গোটা বিশ্বের স্বেচ্ছাসেবীদের বানানো অনলাইন এনসাইক্লেপিডিয়ার নাম উইকিপিডিয়া। একই পথ ধরে গোটা বিশ্বের স্বেচ্ছাসেবীদের দেয়া গোপন তথ্যের ভাণ্ডারটির নাম দেয়া হয় উইকিলিকস। এর ওয়েবসাইটটিও উইকিপিডিয়া আদলেই তৈরি।
উইকিলিকসে কাজ করেন ছয়জন পূর্ণকালীন
স্বেচ্ছাসেবী। ওয়েবসাইটটির রয়েছে প্রায় এক হাজার এনক্রিপশন বিশেষজ্ঞ।
অ্যাসাঞ্জ বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের রক্ষা করার তাড়নাই তাঁর প্রেরণা হিসেবে কাজ করে। তাঁর ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ‘সরকারের স্বচ্ছতা দুর্নীতি হ্রাস করে’। গোপনীয় নথি জোগাড় করার উৎসের সন্ধান হিসেবে উইকিলিকস জানিয়েছে, কিছু সিনিয়র মার্কিন কর্মকর্তাই এ কাজে তাদেরকে সাহায্য করছেন।
অলাভজনক একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘উইকিলিকস'। সূত্র উল্লেখ না করে গোপন তথ্য প্রকাশ করাই এর কাজ।
তথ্য প্রকাশের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে জবাবদিহিতাকে শক্তিশালী এবং সরকারের কাজে স্বচ্ছতা আনার লক্ষে ২০০৬ সালে যাত্রা শুরু করে সাইটটি। ৪০ জন দক্ষ স্বেচ্ছাসেবী এবং প্রায় ৮শ কর্মী উইকিলিকসের যাবতীয় কাজ করছে। ৫ ডিসেম্বর রোববার সর্বশেষ তথ্য ফাঁসের ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগে আত্মপক্ষ সমর্থন করে জুলিয়ান বলেন, ‘মার্কিন সেনাবাহিনীর জবাবদিহিতা এখন প্রশ্নবিদ্ধ। কিন্তু সৌভাগ্যবশত সেখানেও কিছু ভালো লোক রয়েছেন, যারা চান তথ্য অন্য কোনো উপায়ে প্রকাশ পাক এবং সেজন্য তারা আমাদের তথ্য দিয়ে সহায়তা করেন। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র সন্দেহ করছে, সাবেক মার্কিন সামরিক কর্মকর্তা ব্র্যাডলি ম্যানিং রয়েছেন এর পেছনে।
বলা হচ্ছে, বিখ্যাত গায়িকা লেডি গাগার সিডি থেকে গান মুছে সেখানে গোপন বার্তাগুলো তুলে নেন ওই সেনা। আর সেগুলোই পৌঁছে যায় উইকিলিকসের ভাণ্ডারে।
আক্রমণ শুরু হয়েছে উইকিলিকস ও জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে। ২৮ নভেম্বর উইকিলিকস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক নথিপত্র প্রকাশ করার সঙ্গে সঙ্গে কানাডার প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা টম ফ্ল্যানাগান সিবিসি টেলিভিশনে বলেন, জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে হত্যা করা উচিত। এ জন্য ওবামা প্রশাসনের উচিত খুনি ভাড়া করা অথবা ড্রোন ব্যবহার করা।
যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান নেত্রী সারাহ পেলিন বলেছেন, আল-কায়েদা আর তালেবান সন্ত্রাসীদের ধরার জন্য আমেরিকা যেভাবে অভিযান চালায়, অ্যাসাঞ্জকে পাকড়াও করতে তেমন অভিযান শুরু করা উচিত। মার্কিন রক্ষণশীল রাজনীতি-বিশ্লেষক ও দি উইকলি স্ট্যান্ডার্ড সাপ্তাহিকের সম্পাদক বিল ক্রিস্টল লিখেছেন, ওবামা প্রশাসন যেন অ্যাসাঞ্জকে অপহরণ বা হত্যা করার কথা ভেবে দেখে। মার্কিন কংগ্রেসের সাবেক স্পিকার নিউইট গ্রিনগ্রিচ বলেছেন, অ্যাসাঞ্জ আমেরিকার শত্রুসেনা। শত্রুসেনাদের সঙ্গে যে রকম ব্যবহার করতে হয়, অ্যাসাঞ্জের সঙ্গেও তা-ই করা দরকার। বর্ষীয়ান রিপাবলিকান সিনেটর মাইক হিউক্যাবি বলেছেন, মৃত্যুদণ্ড ছাড়া অন্য যেকোনো শাস্তি হবে অ্যাসাঞ্জের জন্য লঘু দণ্ড।
