https://www.facebook.com/ekramict
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে দুই সুইডিশ নারীর যৌন নিপীড়নের মামলার বিষয়টি এখন বিশ্বজুড়ে আলোচনার শীর্ষে। এ মামলার কারণেই মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভিত কাঁপিয়ে দেওয়া অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয় এবং সর্বশেষ গত মঙ্গলবার তিনি গ্রেপ্তারও হন। অনেকেই অভিযোগ করছেন, গোপন নথি প্রকাশের প্রতিশোধ নিতে 'ক্ষুব্ধ' যুক্তরাষ্ট্রই অ্যাসাঞ্জকে গ্রেপ্তার করিয়েছে।
তবে সুইডেন বলছে, কারো চাপে নয়, নিজেদের আইনকে সমুন্নত রাখতেই অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেছে তারা। নারী অধিকারের জন্য সুপরিচিত দেশটিতে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নবিষয়ক আইনের পরিধি অনেক বড়।
যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে পান থেকে চুন খসলেই নিপীড়নের অভিযোগ করার অধিকার আছে সুইডিশ নারীদের। অভিযোগকারী দুই নারীর মামলার বিবরণে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠে এসেছে, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বেশির ভাগ দেশেই তা অপরাধ বলে গণ্য হয় না। পাঠকদের আগ্রহের কথা বিবেচনা করে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে ওঠা ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়ন অভিযোগের বর্ণনা তুলে ধরা হলো।
অভিযোগের বিবরণ: ব্রাদারহুড মুভমেন্ট নামে একটি সংগঠনের আয়োজনে 'যুদ্ধ ও গণমাধ্যমের ভূমিকা' শীর্ষক সেমিনারে যোগ দিতে গত আগস্টে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোম যান অ্যাসাঞ্জ। এ সংগঠনের পক্ষে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার দায়িত্ব ছিল 'সারাহ' (কাল্পনিক নাম, সুইডেন অভিযোগকারী নারীর নাম প্রকাশ করে না) নামে এক নারীর।
তিনি দেশটিতে নারীবাদী নেত্রী হিসেবে পরিচিত। সারাহ সরাসরি কখনো অ্যাসাঞ্জকে না দেখলেও ফোন ও ইন্টারনেটে আলাপের মাধ্যমে তাঁদের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ সময় সারাহ স্টকহোমে অবস্থানের সময় তাঁর ফ্ল্যাটে থাকার প্রস্তাব দেন অ্যাসাঞ্জকে। এতে রাজি হয়ে ১১ আগস্ট সুইডেনে পেঁৗছেই সারাহর ফ্ল্যাটে ওঠেন উইকিলিকস সম্পাদক। ওইদিন রাতেই দুজনের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হয়।
একপর্যায়ে অ্যাসাঞ্জের ব্যবহৃত কনডমটি ছিঁড়ে যায় এবং তিনি কনডম ছাড়াই যৌনক্রিয়া শেষ করেন।
পরের দিন সকালে অ্যাসাঞ্জ যথারীতি সেমিনারে যোগ দেন। সেখানে 'জেসিকা' (কাল্পনিক নাম) নামে এক ভক্ত তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। এই নারী স্টকহোম থেকে ৪৫ মাইল দূরের এনকোপিং নামের মফস্বল শহরে থাকেন। জেসিকা পুলিশকে বলেছেন, 'টিভিতে দেখে ও পত্রপত্রিকায় পড়ে অ্যাসাঞ্জের ব্যক্তিত্বে মোহিত হয়ে যাই।
তাঁর স্টকহোমে আসার খবর পেয়ে ওই সেমিনারে যোগ দেওয়ার লোভ সামলাতে পারিনি। ' সেমিনার শেষে অ্যাসাঞ্জের সঙ্গে দেখা করলে তিনি জেসিকাকে দুপুরে একসঙ্গে খাওয়ার প্রস্তাব দেন। পরে তাঁরা দুজন একত্রে জাদুঘরে যান, সিনেমা দেখেন এবং পার্কে ঘুরতে যান। অ্যাসাঞ্জ ফের যোগাযোগের আশ্বাস দিয়ে জেসিকার কাছ থেকে বিদায় নেন।
অ্যাসাঞ্জ ওইরাতে সারাহর ফ্ল্যাটেই থাকেন এবং পরের দিন সকালে আবার জেসিকার সঙ্গে দেখা করেন।
