আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বৈরাচারী-২: ঈজিপ্টের ঈশ্বর ইখনাতুন

বুদ্ধিজীবী হতে ডিগ্রী লাগেনা। আরব বসন্তের জোয়ারে মধ্যপ্রাচ্যের যে কয়টি দেশ লন্ডভন্ড হয়ে গেলো তার মধ্যে অবশ্যই মিশরের নাম সবার আগে বলা যায়। লন্ডভন্ড শব্দটা ব্যবহারের জন্য অনেকেই হয়তো আমার সাথে দ্বিমত পোষন করতে পারেন, কিন্তু বর্তমান মিশরের পরিস্থিতিকে আপনি কিছুতেই সুস্থির বলতে পারেন না। জনগণ কিছু হলেই রাজপথে, তাহিরির স্কয়ারে ছুটে যাচ্ছে। স্বৈরশাসক হোসনি মোবারককে হটিয়ে তারা গণতন্ত্রের সুবাতাস আনতে চেয়েছিলো।

কিন্তু বাতাস এখন কোন দিকে বইছে তা কেউ বলতে পারছে না। যাই হোক আমি বর্তমান নই, অতীত নিয়ে লিখতে বসেছি। ইতিহাসের বইগুলো ঘাটলে সব থেকে পুরাতন যে স্বৈরশাসকের নাম পাওয়া যায় তিনি ইখনাতুন। মিশর ছিলো যার স্বীরাচার ভূমি। যীশু খ্রীষ্টের জন্মেরও ১৩০০ বছর আগের কথা।

মিশরে তখন ফারাওদের শাসন চলছে। সিংহাসনে আসীন রাজা তৃতীয় আমেনহোটেপ। রাজা আমেনটোপ আর প্রধান রানী টায়ার ছোট সন্তান চতুর্থ আমেনহোটেপ। যদিও যুবরাজ থুতমোজের সিংহাসনে বসার কথা ছিলো। কিন্তু তিনি অল্প বয়সে মারা যান।

বাবার মৃত্যুর পর খ্রিষ্টপূর্ব ১৩৫৩ সালে আমেনহোটেপ ক্ষমতায় আরোহন করেন। ক্ষমতায় আরোহনের ষষ্ঠ বছরে আমেনহোটেপ তার পুর্বের ধর্ম ত্যাগ করে ত্যাগ করেন এবং নতুন ঈশ্বর এটন এর পুজা শুরু করে। সে নিজের নাম পরিবর্তন করে রাখেন আখেনাতুন বা ইখনাতুন। যার মানে এটন এর সেবক। ইখনাতুন মিশরের লোকদের বাধ্য করতে শুরু করল নতুন ধর্ম গ্রহনের জন্য।

পুরাতন ঈশ্বরে বিশ্বাসীদের উপর নেমে আসতে শুরু করল নানামুখী অত্যাচার। প্রাচীন দেবতাদের মন্দির ছিলো কারনাক এ। ইখনাতুন সেখানে নতুন দেবতা এটনের জন্য সুরম্য মন্দির তৈরী করলেন। ইখনাতুনর রাজধানী থেবস থেকে সরিয়ে নিয়ে গেলো নীল নদের অববাহিকায় ২০০ মেইল দূরে। নতুন এক নগরীর পত্তন করলেন।

নাম রাখলেন ইখতাতুন, যার অর্থ এটনের শক্তি ভূমি । এই এলাকাটির বর্তমান নাম আরমানা। ইখনাতুন সরকারী ক্ষমতা, অর্থনীতি, ভূমি, শুল্ক কর সব নিজের হাতে কুক্ষিগত করে নিলেন। তার নিজের লোকদের পাঠালেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পুরাতন দেবতাদের মন্দিরগুলো ধ্বংস করে দিতে। এক কালের পূজ্য দেবতাদের মূর্তি, সমাধি সব ধূলায় লুটিয়ে গেলো।

শুধু নিজেকেই নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন ইখনাতুন। সেনাবাহিনীর বিশৃংখলা, আমলাদের দূর্নীতির দিকে নজর দেয়ার প্রয়োজন মনে করেন নি। ফলশুতিতে সে যখন মারা যাওয়ার আগেই অধিকাংশ প্রদেশ হাতছাড়া হয়ে যায়। এসব প্রদেশের অধিকাংশ তার বাবা আমেনহোটেপ জয় করেছিলেন। ইখনাতুন মারা যাওয়ার পর তার ছেলে তুতেনখাতেন ক্ষমতা গ্রহন করেন।

তুতেনখাতেন ক্ষমতা গ্রহনের পর পূর্বের ধর্মে ফিরে যান। এবং প্রাচীন ঈশ্বর আমন ( যার অর্থ সন্তুষ্ট) এর নাম অনুসারে নিজের নাম বদলে রাখেন তুতেনখামেন। ইতিহাসবোদ্ধারা অবশ্যই এবার নড়ে বসবেন। কারণ প্রাচীন ইতিহাসে তুতেনখামেন বড় একটা স্থান দখল করে আছেন। শাসক হিসেব স্বৈরশাসক হিসেবে নয়।

ইখনাতুনের মৃত্যুর পর মিশরের জনগণ আবার পূর্বের ধর্মে ফিরে গেলো। দেবতা আমনের মন্দিরে আবারো ধ্বনিত হতে লাগলো পুজার মন্ত্র, প্রার্থনার বাক্য। পরিশেষে আমি বাংলাদেশে ফিরে আসতে চাই, বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন শাসকদের ভিতরে কি আপনি ইখনাতুনের কোন চরিত্র খুঁজে পান? একটু ভেবে দেখেন। বাংলাদেশের প্রধান দুই দল ক্ষমতায় গেলে পুরাতন ইতিহাসের বইগুলো ছূড়ে ফেলে নতুন করে ইতিহাস লিখতে বসে যায়। গলা বাজিয়ে বলতে শুরু করে আমনের ধর্ম মিথ্যে তোমরা সব কিছু জানো না।

তারপর তারা শুরু করে এটনের গল্প। যা বাঙালীর জন্য এক নতুন বিনোদন। এটন গেলে আমন আসে, আমন যায় এটন আসে। ঈস্বর বদলায় কিন্তু বাঙালীর ভাগ্য বদলায় না। এটন পুজারীরা যায় আমনের সাগরেদদের কপাল ভাংতে, আমন এখন বিরোধী দলে তাই সে কপাল ভাঙতে না পারলেও ঠ্যাং ভাঙার চেষ্টা করে।

এটন আমন অর্চনা – মুজিব জিয়া চেতনা আমাদের কি আলাদা কিছু ভাবতে শেখাচ্ছে নাকি চেতনার আড়ালে যুগে যুগে শাসকদের স্বৈরচারী মনোভাবের প্রতিফলন ঘটে যাচ্ছে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।