মার্কিন সিনেটের রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনেল এনবিসি টিভির মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে একজন ‘হাইটেক টেররিস্ট’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, তিনি আশা করছেন, অ্যাসাঞ্জের বিচার করা হবে। মার্কিন কর্তৃপক্ষ অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে সে দেশের গুপ্তচরবৃত্তি-সংক্রান্ত আইন বা স্পাইয়োনেজ অ্যাক্টের অধীনে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছে। অ্যাসাঞ্জ স্পেনের এল পাইস পত্রিকার সঙ্গে এক অনলাইন সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, মার্কিন ‘মিলিটারি মিলিট্যান্টদের’ কাছ থেকে তিনি হত্যার হুমকি পাচ্ছেন শত শত; শুধু তাঁকেই নয়, তাঁর ছেলে ও আইনজীবীদেরও নানা রকম হুমকি দেওয়া হচ্ছে। অ্যাসাঞ্জের ব্রিটিশ আইনজীবীরা গার্ডিয়ান পত্রিকাকে জানিয়েছেন, তাঁদের পেছনে গোয়েন্দা লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে; গোয়েন্দারা সব সময় তাঁদের অনুসরণ করছেন। কিন্তু হত্যা, অপহরণ, বিচারের এসব হুমকিতে অ্যাসাঞ্জ মোটেও ঘাবড়াননি।
এল পাইস পত্রিকাকে তিনি বলেছেন, এর আগে ইসলামি সন্ত্রাসবাদী আর আফ্রিকার দুর্নীতিবাজ সরকারগুলোর কাছ থেকে তিনি হত্যার হুমকি পেয়েছেন অজস্রবার।
তবে সুইডিশ কর্তৃপক্ষ যৌন অপরাধের অভিযোগে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে নতুন করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার পর ইন্টারপোলকে দিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করানোর যে তৎপরতা কদিন ধরে চলল, তাতে তিনি একটু মুশকিলেই পড়েছেন। তিনি মনে করেন, সুইডেনকে তাঁর পেছনে লেলিয়ে দিয়েছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ। তাঁকে গা ঢাকা দিয়ে থাকতে হচ্ছে ব্রিটেনে। যদিও ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা দায়ের করেনি, সুইডেনের অভিযোগের কারণে ব্রিটিশ পুলিশ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায়।
গতকাল মঙ্গলবার লন্ডনে তিনি পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। একদিন আগেই তাঁর আইনজীবীরা গার্ডিয়ানকে জানিয়েছিলেন, তিনি পুলিশের মুখোমুখি হবেন। এখন, গ্রেপ্তারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একটি ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে হাজির হয়ে তাঁর জামিনের আবেদন করার কথা। অ্যাসাঞ্জ তা-ই করবেন, এ সিদ্ধান্ত দুই দিন আগেই নিয়েছেন, সে জন্য সমর্থকদের জামিনদার হওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন। আদালত তাঁর জামিন মঞ্জুর করতে পারেন, না-ও পারেন; উভয় ক্ষেত্রে তাঁকে সুইডিশ কর্তৃপক্ষের কাছে প্রত্যর্পণ মামলার শুনানির জন্য ২৮ দিন সময় থাকবে।
