Never argue with idiots. They bring you down to their level and then beat you with experience
একটা সময় ছিল যখন বাংলার গ্রামগঞ্জে, রাস্তাঘাটে সর্বত্রই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা বড় বড় খেজুর গাছের সারি চোখে পড়তো। কিছু দূর অন্তর অন্তর পথের পাশে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে খেজুর বাগান ছিল এ অঞ্চলের গ্রাম-বাংলার চিরাচরিত একটি দৃশ্য। গ্রামের প্রতিটি বাড়ির সামনে, আশপাশে যেন খেজুর গাছ থাকতেই হতো। এখন বিক্ষিপ্তভাবে খেজুর গাছ চোখে পড়লেও সেই আধিক্য আর চোখে পড়ে না। সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ও উপর্যুপরি কর্তনের ফলে বিলুপ্ত হতে চলেছে বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুর গাছ।
খেজুর গাছ শুধুই একটি ফলদ বৃক্ষ নয়, সুমিষ্ট রস, জ্বালানি কাঠ, গৃহনির্মাণ উপকরণ হিসেবে এর ব্যবহার চলে আসছে যুগ যুগ ধরে।
শীতের আগমনে শুরু হয় খেজুর গাছ কেটে রস আহরণ। যারা গাছ কাটে তাদের বলা হয় ‘গাছি’। খেজুর গাছের অগ্রভাগের একটি নির্দিষ্ট অংশ চিরে বিশেষ ব্যবস্থায় ছোট কলসি বাঁধা হয়। ফোঁটায় ফোঁটায় রসে পূর্ণ হয় সে পাত্র।
খেজুরের রস একটি সুমিষ্ট পানীয়। রস দিয়ে তৈরি হয় সুস্বাদু গুড়-পাটালিসহ স্বাদে ভরা অনেক রকম খাদ্য। পিঠাপুলি-পায়েস রাঁধতে খেজুর রস বা গুড়ের কোনো জুড়ি নেই। খেজুর কাঠ দিয়ে আসবাবপত্র তৈরি না হলেও গৃহ নির্মাণ উপকরণ হিসেবে এর যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। খেজুর পাতা শুকিয়ে জ্বালানি ও ঘরের বেড়ার কাজে ব্যবহার করা হয়।
গ্রামাঞ্চলে পুকুর পাড়ে ঘাট তৈরিতে এ গাছের গুঁড়ি চোখে পড়ে। খেজুর পাতা দিয়ে তৈরি হয় পাটি। খেজুর গাছ সাধারণত প্রাকৃতিকভাবে বংশ বিস্তার করে থাকে। বিভিন্ন পাখির মলের সঙ্গে নির্গত খেজুরের আঁটি থেকে এর বংশ বিস্তার হয়। পরে খেজুর গাছের চারাগুলো নির্দিষ্ট স্থানে লাগানো হয়।
নির্বিচারে খেজুর গাছ কর্তন ও নতুন করে না লাগানোর ফলে খেজুর গাছের সংখ্যা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। শত শত ইটের ভাটায় অবাধে খেজুর গাছ পোড়ানো হচ্ছে। বিভিন্ন প্রয়োজনে যে পরিমাণ গাছ কাটা হচ্ছে তার বিপরীতে সেই পরিমাণ গাছ লাগানো হচ্ছে না। প্রাকৃতিকভাবে যা জন্মাচ্ছে তাও আবার সুষ্ঠু রণাবেক্ষণের অভাবে ছাগল-গরুতে খেয়ে ফেলছে।
ফলে প্রতি বছর খেজুর গাছের সংখ্যা কমছে।
খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুর্দিন নেমে আসছে খেজুর গাছ কেন্দ্রিক জীবিকা নির্বাহকারীদের জীবনে। এক দশক আগেও খেজুর গাছ থেকে রস বের করা ছিল সমাজের এক শ্রেণীর মানুষের মূল পেশা। গাছ কমে যাওয়ায় গাছিরা তাদের পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছেন। খেজুরের গুড়ের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও রসের জোগান কম থাকায় উৎপাদন কমে যাচ্ছে। গ্রাম-বাংলা থেকে ধীরে ধীরে উঠে যাচ্ছে খেজুরের রসের বিভিন্ন পিঠা ও পাটালি গুড় তৈরির ঐতিহ্য।
এক সময় শীতের মূল আনন্দ ছিল খেজুরের রস। তাও এখন বিলুপ্ত হতে চলেছে। খেজুর গাছ নিধন বন্ধে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। বন্ধ করতে হবে ইটের ভাটায় অবাধে খেজুর গাছ পোড়ানো কিংবা নির্বিচারে কর্তন। খেজুর গাছের বংশ বৃদ্ধি, রণাবেক্ষণ, পরিচর্যায় সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।