এ সময় জেসিকা তাঁকে এনকোপিংয়ের বাড়িতে রাত কাটানোর প্রস্তাব দেন। জেসিকা বলেন, 'অ্যাসাঞ্জ সিআইএর ভয়ে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে চাননি এবং তাঁর কাছে নগদ টাকাও ছিল না। তাই আমিই ট্রেনের দুটি টিকিট কাটি। ' ওই রাতে জেসিকার সঙ্গে দুবার শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন অ্যাসাঞ্জ। প্রথমবার তিনি কনডম ব্যবহার করেন, দ্বিতীয়বার করেননি।
জেসিকা অভিযোগ করেছেন, তিনি অনুরোধ করার পরও কনডম ব্যবহার করতে অস্বীকৃতি জানান অ্যাসাঞ্জ। পরের দিন সকালে জেসিকার টাকায় কেনা টিকিটেই স্টকহোমে ফিরে যান অ্যাসাঞ্জ।
জেসিকা পুলিশের কাছে বলেছেন, অ্যাসাঞ্জ ফিরে যাওয়ার পর তাঁর সঙ্গে অনিরাপদ যৌন সম্পর্কের বিষয়টি নিয়ে ভীত হয়ে পড়েন তিনি। অ্যাসাঞ্জের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে না পেরে দুই দিন পর তিনি ব্রাদারহুড মুভমেন্ট কার্যালয়ে ফোন করেন। আর তখনই 'কাকতালীয়ভাবে' সারাহর সঙ্গে তার কথা হয়।
জেসিকার কথা শুনে সারাহ অবাক হয়ে যান এবং জানান, তাঁর সঙ্গেও অ্যাসাঞ্জের অনিরাপদ সম্পর্ক হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ দায়েরের জন্য ২০ আগস্ট সারাহ ও জেসিকা একত্রে পুলিশের কাছে যান। সুইডেনের একটি পত্রিকায় সারাহ বলেছেন, 'আমি আসলে নিজে অভিযোগ জানাতে যাইনি। একজন নারীনেত্রী হিসেবে আমি কেবল জেসিকাকে সহায়তা করতে চেয়েছিলাম। আর তাঁর অভিযোগকে জোরালো করার জন্যই আমার ঘটনাও পুলিশকে জানাই।
' সারাহ বলেন, 'আমাদের দুজনের ক্ষেত্রেই সম্মতির ভিত্তিতে সম্পর্ক শুরু হয়। কিন্তু পরে তা নিপীড়নের পর্যায়ে চলে যায়। '
শুরুতে পুলিশ ধর্ষণের এ অভিযোগ গ্রহণ করেনি। পরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টিকে মামলা হিসেবে গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। সুইডেনের প্রধান সরকারি কেঁৗসুলি ম্যারিয়ান নি বলেন, 'আমাদের আইন অনুসারে ইচ্ছার বিরুদ্ধে কনডমবিহীন সম্পর্কের বিষয়টি ধর্ষণ এবং কনডম ছিঁড়ে যাওয়ার বিষয়টি জানার পর তা পরিবর্তন না করলে যৌন নিপীড়নের আওতায় পড়ে।
' দেশটিতে অপরাধের ওপর ভিত্তি করে ধর্ষণের তিনটি মাত্রা রয়েছে। অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগটি সবচেয়ে নিম্ন মাত্রার ধর্ষণ। এ অপরাধে সর্বোচ্চ চার বছর কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।
অ্যাসাঞ্জ শুরু থেকেই ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, দুই পক্ষের সম্মতির ভিত্তিতেই স্টকহোমে তিনি যৌন সম্পর্ক গড়েছেন। লন্ডনে তাঁর আইনজীবী মার্ক স্টিফেন্স এ অভিযোগকে 'অভূতপূর্ব ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত' হিসেবে অভিহিত করেছেন।
তিনি বলেন, "বিশ্বে প্রতিদিন এমন হাজার হাজার 'নিপীড়নের' ঘটনা ঘটে। তাদের বিরুদ্ধে কিন্তু আন্তর্জাতিক পরোয়ানা জারি হয় না। " স্টিফেন্স দাবি করেছেন, সুইডিশ আইন সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণেই এমন নিপীড়নের ভুল করেছেন অ্যাসাঞ্জ। সুইডেনের একজন আইনজীবী বেন্ট হেসেলবার্গ বলেন, 'আমাদের দেশে ধর্ষণের আইন এত জটিল যে, অনেক সময় আমরা পরামর্শ দিয়ে থাকি, প্রতিবার যৌনক্রিয়ার আগে সঙ্গীর লিখিত সম্মতি নিয়ে নেবেন। ' সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস, ডেইলি মেইল, দ্য অস্ট্রেলিয়ান।
সুত্রঃ
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।