উইকিলিকসকে নিয়ে কারিগরি চ্যালেঞ্জটা কঠিন। যে প্রযুক্তির সাহায্যে এই হাটে-হাঁড়ি-ভাঙা ওয়েবসাইটটি বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষ দেখতে-পড়তে পারে, তার প্রধান অবকাঠামো অ্যাসাঞ্জের হাতে নেই। ওয়েব হোস্টিং কোম্পানিগুলোকে টাকা দিয়ে উইকিলিকস অনলাইনে সচল থাকে। আমেরিকায় প্রথমে আমাজন কোম্পানি উইকিলিকস বন্ধ করে দিয়েছে, তারপর বন্ধ করেছে এভরিডিএনএস কোম্পানিটি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে উইকিলিকস এখনো বন্ধ হয়নি।
‘উইকিলিকস ডট সিএইচ’ ওয়েব ঠিকানার মাধ্যমে ওয়েবসাইটটির অধিকাংশ ট্রাফিক চালু আছে। এটি নিয়ন্ত্রণ করছে সুইজারল্যান্ডের ‘পাইরেট পার্টি’ নামের এক ওয়েব হোস্টিং কোম্পানি। গত রোববার তারা বার্তা সংস্থা এপিকে জানিয়েছে, প্রতি সেকেন্ডে তিন হাজার মানুষ উইকিলিকসের ওয়েবসাইট ভিজিট করছে। ফ্রান্সে যে হোস্টিং কোম্পানি উইকিলিকস হোস্টিং করে, সেটিও তাদের মূল সার্ভার গত রোববার বন্ধ করেছে। তার আগে দেশটির শিল্পমন্ত্রী কঠোর ভাষায় বলেন, যে ওয়েবসাইট গোপনীয় কূটনৈতিক সম্পর্কের রীতিগুলো ভঙ্গ করেছে, সেটিকে হোস্টিং সার্ভিস দেওয়া অগ্রহণযোগ্য।
ফ্রান্সে এখন ওয়েবসাইটটি চালু আছে একটি সুইডিশ সার্ভারের মাধ্যমে। ‘পাইরেট পার্টি’র ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেছেন, সুইডিশ সার্ভারটিও যদি বন্ধ করা হয়, তবু কোনো ফায়দা হবে না। উইকিলিকসের ভক্ত-অনুরাগীরা নিজেদের সার্ভারে উইকিলিকসের অজস্র ‘মিরর’ তৈরি করছে। ফলে উইকিলিকস যদি নিজের মূল সাইটটি কখনো হারায়ও এবং পৃথিবীর সব দেশের সব সরকার মিলেও যদি ইন্টারনেট থেকে উইকিলিকসের নথিগুলো সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করে, পারবে না। সবখানে উইকিলিকসের অজস্র কপি আছে।
কিন্তু অ্যাসাঞ্জের জন্য বড় সমস্যা দেখা দিয়েছে আর্থিক ক্ষেত্র। উইকিলিকস কোনো বাণিজ্যিক ওয়েবসাইট নয়, এতে কোনো বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয় না। এর খরচ চলে ভক্ত-অনুরাগীদের চাঁদার টাকায়। ‘পেপল’ নামে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনলাইন পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার কোম্পানির মাধ্যমে ভক্তরা উইকিলিকসে চাঁদার অর্থ পাঠায়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র সরকারের চাপে পেপল উইকিলিকসের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে।
ফলে ওয়েবসাইটটির অর্থাগমের প্রধান পথটিই বন্ধ হয়ে গেছে। তার ওপর গত সোমবার সুইস ব্যাংক অ্যাসাঞ্জের ব্যক্তিগত নামের অ্যাকাউন্টটিও জব্দ করেছে। এটা ঘটতে পারে আন্দাজ করে অ্যাসাঞ্জ অবশ্য সুইজারল্যান্ডের পোস্টাল বিভাগের বাণিজ্যিক শাখা সুইসপোস্টে নিজের নামে একটা অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন। কিন্তু একই দিনে সুইসপোস্টও সেই অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে। তারা বলছে, অ্যাকাউন্টটি খোলার সময় অ্যাসাঞ্জ তাঁর ‘প্লেস অব রেসিডেন্স’ হিসেবে যে তথ্য দিয়েছিলেন, তা সঠিক নয়।
‘মাস্টারকার্ড’ও উইকিলিকসকে আর কোনো সার্ভিস দেবে না বলে ঘোষণা করেছে। অ্যাসাঞ্জ এখন ব্যবহার করছেন সুইজারল্যান্ড-আইসল্যান্ডের একটি ক্রেডিট কার্ড প্রসেসিং সেন্টার এবং আইসল্যান্ড ও জার্মানির বিভিন্ন আর্থিক লেনদেনব্যবস্থা। সুইসপোস্টের অ্যাকাউন্ট হোল্ডার হতে হলে সেই দেশে বাসস্থান, সম্পত্তি বা ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড থাকতে হয়। কিন্তু সুইজারল্যান্ডে অ্যাসাঞ্জের কোনো বাসস্থান নেই। মূলত এ কারণেই তিনি সুইজারল্যান্ডে আশ্রয় গ্রহণের আবেদন করবেন বলে শোনা যাচ্ছে।
কিন্তু সুইজারল্যান্ডে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেছেন, অ্যাসাঞ্জকে আশ্রয় দেওয়ার ব্যাপারে সুইজারল্যান্ডের উচিত সতর্কতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেওয়া। মহাপরাক্রমশালী বিশ্বমোড়ল যুক্তরাষ্ট্রের চাপ অগ্রাহ্য করে ‘নিরপেক্ষ’ সুইজারল্যান্ড জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে আশ্রয় দেবে কি না, বলা কঠিন। ওদিকে ব্রিটেনে জামিন না পেলে তাঁকে সুইডেনে পাঠানো হবে। অ্যাসাঞ্জের ধারণা, তিনি সেখানে ন্যায়বিচার পাবেন না। তাঁর এমন ধারণা সৃষ্টি হওয়ার কারণ, সুইডিশ পুলিশ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চেয়েছে, তিনি নিজেও তাতে রাজি ছিলেন, কিন্তু এর মধ্যে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে ইন্টারপোলের রেডলিস্টে তাঁর নাম লেখানো হয়েছে।
সুইডেনের মতো দেশে এটা নজিরবিহীন ঘটনা। যুক্তরাষ্ট্রের চাপেই যে সুইডিশ কর্তৃপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে এসব করছে, এ ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত। যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি, কিন্তু দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল এরিক হোল্ডার সোমবার বলেছেন, উইকিলিকসের অবসান ঘটানোর জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছে।
অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে বিশ্বের মহাক্ষমতাধর শক্তিগুলোর সংঘবদ্ধ আক্রমণ দেখতে পাচ্ছি বিশ্বজনমত, বিশেষ করে যুবসমাজ রয়েছে অ্যাসাঞ্জের পক্ষে। পেপল উইকিলিকসের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করলে ওয়েবসাইটটিতে চাঁদা পাঠানোর প্রধান পথটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ব্রিটেনের গার্ডিয়ান পত্রিকা অনলাইন সংস্করণে একটা জনমত জরিপ শুরু করেছে।
তারা পাঠকদের উদ্দেশে প্রশ্ন রেখেছে: সম্ভব হলে (কারিগরিভাবে) আপনি কি উইকিলিকসকে চাঁদা দেবেন? দেখা যাচ্ছে, ব্যাপক সাড়া। প্রথমজন হ্যাঁ ভোট দিয়ে লিখেছেন, ‘চাঁদা দেবেন জিজ্ঞেস করছেন কেন? বলুন, চাঁদা দিন! আমি দিয়েছি। উইকিলিকসকে চাঁদার টাকা পাঠানোর হাজারটা পথ এখনো খোলা আছে!’ এই পাঠক আরও ১৬২ জনের কাছে সুপারিশ পাঠিয়েছেন উইকিলিকসের পক্ষে ভোট ও চাঁদা দেওয়ার জন্য। পেপল উইকিলিকসের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে, এর প্রতিবাদে অনেকে ‘ফাক পেপল’ লিখে নিজের অ্যাকাউন্ট প্রত্যাহার করে নিয়েছেন এবং অন্যদেরও তা করতে বলেছেন। একইভাবে আমাজন উইকিলিকস বন্ধ করে দিয়েছে বলে অনেকে আমাজনকে বয়কট করার আহ্বান জানিয়েছেন।
অনেকে লিখেছেন, ‘উইকিলিকস থাকবে, আমরা টাকা পাঠাব। ’ কী কী পদ্ধতিতে চাঁদার টাকা পাঠাতে হবে, তাও অন্যদের বাতলে দিয়েছেন অনেকে। কেউ লিখেছেন, উইকিলিকস বন্ধ করা নয়, আমেরিকাসহ যেসব অশুভ স্বৈরশক্তি উইকিলিকসের পেছনে লেগেছে, তাদেরই বাতিল করে দেওয়া উচিত।
জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ যে ত্রিমুখী আক্রমণের মুখে পড়েছেন, তার পরিণতি দেখতে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। তাঁকে পছন্দ করেন, কিন্তু তাঁর বহুমুখী বিপদ দেখে একটু হতাশ বোধ করছেন, এমন কেউ কেউ আগেভাগেই তাঁকে ‘সাইবার মার্টার’ বা সাইবার শহীদ বলা শুরু করেছেন।
আবার আমেরিকায় পাবলিক জার্নালিজমের প্রবল প্রবক্তা, হোয়াই জার্নালিস্টস আর ফর? গ্রন্থের খ্যাতিমান লেখক জে রোজেন, যিনি মনে করেন, গণতন্ত্রের ওয়াচডগ হিসেবে প্রথাগত সংবাদমাধ্যমের মৃত্যু হয়েছে। তিনি বলেছেন, মৃত প্রেসের জায়গায় আমরা পেয়েছি উইকিলিকস। তাঁর মতো অন্য অনেকে বলছেন, বিশ্বজুড়ে উইকিলিকস একটা নয়, শত শত, হাজার হাজার, এমনকি লাখ লাখ! তথ্যের ওপর একচেটিয়া অধিকারের দিন শেষ হয়েছে। আমরা সাংবাদিকতার ‘উইকিলিকস যুগে’ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রবেশ করলাম।
উপরোক্ত লেখার কিছু অংশ স্বদেশী বন্ধু থেকে বাকী অংশ আজকের প্রথম আলোর মশিউল আলমের লেখা থেকে সংগৃহীত হয়েছে।
প্রথম আলোতে একজনের মন্তব্য ঃ
"বৈশ্বিক পুঁজির দাস সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলি তাদের দাঁত-নখ বের করে উইকিলিকস ও জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে লেগেছে। জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ আসলে একটি প্রতীক এবং মহাক্ষমতাবান সাম্রাজ্যবাদ প্রায় প্রতিরোধহীন বিশ্বে তাদের পেশীশক্তি প্রয়োগ করছে। যে মানবাধিকারের নামে সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলি ভেউভেউ করে কাঁদে, এদেশেও তখন কেউ কেউ সহানুভূতিতে চোখ মোছেন, সেই মানবাধিকার "চুলোয় যাক" বলে অ্যাসাঞ্জকে বাংলাদেশ ষ্টাইলে "রিমান্ডে" পাঠিয়েছে। তবে সুখের কথা, নাওম চমেস্কিসহ বৈশ্বিক পুঁজির আগ্রাসনবিরোধী মানুষেরা দাঁড়িয়ে গেছেন। পুঁজি নিয়ন্ত্রিত মিডিয়াতে তাঁদের কন্ঠ কতো জোরে ও কতোদিন শোনা যাবে জানিনা, তবে বাংলাদেশ থেকেও নাওম চমেস্কিদের সমর্থনে আওয়াজ তোলা জরুরী! লক্ষ্য করা দরকার, সাম্রাজ্যবাদীরা কিন্তু উইকিলিকস বা আ্যাসাঞ্জের তথ্য কে মিথ্যা বলে অভিহিত করছে না।
"
আমার কথাঃ
আসুন আমরা সবাই আমাদের স্বার্থে উইকিলিকস এর অ্যাসাঞ্জ এর জন্য সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে কিংবা সমর্থন জানিয়ে আমেরিকা ও তার দোসরদের এবং নপুংশক সংঘ (জাতিসংঘ) সহ পৃথিবীব্যাপী বিস্তৃত সম্রাজ্যবাদীদের জানান দেই-সকল সংবাদ জানার অধিকার আমাদের আছে। প্রত্যেকের হিংস্র মুখগুলো আমরা দেখতে চাই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।